What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মাদকাসক্তির বিরুদ্ধে জিততেই হবে (1 Viewer)

yCSyL3S.jpg


বলতে খারাপ লাগে যে আমার অনেক বন্ধু ও আত্মীয়স্বজন মাদকাসক্তির শিকার হয়েছেন। আমি নিশ্চিত যে আপনারা প্রায় সবাই কাউকে না কাউকে চেনেন, হয়তো খুব কাছে থেকেই—যে মাদকাসক্ত অথবা কোনো একসময় মাদকাসক্ত ছিলেন।

মাদকাসক্তি আমাদের সমাজে একটা বড় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান করতে হলে দুটি জিনিস মূলত করতে হবে। মাদকাসক্তি কীভাবে হয়, সে ব্যাপারে আমাদের জানতে হবে। দ্বিতীয়ত, আমাদের দেশে মাদকের বিক্রি ও বিতরণ আরও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। দ্বিতীয় বিষয়টির দায়িত্ব মূলত সরকারের ওপর পড়ে। দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের বিশেষ কিছু করার নেই। তবে মাদকাসক্তির ব্যাপারে জানাটা আমাদের নাগরিক কর্তব্য। যত দিন না জানব, তত দিন আমরা একধরনের ভয়ের মধ্যে থাকব। মাদকাসক্তি ঠেকানোর ক্ষমতা আমাদের কমে যাবে। কিছুদিন আগে ঢাবির ছাত্র হাফিজুরের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা আমাদের বড় ধাক্কা দিয়ে গেল।

তিন ধরনের সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন

মাদকাসক্তির ব্যাপারে মূলত তিন ধরনের সচেতনতা প্রয়োজন। সেগুলো হলো ব্যবহারিক, সামাজিক ও মানসিক। এর আগে হয়তো বলে রাখা প্রয়োজন যে সবার মাদকাসক্তি একভাবে হয় না। কারও মাদকাসক্তি হয় গভীর মানসিক এবং সামাজিক সমস্যার কারণে। আবার কারও হয় পারিপার্শ্বিকতার জন্য, কৌতূহল থেকে। মাদকের ব্যাপারে জ্ঞান থাকলে কৌতূহলের কারণে যে আসক্তিটা ঘটে, সেটা আমরা অনেক ক্ষেত্রেই এড়াতে পারব।

vJgKvj9.jpg


আসক্তি ঠেকানো অবশ্যই সম্ভব

ব্যবহারিক সচেতনতা

মাদক সেবন করার পর অনেকেই নানা ধরনের অপরাধবোধে ভোগেন। এই অপরাধবোধ তাদের আরও আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। খুব কম মানুষই কয়েকবার সেবনের পর আসক্তি থেকে বিরত থাকতে পারে। যদি কোনো কারণে অথবা কারও প্ররোচনায় সেবন করা হয়, তার মানেই এই নয় যে আসক্তি ছাড়ার কোনো উপায় নেই। আসক্তি ঠেকানো অবশ্যই সম্ভব। মাদক সেবন করলে আমাদের অবশ্যই খারাপ লাগা উচিত। কিন্তু এতটা অপরাধবোধে আক্রান্ত হওয়া উচিত নয়, যাতে আমাদের আসক্তি আরও ঘনীভূত হয়।

এর বাইরে আরও অনেক ধরনের ব্যবহারিক সচেতনতার বিষয় আছে। মাদকাসক্তির কথা ভাবলেই আমরা ধরে নিই হেরোইন বা ইয়াবা। এর বাইরেও অনেক ধরনের সেবনের প্রতি মানুষ আসক্ত হতে পারে। কিছু কিছু জিনিস আছে, সেগুলো খুব আসক্তির না হলে মানুষকে আরও ভয়ংকরের কাছে নিয়ে যায়। ইংরেজিতে এগুলোকে বলে গেটওয়ে ড্রাগস। এগুলো খেতে খেতেই একপর্যায়ে সেবনকারী আরও শক্তিশালী মাদকদ্রব্য খোঁজে। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ, যেমন ঘুমের ওষুধ বা ব্যথার ওষুধ—এগুলো গেটওয়ে ড্রাগসের কাজ করতে পারে। গাঁজা, মদও এ রকম ভূমিকা পালন করে। কেউ যদি এগুলোর প্রতি আসক্ত হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে আরও কঠিন, ভয়ংকর মাদকাসক্তির ঝুঁকি তার অনেক বেশি। কেউ বেশি বেশি ঘুমের ওষুধ খেলে সেটা হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। ঘুমের ওষুধ থেকে আরও কঠিন আসক্তি ভয়ংকরভাবে কাছে আসে।

দুই রকমের মানসিক সচেতনতা

মাদকাসক্তির ব্যাপারে মানসিক সচেতনতার দুটি দিক আছে। একটা হলো যে সেবন করছে, তার সচেতনতা। আরেকটা হলো তার আশপাশের এবং বিশেষ করে ভালোবাসার মানুষজনের সচেতনতা। যারা মানসিক কারণে মাদকাসক্তির শিকার হয়, তাদের সমস্যাগুলো বেশির ভাগ সময় আসক্তির অনেক আগে থেকেই দৃশ্যমান হয়। উপসর্গগুলো বুঝতে পারলে সেগুলোর চিকিৎসা করা সম্ভব। আর চিকিৎসা করলে মাদকাসক্তির ঝুঁকি কমানো সম্ভব।

