What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

আড্ডার মধ্যমণি, স্বাস্থ্যেও সমান (1 Viewer)

AKOsEM6.jpg


পানির পরেই চা বিশ্বের সর্বাধিক উপভোগ্য পানীয়। যেকোনো আড্ডা ও আপ্যায়নে চা প্রধানতম পানীয়; যা দিয়ে মানুষ স্বচ্ছন্দে আপ্যায়িত হয় এবং আপ্যায়ন করতে মানুষ পছন্দ করে। এর একধরনের স্নিগ্ধ, প্রশান্তিদায়ক স্বাদ রয়েছে এবং মানুষ এটি উপভোগ করে। ক্লান্তি ও অবসাদে চা মানুষের মধ্যে প্রশান্তি এনে দেয়। চা শুধু আপ্যায়নের উপচার নয়, স্বাস্থ্যরক্ষায়ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য খারাপ গুণ থাকলেও চায়ে পুষ্টিগুণ যা আছে, তাতে চা খাওয়াই যেতে পারে।

ihUmLwn.jpg


চা গাছ, ছবি: উইকিপিডিয়া

চা–গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ক্যামেলিয়া সিনেনসিস। চায়ে পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং ক্যাটেচিন পলিফেনলস এবং ক্যাটেচিন থাকে, যা ফ্রি র‌্যাডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয় এবং কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এ কারণে চা ক্যানসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চায়ে উপস্থিত পলিফেনলসের পরিমাণ ২৫ শতাংশের বেশি, যা দেহের অভ্যন্তরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। চায়ে ৭ শতাংশ থিওফাইলিন ও থিওব্রোমিন রয়েছে, যা শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির জন্য বিশেষ উপকারী।

আমাদের এ অঞ্চলে চায়ের একটি ইতিহাস আছে, চা খাওয়ার প্রচলন চীন করলেও একে বহির্বিশ্বে পরিচয় করিয়েছে ইউরোপ, বিশেষ করে ব্রিটিশ ও ওলন্দাজরা। এই অঞ্চলে উপনিবেশ করার সঙ্গে চায়ের আমদানি হয়। বিশেষত ব্রিটিশরা স্থায়ী শাসন প্রতিষ্ঠার করার পর এখানে চাষ করা শুরু করে, বিশেষ করে বৃষ্টিপ্রধান এলাকা দার্জিলিং ও সিলেট অঞ্চলে চায়ের বাগান করে। এখানে প্রচুর পরিমাণে জন্মানো চা–গাছ ছিল ক্যামেলিয়া সিনেনসিস অসমিকা নামে একটি উপপ্রজাতির। গ্রিন টির চেয়ে আসাম টি বেশি স্বাদযুক্ত কালো রঙের ছিল।

9vNEDg1.png


দুধ চা

সাধারণভাবে প্রাথমিক ইংলিশ ব্রেকফাস্টের অন্তর্ভুক্ত আসা রং কড়া থাকায় তা লোকজন দুধসহকারে পান করত। বর্তমানে ব্রিটেনে সাধারণ ইংলিশ ব্রেকফাস্ট বা প্রাতরাশের সঙ্গে দেওয়া চা দুধসহকারে পান করা হয় কিন্তু ইউরোপ মহাদেশের অন্যান্য স্থানে চায়ের সঙ্গে দুধ খুব কমই পরিবেশন করা হয়। এর কারণ মূলত ইন্দোনেশিয়ার জাভা থেকে নেদারল্যান্ডসে যে চা যেত, তা ছিল অনেক হালকা এবং তার সঙ্গে দুধ যোগ করার প্রয়োজন হতো না। এর ফলে ফ্রান্স, স্পেন ও জার্মানিতে এই চা–কে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।

যেহেতু চা আমাদের প্রতিদিনের ব্যস্ত জীবনের নিত্যসঙ্গী, সেহেতু এই চা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটুকু উপকারী এবং কতটুকু অপকারী, তা জেনে রাখা শ্রেয়।

আমাদের হরেক রকম চা ও তার উপকারিতা

iosZAHW.png


লাল চা

আদা চা: আদা চা খুবই উপকারী; বিশেষ করে সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে এটি ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। গরম আদা–চা পান করলে গলাব্যথা কমে যায়। অ্যাসিডিটির বিরুদ্ধেও আদা–চা কাজ করে। এমনকি আদা–চা পান করলে হজমের সমস্যা কমে।

