What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঐতিহ্য আর আধুনিকতার অপূর্ব মেলবন্ধন - শেষ পর্ব (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
bASrmn7.jpg


লাঞ্চের পরের সেশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হলো৷ আমাকে একটা সেশনে প্যানেল স্পিকার হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আমি খুলনায় মোলার এক প্রত্যন্ত গ্রামে কিশোর-কিশোরীদের যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য এবং তাদের সে সম্পর্কিত প্রাথমিক সেবা নিয়ে একটা প্রজেক্ট ডিজাইন এবং বাস্তবায়ন করেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতাটাই তুলে ধরার কথা ছিল। কনফারেন্সের এক মাস আগে থেকেই সেই স্পিচ নিয়ে প্রস্তুতি নিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে বহুবার। দেখা হয়ে ভীষণ ভালো লাগল। তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত আর খুব হাসিখুশি। অনেক গল্প হলো। তাঁর পূর্বপুরুষের ভিটা ফরিদপুরে।

সাতচল্লিশের দেশভাগে তাঁর দাদা পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। পরে তাঁর বাবা পড়াশোনার জন্য পাড়ি জমান লন্ডনে। মা হাঙ্গেরিয়ান। জন্ম বড় হওয়া হাঙ্গেরিতে। এখন কাজ করছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদর দপ্তর জুরিখে। বেশ ঝরঝরে বাংলায় কথা বলেন। সত্যজিতের বই আর সিনেমা নিয়ে কথায় কথায় অনেক আলাপ হলো। বুঝলাম বহুদিন শিকড় থেকে দূরে থাকলেও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ঠিকই ভোলেননি। সেদিনকার সেশন শেষে খুব ক্লান্ত ছিলাম। রাতে হোটেলের পাশে এক বার্গারের দোকান থেকে বার্গার খেয়ে সোজা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে দিলাম ঘুম। অনেকে জায়গা বদল হলে ঘুমাতে পারেন না। আমার সেসবের বালাই নেই। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘুমও হলো দারুণ।

আমার সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস। জানালার পর্দা সরাতেই দেখি ঝকঝকে সকাল, বাইরে চোখ পাতলে সহসা দৃষ্টি আটকায় না। এমন নয় যে এখানে বড় বড় বিল্ডিং নেই। আছে। তবে বাড়িগুলো ঠিক আমাদের ঢাকা শহরের মতো গায়ে গা লাগিয়ে দাঁড়িয়ে নেই। আস্তানা শহরটা যে বেশ যত্ন নিয়ে সঠিক পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা হয়েছে, সেটা এই একটু দেখেই বলে দেওয়া যায়। বড় বড় ইমারত আছে, তবে সেগুলো আকাশ ঢেকে দেয়নি। ছিমছাম সাজানো এই শহরের বুকে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে চোখে পড়বে পার্ক। শীতের মৌসুমে সেখানে পাবেন তুষার লেগে থাকা বেরি ফলের গাছ। পত্রঝরা বৃক্ষের রংবেরঙের পাতা পড়ে ছেয়ে থাকবে আপনার পায়ে চলার পথ। হাঁটতে না চাইলে একটু বসে বিশ্রাম নেওয়ার জন্য আছে বেঞ্চি। ইউরোপের বিভিন্ন শহরগুলোর ছবিতে যেমন দেখা যায়, ঠিক তেমন। এই শহরে মানুষ বেশ কম। অন্তত আমাদের তুলনায় তো বটেই। ঢাকায় প্রতি বর্গকিলোমিটারে প্রায় ২৩ হাজারের বেশি মানুষের বাস। সেখানে আস্তানায় এই সংখ্যা মাত্র দেড় হাজারের মতো।

