কুদ্দুছের একদিন- হুমায়ুন আহাম্মেদ
মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস পত্রিকা অফিসে কাজ করে।
বড় কাজ না, ছোট কাজ–চা বানানো, সম্পাদক সাহেবের জন্যে সিগারেট এনে দেয়া। ড্রাইভার গাড়িতে তেল নেবে সঙ্গে যাওয়া, যাতে তেল চুরি করতে না পারে। এই ধরনের টালটু-ফালটু কাজ।
কুদ্দুসের বয়স বাহান্ন। বাহান্ন থেকে ষোল বাদ দিলে থাকে ছয়ত্রিশ। সোল। বছরে মেট্রিক পরীক্ষা দেবার পর (পুরো পরীক্ষা দিতে পারেনি, ইংরেজি প্রথম পত্র পর্যন্ত দিয়েছিল) গত ছয়ত্রিশ বছর ধরে সে নানান ধরনের চাকরি করেছে। সবই টালুট-ফালটু চাকরি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কিছু দিন সে একটা চোরের অ্যাসিসট্যান্টও ছিল। নিতান্ত ভদ্র ধরনের চোর। সুন্দর চেহারা। স্যুট পরে ঘুরে বেড়াত। শান্তিনিকেতনি ভাষায় কথা বলতো। বোঝার কোন উপায়ই নেই লোকটা বিরাট চোর। কুদ্দুস যেদিন বুঝতে পেরেছে সেদিনই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে গিয়ে মসজিদের খতিবের মাধ্যমে তওবা করেছে। চোরের। সঙ্গে বাস করে চারশ টাকার মত জমিয়েছিল, তার অর্ধেক মসজিদের দানবাক্সে ফেলে দিয়েছে। ইচ্ছা ছিল পুরোটাই দিয়ে দেয়, না খেয়ে থাকতে হবে বলে দিতে পারেনি।
গত ছয়ত্রিশ বছরে যে সব চাকরি কুদ্দুস করেছে তার তুলনায় পত্রিকা অফিসের চাকরিটা শুধু ভাল না, অসম্ভব ভাল। দেশ-বিদেশের টাটকা খবরের সঙ্গে যুক্ত থাকার মত সৌভাগ্য বাংলাদেশের কটা মানুষের আছে? সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বিনা পয়সায় খবরের কাগজ পড়া যাচ্ছে। এই সৌভাগ্য তো সহজ সৌভাগ্য না, জটিল সৌভাগ্য।
প্রতিদিন সকাল বেলা খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে নিজের সৌভাগ্যে কুদ্দুস নিজেকেই ঈর্ষা করে। যুবক বয়সে সে একবার গণক দিয়ে হাত দেখিয়েছিল। গণক। বলেছিল–শেষ বয়সটা আপনার মহাসুখে কাটবে। বিরাট সম্মান পাবেন। পত্রিকা
অফিসে কাজটা পাবার পর কুদ্দুসের ধারণা গণক মোটামুটি সত্যি কথাই বলেছে। শুধু। বিরাট সম্মানের জায়গায় একটু ভুল করেছে। তা কিছু ভুল-ত্রুটি তো হবেই।
কুদ্দুস রাতে পত্রিকা অফিসেই ঘুমায়। কোন এক কোনা-কানা খুঁজে নিয়ে মাদুর। পেতে শুয়ে পড়ে। চাদর দিয়ে সারা শরীর ঢেকে ফেললে মশার হাত থেকে মুক্তি। মেস করে থাকতে হচ্ছে না বলে বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাচ্ছে। বেতন যা পাওয়া যায়। তাতে আলাদা ঘর ভাড়া করে বা মেস করে থাকা সম্ভব না। তার দরকারই বা কি? সে একা মানুষ। এত শৌখিনতার তার দরকার কি? পত্রিকা অফিসে কাজ করতে এসে তার গত তিন বছরে দশ হাজার পাঁচশ টাকা জমে গেছে। অকল্পনীয় একটা ব্যাপার। টাকাটা পত্রিকার সম্পাদক মতিয়ুর রহমান সাহেবের কাছে জমা আছে। চাইলেই উনি দেন। কুদ্দুসের টাকার কোন দরকার নেই, তবু মাঝে মাঝে মতিয়ুর রহমান সাহেবের কাছ থেকে টাকগুলি চেয়ে আনে। সারাদিন হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে সন্ধ্যাবেলা ফেরত দিয়ে আসে। টাকা হাতে নিরিবিলি বসে থাকতে তার ভাল লাগে। নিজেকে রাজা-বাদশার মত মনে হয়।
