নতুন একটি সম্পর্কের যাত্রায় জড়িয়ে থাকে আবেগ-অনুভূতি আর ভালোবাসা। সেই আবেগ–অনুভূতির ছোঁয়া থাকুক আপনাদের চার দেয়ালের সাজসজ্জাতেও। প্রতিটি সুন্দর মুহূর্ত থাকুক আরও সজীব ও সতেজ। নবদম্পতির নতুন অধ্যায় শুরু হোক সাজানো–গোছানো অন্দর দিয়ে।
চেনা পরিবেশ ছেড়ে নতুন পরিবেশে। নতুন সম্পর্ক, নতুন মানুষ, সেই সঙ্গে নতুন গল্পের জাল বোনা এবং একটি নতুন ঘরে বসবাস। এত সব নতুনের মধ্যে নিজের ইচ্ছা–আকাঙ্ক্ষাকে হারিয়ে যেতে তো দেওয়া যায় না। হোক তা স্বামী-স্ত্রীর একক সংসার বা শ্বশুরবাড়িতে সবার মিলিত বসবাস। অন্দর সাজিয়ে তুলুন নিজেদের পছন্দ, রুচি এবং নান্দনিকতায়।
এক তারে নয়া–পুরান
বিয়ের পর নবদম্পতি নিজেদের বেডরুম রি-ডেকোরেট করতে পারেন। বিয়েতে কী ধরনের ফার্নিচার কিনছেন বা ঘরে কী রং করছেন, সেগুলো স্বামী-স্ত্রী মিলে আলোচনা করে নিতে পারেন। খোলাখুলি আলোচনা করে পছন্দমতো জিনিস কিনে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। ঘর পুরোনো হলেও পর্দা, আসবাব যদি নতুন হয়, তাহলেও একধরনের পরিবর্তন আসবে। অথবা ঘরের আসবাবের স্থান পরিবর্তন করলেও ঘরে নতুন একটা লুক আসবে। যাঁরা নতুন ফ্ল্যাট বা বাড়ি কিনছেন, তাঁরা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের সহযোগিতা নিতে পারেন। এ ছাড়া যাঁরা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাঁদের বাসার স্পেস ও বাজেটের দিকটা মাথায় রাখতে হবে। অযথা বাজেট বাড়ানো যুক্তিহীন। সঠিকভাবে স্পেস ম্যানেজমেন্ট করলে ছোট বাড়িও সুন্দর করে সাজানো সম্ভব। আর যদি বড় ফ্ল্যাট কিনেন বা ভাড়া থাকেন, সে ক্ষেত্রেও একসঙ্গে প্রচুর ফার্নিচার কেনাও যুক্তিহীন। যা একান্ত প্রয়োজন, বরং সেখানে ইনভেস্ট করুন। বরং মাঝেমধ্যে ফার্নিচার বা ছোটখাটো ডেকর আইটেম ওলটপালট করে সাজাতে পারেন। এতেও ঘরের সাজ বদলাবে, নতুনত্ব আসবে। একঘেয়েমি ভাবটাও কাটবে।
ছোট নীড়ে যত্নে থাকুক ভালোবাসা
নান্দনিকতা বোধের সঙ্গে ছোট নীড়ের কিন্তু কোনো সম্পর্ক নেই। বড় বাড়িতেও ঠিকভাবে স্পেস ম্যানেজ করতে না পারলে এলোমেলো মনে হবে। তাই ফ্ল্যাট ছোট হোক বা বড়, ম্যানেজমেন্ট খুবই জরুরি বিষয়। এ ক্ষেত্রে কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হবে। যেমন: মেঝে খালি রেখে দেয়াল ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। সেই অনুযায়ী ফার্নিচার কিনুন। এতে ঘর বড় দেখাবে। ঘরের দেয়াল যত হালকা রাখবেন, ততই খোলামেলা দেখাবে