What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected নিউইয়র্কের নীলাকাশে ঝকঝকে রোদ (হুমায়ুন আহমেদ) (1 Viewer)

Kaptan Jacksparoow

Community Team
Elite Leader
Joined
Apr 6, 2019
Threads
328
Messages
5,981
Credits
45,360
T-Shirt
Profile Music
Recipe sushi
Rocket
Euro Banknote
Butterfly
উবাস্তে ইয়ামা


'উবাস্তে'র অর্থ ময়লা, ইংরেজিতে গারবেজ। 'ইয়ামা' শব্দের অর্থ পর্বত। জাপানি এই শব্দ দুটির অর্থ—যে পর্বতে ময়লা ফেলা হয়।
প্রাচীন জাপানের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে লালন-পালন করার সামর্থ্য ছিল না। একটা পর্যায়ে তারা পিঠে করে বাবা-মাকে নিয়ে পর্বতের খাদে ফেলে দিয়ে আসত। সবার কাছে এটাই ছিল স্বাভাবিক। পিঠে চড়া বৃদ্ধ পিতা-মাতার হাতে গাছের একটি ছোট্ট ডাল থাকত। এই ডাল দিয়ে তারা পুত্রের গায়ে আস্তে আস্তে বাড়ি দিত। এই কাজটা তারা কেন করত, তা পরিষ্কার নয়। বলা হয়ে থাকে, এই কাজটি তারা করত, যেন পুত্র ফিরে যাওয়ার পথ ভুলে না যায়।
আজকের জাপান অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের তৃতীয় শক্তি। জাপানি ইয়েনের পাশে আমেরিকান ডলার দাঁড়াতেই পারছে না। কিন্তু উবাস্তে ইয়ামা এখনো জাপানে আছে। তবে এখন আর পাহাড়-পর্বতে জাপানিরা বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে রেখে আসছে না। তারা ফেলে দিয়ে আসছে আধুনিক ওল্ড হোমে।
এই বৃদ্ধনিবাসের একটি গল্প নাসিরের কাছে শুনলাম। [ড. নাসির উদ্দিন জমাদার, পূর্ণ প্রফেসর, রিক্কিও বিশ্ববিদ্যালয়, জাপান।] বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে নাসির আমাকে দেখতে আমেরিকায় এসেছে। এখন আমার সঙ্গে বাস করছে। প্রতিদিন জাপানি রান্না রাঁধছে। অতি পুষ্টিকর এবং অতি অখাদ্য এসব খাবার খেতে আমাকে বাধ্য করছে।
যা-ই হোক, বৃদ্ধনিবাসের গল্পটা বলি। নাসির প্রথম যৌবনে ভলান্টিয়ার হিসেবে জাপানিদের বৃদ্ধনিবাসে কাজ করত। অথর্ব এসব মানুষকে গোসল করানো, খাওয়ানো ছিল তার কাজ। একদিন নাসিরের উপস্থিতিতে এক বৃদ্ধা তাঁর তিন পুত্রকে খবর পাঠালেন। তাদের বললেন, বাবারা! আমার খুব শখ বৃদ্ধাশ্রমে মৃত্যু না হয়, তোমাদের কারও বাসায় আমার মৃত্যু হয়। আমার কাছে নগদ পাঁচ কোটি টাকা আছে (বাংলাদেশি হিসাবে বলা হলো)। তোমাদের মধ্যে যে আমাকে জীবনের শেষ কটি দিন রাখবে, তাকে আমি এই পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে যাব।
তিন পুত্রই কিছুক্ষণ মাথা চুলকে বলল, মা, সম্ভব হবে না। বাসা ছোট। এখন তোমার অনেক সেবা দরকার। সেটা পারব না।
বৃদ্ধ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ঠিক আছে।