বাইরে আকাশ দেখতে দেখতে কেমন একটা উদাস উদাস লাগছিল। বেরসিকের মতো করে অ্যালার্ম জানান দিল ৭.৩০ বেজে গেছে। আরেকটু দেরি হলে ব্রেকফাস্ট আর কনফারেন্সের বাস মিস করব। রেডি হয়ে সোজা চলে গেলাম হোটেলের ডাইনিংয়ে। ব্রেকফাস্ট নিয়ে মন্দ আশা থাকলেও গিয়ে দেখি ইংলিশ ব্রেকফাস্ট দিয়েছে। সঙ্গে অবশ্যই নানা রকমের কাজাক রুটি আর পনির। কাজাক খাবারগুলোতে পনিরের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। ব্রেকফাস্ট কোনো রকমে শেষ করে কনফারেন্স ভেন্যুর শেষ বাসটা ধরতে পারলাম। কনফারেন্স হলে মানুষে গিজগিজ করছে। যে সেশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম সেই রুমে গিয়ে দেখি সামনের সারিতে বসার আর কোনো জায়গা নেই। অগত্যা একবারে পেছনে যেখান থেকে আসলে দেখা যায় না তেমন কিছু, সেখানে বসলাম।

mHWimYJ.jpg


বাইটেরেক মনুমেন্ট, ছবি: উইকিপিডিয়া

স্বস্তির কথা হলো, এখানে রুমজুড়েই বড় স্ক্রিনে সব দেখাচ্ছে আর হেডফোনে শোনার ব্যবস্থা তো আছেই। প্রোগ্রাম ইংরেজিতে হলেও হেডফোনে তা কাজাক, রাশান, ফেঞ্চ, স্প্যানিশ, অ্যারাবিক, জার্মানসহ আরও বেশ কয়েকটি বহুল প্রচলিত ভাষায় শোনা যাচ্ছিল। যদিও বাংলার কোনো অপশন ছিল না। পেছনের সারিতে বসেই পরিচয় হলো আন্দ্রেই জেইমের সঙ্গে। ও এসেছে স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া শহর থেকে। পেশায় ডাক্তার। কলকাতায় নাকি কিছুদিন কাজও করেছে গবেষণার, দু–একটা বাংলা শব্দের মানেও বোঝে। বিশেষ কায়দায় ধন্যবাদ কথাটা ওর মুখে শুনেছি বহুবার।

কনফারেন্স রুম থেকে বের হয়ে দেখি কাঠের বক্সে থরে থরে সাজানো আপেল। এই আপেলের একটা গল্প আছে। এই সম্মেলনের প্রথম আয়োজনটি হয়েছিল আলমাটি শহরে। ১৯৭৮ সালে। কাজাখস্তান তখনো সোভিয়েত ইউনিয়নের থেকে আলাদা হয়নি। ১৯৭৮ সালের সেই বিশ্ব সম্মেলনে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা একত্র হয়ে তৈরি করেছিলেন 'আলমাটি ডিক্লেয়ারেশন'। এ বছর সেই মহাসম্মেলনের চল্লিশ বছর পূর্তিতে ডিক্লেয়ারেশনটিকে নতুনভাবে যুগোপযোগী করে সাজানোর জন্য সম্মেলনটি সেই ঐতিহাসিক আলমাটি শহরে হবে এমনটাই চেয়েছিলেন আয়োজকেরা। কিন্তু কাজাক সরকার চেয়েছে তাদের স্বল্প সময়ের বৃহৎ উন্নয়ন সারা দুনিয়াকে দেখাতে। তাই সম্মেলনটি আর ঐতিহ্যবাহী আলমাটিতে নয় বরং বর্তমান রাজধানী আস্তানাতেই আয়োজন করা হয়।

2oQkNZK.jpg


আলমাটি আপেল

তবুও আয়োজকেরা ইতিহাস আর ঐতিহ্যের শহর আলমাটির কিছুটা আবহ রাখার চেষ্টা করেছিল সেখানকার সংস্কৃতি আর খাদ্য উপস্থাপনের মাধ্যমে। এই আপেল তারই একটি নমুনা। কনফারেন্সের প্রতিদিনই প্রচুর আপেল মজুত ছিল সবার জন্য। দেখতে যেমন দারুণ, খেতে তার চেয়েও বেশি সুস্বাদ এই ভেজালমুক্ত আলমাটি আপেল। আপেল খেতে খেতে আমি আর আন্দ্রেই মিলে প্ল্যান করলাম পরের সেশন বাঙ্ক মেরে শহর দেখতে বের হব।