ঘর। পুরো ফ্লোর কার্পেট দিয়ে না ঢেকে ছোট ছোট রাগস, থ্রো ব্যবহার করুন। গাঢ় রং এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। বড় ফার্নিচারের পরিবর্তে কমপ্যাক্ট ফার্নিচার বেছে নিন। ঘর বড় দেখাতে আলোর খুব বড় ভূমিকা রয়েছে। বড় টিউব বা ঝাড়বাতির বদলে ট্র্যাক লাইট লাগাতে পারেন। সঙ্গে রাখুন ফ্লোর ল্যাম্প। ঘরে আয়না রাখতে পারেন। আয়না এমনভাবে রাখুন, যাতে তাতে আলো প্রতিফলিত হয়। এতেও ঘর বড় দেখাবে।
ঘর অনুযায়ী অন্দরসাজ
ঘর অনুযায়ী অন্দরসাজের পরিকল্পনা করুন। প্রতিটি ঘরের নিজস্ব একটা আমেজ আছে। বেডরুমের সাজ আর ড্রয়িংরুমের সাজ নিশ্চয়ই এক রকম হবে না। বেডরুম সব সময়ই হতে হবে আরামের। ঘরে ঢুকে যেন সারা দিনের সব ক্লান্তি ভুলে যান, এমনভাবেই সাজাতে হবে। বিশেষত নবদম্পতিদের ক্ষেত্রে মাস্টার বেডরুমের সাজসজ্জার প্রতি তাই বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
এখানে আসবাব কাঠের হলেই ভালো। আয়রন বা অন্য ম্যাটেরিয়াল এড়িয়ে চলাই ভালো। সঙ্গে প্রয়োজন ভালো ম্যাট্রেস। নিজেদের কমফোর্ট অনুযায়ী ম্যাট্রেস বেছে নিন। অবশ্যই আয় অনুসারে বাজেট করুন। বেডের ওপরে রাখুন বিভিন্ন শেপ এবং সাইজ়ের কুশন। কুশনে হালকা ও উজ্জ্বল রঙের কভার মিলিয়ে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। বেডকভার একটু হালকা রঙের হলে ভালো।
যদি যৌথ পরিবার হয় বা বাড়িতে নিজের একটিই ঘর থাকে, সে ক্ষেত্রে কুইন বেড আদর্শ। বেড ছাড়া একটা ড্রেসার, ওয়ার্ডরোব, বেডসাইড টেবিল রাখতে পারেন বেডরুমে। ড্রয়ারে ছোটখাটো জিনিস রাখতে পারেন। ঘর পরিপাটি থাকবে। বেডরুমে একটি আয়নাও রাখুন। এতে ঘর বড় দেখায়। সেন্টেড ক্যান্ডল, ফুল ইত্যাদি বেডরুমে রোম্যান্টিক আবহ তৈরি করবে। বেডসাইড টেবলে রাখতে পারেন ছোট ল্যাম্প। এ ছাড়া ভালো মিউজিক সিস্টেমও রাখতে পারেন। ঘরে বিছানা ছাড়াও একটা বসার জায়গা থাকলে ভালো। কেউ এলে তাঁকে বিছানায় বসতে দেওয়ার প্রয়োজন হবে না। বিছানার উল্টো দিকে ছোট একটা টেবল এবং সঙ্গে দুটি চেয়ার রাখতে পারেন। নিজেদের পোর্ট্রেট, কিছু পেন্টিং দিয়ে দেয়াল সাজান। আলো একটু ওয়ার্মটোনের রাখুন। হলুদ আলো ঘরে উষ্ণতা আনে। ঘরের সৌন্দর্যও বাড়ায়। পারলে ডিমলাইটের ব্যবস্থা রাখতে পারেন।
অতিথি আপ্যায়নে অন্দরের আয়না
