What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঐতিহ্য আর আধুনিকতার অপূর্ব মেলবন্ধন - আস্তানায় পর্ব ১ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
আস্তানা। কাজাখস্তানের রাজধানী। এখন নাম নূর সুলতান। নানা ঝামেলা উতরে সেখানে পৌঁছানো গেলেও তাদের খাবার মুখে তুলতে কষ্টই হয়েছে।

IbEYKS8.jpg


'গ্লোবাল কনফারেন্স অন প্রাইমারি হেলথকেয়ার ২০১৮'তে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দারুণ খুশি আর উত্তেজনা কাজ করছিল। বিদেশযাত্রা এমনিতেই আনন্দদায়ক, তার ওপর সেটা যদি হয় বৈশ্বিক কোনো সম্মেলনে নিজের দেশের প্রতিনিধি হয়ে যাওয়া, তাহলে তো কথাই নেই। এর আগে দেশের বাইরে বলতে ভারত গিয়েছিলাম কয়েকবার। ভারত তো ঘরের কাছেই, তাই বিদেশযাত্রার যে বিশেষ অনুভূতি খুব একটা ছুঁতে পারেনি। ফলে কাজাখস্তান যাওয়া নিয়ে বিদেশযাত্রার আমেজের মাঝেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু বাদ সাধল ভিসা। কাজাখস্তানের কোনো দূতাবাস নেই বাংলাদেশে। যেতে হবে দিল্লিতে। তবে এরই মধ্যে স্বস্তি মেলে অন অ্যারাইভাল ভিসা পাওয়ার খবরে। কিন্তু এত দূরের যাত্রা, গিয়ে যদি ভিসা না পাই? কাজাক হেলথ মিনিস্ট্রি থেকে বলা হলো প্রোগ্রামের আমন্ত্রণপত্র আর তাদের মন্ত্রণালয়ের অথরাইজেশন দেখালে ভিসা নিয়ে সমস্যা হবে না।

LSUBlkc.jpg


ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্ট, ছবি: উইকিপিডিয়া

দারুণ এক অনিশ্চয়তার মধ্যেই আয়োজক কমিটি টিকিট কাটল। আমন্ত্রণপত্র পেলেও অথরাইজেশন লেটার আর পাওয়া হলো না। এদিকে ফ্লাইট রাত ৩টায়, রাত ৯টা বাজলেও তখনো অথরাইজেশন লেটার পাওয়া যায়নি, কারণ মিনিস্ট্রি বন্ধ। ফ্লাইট বাতিল হলো। পরদিন বেলা ১১টার দিকে পাওয়া গেল সেই কাঙ্ক্ষিত অথরাইজেশন লেটার। আয়োজক কমিটি আবার টিকিট কেটে জানাল, সে রাতেই ফ্লাইট। অনিশ্চয়তা আর খানিকটা উচ্চতাভীতিকে সঙ্গে নিয়েই টার্কিশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে রওনা হই ২৩ অক্টোবর। মাঝখানে আট ঘণ্টার দীর্ঘ স্টপওভার ইস্তাম্বুলের আতাতুর্ক এয়ারপোর্টে। প্রথম দিনের ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় প্রি–কনফারেন্সের একটা দিন মিস করলেও আমরা পেয়েছিলাম বিজনেস ক্লাস টিকিট।

কারণ, শেষ মুহূর্তে এ ছাড়া আর কোনো টিকিট ছিল না। বিজনেস ক্লাসের যাত্রী হওয়ায় এয়ারপোর্টেও পাওয়া গেল একটু বিশেষ কদর। ভিআইপি লাউঞ্জ, ভালো ওয়াইফাই কানেকশন, আর দারুণ সব টার্কিশ খাবারদাবার। এসব ছাড়াও ঘুরে দেখলাম পুরো এয়ারপোর্ট। ডিউটি ফ্রি শপগুলোতে এত সুন্দর সুন্দর সব টার্কিশ হ্যান্ডমেড জিনিস পাওয়া যায়! দাম দেখে আর কেনার সাহস হয় না। এভাবেই আট ঘণ্টার স্টপওভার পার করে শেষমেশ কানেক্টিং ফ্লাইটে খুব ভোরে এসে পৌঁছাই নূর সুলতান নাজারবায়েভ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট নূর সুলতান নাজারবায়েভের নামে বর্তমান রাজধানীর নাম নূর সুলতান করা হলেও এর তখনকার নাম ছিল আস্তানা।