আজ সকালে তেমন কোন কারণ ছাড়াই কুদ্দুসের নিজেকে রাজা-বাদশার মত মনে হতে লাগল। সে চায়ের কাপ এবং পত্রিকা হাতে বসেছে। পা নাচাতে নাচাতে কাগজ পড়ছে। মজার মজার খবরে আজ কাগজ ভর্তি। খবরগুলি পড়ে ফেললেই তো মজা শেষ হয়ে গেল, কাজেই কুদ্দুস প্রথমে শুধু হেড লাইনে চোখ বুলাবে। ভেতরের ব্যাপারগুলি ধীরে সুস্থে পড়া যাবে। তাড়া কিছু নেই। সম্পাদক সাহেব চলে এসেছেন। তাকে প্রথম দফার চা দেয়া হয়েছে, তিনি ঘণ্টাখানিকের ভেতর আর ডাকবেন না। কুদ্দুস শিস দিয়ে একটা গানের সুর তোলার চেষ্টা করতে লাগল–পাগল মন …। গানটা খুব হিট করেছে।
কুদ্দুস পত্রিকার তিন নাম্বার পাতাটা খুলল। আজকের দিনটি কেমন যাবে তিন নম্বর পাতায় ছাপা হয়। কুদ্দুস এই অংশটা প্রথম পড়ে। তার ধনু রাশি। তার ব্যাপারে আজকের দিনটি কেমন যাবেতে যা লেখা হয় সব মিলে যায়। একবার লেখা হল দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। সেদিন অকারণে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বুড়ো আঙুলের। নখের অর্ধেকটা ভেঙে গেল।
আজকের রাশিফলে লেখা–
ধনু রাশির জন্যে আজ যাত্রা শুভ। ভ্রমণের যোগ আছে। কিঞ্চিত অর্থনাশের আশঙ্কা। শত্রুপক্ষের তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। শত্রুর কারণে সম্মানহানির আশঙ্কা।
সম্মানহানির আশংকায় কুদ্দুস খানিকটা চিন্তিত বোধ করছে। সম্মান বলতে গেলে কিছুই নেই। যা আছে তাও যদি চলে যায় তো মুশকিল। পত্রিকার সব হেড লাইন শেষ করবার আগেই কুদ্দুসের ডাক পড়ল। মতিয়ুর রহমান সাহেবের ইলেকট্রিক বেল ঝনঝন শব্দে বেজে উঠল। কুদ্দুস এমনভাবে লাফিয়ে উঠল যে তার কাপ থেকে চা পুরোটা হলকে গায়ে পড়ে গেল। শার্টটা নুতন কেনা। আজ নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার পরা হয়েছে। শাদা কাপড়ে চায়ের রঙ সহজে ওঠে না। এক্ষুণি ধুয়ে ফেলতে পারলে হত। সেটা সম্ভব না। মতিয়ুর রহমান স্যার ডেকেছেন। এক সেকেন্ড অপেক্ষা করা যাবে না। কুদ্দুস প্রায় ছুটে সম্পাদক সাহেবের ঘরে ঢুকল।
মতিয়ুর রহমান সাহেব বললেন, তোর খবর কি রে কুদ্দুস?
কুদ্দুস বিনয়ে মাথা নিচু করে বলল, খবর ভাল স্যার।
একটা কাজ করে দে তো–এই চিঠিটা নিয়ে যা। নাম-ঠিকানা লেখা আছে। হাতে হাতে দিয়ে আসবি।
জি আচ্ছা, স্যার।
জাভেদ সাহেব ইস্টার্ন প্লাজার নয় তলায় থাকেন। ইস্টার্ন প্লাজা চিনিস তো?