ড্রয়িংরুম বা বসার ঘর মূলত অন্দরের আয়না। ঘরে ঢুকেই যদি অগোছালো, অপরিচ্ছন্ন একটি পরিবেশ চোখে পড়ে, তাহলে বাদবাকি সাজসজ্জা নিরর্থক। বসার ঘর থাকুক উষ্ণ অভ্যর্থনার আশ্বাস। অন্দরের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠুক বসার ঘরেই। স্পেস কম থাকলে বড় এল শেপড সোফা বা লাভসিট রাখুন। জায়গা থাকলে এক কোণে ডিভাইনের ব্যবস্থাও রাখতে পারেন।
সোফার দুই পাশে মাঝারি মাপের টেবিল রাখুন। কর্নারে রাখুন ফ্লোর ল্যাম্প। সাদা, হলুদ, দুই ধরনের আলোর ব্যবস্থাই রাখতে পারেন। বসার ঘরে একটা কর্নার ক্রিয়েট করতে পারেন। একটা টেবিল, ছোট একটা চেয়ার আর বড় ফ্লোর ভাস বা ফ্লোর মাউন্ট লাইট রাখলেই সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি হবে। বেশির ভাগ ফ্ল্যাটেই এখন ড্রয়িং এবং ডাইনিং এরিয়া একসঙ্গে থাকে। সে ক্ষেত্রে ডাইনিং এরিয়াতে ফোর সিটার বা সিক্স সিটার টেবল-চেয়ারের সেট রাখতে পারেন। জায়গা থাকলে পাশে একটা ক্রকারি ইউনিট রাখুন।
কিচেন ও বাথরুমের সাজসজ্জায়
আপনার পরিচ্ছন্নতা, রুচি সবকিছু ফুটে ওঠে কিচেন এবং বাথরুমের সাজসজ্জায়। বাড়ির পুরো ইমেজটাই নির্ভর করে এই দুই অংশের ওপর। কিচেন স্ল্যাব, সিঙ্ক সব সময় ক্লিন রাখুন। কিচেন গ্যাজেটস পরিষ্কার করে স্ল্যাবের ওপর সাজিয়ে রাখতে পারেন। অন্য সব বাসন কাপবোর্ডে ঢুকিয়ে রাখুন। বাথরুম যতটা সম্ভব শুকনা রাখুন।
সম্ভব হলে শাওয়ার এরিয়া কিছু দিয়ে আলাদা করে নিন বা ঘিরে দিন। যাতে বাথরুম জলময় না হয়ে পড়ে। এতে বাথরুম কম নোংরা হবে, পাশাপাশি দাগ-ছোপ বা দুর্গন্ধও হবে কম। বিভিন্ন রকমের সেন্ট বা ডিওডর্যান্টের ব্যবস্থা রাখুন বাথরুমে। এতেও বাথরুমে একটা ফ্রেশনেস আসবে। ভিজে তোয়ালে রাখার জন্য আলাদা স্পেস রাখুন। প্রসাধনী, নিত্যব্যবহারের জিনিস রাখার জন্য একটা ছোট কাপবোর্ড রাখুন। সাবান, শ্যাম্পু সাজিয়ে রাখতে পারেন সুন্দর বাথসেটে।
সজীব থাকুক বারান্দা
বারান্দায় থাকুক সবুজের ছোঁয়া। বিভিন্ন রকমের ফুল, ভেষজ উদ্ভিদ দিয়ে বারান্দা ডেকোরেট করতে পারেন। এমন কিছু গাছ আছে, যা ন্যূনতম জায়গা নেয়, এমনকি কম রোদের প্রয়োজন হয়। কাজ শেষে পরিশ্রান্ত মন চাইবে একটু বিশ্রাম নিতে। আর তা যদি হয় পার্টনারের সঙ্গে বারান্দায় চা পানে, তাহলে তো কথাই নেই।
বারান্দায় যদি সবুজের ছোঁয়া থাকে, নবদম্পতির সেই বিশ্রামের সময় হয়ে উঠবে আরও সজীব ও সতেজ। অতিশায্যের আড়ালে বাড়ির রোম্যান্টিসিজমটাই যেন ঢাকা পড়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন। নবদম্পতির নতুন সম্পর্কের এই যাত্রায় অন্দরমহলের প্রতিটি কোণে থাকুক ভালোবাসার স্পর্শ।
* সাহিদা আক্তার