What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

চায়ের কাপে ঝড় (1 Viewer)

এক কাপ চায়ের কথা মনে হলে দেহমনে চন মনে ভাব জেগে ওঠে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন আমাদের দেশে। পেট ভরে দুমুঠো ডালভাতের পরই আমাদের জীবনে অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এক কাপ চা। বন্ধু বা পরিবারের সবার সঙ্গে আড্ডার হুল্লোড়েই হোক আর পাড়ার মোড়ে বা গ্রামের বাজারে উত্তপ্ত রাজনৈতিক তর্ক-বিতর্কে, চায়ের কাপে ঝড় না তুললে যেন কী একটা অসম্পূর্ণই থেকে যায়।

wIP8GuN.jpg


চায়ের আদিকাল দেশ-বিদেশে

চা যেমন চীনা শব্দ, চা পানের প্রচলনের শুরুটাও কিন্তু সেই চীন দেশেই। ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যাবে, সেই পাঁচ হাজার বছর আগে চীনে চা পানের প্রচলন ঘটেছিল। সেই চা অত্যন্ত দুর্লভ ও আরাধ্য ছিল তখন বিশ্ববাসীর কাছে। ধীরে ধীরে কালের স্রোতে চায়ের সমঝদার হয়ে উঠল তিব্বত, জাপান, যুক্তরাজ্য, টার্কি, ইরান, আরব, মরক্কো, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা আর আমাদের বাংলাদেশ। ভারতীয় উপমহাদেশ তথা আমাদের বাংলাদেশে কিন্তু চা-বাগান ও চা-শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ব্রিটিশরাজের উদ্যোগে। আসামে সেই আদিকাল থেকেই দেদার চা-গাছ জন্মালেও সে রকমভাবে চা পানের কোনো ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না।

eAxxadO.png


দুধ-চা পান করাও শিখিয়েছে বৃটিশরা

জানা যায়, চীন দেশের সঙ্গে চা আমদানির ব্যাপারে সুবিধা করতে না পেরেই ব্রিটিশরা এ দেশে চা চাষ করা শুরু করেছিল। এখনো এখানে অনেক টি এস্টেটে বিলেতি কায়দা-কেতা ও ড্রেস কোড মেনে চলেন ম্যানেজার ও অফিসাররা। দুধ-চা পান করার সংস্কৃতিও কিন্তু ব্রিটিশদের অবদান। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ উপনিবেশ হিসেবে হংকং আর ভারতীয় উপমহাদেশে দুধ-চা হয়ে উঠল এক অবিচ্ছেদ্য সংস্কৃতি। আমাদের দেশের বর্ষীয়ান ব্যক্তিদের স্মৃতিচারণায় প্রায়ই উঠে আসে, গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে চা তৈরি ও পান করার তেমন অভ্যাস ছিল না আমাদের। তখন গ্রামের বাজারে চায়ের দোকান গড়ে ওঠা শুরু হলো ধীরে ধীরে। ক্রমান্বয়ে আমাদের বাংলাদেশে চা হয়ে উঠল যেকোনো আড্ডা, মিলনমেলা, তর্ক-বিতর্ক, সাহিত্য সভা, গানের আসর সবকিছুর মধ্যমণি।

আমাদের দেশে চায়ের সংস্কৃতি

জাপান ও চীনে চায়ের ঔষধি গুণাগুণের জন্য খুব গুরুত্ব দিয়ে চা পান করা হয়। আবার তুর্কি আর পারসিরা তাদের প্রাণিজ আমিষ ও ফ্যাটনির্ভর ভারী গোছের চর্ব্য-চোষ্য ভোজনের পর মুখশুদ্ধি হিসেবে চা পান করে তৃপ্তি পায়। আর এই দিকে আমাদের দেশে চা যেন এক আবেগ আর অনুভূতির জায়গা। গীতিকার যা-ই ভেবে থাকুন, এক কাপ চায়ে আমরা আমাদের প্রিয়তমকেই চাই। চায়ের কাপে ঝড় তুলে দানা বেঁধে উঠেছে, ফুঁসে উঠেছে আমাদের ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন, নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানসহ বহু গণ-আন্দোলন। চায়ের কাপ পাশে নিয়েই রচিত হয়েছে রক্ত গরম করা গণসংগীত, লেখা হয়েছে যুগান্তকারী কবিতা, কালজয়ী উপন্যাস। রাত জেগে পড়াশোনা করে খুব ভালো ফলের প্রত্যয়টা আরও একটু শাণিয়ে নেওয়া যায় এক কাপ কড়া চায়ের সঙ্গে।

v52ODr7.png


চা-সিঙ্গাড়া লা জবাব জুটি

শীতে বা বৃষ্টিতে জবুথবু, কাতর রিকশাওয়ালা একটুখানি ওম খুঁজে পান টংয়ের এক কাপ ধূমায়িত চায়ে। বাড়িতে এসে এক কাপ চা না খেয়ে অতিথি চলে গেলে যেন চলেই না। বিকেলের চায়ের আয়োজনে সোনায় সোহাগা হয়ে ওঠে চায়ের সঙ্গে 'টা'-স্বরূপ নানা পদের বিস্কুট, চানাচুর, মুড়িমাখা, শিঙাড়া, তেলেভাজার মতো সব পদ...