জ্বি স্যার, চিনি।
খুবই জরুরী চিঠি। হাতে হাতে দিবি। উনাকে বলবি আমাকে টেলিফোন করতে। আমি অফিসেই থাকব। নে টাকাটা নে, রিকশা করে চলে যা।
মতিয়ুর রহমান সাহেব কুড়ি টাকার একটা নোট বের করে কুদ্দুসের হাতে দিলেন। কুদ্দুস টাকা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হল। রওনা হবার আগে শার্টটা পানি দিয়ে একবার ধুয়ে ফেলতে হবে। কতক্ষণের মামলা? কুদ্দুস বাথরুমের দিকে যাচ্ছে, আবার মতিয়ুর রহমান সাহেবের বেল বেজে উঠল। আবারও কুদ্দুস ছুটে গিয়ে ঘরে ঢুকল। সম্পদাক সাহেবের ঘরে ঢুকলে কুদ্দুসের মাথা ঠিক থাকে না।
কুদ্দুস।
জ্বি স্যার।
রিকশায় যাওয়ার দরকার নেই, দেরি হবে। তুই এক কাজ কর, আমার গাড়ি নিয়ে চলে যা। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি।
জি আচ্ছা, স্যার।
রিকশা ভাড়ার টাকাটা ফেরত দেবার জন্যে কুদ্দুস কুড়ি টাকার নোটটা বের করল। মতিয়ুর রহমান সাহেব বললেন, টাকা ফেরত দিতে হবে না। তুই দেরি করিস না। চলে যা।
শার্ট না ধুয়েই কুদ্দুস গাড়িতে উঠল। তার মনটা খুঁতখুঁত করতে লাগল। শার্টের এই রঙ তো আর উঠবে না। নতুন শার্ট। মাত্র তিনবার পরা হয়েছে। গাড়িতে উঠে তার আরেকটু মন খারাপ হল–আবার একটা ভুল করা হয়েছে। পত্রিকাটা সাথে নিয়ে এলে হত। গাড়িতে যেতে যেতে কাগজ পড়ার আলাদা একটা মজা আছে। বসনিয়া-হার্জিগোভিনার গরম খবর আছে। আজকের দিনটা ভুল দিয়ে শুরু হয়েছে। আজকের তারিখটা কত যেন? ১৪ই এপ্রিল ১৯৯৬, তারিখটা তার জন্যে শুভ না।
মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুস পত্রিকা অফিসে কাজ করে।
বড় কাজ না, ছোট কাজ–চা বানানো, সম্পাদক সাহেবের জন্যে সিগারেট এনে দেয়া। ড্রাইভার গাড়িতে তেল নেবে সঙ্গে যাওয়া, যাতে তেল চুরি করতে না পারে। এই ধরনের টালটু-ফালটু কাজ।
কুদ্দুসের বয়স বাহান্ন। বাহান্ন থেকে ষোল বাদ দিলে থাকে ছয়ত্রিশ। সোল। বছরে মেট্রিক পরীক্ষা দেবার পর (পুরো পরীক্ষা দিতে পারেনি, ইংরেজি প্রথম পত্র পর্যন্ত দিয়েছিল) গত ছয়ত্রিশ বছর ধরে সে নানান ধরনের চাকরি করেছে। সবই টালুট-ফালটু চাকরি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, কিছু দিন সে একটা চোরের অ্যাসিসট্যান্টও ছিল। নিতান্ত ভদ্র ধরনের চোর। সুন্দর চেহারা। স্যুট পরে ঘুরে বেড়াত। শান্তিনিকেতনি ভাষায় কথা বলতো। বোঝার কোন উপায়ই নেই লোকটা বিরাট চোর। কুদ্দুস যেদিন বুঝতে পেরেছে সেদিনই চাকরি ছেড়ে দিয়ে বায়তুল মোকাররম মসজিদে গিয়ে মসজিদের খতিবের মাধ্যমে তওবা করেছে। চোরের। সঙ্গে বাস করে চারশ টাকার মত জমিয়েছিল, তার অর্ধেক মসজিদের দানবাক্সে ফেলে দিয়েছে। ইচ্ছা ছিল পুরোটাই দিয়ে দেয়, না খেয়ে থাকতে হবে বলে দিতে পারেনি।
