প্রতিটি দেশের নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হলো তার পরিচয়। এমনই এক দারুণ ঐতিহ্যবাহী দেশ হলো জাপান। জাপানের প্রগতিশীল শহরগুলো দেখে মনে হয় যেন সুন্দর কোনো আধুনিক যুগের ছবি দেখছি। করোনার উপদ্রবে এখন আমরা সবাই গৃহবন্দী। কিন্তু বাড়িতে বসেই জাপানে ঘুরে এলে কেমন হয়? আজ কথা বলছি জাপানের তিনটি পথখাবার নিয়ে। এর সঙ্গে থাকল জিও ট্রাভেলার ইসাত বিনতে কামালের কিছু মন্ত্রমুগ্ধ করা ছবি।
জাপানের প্রিয় চেরি ব্লসম উৎসব
নামে চেরি থাকলেও এই উৎসব কিন্তু চেরি ফলের গাছ ঘিরে নয়, বরং যুবশক্তির প্রধান আকর্ষণ হলো এক অত্যন্ত সুন্দর ও স্নিগ্ধতাময় গাছকে ঘিরে। জাপানে এর প্রচলিত নাম হলো হনামি। চেরি ব্লসম অথবা সাকুরা জাপানের শুধু গ্রামাঞ্চলে নয়, শহরের নানা কোণে খুব সহজে চোখে পড়ে। এই ফুল দেখতে খুবই মনোরম, তাই প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটক এটি অবলোকন করতে বিশ্বের নানা জায়গা থেকে জাপানে আসেন।
চেরি গাছে নীচে ইসাত বিনতে কামাল
যদিও এখন বিশ্বের নানা জায়গায় চেরি ব্লসম উৎসব উদ্যাপন করা হয়, কিন্তু জাপানেই এর আসল শিকড়। এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ হলো জাপানের স্বতঃস্ফূর্ত মনোভাব ও ঐতিহ্যের অটুট বন্ধন। এই উৎসবের আরেক প্রধান আকর্ষণ হলো স্থানীয় খাবার অথবা স্ট্রিট ফুড। ছোট ছোট দোকানে খাবারের সঙ্গে পাওয়া যায় ছোট উপহারসামগ্রীও।
জাপান হলো এক অত্যন্ত উন্নত দেশ এবং প্রযুক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলতে হয় বলে জাপানিদের জীবনও ভীষণ ব্যস্ততাময়। এ জন্য তাদের পক্ষে বাড়িতে খাবার বানানো সব সময় সম্ভব হয় না। ফলে গড়ে উঠেছে পথখাবারের সংস্কৃতি।
একটি দেশ ও তার মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে সেখানকার খাবার, অনুষ্ঠান ও রীতি-রেওয়াজ। সেটি পৃথিবীর যে দেশই হোক না কেন, তার নিজস্ব একটি পরিচয় থাকবে। এই একটা কারণে প্রতিটি দেশের এক আলাদা আভিজাত্য আছে।
জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড
জাপানের আরেক খুবই আকর্ষণীয় চিত্র হলো তার লোভনীয় খাবারদাবার। আগেই বলা হয়েছে, জাপানিদের রোজকার জীবন খুবই প্রযুক্তিময়। তাদের কাজের জীবন খুব গতিময় ও ব্যস্ত। তাই বেশির ভাগ সময় বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করতে খুব অসুবিধা হয় জাপানিদের। এখানে তাই বলা হলো কিছু খাবারের কথা, যা সহজেই মেলে জাপানে। খেতেও মজাদার আর দামেও সস্তা।
জাপান দেশটি খুব বৈচিত্র্যময়। নানা প্রান্তে মেলে নানা স্বাদের খাবার। কিন্তু কিছু আছে জনপ্রিয়। এই যেমন ইয়াকিতরি, ডাম্পলিং কিংবা তাকেয়াকি। প্রথমে আসি তাকেয়াকির কথায়। ময়দার গোলাকার মণ্ডের ভেতর ভরা হয় নানা রকমের সামুদ্রিক জীব। অক্টোপাস, স্কুইড ও আরও অনেক কিছু। তাকেয়াকির প্রধান ভিত্তি হলো ওসাকা ঐতিহ্য, তাই এটিকে অনেকেই বলে 'ট্রু জাপানিজ'।
এরপর আসি ডাম্পলিংয়ে। অনেকেই বলেন, এর উৎপত্তি তিব্বতে। তা সে যা–ই হোক, জাপানের রাস্তায় এর প্রচলন খুবই বেশি। স্বাদ অনুযায়ী এতে মাছ, মাংস কিংবা নানা সবজির মেলবন্ধন ঘটে।
আর স্ট্রিট ফুড বলে ইয়াকিতরির কথা না বললে সেটা অবিচার হবে। চিকেন বা শূকরের মাংসের নানা অংশ দিয়ে সাধারণত বানানো হয় অত্যন্ত সুস্বাদু পদটি।
এই ইয়াকিতরির সসও এক দুর্দান্ত সৃষ্টি। টক, ঝাল ও মিষ্টির সঠিক সমন্বয় রয়েছে এতে। সাধারণত ইয়াকিতরির মাংস কাঠকয়লার ওপর রেখে ঝলসাতে হয়, তাই এতে একটি খুব সুন্দর ধোঁয়ার সৌরভ পাওয়া যায়।
* লেখক: শুভব্রত মৈত্র | ফুড কলামিস্ট, ফুডিটক্স