দুধ–চা: ক্লান্তি দূরীকরণে খুবই কার্যকর। নিয়মিত চা পানে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। চা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৫ গুণ কমিয়ে দেয়।

লাল–চা: এর মধ্যে থাকা ট্যানিন ফ্লু, ঠান্ডা, ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রমণ ও অন্ত্রের প্রদাহ প্রতিরোধ করে দেহকে সুরক্ষা দেয়। লাল–চা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। হজম ভালো করে। এর মধ্যে থাকা ট্যানিন হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। এটি অন্ত্রের ও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার বিরুদ্ধে লড়াই করে। লাল–চা অন্ত্রের প্রদাহ রোধেও কাজ করে।

গবেষণায় বলা হয়, লাল–চা কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের জারিত হওয়া প্রতিরোধে কাজ করে। এ ছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট মুখের ক্যানসার প্রতিরোধ করে। এর মধ্যে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান দাঁতের ক্ষয় সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে। তা ছাড়া এর মধ্যে থাকা ফ্লোরাইড মুখের দুর্গন্ধ দূর করে।

RLsTr5v.jpg


নানা গুণের চা

লাল চায়ের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রেক্টাল, জরায়ুর ক্যানসার, ফুসফুস ও ব্লাডার ক্যানসার প্রতিরোধ করে, এটি স্তন ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসার ও পাকস্থলীর ক্যানসার প্রতিরোধেও কাজ করে। আমেরিকার ন্যাশনাল টি ইনস্টিটিউটের 'টি অ্যান্ড ক্যানসার'বিষয়ক একটি নিবন্ধ জানিয়েছে, চায়ের উপকারিতা ক্যানসারের মতো সমস্যায় উপকারী। নিয়মিত এক কাপ রং–চা খেলে স্তন ক্যানসার, কোলোন ক্যানসার ও অন্যান্য আরও কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

চা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট–সমৃদ্ধ হলেও এতে রয়েছে ক্যাফেইন নামক উত্তেজক পদার্থ, সাধারণত চায়ে ক্যাফেইন রয়েছে, বস্তুত ক্যাফেইনের কারণেই ঘুম কম হওয়া, হজমে ব্যাঘাত ঘটা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

চা সম্পর্কে ভুল ধারণা

চা সম্পর্কে আমাদের অনেকের ভুল ধারণা আছে। যেমন চা খেলে রাতে ঘুম আসে না, চা লিভারের ক্ষতি করে, চা চামড়া কালো করে ইত্যাদি। যদিও চা খেলে গায়ের রং কালো হবে না, কারণ ত্বকের রং নির্ভর করে ম্যালানোসাইট কোষের সক্রিয়তার ওপর। চা পান করলে লিভারের কোনো ক্ষতি হয় না, তবে এটা মনে রাখতে হবে যে অতিরিক্ত চা পান করলে বিপরীত প্রতিক্রিয়া হবে; যেমন অবসাদ ও কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। ইদানীং বিভিন্ন স্থানে হরেক রকম চায়ের দোকান গড়ে উঠেছে। সেখানে দুধের সর দিয়ে চা বানানো হয়, তা কিন্তু চা আর থাকে না, বরং সেটা দুধের পদ হয়ে যায়। ওটা মোটেও চা নয়।

XnaXdbU.jpg


সঠিকভাবে বানাতে পারলে উপকার মেলে

চা বানানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হলো, প্রথমে পানি বেশ কিছুক্ষণ ফুটতে দিতে হবে। এরপর চুলা থেকে নামিয়ে পানিতে প্রতি কাপের জন্য এক চা-চামচ করে পাতা দিয়ে কেটলি ঢেকে রাখতে হবে, যাতে চা ঠান্ডা হয়ে না যায়। চার থেকে পাঁচ মিনিট পর কাপে ঢেলে নিয়ে পান করতে হবে।

আড্ডা হোক আর আপ্যায়ন, কনডেন্সড মিল্ক দিয়ে চা খাওয়ার প্রচলন কোনো অবস্থায় ভালো কিছু নয়। তাই এটা পরিহার করা উচিত। আর চিনি খাওয়াও ক্ষতিকর। তাই যতটা পারা যায় চিনি পরিহার করেই চায়ের আসল স্বাদ গ্রহণ করা।

জাতীয় চা দিবসে চা হয়ে উঠুক আড্ডার মধ্যমণি!

* লেখক: আলমগীর আলম | খাদ্য, পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ
 

Users who are viewing this thread

Back
Top