আমরা অনেক ভালো আছি না? বাংলাদেশের হতদরিদ্র রিকশাওয়ালা তার রিকশার পেছনে লিখে রাখে 'মায়ের দোয়া'। বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবা করা শুধু যে আমাদের সংস্কৃতির অংশ, তা নয়, এটা বাধ্যতামূলক।
যৌথ পরিবার বাংলাদেশে এখন আর নেই। যৌথ পরিবার ভেঙে পড়েছে। বৃদ্ধ পিতা-মাতাদের এখন বিভিন্ন ছেলেমেয়ের বাসায় রুটিন করে থাকতে হয়। যে পুত্র বা কন্যার কাছে বৃদ্ধ পিতা বা মাতা থাকতে যান, সেই পুত্র বা কন্যা আকাশের চাঁদ হাতে পায় বলে আমার ধারণা।
ধর্মও পিতা-মাতার প্রতি আমাদের কর্তব্য বিষয়ে অনুশাসন দিয়ে গেছে। অনেক উদাহরণের মধ্যে একটি দিচ্ছি, 'শো গ্র্যাটিচ্যুড টু মি অ্যান্ড টু ইয়োর প্যারেন্টস।' (সূরা ৩১, আয়াত-১৪) আল্লাহপাক তাঁর নিজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পরপরই বলেছেন পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা।
সূরা ১৭, আয়াত ২৩-এ বলা হয়েছে, 'ইয়োর লর্ড ডিক্রিড দ্যাট ইউ ওয়রশিপ নান বাট হিম, অ্যান্ড দ্যাট ইউ বি কাইন্ড টু প্যারেন্টস।' আমি কল্পনায় দেখার চেষ্টা করলাম, আমার বয়স ৭০ হয়েছে। আমি অথর্ব, সংসারে অপ্রয়োজনীয়। আমার বড় পুত্র নুহাশ হুমায়ূন আমাকে পিঠে করে নিয়ে যাচ্ছে উবাস্তে বেঙ্গালওয়ানে [যেহেতু বাংলাদেশে পর্বত নেই, ফেলে দিতে হবে সমুদ্রে। বঙ্গোপসাগরের জাপানি নাম বেঙ্গালওয়ান।] আমার হাতে ছোট্ট লাঠি। আমি লাঠি দিয়ে পুত্রের গায়ে মাঝেমধ্যে বাড়ি দিচ্ছি। কী ভয়ংকর! কী ভয়ংকর!!
জাপানের রিক্কিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম হয়েছে। এর মূল প্রবক্তা হলেন রিক্কিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক কাসাহারা কিওশি। এই কাজে অধ্যাপক কাসাহারাকে কয়েকবার ঢাকায় আসতে হয়েছে।
প্রতিবারই তাঁর সঙ্গী ছিলেন রিক্কিও বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দিন জমাদার। এই মানুষটির ধারণা, হুমায়ূন আহমেদ এমন একজন, যাকে অধ্যাপক কাসাহারা কিওশি খুবই পছন্দ করবেন। মূলত নাসিরের আগ্রহে আমি অধ্যাপক কাসাহারাকে ঢাকা ক্লাবে ডিনারে দাওয়াত করলাম। ডিনারের একটি পর্যায়ে কাসাহারা ওয়াইনের গ্লাস হাতে নিয়ে ঘোষণা করলেন, হুমায়ূন আহমেদ তাঁর বন্ধু।
এরপর তাঁর সঙ্গে আরও দুবার আমার দেখা হলো। প্রতিবারই আমার রসিকতায় তাঁকে হো হো করে হাসতে দেখলাম। একবার তিনি গলা নিচু করে বললেন, বন্ধু, আমি খুব খারাপ অবস্থায় আছি। আমার মানিব্যাগের ওপর আমার কোনো কন্ট্রোল নেই। মানিব্যাগ জমা রাখতে হয় আমার স্ত্রীর কাছে। আমাকে আমার হাতখরচের টাকাও তার কাছ থেকে চেয়ে নিতে হয়। তোমার কী অবস্থা আমাকে বলো।
যা-ই হোক, বন্ধু কাসাহারা ড. নাসির জমাদারের হাতে একটি খাম আমাকে পাঠিয়েছেন। নাসির খুবই লজ্জিত ভঙ্গিতে খামটা আমার হাতে দিয়ে বলল, আপনার বন্ধু কাসাহারা এই খামটি আপনাকে দিতে বলেছেন। আমি আপনার স্বভাব জানি। আমি ভয় পাচ্ছি, আপনি খামটি নেবেন না। তাহলে আপনার বন্ধু মনে কষ্ট পাবেন। জাপানের নিয়ম হচ্ছে, বন্ধুর আনন্দে ও দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়ানো।
আমি খাম খুলে দেখি, সেখানে সাত হাজার আমেরিকান ডলার। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ছয় লাখ টাকা। অধ্যাপক কাসাহারা (যাঁর মানিব্যাগের ওপর কন্ট্রোল নেই) তাঁর বন্ধুর চিকি ৎ সার জন্য পাঠিয়েছেন।
উবাস্তে ইয়ামার দেশের একজন মানুষের এই আচরণ হিসাবে মেলে না।

'পৃথিবীর এই ক্লান্ত এ অশান্ত কিনারার দেশে
এখানে আশ্চর্য সব মানুষ রয়েছে।'
—জীবনানন্দ দাশ

সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, তারিখ: ০১-১২-২০১১
 

Users who are viewing this thread

Back
Top