ধরুন, আপনার কাছের কেউ যদি দিনের পর দিন বিষণ্নতা কাটিয়ে উঠতে না পারে, নিজের ব্যাপারে খুশি না থাকে তাহলে সেই মানুষের কোনো না কোনো ধরনের মানসিক সাহায্য প্রয়োজন। সেই সাহায্য না পেলে একটা সময় গিয়ে আরও অনেক ভয়ংকর ধরনের ক্ষতি হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম হলো আসক্তি। সুতরাং মানসিক সমস্যা একদমই হালকাভাবে নেওয়া ঠিক হবে না।

সামাজিক সচেতনতা জরুরি

যেমন মানসিক ও ব্যবহারিক, ঠিক তেমনই মাদকাসক্তি ঠেকানোর ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা অপরিহার্য। এখানে সামাজিক সচেতনতার বিভিন্ন দিক আছে। একটা হলো সঙ্গ। খুব কম মানুষ নিজে থেকে খুঁজে মাদকদ্রব্য সেবন করে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এ ব্যাপারে তাদের আশপাশের মানুষ ইন্ধন জোগায়। কার সঙ্গে মিশছি অথবা আমার কাছের মানুষ কার সঙ্গে মিশছে—এ ব্যাপারে সচেতনতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সচেতনতার আরেকটা দিক হলো একাকিত্বকেন্দ্রিক। কেউ কেউ একাকিত্ব উপভোগ করে। কিন্তু কেউ যদি দিনের পর দিন ইচ্ছার বাইরে একাকিত্ব অনুভব করে, তাহলে সেটা বিপজ্জনক। এ ব্যাপারে আমাদের সচেতন থাকতে হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কেউ যদি মাদকাসক্ত হয়, তাকে একাকিত্ব বোধ করতে না দেওয়া। স্বাভাবিকভাবেই আমরা মাদকাসক্তিকে ভয় পাই। এ জন্য আমাদের কাছের কেউ আসক্ত হলে আমরা তাদের দূরে ঠেলে দিই। একাকিত্বের কারণে তাদের আসক্তি আরও ঘনীভূত হয়। আপনার ভালোবাসার কোনো মানুষ যদি মাদকাসক্ত হয়, অনেক কষ্ট হলেও কোনো না কোনোভাবে আপনার তার কাছে থাকতে হবে। ভালোবাসার মানুষকে নিশ্চয় আপনি চিরতরে হারাতে চান না।

'আরে দোস্ত, একবার টান দাও', 'মামা, বুঝলা না কী জিনিস, একবার খাইয়া দেখো', 'দেখিই না খেয়ে, কেমন লাগে'—এইভাবে কখনো বন্ধুদের চাপে আবার কখনো কৌতূহলের বশে মাদকের স্বাদ নিতে গিয়েই কিন্তু সবাই একসময় মাদক নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। মাদকনির্ভরশীলতা একটি রোগ। উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে এই রোগে মানুষের ব্যক্তিত্ব, পেশাজীবন সব ধ্বংস হয়ে যেতে পারে; ঘটতে পারে আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর ঘটনা। তাই 'না' বলতে পারার শক্তি অর্জন করতে হবে। বন্ধুরা যতই চাপাচাপি করুক, বলতে হবে 'না, আমি মাদক নেব না'। কৌতূহলের বশেও কখনো মাদক নেওয়া যাবে না। স্মার্ট তরুণেরা কখনো মাদক নেয় না। মনে রাখতে হবে, মাদক কোনো সমস্যার সমাধান নয়, বরং সমস্যার সূত্রপাত। তাই যেকোনোভাবেই হোক, সব সময় মাদক থেকে দূরে থাকতে হবে। ভুলেও মাদক গ্রহণ নয়। - ডা. আহমেদ হেলাল, সহযোগী অধ্যাপক, মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট।

OxH3nUF.jpg


মাথা নিচু করে নয়, বাঁচতে হবে মাথা উঁচু করে

হাল ছেড়ো না বন্ধু

আসলে মাদকাসক্তির অনেক দিক আছে, যেগুলোর সব নিয়ে এই পরিসরের লেখায় আলোচনা করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন কারণে আমার আসক্তি নিয়ে লেখাপড়া করতে হয়েছে। এরপরও আমার সব কাছের মানুষকে যে আমি আসক্তি থেকে বাঁচাতে পেরেছি, সে রকম না। সব জেনেও অনেক সময় এই শত্রুর বিরুদ্ধে জেতা সম্ভব নয়। তবে চেষ্টা চালিয়েই যেতে হবে। নিজের জন্য, ভালোবাসার মানুষের জন্য। জানার চেষ্টা থামানো যাবে না।

তারুণ্যের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অপরিসীম

পরিশেষে আমার তরুণ পাঠকদের জন্য বলতে চাই, নিজের শক্তি ভুললে চলবে না। জীবনে নানা রকমের বাধা–বিপত্তি আসবেই। এ রকম সময় মনে রাখতে হবে, তরুণ বয়সে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অপরিসীম। ক্ষণিকের কষ্টের কারণে মাদকের মতো ভয়ংকর জিনিসের প্রয়োজন নেই। যেকোনো ইতিবাচক কাজ বা চিন্তায় মন দিন, দেখবেন যে কষ্টটা যত বড় মনে হয়েছিল, তত বড় নয়। যত সময় লাগবে ভেবেছিলেন, তার অনেক কম সময়েই কেটে গেছে।

আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে মাদকাসক্তিকে মোকাবিলা করি; বুদ্ধি দিয়ে মমতা দিয়ে। আমরা সবাই ভালো থাকি। এই কামনাই রইল।

* লেখক: ইরেশ যাকের | অভিনেতা, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top