আকাশকুসুম কল্পনা করা অনেকের অভ্যাস। একেই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বলা হয়, 'উনি দিবাস্বপ্ন দেখছেন!' তার অর্থ হলো অলসতায় সময় কাটাচ্ছেন। দিনের বেলা জেগে থাকা অবস্থায় বা চোখ আধবোজা অবস্থায় আবেগ-অনুভূতি মিশ্রিত কল্পনা বা সুন্দর ভবিষ্যতের চিন্তাভাবনাই দিবাস্বপ্ন নামে পরিচিত। প্রাচীনকাল থেকেই দিবাস্বপ্নকে মানুষ অর্থহীন কাজ বলে মনে করে আসছে। সমাজে প্রচলিত ধারণাটি হলো, যারা দায়িত্বশীল কাজে মনোযোগ দিতে চায় না, তারাই দিবাস্বপ্ন দেখে। তাহলে কি ধরে নিতে হবে যে দিবাস্বপ্নের কোনো মানে নেই?
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রচলিত ধারণাটি সর্বাংশে সত্য নয়। কারণ, দিবাস্বপ্নও কিছু ক্ষেত্রে উপকারী। ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একদল গবেষকের পরিচালিত পরীক্ষা সম্পর্কে সায়েন্স ডেইলিতে একটি চমকপ্রদ প্রতিবেদন বেরিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দিবাস্বপ্নের সময় মস্তিষ্কের সক্রিয়তা বেশ বৃদ্ধি পায়।
নির্বাচিত কয়েকজন ব্যক্তিকে স্ক্যানারের আওতায় রেখে তাদের মনোযোগের হেরফের নিয়ে পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা গেছে, জেগে থাকা অবস্থায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সময় পর্যন্ত কেউ কেউ দিবাস্বপ্ন দেখে। এ সময় তাৎক্ষণিক কাজ থেকে তাদের মনোযোগ নিজের অজান্তেই কোনো জটিল সমস্যার সমাধানের বিষয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেটা হয়তো তার নিজের জীবনেরই কোনো বাস্তব সমস্যা।
এ সময় মস্তিষ্কের নির্বাহী কার্যক্রমের যোগসূত্রগুলো (এক্সিকিউটিভ নেটওয়ার্ক) সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, যখন মানুষ কোনো জটিল সমস্যায় পড়ে, তখন সহজ কোনো কাজ হাতে নিয়ে দিবাস্বপ্নে মগ্ন হয়। আপনি হয়তো একটা বই পড়ছেন বা শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত, কিন্তু আপনি দিবাস্বপ্নে বিভোর।
তার মানে আপনি এর চেয়েও জরুরি কিছু, যেমন আপনার পেশাগত উৎকর্ষ সাধন বা ব্যক্তিগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে অধিকতর আবেগময় (রোমান্টিক) কিছু ঘটতে যাচ্ছে, তা নিয়ে ভাবছেন। এটা কিন্তু মোটেও তুচ্ছতাচ্ছিল্যের নয়, বরং আপনার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক।
* আব্দুল কাইয়ুম