এক দেশে ছিল এক রাজা। রাজার ছিল মাছ ধরার শখ। একদিন মাছ ধরতে গিয়ে রাজা ধরল একটা দারুণ অক্টোপাস। কী সুন্দর দেখতে অক্টোপাসটা! ছোট্ট, তুলতুলে। কী মায়া মায়া চেহারা!
রাজা বলল, এই, তোমার নাম কী?
অক্টোপাস বলল, আমার নাম অক্টো...দেখছ না, আমার আটটা হাত।
রাজা বলল, তাই নাকি?
রাজা অক্টোপাসটাকে ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে ভালো করে দেখল। সত্যি সত্যি অক্টোপাসটার আটটা হাত। আর হাতগুলো কী সুন্দরভাবে সে নাড়াচ্ছে! দেখেই রাজার খুব হিংসা হলো। রাজা ভাবল, আমি হলাম রাজা, অথচ আমার মাত্র দুইটা হাত! আর ওই অক্টোপাসের আটটা! রাজা অক্টোপাসটাকে বন্দী করে ফেলল। সৈন্যসামন্তদের বলল, ওকে ধরে নিয়ে যাও। আমার ঘরের অ্যাকুয়ারিয়ামে রাখো। যত দিন পর্যন্ত না আমার আটটা হাত হচ্ছে, তত দিন ওর মুক্তি নেই।
রাজার কথা শুনে অক্টোপাস ঢোঁক গিলল। রাজার আটটা হাত না হওয়া পর্যন্ত সে ছাড়া পাবে না? তাহলে তো অক্টোপাসের কোনো দিনই আর নদীতে ফেরার উপায় নেই।
ওদিকে রাজার ঘোষণা ছড়িয়ে গেল রাজ্যজুড়ে—'রাজা চান হাতের যোগ, নইলে রাজ্যে দুর্যোগ!'
এই ঘোষণা শুনে ভয়ে তো সবাই আধমরা। কী হবে এখন?
রাজার আটটা হাত বানানোর জন্য ধরে নিয়ে আসা হলো কাঠমিস্ত্রিকে। কাঠমিস্ত্রি ভয়ে ভয়ে কাঠ কাটল, বানাল কাঠের হাত। সেগুলো জুড়ে দিল রাজার পিঠে। কিন্তু রাজা যেই উঠে হাতগুলো ঝাঁকানোর চেষ্টা করল, হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ল সব কটা হাত।
রাজার মেজাজ গেল খিঁচড়ে। বলল, কাঠমিস্ত্রিকে ধরে জেলে ঢোকাও! কাঠমিস্ত্রি কেঁদে ফেলল। তাতে রাজার বয়েই গেল।
এবার সৈন্যসামন্ত ধরে নিয়ে এল কুমোরকে। বলল, মাটি দিয়ে ভালো করে রাজার হাত বানিয়ে দিতে হবে। কুমোর মাটি নিয়ে ভালো করে হাত বানিয়ে দিল। কবজিতে জড়াল সোনার বালা আর আঙুলে দিল হীরার আংটি। কিন্তু হাত যে–ই না দিল রাজার হাতে, ওমা, হাতগুলো একেবারে গলে গলে পড়েই গেল!
রাজার মেজাজ আবার গেল খিঁচড়ে।
বলল, কুমোরকে ধরে জেলে ঢুকাও!
কুমোর কেঁদে ফেলল। তাতে রাজার বয়েই গেল।
২৮ দিন পর রাজার ঘুম ভাঙল। আর ভাঙতেই দেখল, ওমা, সত্যি তো তার হাত গজিয়েছে! ডান দিকে চারটা আর বাঁ দিকে চারটা, মোট আটটা তার হাত। রাজা এবার ছুটল তার অ্যাকুয়ারিয়ামের দিকে।
ওদিকে রাজ্যজুড়ে হাহাকার। রাজার হাত যদি আটটা না হয়, তাহলে কখন কাকে ধরে নিয়ে যাবে, কে জানে! কাকে আবার বলবে যে হাত বানিয়ে দাও! তখনই এক বুড়ো এল এগিয়ে। বুড়োটা বলল, আমি বৈদ্য। আমি রাজার আটটা হাত বানিয়ে দিতে পারি।
সঙ্গে সঙ্গে সবাই বুড়োকে নিয়ে চলল দরবারে। সব শুনে রাজা বলল, ঠিক আছে। বানিয়ে দাও। আমাকে যদি অক্টোপাসের মতো আট হাতের করে দিতে পারো, তাহলে তোমাকে অর্ধেক রাজ্য লিখে দেব। আর যদি না পারো...!
