অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস, ওজন বৃদ্ধি, কায়িক শ্রমের অভাব, ধূমপান ও তামাকের ব্যবহারসহ নানা কারণে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক ব্যাধি বাড়ছে। এসব অভ্যাসে রক্তনালিতে চর্বি জমা হওয়ায় রক্ত চলাচল ব্যাহত হয়। এতে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ে। আবার মস্তিষ্কের রক্তনালিতে চর্বি জমলে হয় স্ট্রোক। বয়স্ক ব্যক্তিদের রক্তনালিতে চর্বি জমার ঝুঁকি বেশি। ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপায়ীদের এ ঝুঁকি আরও বেশি।
হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে অনেকেই রক্ত পাতলা করার ওষুধ অ্যাসপিরিন সেবন করেন। প্রশ্ন হলো, অ্যাসপিরিন খাওয়া কি উচিত?
স্বল্পমাত্রার অ্যাসপিরিন (৭৫-১৫০ মিলিগ্রাম) রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয়। ফলে হৃদ্রোগ বা স্ট্রোক প্রতিরোধে এটি ব্যবহৃত হয়। তবে এর একটি বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো রক্তক্ষরণ। পেপটিক আলসার বা রক্তপাতের ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের জন্য এই ঝুঁকি প্রবল। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণেরও ঝুঁকি রয়েছে। তাই ওষুধটি সেবনে আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সেগুলো হলো—
- ইতিমধ্যে যাঁরা হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত বা বাইপাস সার্জারি হয়েছেন, তাঁদের আজীবন স্বল্পমাত্রার অ্যাসপিরিন সেবন করতে বলা হয়। এটি ভবিষ্যতে আবার হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। তবে রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোকে অ্যাসপিরিন দেওয়া হয় না।
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চ কোলেস্টেরলের রোগী, ধূমপায়ী, পরিবারে হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকের ইতিহাস রয়েছে, চল্লিশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের হৃদ্রোগ ও স্ট্রোক প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধে অ্যাসপিরিন সেবন করা উচিত কি না, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। হৃদ্রোগ বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হননি—যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার এমন সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ওপর প্রায় চার বছর ধরে গবেষণা চালানো হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যাসপিরিন সেবনে বাড়তি লাভ তো হয়ইনি, বরং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বেড়েছে।
- আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের মতে, হৃদ্রোগ বা স্ট্রোক হয়নি, কেবল ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপসহ অন্যান্য ঝুঁকি আছে, এমন সত্তরোর্ধ্ব ব্যক্তিদের ঝুঁকি কমাতে অ্যাসপিরিন সেবনের দরকার নেই। মনোযোগ দিতে হবে ওজন কমানো, নিয়মিত ব্যায়াম, ধূমপান বর্জনের মতো বিষয়ের দিকে।
- যেকোনো বয়সী ব্যক্তির যদি রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বা ইতিহাস থাকে, তাহলে অ্যাসপিরিন সেবনের দরকার নেই।
- ৪০-৭০ বছর বয়স্ক ব্যক্তিদের যদি হৃদ্রোগের উচ্চ ঝুঁকি থাকে, তবে রক্তক্ষরণের তেমন ঝুঁকি না থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যাসপিরিন শুরু করা যেতে পারে।
- ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদ্রোগের ঝুঁকিসবচেয়ে বেশি। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের পরামর্শ হলো, ডায়াবেটিসের রোগীর যদি হৃদ্রোগের উচ্চ ঝুঁকি থাকে, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে অ্যাসপিরিন সেবনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
- হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়িতে বসেই নির্ণয় করা যায়। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ অব কার্ডিওলজি ও আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য জেনে নিন।
* ডা. শরদিন্দু শেখর রায়, হৃদ্রোগ বিশেষজ্ঞ