মনখারাপের ভোরগুলোতে এক মগ চা নিয়ে বারান্দায় বসে সূর্যোদয় দেখা, জীবনযুদ্ধে বিপর্যস্ত হয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে মোড়ের দোকানে এক কাপ চায়ের চুমুক নিমেষেই ফিরিয়ে দেয় বেঁচে থাকার আশা, যুঝে যাওয়ার শক্তি।

চায়ের অনন্য স্বাস্থ্যগুণ

আবার এদিকে পুষ্টিবিজ্ঞান আর চিকিৎসাবিজ্ঞান বলে, চায়ের এই জাদুকরি চনমনে ভাব আনার ক্ষমতা রয়েছে মূলত এতে বিদ্যমান 'এল থিয়ানিন' নামের বিশেষ অ্যামিনো অ্যাসিডের বদৌলতে। এই থিয়ানিন আবার চায়ের ক্যাফেইনের সঙ্গে মিলে মস্তিষ্কের কার্যক্রমে গতি আনে, স্ট্রেস কমিয়ে তরতাজা অনুভূতি দেয়, এমনটাই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে।

75Z57rd.jpg


চা শরীরকে চনমনে করে দেয়

চায়ের ক্যাফেইন অপেক্ষাকৃত ধীরগতিতে রক্তে মেশে বলে এর প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী। চায়ের অনন্য সব অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেমের জন্য খুবই উপকারী। কোলেস্টেরল, হৃদ্‌রোগ ও ডায়াবেটিস, এমনকি ক্যানসারের বিরুদ্ধে চায়ের প্রতিরোধক্ষমতাকেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন গবেষকেরা। তবে খ্যাতনামা কৌতুকাভিনেতা ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের বয়ানে সেই এক চা দুধে তিনবার ফুটিয়ে 'তিন ফুটে এক গজ' হওয়া দুধ-চায়ে কিন্তু দুধের প্রোটিনে অনেকটাই আটকা পড়ে চায়ের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো। তাই দুধ-চায়ের বদলে শুধু চায়ের লিকার পান করলেই তা আরও বেশি স্বাস্থ্যকর।

চায়ের রকমফের

ব্ল্যাক টির প্রচলনের আগে দুনিয়াজুড়ে বহু বছর অবধি গ্রিন টিই চা হিসেবে পান করা হতো। পরবর্তী সময়ে রপ্তানি ও সংরক্ষণের সুবিধার জন্যই চৈনিকেরা চা-গাছের পাতা সংগ্রহ করে সেই পাতা ফারমেন্টেশন ও অক্সিডাইজ করে বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত মাধ্যমেই আমাদের চিরচেনা কালো চা-পাতা তৈরি করা শুরু করেন। উৎস, গাছের জাত, প্রক্রিয়াজাতকরণ পদ্ধতি ইত্যাদি বিবেচনায় চায়ের আছে হরেক রকমফের। কালো ব্ল্যাক টি ছাড়াও সারা বিশ্বে প্রচলিত আছে অক্সিডাইজ না করে শুকিয়ে বানানো গ্রিন টি, আংশিকভাবে অক্সিডাইজ করে বানানো হোয়াইট টি ও ওলং টি। জাপানে তো বিশেষভাবে তৈরি গ্রিন টি চূর্ণ 'মাচা টি' বিভিন্ন মিষ্টান্নে ব্যবহৃত হয়।

OHppC4w.jpg


নানা রকমের চা

আমাদের দেশেও এখন গ্রিন টি স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের দিনযাপনের অংশ হয়ে উঠছে। চিরচেনা রং-চা, লেবু-চা, আদা-চায়ের পাশাপাশি করোনাকালে জনপ্রিয় হয়েছে লং, তেজপাতা দেওয়া মসলা-চা। আর বিভিন্ন স্থায়ী-অস্থায়ী চায়ের দোকানে তো মাল্টা-চা, স্ট্রবেরি-চা, তেঁতুল-চা থেকে শুরু করে কিংবদন্তি হুমায়ূন আহমেদের নাটকের কাঁচা মরিচের চা, কয়লার ধোঁয়া দেওয়া তন্দুরি-চা, এমনকি শুনে ভিরমি খাওয়ার মতো পনিরের চা-ও পাওয়া যায়। তবে পুরান ঢাকার সর-ভাসা মালাই-চা আর এলাচিগন্ধি খাঁটি দুধের চায়ের আছে আলাদা আবেদন। আবার সিলেটের সাতরঙা চা পান করতেও দূরদূরান্ত থেকে আসেন পর্যটকেরা।

আমাদের দেশে চা এক প্রধান অর্থকরী ফসল। দেশের পাশাপাশি বিদেশেও সমান কদর আমাদের চায়ের। ২০১৯ সালে চা উৎপাদনে রেকর্ড করেছে আমাদের বাংলাদেশ বিগত ১৬৬ বছরের মাঝে। এরপর ২০২০ সালে করোনার কবলে আমাদের চা-শিল্প একটু পিছিয়ে পড়লেও লক্ষ্যমাত্রা ঠিকই অর্জিত হয়েছে। সুরমা অববাহিকায় সিলেটের টিলা অঞ্চল ছাড়াও কুমিল্লা ও পঞ্চগড়েও এখন চা উৎপাদিত হচ্ছে।

kai1U9U.jpg


চা-শ্রমিক

কিন্তু আজকের এই জাতীয় চা দিবসের সার্থকতা তখনই থাকবে, যখন চা-শ্রমিকদের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচবে। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সব প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন, যেন তাঁরা সহজে স্বাস্থ্যসেবা পান, তাঁদের প্রাপ্য মজুরি নিশ্চিত হয় আর চা-বাগানের শিশুদের সবাইকে শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা যায়। নয়তো এক কাপ চায়ের তৃপ্তি যে অসম্পূর্ণই থেকে যাবে, সে কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top