What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ক্লাসমেট ফড়িং (1 Viewer)

irhQT03.jpg


উড়তে উড়তে জানালার গ্রিলে এসে বসল ফড়িংটা। জানালার পাশেই নদীর পড়ার টেবিল। টেবিলে এলোমেলো বই। ভাগ্যিস, জানালাটা একটু খোলা ছিল। সন্ধ্যা হলেই মশার কথা ভেবে মা সব দরজা–জানালা বন্ধ করে দেন। নদী চুপিচুপি জানালাটা একটু খুলে রেখেছিল। আধবোজা জানালা দিয়ে হাসনাহেনা আর মধুমঞ্জরির ঘ্রাণ আসে ঘরে। সন্ধ্যাটা মাতাল করে রাখে।

জানালা গলে হাসনাহেনার ঘ্রাণের সঙ্গে ফড়িংটাও ঘরে ঢুকল। পড়ার টেবিলের ওপর এক চক্কর খেয়ে বসল গণিত বইয়ের ওপর। পড়া শুরু করবে, এমন সময় নদী এসে ফড়িংটাকে ধরে ফেলল।

এত সুন্দর ফড়িং নদী কখনো দেখেনি। লাল টুকটুকে মিষ্টি ফড়িং। ডানা দুটোও রঙিন আর ফরফরে। চিকন সুতা দিয়ে ফড়িংটার লেজ বেঁধে ফেলল নদী। ফড়িংটা ব্যথায় মরে যাচ্ছে!

রাত বাড়তে বাড়তে মধুমঞ্জরির ঘ্রাণ আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। নদী শুয়ে পড়ল। ফুলের ঘ্রাণে ওর ঘুম আসছে না। চারদিক সুনসান। হঠাৎ একটা শব্দ এসে কানে লাগল। কাতর কণ্ঠে কেউ বলল, 'আমাকে ছেড়ে দাও! আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ!'

নদী ভাবল, এটা স্বপ্ন। পরে আরও কয়েকবার একই কথা শোনার পর সে উঠে বসল। আলো জ্বালিয়ে দেখল, শব্দটা টেবিল থেকেই আসছে। বুঝতে আর বাকি রইল না শব্দটা কিসের।

প্রথমে কিছুটা অবাক হলো নদী। কথা বলছে ফড়িং! ফড়িংটার মুখোমুখি গিয়ে বসল সে।

কাঁদো কাঁদো গলায় ফড়িং বলল, 'আমাকে ছেড়ে দাও প্লিজ!'

নদীর খুব মায়া হলো।

'অনেক রাত এখন। এত রাতে একা একা কোথায় যাবে তুমি?'

'কোথাও যাব না। তোমার ঘরেই থাকব। বাঁধনটা খুলে দাও শুধু। একটু পড়াশোনা করব।'

নদী অবাক হলো, 'পড়াশোনা মানে?'

'কাল পরীক্ষা আছে। সন্ধ্যা থেকেই বেঁধে রেখেছিলে, একটা অঙ্কও মুখস্থ করতে পারিনি।'

নদী কিছুই বুঝতে পারছে না। কৌতূহল তার বেড়েই চলেছে। ফড়িংটাকে সব খুলে বলতে বলল সে।

লেজের বাঁধন খুলে দিতেই কয়েকবার ডানা ঝাপটাল ফড়িং। বলল, 'আমি তোমার ক্লাসমেট। তুমি যে স্কুলে পড়ো, আমিও একই স্কুলে পড়ি। তুমি যে ক্লাসে পড়ো, আমিও একই ক্লাসে পড়ি। কাল তোমার গণিত পরীক্ষা, আমারও গণিত পরীক্ষা।'

অবাক হয়ে নদী বলল, 'কই, তোমাকে তো ক্লাসে কখনো দেখিনি!'

'দেখবে কীভাবে! আমি কি তোমার মতো বেঞ্চে বসি নাকি? যখন ক্লাস চলে, জানালায় বসে থাকি। মাঝেমধ্যে ম্যাডামের চুলেও বসি। তোমরা হয়তো মনে করো ক্লিপ।'

সত্যিই তো। সেদিন ম্যাডামের চুলের ক্লিপটা নিয়ে দ্বিধায় পড়েছিল নদী। ম্যাডাম ক্লাসে ঢোকার সময় সে স্পষ্ট দেখেছিল, চুলে কোনো ক্লিপ ছিল না। কিছুক্ষণ ক্লাস চলার পর হঠাৎ দেখল, ম্যাডামের চুলে ক্লিপ। একদম ফড়িংটার মতো লাল টুকটুকে ক্লিপ। ফড়িঙের কথা বিশ্বাস করল নদী। বলল, 'তাহলে তোমার বই, খাতা, ব্যাগ কোথায় থাকে?'