আস্তানায় পা রেখেই কেমন অদ্ভুত একটা অনুভূতি হচ্ছিল। মধ্য এশিয়া! সেই ছোটবেলা থেকে বইয়ে শুধু পড়েই এসেছি কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরগিজস্তান, মঙ্গোলিয়া! বাবর, চেঙ্গিস খাঁ, তৈমুর লংদের ভূমি! আর আমি এখন সে ভূমিতেই! তুর্কি ভাষায় কাজাখ মানে হলো বিস্ময়। কাজাখস্তানের মানে হলো বিস্ময়ের ভূমি। চারদিকে স্থলবেষ্টিত এই দেশটি আয়তনের দিক থেকে বিশ্বে নবম। এশিয়া-ইউরোপের মধ্যকার বাণিজ্যের সেই বিখ্যাত সংযোগ পথ সিল্করোড গিয়েছে এই দেশের মধ্য দিয়ে। এদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য বেশ সমৃদ্ধ। ১৯২২ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কাজাখস্তান সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আলাদা হয়ে গঠন করা হয় নতুন একটি দেশ, নতুন একটি শাসনব্যবস্থাা।

8q3IGWj.jpg


নূর সুলতান নাজারবায়েভ ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে, ছবি: উইকিপিডিয়া

এয়ারপোর্ট চেকিংয়ে খুব একটা সময় লাগেনি। আয়োজক কমিটির স্বেচ্ছাসেবকেরা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এয়ারপোর্টেই। সেখান থেকে তাঁরাই পৌঁছিয়ে দেন হোটেল পর্যন্ত। হোটেলে পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে কোনোমতে ব্রেকফাস্ট সেরে আয়োজক কমিটির বন্দোবস্ত করে রাখা গাড়িতে চড়ে বসি। গন্তব্য নাজারভায়েভ ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন। সেখানে পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আসা উদ্যমী তরুণ-তরুণী, সরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, পরামর্শকদের সঙ্গে কথা হলো, মতবিনিময় হলো। মানুষের গল্প শুনলাম।

হঠাৎ মনে পড়ল ডলার ভাঙাতে হবে। হাতে একদমই স্থানীয় মুদ্রা নেই। এই প্রথম সরাসরি একা কাজাখ রাস্তায় বের হলাম। কাজাখস্তানের লোকেরা মূলত তাদের নিজস্ব কাজাখ ভাষায় কথা বলে। কেউ কেউ রাশানও জানে। কিন্তু সাধারণ মানুষজন ইংরেজি জানে খুব কম। আমি না জানি কাজাখ, না জানি রাশান। রাস্তায় লোকজনকে জিজ্ঞেস করলে মানি এক্সচেঞ্জ কোথায় দেখিয়ে দেয় ঠিকই, কিন্তু ডিরেকশন আমার বোধগম্য হয় না। অবশেষে একজনকে পেলাম, যিনি বোঝেন ইংরেজি। তাঁর সাহায্যে শেষমেশ মানি এক্সচেঞ্জের একটা বুথ পাওয়া গেল। কাজাখস্তানের মুদ্রার নাম তেঙ্গে। ১ ডলার সমান প্রায় ৪২০ কাজাখ তেঙ্গে। ২০০ ডলার ভাঙিয়ে প্রায় ৮৫ হাজার কাজাখ তেঙে পেলাম! গুনতে গিয়ে বেশ কয়েকবার গোলমালও পাকালাম। তবে আস্তানায় আমাদের অবাক হওয়ার পালা এটাই ছিল সবে শুরু। কারণ, মূল ধাক্কাটা খেলাম লাঞ্চের সময়।

