লকডাউনে অনেকের জীবনে একঘেয়েমি চলে আসছে। এই একঘেয়েমি কাটাতে ছোট ছোট পরিবর্তন আনা যেতে পারে দৈনন্দিন জীবনে। কঠোর বিধিনিষেধের এ সময়ে নিজেকে ইতিবাচক রাখতে বেছে নিতে পারেন কিছু উপায় বা কৌশল।
বৈচিত্র্য আনুন জীবনে
সাধারণ জীবনযাপনে আমরা কী করি? একঘেয়েমি কাটাতে ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসি। কিন্তু কঠোর বিধিনিষেধের এ সময়ে এটি অসম্ভব। তাহলে কী করতে হবে? প্রতিদিনের রুটিনে ছোট ছোট বিষয় যোগ করুন। আপনি আগে কখনো পড়েননি, এমন বই পড়তে পারেন। এ জন্য আপনাকে বাসার বাইরে যেতে হবে না। এখন অনলাইনেই সব ধরনের বই পাওয়া যায়। দেখতে পারেন পুরোনো সিনেমা, সাদাকালো যুগের সিনেমা। মানে আপনি যে ছবিগুলো দেখে থাকেন, তাতে একটা পরিবর্তন আনুন। আপনার কাজ যদি হয় কম্পিউটারে বা মুঠোফোনে, তাহলে যখন বিশ্রাম করবেন, তখন সব রকম ডিভাইস থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। কারণ, প্রযুক্তি যত এগিয়ে যাচ্ছে, আমরা তত নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছি। এখন হাতে প্রচুর সময়। এ সময় পরিবারের সঙ্গে ভাগ করুন।
নতুন কিছু শিখুন
ঘরে শুয়ে–বসে থাকা ছাড়া আর তেমন কোনো কাজ নেই। তাই এখন উচিত অলস সময়টা সঠিকভাবে কাজে লাগানো। এটা করতে পারেন নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে। অনলাইনে এখন অনেক কোর্স হচ্ছে। যেমন আপনি ইংরেজিতে দুর্বল হলে একটি কোর্স করে নিতে পারেন। এসব কোর্স আপনার পারসোনাল স্কিলকে ডেভেলপ করবে, যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবেন। চেষ্টা করুন এমন কিছু করা, যা আপনার ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিবে।
যোগাযোগ বাড়ান
সামাজিক সম্পর্কগুলো আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। কাজের চাপে আমরা বেশির ভাগ সময়ই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকি। শহর–অঞ্চলে তো এমন অবস্থা, পাশের ফ্ল্যাটে কে থাকেন, সেটা বেশির ভাগ মানুষই জানেন না। এখন যেহেতু আপনি বাসায়, তাই চারপাশের মানুষের সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন। আবার অনেক আত্মীয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, যাঁদের সঙ্গে প্রয়োজনের বাইরে কথা বলেন না। সেটা হতে পারে ফোন কল, জুম মিটিং বা এসএমএসের মাধ্যমে। এটা মনে রাখুন, আপনি যেমন দুশ্চিন্তা করছেন, তেমনি অন্যরাও করছেন। এ সময়ে দুশ্চিন্তা কমানোর সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে পরিচিতি বাড়ানো। কখন কাকে কোন কাজে লাগবে, সেটা কেউই জানে না। আবার যদি মনে হয় যোগাযোগ করার মতো আপনার কেউ নেই, তাহলে এমন অনেক সাইট আছে, যেখানে আপনি নতুন মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারবেন।
স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিন
আমাদের মধ্যে এই ধারণা চলে আসতে পারে, ঘরে বসে আছি মানে আমি নিরাপদ। হুম নিরাপদ, তবে সেটা পুরোপুরি নয়। এটি এমন এক ভাইরাস, যা কোথা থেকে কিভাবে কখন আপনার মধ্যে প্রবেশ করবে, তা জানা যাবে না। এর থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার সবচেয়ে সহজ উপায় নিজেকে ফিট রাখা। এ জন্য আপনাকে বাসায় বসে সঠিক সময়ে খেতে হবে, অনুশীলন করতে হবে, পর্যাপ্ত ঘুমাতে হবে। যাঁদের ডায়াবেটিস আছে, তাঁদের জন্য এমন সবচেয়ে কঠিন সময়। কারণ, হাঁটাহাঁটি করতে বাইরে যেতে পারছেন না। উপায় হচ্ছে, বাসার কাজগুলো করুন, আর বাসার মধ্যেই যতটুকু সম্ভব হাঁটুন। কঠোর বিধিনিষেধে থাকা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যও ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। শরীরের যত্নের পাশাপাশি মনেরও যত্ন নেওয়া জরুরি।
নিতে পারেন ছুটি
ছুটির কথা শুনে আপনি নিশ্চয় অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন, একপ্রকার ছুটিতেই তো আছেন। বাসায় বসে বসে অফিস করা মানে তো ছুটিতেই থাকা। আসলেই কি তা–ই? বাসায় কিংবা অফিসে যেখানে বসেই কাজ করুন না কেন, একটা প্রেশার নিতেই হচ্ছে আপনাকে। এই প্রেশার থেকে মুক্তি পেতে হলে বার্ষিক ছুটিটা নিয়ে নিন, যদি সুযোগ থাকে। অফিসের বিষয়গুলো থেকে নিজেকে একদম আলাদা করে ফেলুন। ছুটিটা ব্যয় করতে পারেন পুরোপুরি নিজের যত্ন নিয়ে।