চা ছাড়া চলেই না—এমন বাঙালির সংখ্যা কম নয়। দিনে অন্তত এক কাপ চা তো চাই–ই চাই। পানির পর বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় এটিই। চা নিয়ে আড্ডা, গল্প, গানের অভাব নেই। সাহিত্য, সিনেমা, গান, ফটোগ্রাফি, রূপচর্চা, পরনের কাপড়ে চায়ের প্রিন্ট—বাদ নেই কিছুই। সবখানেই চায়ের চর্চা চলছে তো চলছেই। চা–খোরদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গড়ে উঠেছে নানা গ্রুপ। সেখানে সবাই মিলে দিনে–রাতে উদযাপন করছে চা বিষয়টিকে।
আজ প্রথমবাররে মতো পালিত হচ্ছে জাতীয় চা দিবস। অফিসে আসার পথে রাস্তার মোড়ে মোড়ে সাঁটা চা দিবসের পোস্টার। চা নিয়ে বসে ফেসবুকে উঁকি দিতেই দেখি 'চা–খোরকল্যাণ সমিতি'র পোস্ট। এই সমিতিতে যোগ দিয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ফেসবুকবাসী। চা নিয়ে তাঁদের মাতামাতির শেষ নেই। সেখানে চায়ের একটা সুন্দর ছবির সঙ্গে একজন জাতীয় চা দিবসকে উদযাপন করতে লিখেছেন, 'দুনিয়ার চা–খোর, এক হও, চা খাও।' এখানেই পাওয়া যায় চা নিয়ে নানা পোস্ট, মিম, অভিজ্ঞতা।
এক বছর দুই মাস হলো ভার্চ্যুয়াল চায়ের আড্ডার এই গ্রুপ খুলেছেন রাজধানীর বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মেসবাহ মুন্না। গ্রুপটি এখন ফেসবুকে দারুণ জনপ্রিয়। মেসবাহকে ফোন করে গ্রুপটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বললেন, '২০২০ সালে লকডাউন শুরুর আগে আমরা সকালে, বিকেলে, রাতে চায়ের দোকানে আড্ডা দিতাম। লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় সেটাকে খুব মিস করতাম। তাই ভাবলাম, চায়ের আড্ডাটাকে অনলাইনে নিয়ে আসা যায় কি না। এরপর হু হু করে বাড়তে লাগল আমাদের সদস্যসংখ্যা। আমি ভাবিনি এমন অভাবনীয় সাড়া মিলবে, সবাই গ্রুপটাকে এভাবে আপন করে নেবে।'
নাকিব রেজওয়ান রাজা, চাখোর কল্যাণ সমিতি
এই গ্রুপেই চা খেতে খেতে লাইভে চা নিয়ে গান গেয়েছেন গানের দল 'জলের গান'–এর রাহুল আনন্দ। সে কথা মনে করিয়ে দিতেই মেসবাহ বললেন, 'রাহুলদা কিন্তু নিয়মিত আমাদের গ্রুপে লাইক, কমেন্ট করেন। গ্রুপের সদস্যসংখ্যা এক লাখ হলে তিনি বিশেষ শুভেচ্ছাবার্তাও দিয়েছিলেন।' গ্রুপ নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথাও ভাগ করে নিলেন এই তরুণ। জানালেন, মহামারি শেষ হলে তিনি যাঁরা রং–চা ভালোবাসেন আর যাঁরা দুধ–চা ভালোবাসেন—এই দুই দল নিয়ে একটা প্রীতি ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করতে চান। সে কারণে স্পনসরদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। চাকসবিডি নামে সম্প্রতি ইনস্টাগ্রামে একটা অ্যাকাউন্টও খোলা হয়েছে। সেখানেও অল্প সময়ে জুটে গেছে হাজার পাঁচেক অনুসারী।
এদিকে সিদরাতুল সাফায়াত ড্যানিয়েল ও ইপশিতা রুবাইয়াত 'চা-চিত্র' নামে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এক বছরও হয়নি এই অ্যাকাউন্টের বয়স। এর মধ্যে এই অ্যাকাউন্টকে ফলো করছেন ১৫ হাজার ১০০ ইনস্টাগ্রামবাসী। এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে ড্যানিয়েল বলেন,'চা আমরা কে না খাই!
নান্দনিকভাবে চায়ের ছবি তুলতেও ভালোবাসি। কিন্তু চায়ের ছবিগুলো বিচ্ছিন্নভাবে একেকজন পোস্ট করেন। সেগুলো যাতে একসঙ্গে পাওয়া যায়, সে জন্যই আমাদের এই উদ্যোগ। আমাদেরকে ইনস্টাগ্রামে অনেকে সরাসরি ছবি পাঠান। আবার মেইলও করেন। আমরা সেগুলো প্রকাশ করি। প্রতি পাঁচ দিনের সেরা ছবিগুলোকে আলাদা অ্যালবামে রাখি। আমরা দারুণ সাড়া পাচ্ছি। প্রতিদিনই অসংখ্য ছবি জমা হয় মেইল আর ইনবক্সে।'
এভাবেই ভার্চ্যুয়ালি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানাভাবে চলছে চায়ের কাপে ঝড়।