রাজা কী যে ভীষণভাবে হেসে উঠল। তা শুনে সবার আত্মা শুকিয়ে গেল।
বুড়ো এবার এই গাছের শিকড় তো ওই গাছের পাতা বাটতে শুরু করল। বাটতে বাটতে বাটতে বাটতে রাত দিন হলো, দিন হলো রাত। আর বেশ কিছুদিন পর সে একটা গাঢ় সবুজ বড়ি বানাল। রাজাকে বলল, নাকের বাতাস না লাগিয়ে সূর্য ওঠার সময় টুপ করে গিলে খেতে হবে, তাহলেই হাত গজাবে ছয়টা।
রাজা রেগে বলল, মাত্র ছয়টা?
বুড়ো বলল, আগের তো দুটো আছেই। ছয়টা গজালেই তো আটটা হবে।
রাজা বলল, তা–ও ঠিক, তা–ও ঠিক!
বুড়ো যেমন যেমন বলল, রাজা তেমন তেমন করে বড়িটা খেয়ে নিল। আর খেয়েই রাজার কী যে ঘুম এল!
রাজা ঘুমায় ঘুমায় ঘুমায়...
রাজা ঘুমায় ঘুমায় ঘুমায়...
রাজা শুধু ঘুমায়!
২৮ দিন পর রাজার ঘুম ভাঙল। আর ভাঙতেই দেখল, ওমা, সত্যি তো তার হাত গজিয়েছে! ডান দিকে চারটা আর বাঁ দিকে চারটা, মোট আটটা তার হাত। রাজা এবার ছুটল তার অ্যাকুয়ারিয়ামের দিকে। সেই অক্টোপাসকে দেখিয়ে বলল, দেখো দেখো, আমার কতগুলো হাত দেখো! ঠিক তোমার সমান, দেখো!
কিন্তু এসব বলতে বলতেই রাজার এক হাত ছুটল একদিকে তো আরেক হাত ছুটল অন্যদিকে। এক হাত তার কানটা মলে দিল তো অন্য হাত গালের ওপর বসিয়ে দিল ঠাস করে একটা চড়। রাজা বলল, একি! আমার হাত দেখি আমার কথাই শোনে না! অক্টো, তুমি তোমার হাতদের কথা শোনাও কীভাবে?
অক্টোপাস বলল, আমার হাত তো প্রাকৃতিক, তাই আমি যা বলি, তা–ই শোনে। কিন্তু আপনার হাত তো আলগা, জোর করে বানানো; তাই সেগুলো কথা শুনবে না, সেটাই স্বাভাবিক।
রাজা বলল, তাহলে এখন উপায়?
বুড়ো তখনই চলে এল ঘরে। বলল, একে একে সব বন্দীকে ছেড়ে দাও। অক্টোপাসকেও ছেড়ে দাও। তাহলেই আমি তোমাকে এমন একটা বড়ি দেব, যা খেলে তুমি ঠিক আগের মতো হয়ে যাবে!
রাজা রাজমিস্ত্রিকে ছেড়ে দিল, কুমোরকে ছেড়ে দিল, ছেড়ে দিল অক্টোপাসকেও। বুড়ো তখন রাজাকে আরেকটা বড়ি দিয়ে বলল, টুক করে খেয়ে ফেলো তো দেখি, রাজামশাই!
রাজা খেল। তারপর এল রাজ্যের ঘুম চোখে। তারপর কী হলো, তোমরা তো জানোই!
লেখক: আহমেদ খান