দুজনে মিলে হেঁটে বহু জায়গা ঘুরলাম। জাতীয় জাদুঘর, বাইটেরেক, আধুনিক সব মসজিদ, আরও অনেক স্থাপনা। আস্তানা শহরের গোড়াপত্তন হয়েছে খুব বেশি দিন হয়নি। পুরোনো স্থাপনা তাই প্রায় নেই বললেই চলে। আধুনিক এই শহরের লোকজন বেশ সভ্য বলতে হবে। আমাদের ঢাকার মতোই ট্র্যাফিক জ্যাম পোহাতে হয় আস্তানায়। কিন্তু রাস্তায় গগনবিদারি হর্নের আওয়াজ আপনি শুনবেন না। এখানে রাস্তায় ট্র্যাফিক পুলিশও খুব একটা চোখে পড়েনি। সিগন্যাল মেনে কি সুন্দর সবাই রাস্তা পার হচ্ছে। হঠাৎ আন্দ্রেই জিজ্ঞেস করল বুরগের খেতে চাই কি না? বুরগের কী জিনিস জিজ্ঞেস করতেই হাতের ইশারায় একটা বার্গার কিংয়ের শপ দেখাল।

9ZKLMXW.png


জাতীয় জাদুঘর, ছবি: সংগৃহীত

আমি এ–যাবৎকালে দেশে-বিদেশে যত জায়গায় বার্গার কিংয়ের বার্গার খেয়েছি, তার মধ্যে আস্তানাই সেরা। এরপর যত দিন আস্তানায় ছিলাম, বার্গার কিংয়ের বার্গার খেয়েই বেঁচেছি। আন্দ্রেই আর আমি মিলে আস্তানার বাইরের এক গ্রাম্য বাজারেও ঘুরতে গিয়েছিলাম। শহর থেকে একটু বের হলেই প্রকৃতি অপূর্ব মায়া বিছিয়ে রেখেছে। শুধু আফসোস হচ্ছিল। যদি আরেকটু সময় পেতাম। তবে সবচেয়ে বেশি আফসোস লেগেছে আলমাটির জন্য। কয়েকজন বলছিল, ওরা সরাসরি আস্তানার টিকিট পায়নি। তাই আলমাটি হয়ে ওদের এখানে আসতে হয়েছে। পাহাড়ে ঘেরা আলমাটির সঙ্গে নাকি আর কোনো কিছুর তুলনা হয় না।

চার দিনের সফরে আসলে ঘুরে দেখার সুযোগ হয়েছে খুব কমই। সাধারণত এ ধরনের প্রোগ্রামগুলোতে টানা ওয়ার্কশপ, সেশন ইত্যাদি থাকে। এর মধ্যেও সবচেয়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম আস্তানা অপেরায় গিয়ে। আসলেই দেখার মতো জিনিস। কনফারেন্সের শেষ দিনে শহরের মেয়রের তরফ থেকে আমাদের জন্য আস্তানা অপেরায় ডিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। ইউরোপীয় আর মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব মিশেলে তৈরি আস্তানা অপেরার পরতে পরতে সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে।

পরিবেশনায় ছিল ব্যালেরিনা নাচ, অপেরা সংগীত, গীতিনাট্য আর কাজাক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর বানানো প্রামাণ্যচিত্র। অপেরার সুরের সঙ্গে সঙ্গে বিশাল স্ক্রিনে ভেসে ওঠা টগবগে ঘোড়সওয়ার কাজাক যোদ্ধা দেখে আপানার শিহরণ জাগবেই। আস্তানা থেকে ফেরার সময় এসব স্মৃতির ঝুলি নিয়ে যখন বিমানে চেপে বসেছি, মনে শুধু একটা কথাই বারবার বেজেছে। আমি আবার আসব। ইতিহাস আর ঐতিহ্যের এই ভূমিতে আমি আবার আসব। এখনো অনেক দেখার বাকি। জানার বাকি।

(শেষ)

* লেখক: জামিয়া রহমান খান তিসা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top