অন্দরসজ্জায় আকৃতিগত অলংকরণে সতর্কতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সময়ের বিবর্তনে ইন্টেরিয়রে এসেছে বৈশিষ্ট্যপূর্ণ পরিবর্তন। তাই আকৃতিগত অলংকরণেও এসেছে রূপান্তর। এই পরিবর্তনের দিকে নজর দিলে অন্দরসজ্জায় আকৃতিগত যে বিবর্তন পাওয়া যায়, তা বিভিন্ন সময় অনুযায়ী বিবেচনা করা হলো।
প্রাচীন সভ্যতা
পুরোনো সভ্যতায় অন্দরসজ্জার আকৃতিগত আচরণ বিবেচনা করলে দেখা যায়, প্রায় সবক্ষেত্রেই সেখানে পরিলক্ষিত হতো ঐতিহ্য, আভিজাত্য, শ্রেণিগত তাৎপর্য ও উত্তরাধিকারী দাপট। উপাসনালয়, ঘরবাড়িতে শোভা পেত গৌরবময় ও মহিমান্বিত শৈলী। স্থাপত্যশৈলীতে প্রথম সংযোজিত হয় প্রতিমা ও ভাস্কর্য।
ছাদ পর্যন্ত সুউচ্চ বৃত্তাকার ও খোদাই করা স্তম্ভ শোভা পেত ঐতিহ্যপূর্ণ অন্দরগুলোতে। সাধারণ জনগণের ঘরবাড়িতে সমতল ছাদ এবং খিলানকৃত দরজার দেখা মিলত। সেই সময়ের ইন্টেরিয়রে ধর্মের প্রভাব খুব বেশি বিদ্যমান ছিল বলা যায়।
বিশ শতকে
বিশ শতকে এসে স্থাপত্যশৈলীর বাঁধাধরা নিয়মকানুন ভাঙতে শুরু করে এবং স্বাধীন চিন্তাধারার প্রয়োগ ঘটা শুরু হয়। যার প্রভাব লক্ষ করা যায় ইন্টেরিয়রের আকৃতিগত অলংকরণে। শিল্পবিপ্লবের পরবর্তী সময়ে স্বতন্ত্রতার প্রভাব বিস্তার হতে থাকে এবং ইন্টেরিয়রে নতুন নতুন গবেষণার গতিবেগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বাণিজ্যিক প্রভাব, চলমান সময়োপযোগী স্বচ্ছন্দ্যতাবোধ বিবেচনা করে গৃহসজ্জার আকৃতিতেও আসতে থাকে পরিবর্তন। নিজস্ব পছন্দ, স্বাধীনতা অনুযায়ী নকশার প্রয়োগ ও উপাদানের ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় সে সময়ের ইন্টেরিয়রে।
আধুনিক ইন্টেরিয়রে আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য
আধুনিক সময়ের ইন্টেরিয়র হলো পরিপূর্ণ পুষ্পস্বরূপ, যার বীজ বপন হওয়া থেকে শুরু করে সুগঠিত হয়েছে সময়ের বিবর্তনে। পুরোনো আভিজাত্যপূর্ণ স্থাপত্যশৈলী পরিবর্তিত হয়ে বর্তমানের আরামদায়ক, স্বচ্ছন্দ্য ও সহজ স্থাপত্যে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে ইন্টেরিয়র ডিজাইন শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ বিষয় হিসেবে সম্মাননা লাভ করেছে। গবেষণা ও পড়াশোনার জন্য বেশ জনপ্রিয় বিষয় এখন এটি। নতুন সব ধারণার সৃষ্টি হয়েছে ইন্টেরিয়র ঘিরে। আকৃতিগত অলংকরণে অনুপাত ও ভারসাম্য বজায় রেখে হচ্ছে সবকিছু। আধুনিক সময়ে চলমান যেসব আকৃতির দেখা মিলছে সেগুলো হলো:
মিনিমালিস্টিক আকৃতি
মিনিমালিজম বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতি বা ধারণা। মিনিমালিজমে আরামদায়কতা কিংবা স্বচ্ছন্দ্যকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। সহজ আকৃতিগত অলংকরণ, জায়গার সঠিক ব্যবহার ও স্বচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করে মিনিমালিজম। আসবাব ও অন্যান্য উপাদানেও রাখা হয় সহজবোধ্য আকৃতি, যা চোখের জন্যও হয়ে ওঠে আরামদায়ক।
মনস্তাত্ত্বিক বিবচেনায় জ্যামিতিক আকৃতি
বর্তমান সময়ের ইন্টেরিয়রে আকৃতিগত অলংকরণে বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতির ব্যবহার করা হয়। মূলত মনস্তাত্ত্বিক বিবেচনার মাধ্যমে এসব আকৃতির ব্যবহার করা হয়। উষ্ণ এবং স্বাগতিক পরিবেশ তৈরিতে এড়ানো হয় জটিল আকৃতি এবং ব্যবহার করা হয় হালকা বাঁকসমৃদ্ধ ও বৃত্তাকার আকৃতি। কর্মস্থান ও রান্নাঘরে ব্যবহৃত হয় ত্রিভুজ, বর্গাকার কিংবা আয়তাকার আকৃতিগুলো, যা পেশাদারত্ব কিংবা দক্ষতাকে ফুটিয়ে তোলে।এভাবেই মনস্তাত্ত্বিক বিবেচনা করে আকৃতিকে ব্যবহার করা হয় বর্তমান ইন্টেরিয়রে।
সময়ের বিবর্তনে এভাবেই অন্দরসজ্জায় এসেছে অভাবনীয় রূপান্তর। প্রাচীন সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক সময় পর্যন্ত স্থাপত্যশৈলী ও নকশা খাপ খাইয়ে নিয়েছে সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে। পরিবর্তন এসেছে মানুষের জীবনযাপন, স্বচ্ছন্দ্যে। তাই অন্দরসজ্জা কখনোই স্থিরতা বজায় রাখেনি এবং ভবিষ্যতেও ইন্টেরিয়রে এই পরিবর্তনশীলতা বজায় থাকবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।