ফড়িংটা এবার হেসে ফেলল। বলল, 'ব্যাগ–খাতা লাগে না। শুনে শুনেই সব মুখস্থ করে ফেলি। স্কুলে কিছু মুখস্থ করি, বাকিটা জানালায়

ফড়িংটা নদীর চুলের ওপর বসল। সবাই ভাবল ক্লিপ। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে দুজন। ফড়িং বলল, 'আমি মুখস্থ করেছিলাম দুই যোগ তিন সমান পাঁচ। পরীক্ষায় এল তিন যোগ চার সমান কত?

বসে তোমার পড়া শুনে মুখস্থ করি।'

'তো আজ একদম ঘরে ঢুকে পড়লে যে?'

ফড়িং বলল, 'অনেকক্ষণ জানালার বাইরে বসে ছিলাম। তোমার কোনো শব্দ পাচ্ছিলাম না। পরে উঁকি দিয়ে দেখি, তুমি অঙ্ক করছ কোনো শব্দ ছাড়াই। শুনতে না পেলে আমি মুখস্থ করব কীভাবে, বলো? তুমি যখন পাশের রুমে গেলে এই সুযোগে ঘরে ঢুকে পড়েছিলাম অঙ্ক মুখস্থ করতে।'

নদী অবাক হয়ে বলল, 'তুমি অঙ্ক মুখস্থ করো নাকি?'

'হ্যাঁ, আমাদের মুখস্থবিদ্যা ভালো। আমরা ফড়িংরা তো সবাই মুখস্থ করেই পাস করি। বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি—সব মুখস্থ করে ফেলি। একবার শুনলেই আমাদের মুখস্থ হয়ে যায়।'

নদী আবারও অবাক হলো। কারণ, সে কিছুই মুখস্থ করে না। সব বুঝে বুঝে পড়ে।

নদীকে বারবার অবাক হতে দেখে ফড়িং বলল, 'আর কথা বাড়িয়ো না। অনেক রাত হয়ে গেছে। তুমি যদি বইটা একটু দাও, কয়েকটা অঙ্ক মুখস্থ করতে পারব। নয়তো নির্ঘাত ফেল করব।'

নদী আর কথা বাড়াল না। সকালে উঠতে হবে। বইটা খুলে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ফড়িংটা সারা রাত পড়ল। যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ, নামতা মুখস্থ করল। খুব ভোরে বেরিয়ে গেল জানালার ফাঁক দিয়ে, নদী ঘুম থেকে ওঠার অনেক আগে।

দুপুরে পরীক্ষা শেষে দুজনের দেখা হলো স্কুলের মাঠে। খুব দুঃখ দুঃখ মন নিয়ে নদীর পাশ দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল ফড়িং। নদী জিজ্ঞেস করল, 'পরীক্ষা কেমন হলো?'

পাখা স্থির করে দাঁড়াল ফড়িং। বলল, 'একদম ভালো হয়নি। রাতে যে অঙ্কগুলো মুখস্থ করেছিলাম, একটাও প্রশ্নে আসেনি।'

'আসেনি মানে! তোমাকে যে পৃষ্ঠাগুলো দেখিয়ে দিয়েছিলাম, ওখানে থেকেই তো প্রশ্ন এসেছে। কী হয়েছে একটু বুঝিয়ে বলো তো।'

ফড়িংটা নদীর চুলের ওপর বসল। সবাই ভাবল ক্লিপ। হাঁটতে হাঁটতে কথা বলছে দুজন। ফড়িং বলল, 'আমি মুখস্থ করেছিলাম দুই যোগ তিন সমান পাঁচ। পরীক্ষায় এল তিন যোগ চার সমান কত? সব কটি প্রশ্নই এ রকম এলোমেলো।'

হাসতে হাসতে মাঠের মধ্যেই বসে পড়ল নদী। বলল, 'বোকা। অঙ্ক কেউ মুখস্থ করে? অঙ্ক শিখতে হয় বুঝে বুঝে। শুধু অঙ্ক নয়, সব বিষয়ই শিখতে হয় বুঝে বুঝে।'

'বুঝে বুঝে—সেটা আবার কেমন?'

'কাল থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আমার কাছে চলে আসবে। সব বুঝিয়ে দেব তখন।'

ফড়িং পাখা দোলাতে দোলাতে কিছু না বুঝেও বলল, 'আচ্ছা।' তারপর উড়ে গেল। সবাই অবাক হয়ে দেখল, নদীর চুল থেকে একটা টুকটুকে

লাল ক্লিপ ফড়িঙের মতো উড়ে যাচ্ছে দক্ষিণের জঙ্গলের দিকে।

লেখক: সাজিদ মোহন
 

Users who are viewing this thread

Back
Top