গত ছয়ত্রিশ বছরে যে সব চাকরি কুদ্দুস করেছে তার তুলনায় পত্রিকা অফিসের চাকরিটা শুধু ভাল না, অসম্ভব ভাল। দেশ-বিদেশের টাটকা খবরের সঙ্গে যুক্ত থাকার মত সৌভাগ্য বাংলাদেশের কটা মানুষের আছে? সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বিনা পয়সায় খবরের কাগজ পড়া যাচ্ছে। এই সৌভাগ্য তো সহজ সৌভাগ্য না, জটিল সৌভাগ্য।
প্রতিদিন সকাল বেলা খবরের কাগজটা হাতে নিয়ে নিজের সৌভাগ্যে কুদ্দুস নিজেকেই ঈর্ষা করে। যুবক বয়সে সে একবার গণক দিয়ে হাত দেখিয়েছিল। গণক। বলেছিল–শেষ বয়সটা আপনার মহাসুখে কাটবে। বিরাট সম্মান পাবেন। পত্রিকা
অফিসে কাজটা পাবার পর কুদ্দুসের ধারণা গণক মোটামুটি সত্যি কথাই বলেছে। শুধু। বিরাট সম্মানের জায়গায় একটু ভুল করেছে। তা কিছু ভুল-ত্রুটি তো হবেই।
কুদ্দুস রাতে পত্রিকা অফিসেই ঘুমায়। কোন এক কোনা-কানা খুঁজে নিয়ে মাদুর। পেতে শুয়ে পড়ে। চাদর দিয়ে সারা শরীর ঢেকে ফেললে মশার হাত থেকে মুক্তি। মেস করে থাকতে হচ্ছে না বলে বেশ কিছু টাকা বেঁচে যাচ্ছে। বেতন যা পাওয়া যায়। তাতে আলাদা ঘর ভাড়া করে বা মেস করে থাকা সম্ভব না। তার দরকারই বা কি? সে একা মানুষ। এত শৌখিনতার তার দরকার কি? পত্রিকা অফিসে কাজ করতে এসে তার গত তিন বছরে দশ হাজার পাঁচশ টাকা জমে গেছে। অকল্পনীয় একটা ব্যাপার। টাকাটা পত্রিকার সম্পাদক মতিয়ুর রহমান সাহেবের কাছে জমা আছে। চাইলেই উনি দেন। কুদ্দুসের টাকার কোন দরকার নেই, তবু মাঝে মাঝে মতিয়ুর রহমান সাহেবের কাছ থেকে টাকগুলি চেয়ে আনে। সারাদিন হাতে নিয়ে চুপচাপ বসে থেকে সন্ধ্যাবেলা ফেরত দিয়ে আসে। টাকা হাতে নিরিবিলি বসে থাকতে তার ভাল লাগে। নিজেকে রাজা-বাদশার মত মনে হয়।
আজ সকালে তেমন কোন কারণ ছাড়াই কুদ্দুসের নিজেকে রাজা-বাদশার মত মনে হতে লাগল। সে চায়ের কাপ এবং পত্রিকা হাতে বসেছে। পা নাচাতে নাচাতে কাগজ পড়ছে। মজার মজার খবরে আজ কাগজ ভর্তি। খবরগুলি পড়ে ফেললেই তো মজা শেষ হয়ে গেল, কাজেই কুদ্দুস প্রথমে শুধু হেড লাইনে চোখ বুলাবে। ভেতরের ব্যাপারগুলি ধীরে সুস্থে পড়া যাবে। তাড়া কিছু নেই। সম্পাদক সাহেব চলে এসেছেন। তাকে প্রথম দফার চা দেয়া হয়েছে, তিনি ঘণ্টাখানিকের ভেতর আর ডাকবেন না। কুদ্দুস শিস দিয়ে একটা গানের সুর তোলার চেষ্টা করতে লাগল–পাগল মন …। গানটা খুব হিট করেছে।
কুদ্দুস পত্রিকার তিন নাম্বার পাতাটা খুলল। আজকের দিনটি কেমন যাবে তিন নম্বর পাতায় ছাপা হয়। কুদ্দুস এই অংশটা প্রথম পড়ে। তার ধনু রাশি। তার ব্যাপারে আজকের দিনটি কেমন যাবেতে যা লেখা হয় সব মিলে যায়। একবার লেখা হল দুর্ঘটনার সম্ভাবনা। সেদিন অকারণে হুমড়ি খেয়ে পড়ে বুড়ো আঙুলের। নখের অর্ধেকটা ভেঙে গেল।