7zTfSL9.jpg


নাজারভায়েভ ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের সামনে লেখক

নানা রকমের কাজাখ ট্রাডিশনাল ডিশ। কাজাখরা মাংস খায় প্রধানত চার ধরনের। গরু, ভেড়া, ঘোড়া ও উট। মুরগির মাংসের ডিশ আমি খুব কমই দেখেছি। সবচেয়ে বেশি চোখে পড়েছে ঘোড়া আর ভেড়ার মাংসের নানা পদ। ঘোড়ার মাংস কাজাখস্তানে খুবই জনপ্রিয়। ঘোড়া কাজাখদের ইতিহাস ও সংস্কৃতির এক অনন্য অংশ। কাজাখরা দাবি করে তারাই প্রথম বন্য ঘোড়াকে পোষ মানিয়েছিল। যোদ্ধা এই জাতির খাবারদাবার, পোশাক-আশাক, রাস্তার পাশের ম্যুরাল, ঐতিহ্য, ইতিহাস সবকিছুতেই ঘোড়ার উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।

EwWxo33.jpg


পিলাফ আর কুউরদাক, ছবি: উইকিপিডিয়া

কাজাখদের প্রধান ধর্ম ইসলাম; তাই সব খাবারদাবারই হালাল উপায়ে পরিবেশন করা। লাঞ্চে ছিল বেশবারমেক, যা তৈরি হয় ঘোড়ার বা ভেড়ার মাংস সেদ্ধ করে। ছিল পিলাফ নামের একধরনের বিরিয়ানির মতো খাবার, যা তৈরি করা হয় চাল, মাংস, গাজরসহ নানা রকম সবজিসহযোগে। আরও ছিল কাজাখদের জনপ্রিয় খাবার কুউরদাক। কুউরদাক তৈরি হয় ঘোড়ার হৃৎপিণ্ড, কলিজা ইত্যাদি বেশি করে তেল দিয়ে সেদ্ধ করে। পরিবেশনের জন্য সঙ্গে মেশানো হয় পেঁয়াজ আর মরিচ। এ ছাড়া ছিল সরপা মানের একধরনের ঘন স্যুপের মতো, যা বানানো হয় মাংস আর পাস্তা সেদ্ধ করে। বহু খুঁজে কোথাও মুরগি বা গরুর মাংসের কোনো ডিশ চোখে পড়ল না।

কাজাখদের ডেজার্ট আইটেমগুলোতেও ঘোড়া ও ভেড়ার দুধে তৈরি চিজের আধিক্য, কিছু টার্কিশ ধাঁচের মিষ্টিও ছিল। আমি এসবের কিছুই খেতে পারিনি। আমার টেস্টবাড খুবই খারাপ। আমি শুধু বাঙালি ঘরানার খাবার ছাড়া খেতে পারি না। পাশের দেশ ভারতের যদি কলকাতায় যাই ঠিক আছে, কিন্তু একটু দক্ষিণের দিকে গেলেই আমার খবর হয়ে যায়। বাঙালি খাবার পাতে না পেলে আমার ভারি কষ্ট হয়।

7hEs4EI.jpg


বুরসাক, ছবি: উইকিপিডিয়া

আমি ইতিউতি খুঁজে লেটুস, শসা, টমেটো দিয়ে বানানো সালাদ, সামান্য ফল আর বুরসাক নামের একধরনের ডোনাটের মতো একটা খাবার খেয়ে কোনোমতে দুপুরটা পার করলাম। ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি লাঞ্চের সময় পার হয়ে গেছে। মজার বিষয় হলো, ওখানে গিয়ে আমাকে ঘড়ির সময় মেলাতে হয়নি আর। কারণ, ঢাকা আর আস্তানা একই টাইম জোনে অবস্থিত।

* লেখক: জামিয়া রহমান খান তিসা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top