What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পিরিয়ডে যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা এড়াতে (1 Viewer)

2fXjsFX.jpg


পৃথিবীজুড়ে ১৭ কোটি ৬০ লাখ নারী এন্ডোমেট্রিওসিসের ভয়ানক বিব্রতকর অসহ্য ব্যথায় ভুগছেন। কার্ল ভন রকিটানস্কি ১৮৬০ সালে নারীর জরায়ুর অংশ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের (মাইক্রোস্কোপ) নিচে দেখে এই ব্যাধির বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন। এন্ডোমেট্রিওসিসের দুটি টিকা নিয়ে বর্তমানে পরীক্ষামূলক ব্যবহার চলছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো টিকার সাহায্যে পিরিয়ডের যন্ত্রণাদায়ক এই ব্যথা থেকে নারীরা রেহাই পাবেন। কিন্তু তার আগপর্যন্ত?

এন্ডোমেট্রিওসিস কী

এই সমস্যার প্রধান উপসর্গ তলপেটজুড়ে ব্যথা। কিশোরী বয়সে মাসিকের শুরু থেকেই দেখা দিতে পারে এন্ডোমেট্রিওসিসের ব্যথা, দুর্ভাগ্যজনকভাবে চলতে পারে মেনোপজ পর্যন্ত। নারীদের জরায়ুতে যে এন্ডোমেট্রিয়াল লাইন থাকে, তার কোষ জরায়ুর বাইরে ফেলোপিয়ান টিউব, ডিম্বাশয় বা পাউচ অব ডগলাসে লেপ্টে বসে থাকলে তাকে এন্ডোমেট্রিওসিস বলে। ঋতুস্রাবের আগে হরমোনের প্রভাবে এই সব অস্বাভাবিক এন্ডোমেট্রিয়াম টিস্যুগুলোও ছিঁড়ে বেরিয়ে আসে এবং প্রচুর রক্তপাত হয়। আর এ কারণে পেটে ভয়ানক ব্যথা হয়। কখনো কখনো রেক্টাম বা মলাশয়েও এটি হতে পারে।

অনেকের আবার অল্প বিস্তর এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলেও কোনো উপসর্গই থাকে না। বন্ধ্যত্ব বা অন্য কারণে পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়ে।

  • প্রথম বা দ্বিতীয় পর্যায়ে বেশির ভাগ সময়ে খুব একটা সমস্যা হয় না। কিন্তু তৃতীয় বা চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছালে স্বাভাবিকের তুলনায় অতিরিক্ত বেশি রক্তপাত হয়। কিছুটা রক্ত পেটের মধ্যে জমা থেকে যায়। আর সমস্যা হয় এর থেকেই। জমা রক্ত চকলেট সিস্ট হয়ে পিরিয়ডের সময় এবং কখনো কখনো সারাক্ষণই পেটে ব্যথা করতে থাকে।
  • মাসিকের কিছুদিন আগে থেকে তলপেট খুব ব্যথা করে, মাসিক চলাকালীন ব্যথা বাড়তে থাকে এবং মাসিকের শেষ দিকে ব্যথা তীব্র হয়। হেভি মেন্সট্যুয়াল ব্লিডিং বা তীব্র রক্তপাত হতে পারে।
  • প্রস্রাব বা মলত্যাগের সময়ও মেয়েরা ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে। বিবাহিত মেয়েদের যৌন সংসর্গের সময় মারাত্মক ব্যথা ও যন্ত্রণা হয়। তলপেট ছাড়াও কোমরে ব্যথা করে।
  • ঋতু চলার সময় স্বাভাবিক জীবনযাপন অসহ্য হয়ে ওঠে। স্কুল–কলেজ বা অফিস যাওয়া বন্ধ করে বাড়িতে শুয়ে থাকা ছাড়া উপায় থাকে না। অল্প বয়সী মেয়েরা এ নিয়ে খুবই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে। এ ছাড়া এন্ডোমেট্রিওসিস থাকলে বন্ধ্যত্বের ঝুঁকি রয়েছে।

যেভাবে বুঝবেন এন্ডোমেট্রিওসিস

আল্ট্রাসনোগ্রাফির সাহায্যে ডিম্বাশয়ে সিস্ট দেখতে পাওয়া যায়, সন্দেহ হলে ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে খুঁটিয়ে দেখার দরকার পড়ে। রোগীর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলে সম্ভব হলে একই সিটিংয়ে ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে এগুলো নির্মূল করে ফেলতে হবে। নইলে একদিকে কষ্ট বাড়বে, অন্যদিকে ওভারি, ইউটেরাস, ফ্যালোপিয়ান টিউব ইত্যাদি জড়িয়ে গিয়ে জটিলতা বেড়ে যেতে পারে।

চিকিৎসা

পিরিয়ডের সময় এমন ব্যথা হয় বলে কিশোরীর কষ্ট উড়িয়ে দেওয়া ঠিক নয়। বড় হলে বা বিয়ে হলে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন অনেকে, সেটাও ভুল। এন্ডোমেট্রিওসিস ধরা পড়লে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করলে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

প্রথমত, নন–স্টেরয়েড অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ওষুধ দিতে হয়, ব্যথা উপশমের জন্য। অনেক সময় পিলের সাহায্যে সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অবিবাহিত মেয়েদের কন্ট্রাসেপটিভ পিল নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকে ভয় পান। মনে রাখতে হবে, এটা নেহাতই একটি ওষুধ, এতে লজ্জার কিছু নেই। মাসে ২১টি গর্ভনিরোধক বড়ি দেওয়া হয় রোগীকে। এ ছাড়া আছে ইন্ট্রাইউটেরাইন যন্ত্র, যে ছোট্ট যন্ত্র জরায়ুতে প্রবেশ করালে ধীরে ধীরে প্রোজেস্টেরনের নিঃসরণে সাহায্য করবে। ফলে রক্তক্ষরণের মাত্রা কমে যায় ও ব্যথা কমে। অন্যদিকে জিএনআরএইচ হরমোনও খুব ভালো চিকিৎসা হতে পারে।

ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে আক্রান্ত অঞ্চলগুলো বাষ্পীভূত করে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সিস্ট কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া আরেক ধরনের চিকিৎসা। জরায়ু বাদ দেওয়া বা হিস্টেরেক্টমি অনেক সময় লাগতে পারে, যদি বয়স বেশি বা বাচ্চার প্রয়োজন আর না হয়।

সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা নিলে মা হতে বাধা নেই। এন্ডোমেট্রিওসিসের রোগীর গর্ভসঞ্চার হলে চিন্তার কিছু নেই। আর দশজন অন্তঃসত্ত্বা নারীর মতোই যত্ন নিতে হবে।

এন্ডোমেট্রিওসিস এড়ানো সম্ভব?

  • সুস্থ জীবনযাপন খুবই জরুরি। খেলাধুলো বা শরীরচর্চা দরকার। দুগ্ধজাত দ্রব্য, রেডমিট, কফি, গম থেকে তৈরি খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। মানসিক চাপ কমাতে হবে।
  • অনেক সময় এন্ডোমেট্রিওসিসের কষ্ট সহ্য করতে করতে বিষাদগ্রস্ত হতে পারে। পরিবারের লোকজনের সহমর্মিতা দরকার।
  • নারীরা পিরিয়ডে বা যৌন সংসর্গে তীব্র ব্যথা হলে গোপন না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

* ডা. শারমিন আব্বাসি | বিজ্ঞানবিষয়ক সম্পাদক, এন্ডোমেট্রিওসিস সোসাইটি অব বাংলাদেশ, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top