আজকের রাশিফলে লেখা–
ধনু রাশির জন্যে আজ যাত্রা শুভ। ভ্রমণের যোগ আছে। কিঞ্চিত অর্থনাশের আশঙ্কা। শত্রুপক্ষের তৎপরতা বৃদ্ধি পাবে। শত্রুর কারণে সম্মানহানির আশঙ্কা।
সম্মানহানির আশংকায় কুদ্দুস খানিকটা চিন্তিত বোধ করছে। সম্মান বলতে গেলে কিছুই নেই। যা আছে তাও যদি চলে যায় তো মুশকিল। পত্রিকার সব হেড লাইন শেষ করবার আগেই কুদ্দুসের ডাক পড়ল। মতিয়ুর রহমান সাহেবের ইলেকট্রিক বেল ঝনঝন শব্দে বেজে উঠল। কুদ্দুস এমনভাবে লাফিয়ে উঠল যে তার কাপ থেকে চা পুরোটা হলকে গায়ে পড়ে গেল। শার্টটা নুতন কেনা। আজ নিয়ে মাত্র তৃতীয়বার পরা হয়েছে। শাদা কাপড়ে চায়ের রঙ সহজে ওঠে না। এক্ষুণি ধুয়ে ফেলতে পারলে হত। সেটা সম্ভব না। মতিয়ুর রহমান স্যার ডেকেছেন। এক সেকেন্ড অপেক্ষা করা যাবে না। কুদ্দুস প্রায় ছুটে সম্পাদক সাহেবের ঘরে ঢুকল।
মতিয়ুর রহমান সাহেব বললেন, তোর খবর কি রে কুদ্দুস?
কুদ্দুস বিনয়ে মাথা নিচু করে বলল, খবর ভাল স্যার।
একটা কাজ করে দে তো–এই চিঠিটা নিয়ে যা। নাম-ঠিকানা লেখা আছে। হাতে হাতে দিয়ে আসবি।
জি আচ্ছা, স্যার।
জাভেদ সাহেব ইস্টার্ন প্লাজার নয় তলায় থাকেন। ইস্টার্ন প্লাজা চিনিস তো?
জ্বি স্যার, চিনি।
খুবই জরুরী চিঠি। হাতে হাতে দিবি। উনাকে বলবি আমাকে টেলিফোন করতে। আমি অফিসেই থাকব। নে টাকাটা নে, রিকশা করে চলে যা।
মতিয়ুর রহমান সাহেব কুড়ি টাকার একটা নোট বের করে কুদ্দুসের হাতে দিলেন। কুদ্দুস টাকা হাতে নিয়ে ঘর থেকে বের হল। রওনা হবার আগে শার্টটা পানি দিয়ে একবার ধুয়ে ফেলতে হবে। কতক্ষণের মামলা? কুদ্দুস বাথরুমের দিকে যাচ্ছে, আবার মতিয়ুর রহমান সাহেবের বেল বেজে উঠল। আবারও কুদ্দুস ছুটে গিয়ে ঘরে ঢুকল। সম্পদাক সাহেবের ঘরে ঢুকলে কুদ্দুসের মাথা ঠিক থাকে না।
কুদ্দুস।
জ্বি স্যার।
রিকশায় যাওয়ার দরকার নেই, দেরি হবে। তুই এক কাজ কর, আমার গাড়ি নিয়ে চলে যা। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি।
জি আচ্ছা, স্যার।
রিকশা ভাড়ার টাকাটা ফেরত দেবার জন্যে কুদ্দুস কুড়ি টাকার নোটটা বের করল। মতিয়ুর রহমান সাহেব বললেন, টাকা ফেরত দিতে হবে না। তুই দেরি করিস না। চলে যা।
শার্ট না ধুয়েই কুদ্দুস গাড়িতে উঠল। তার মনটা খুঁতখুঁত করতে লাগল। শার্টের এই রঙ তো আর উঠবে না। নতুন শার্ট। মাত্র তিনবার পরা হয়েছে। গাড়িতে উঠে তার আরেকটু মন খারাপ হল–আবার একটা ভুল করা হয়েছে। পত্রিকাটা সাথে নিয়ে এলে হত। গাড়িতে যেতে যেতে কাগজ পড়ার আলাদা একটা মজা আছে। বসনিয়া-হার্জিগোভিনার গরম খবর আছে। আজকের দিনটা ভুল দিয়ে শুরু হয়েছে। আজকের তারিখটা কত যেন? ১৪ই এপ্রিল ১৯৯৬, তারিখটা তার জন্যে শুভ না।