What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ভাঙছে কি এই ভ্রান্ত ধারণার বলয়? (1 Viewer)

nTDwKsH.jpg


প্রথম যেবার 'সাতকাহন' পড়লাম, আমার বয়স তখন ১২–১৩। পিরিয়ড বা মাসিক ঘিরে মেয়েদের ওপর হওয়া ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের বিবরণ পড়ে ঠিক কেমন লেগেছিল আমার, এখনো স্পষ্ট মনে আছে। এরপর নিজের জীবনে যখন দীপার মতো দিনগুলো আসতে থাকল, আরও ভালোভাবে এই কুসংস্কারের বোঝার ভার আমার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল। এই যে লুকোচুরির দেয়াল আর শারীরিক কষ্টকে বাড়িয়ে দেওয়ার মতো মানসিক যন্ত্রণা, পুরো বিষয়টিকে এতটাই স্বাভাবিক ধরা হয় যে এর পরিবর্তনকে অনেক সময় মনে হয় অসম্ভব।

বাংলাদেশের প্রত্যেকটি মেয়েকেই খুব সম্ভবত প্রথম পিরিয়ডের সঙ্গে সঙ্গে যা শেখানো হয় তা হলো, এই বিষয়ে যা কিছু ট্যাবু। আরেকটু ভেঙে বলতে গেলে, কী করব কী করব না, তার একটা বড় লিস্ট, যার শুরুতেই থাকে কাউকে বলা যাবে না। চিন্তা করে দেখুন তো, সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া একটা মেয়ের ওপর কী ভয়াবহ একটা মানসিক বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয় কী সহজে। প্রজন্ম ধরে চলে আসা এই চর্চার দোষগুলো খুঁজে পেলেও তার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি আমরা এখনো।

কিন্তু এমন ট্যাবু হয়ে ওঠার কারণ কী, এটা তলিয়ে দেখতে গেলে যা পাওয়া যায় তা হলো আমাদের সংস্কৃতি। বরাবরের মতো এখানেও নারীদের ওপর অমানুষিক নির্যাতনকে সাধারণ চর্চা হিসেবে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রাচীনকাল থেকেই। প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতিতে পিরিয়ডকে এতটাই অশুচি বিবেচনা করা হতো যে মেয়েদের বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো, খাবারে থাকত না মাছ-মাংস-ডিম-দুধ আর অস্বাস্থ্যকর কাপড়ের ব্যবহার তো আছেই। এ ধরনের কিছুটা পরিবর্তন হলেও বিশ্বাসে খুব বেশি পরিবর্তন এখনো আসেনি। এখনো অনেকে বিশ্বাস করেন, পিরিয়ডের সময়ে মেয়েরা অশুচি ও খারাপ বাতাস বহন করে। এ ছাড়া শুভ কাজ ও ধর্মীয় কাজে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখা হয় তাদের। খাবারে করা হয় অযৌক্তিক বাছবিচার, যা বৈজ্ঞানিকভাবে একদমই অনুচিত। দুধ-ডিম খাওয়া থেকে বঞ্চিত না করে শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া রক্তের চাহিদা পূরণ করতে এ ধরনের খাবার বেশি করে খাওয়ানো উচিত।

JtcSZId.jpg


এমন অসংখ্য কুসংস্কার আমাদের আশপাশেই দেখতে পাওয়া যায়। এই যে পিরিয়ডকে শরীর খারাপ বলে, এর আসল অর্থকেই বদলে দেওয়া হয়, এটা বোঝার মতো অবস্থাও অনেকের থাকে না। আর শরীর খারাপই যদি হবে, তাহলে আমার জন্য আলাদা আদর–যত্ন আরেকটু বিশ্রাম কই? এই যে সারাক্ষণের মানসিক যন্ত্রণা—কেউ দেখে নিল কি না, ভেবে জামা চেক করা, সারাক্ষণ বাবা-ভাইয়ের থেকে লুকানো, অসহ্য ব্যথার মধ্যে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা—এগুলো থেকে একটু মুক্তি কই? আসলে একটা অদৃশ্য বলয়েই আটকে গেছি আমরা, বেরিয়ে আসা খুব বেশিই কঠিন মনে হয়!
তবে আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতাগুলোকে খুব হালকা মনে হয়, যখন একটু নিজেদের গণ্ডির বাইরে গ্রামীণ ও সুবিধাবঞ্চিত মেয়েদের তাকানো হয়। এই কুসংস্কার ও অশিক্ষার জালের মধ্যে এখনো তারা আটকে আছে। শারীরিক কষ্টের পাশাপাশি সঠিক পিরিয়ড প্রোডাক্টের অভাবে অস্বাস্থ্যকর কাপড়ের ব্যবহারের পাশাপাশি কুসংস্কার। নিজের শরীর ও নিজের স্বাস্থ্যের বিষয়ে সঠিক ধারণার অভাব। একটা মেয়ে, যার বয়স এখনো বিশের কোঠায়ও গেল না, তার জন্য যে কী ভয়াবহ হতে পারে, তা সাধারণ মানুষের জায়গায় বসে বোঝা সত্যিই কঠিন।

কিন্তু এত সব মন খারাপ করা যুগের পর যুগ, প্রজন্ম ধরে চলে আসা কুসংস্কারের কথার পরে একটু আশার কথা বলতেই হয়। এই যে কুসংস্কারের বলয়, ট্যাবু করে রাখার চর্চা, এতে পরিবর্তন আসছে একটু একটু করে। এখন যেমন আর বাড়ির বাইরে সাত দিন আটকে রাখা থেকে এগিয়ে আমরা এ জায়গায় এসেছি, আস্তে আস্তে আরও অনেক দূর এগিয়ে যাব, তা তো আশা করতেই পারি। তবে বর্তমানেও দেখার মতো পরিবর্তন এসেছে অনেক দিকেই। সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টির জন্যও সবার কাছে স্যানিটারি প্রোডাক্টস সহজলভ্য করতে কাজ করে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। অনেক কর্মক্ষেত্রেই নারীদের জন্য মেনস্ট্রুয়াল লিভের সুবিধা দেওয়া হয়। এ ছাড়া সবার মধ্যে সচেতনতা তৈরির জন্যও কাজ হচ্ছে ব্যাপকভাবে। টিভি, প্রিন্ট মিডিয়া থেকে স্যোশাল মিডিয়া—সর্বত্রই চলছে সচেতনতার কার্যক্রম। এর ফলে একদিকে যেমন এটিকে কেন্দ্র করে থাকা ভয়-লজ্জা ও প্রাচীন সংস্কারগুলো ভেঙে ফেলা সহজ হচ্ছে; অন্যদিকে নারীর সুস্থতা নিশ্চিত করাও সম্ভব হচ্ছে।

প্রতিবছর ২৮ মে বিশ্ব মাসিক সাস্থ্য সচেতনতা দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে, যার লক্ষ্যই হলো প্রান্তিক মেয়ে থেকে শুরু করে প্রতিটি পর্যায়ে প্রয়োজনগুলো তুলে ধরাও মেয়েদের জন্য সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি। এ ধরনের উদ্যোগের সুফল হচ্ছে এখনকার সমাজে নারী-পুরুষ সবাই এই ট্যাবু থেকে বেরিয়ে এসেছে কিংবা আসছে। এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে কথা হচ্ছে, ফলে সবার জন্যই সহজ হয়ে উঠছে পুরো বিষয়টি। ফলে পরবর্তী প্রজন্মের সামনে পিরিয়ড ট্যাবুগুলো আর থাকবেই না।

সংস্কার আর কুসংস্কার নিয়ে কেউ জন্মায় না, এইগুলো আমরা আশপাশের থেকে শিখি, নিজের মধ্যে ধারণ করি ও পরে অন্যদের শিখাই। তাই সমাজের পরিবর্তনে ভূমিকা রাখার সুযোগ প্রত্যেকের কাছেই থাকে। নিজের জায়গা থেকে নিজের সামর্থ্যের মধ্যে যতটুকু পরিবর্তন সম্ভব, তা করলেই সমাজের চিত্র অনেকটা বদলে যায়। আমার দাদি বা নানি বোধ হয় চিন্তাও করতে পারতেন না আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমি যেভাবে পিরিয়ড ট্যাবু ব্রেকিং নিয়ে কথা বলছি, আদৌ সম্ভব। তাঁরা আসলে এইগুলোকে ট্যাবু না ভেবে সমাজের অংশই ভাবতেন। ঠিক এই জায়গা থেকেই পরিবর্তনের ধারণা শুরু হয়, যা আমাদের জন্য ভালো কিছু আনে না, তাকে সমাজের অংশ না করে পরিবর্তন করাই শ্রেয়। সময়ের সঙ্গে আরও বদলাবে এই ট্যাবু, আরও সহজ হবে প্রতিটি মেয়ের পিরিয়ডের ভয়াবহ যন্ত্রণার সময়গুলো।

* লেখক: মাহজাবিন রশীদ লামিশা | অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
 

Users who are viewing this thread

Back
Top