What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ভাস্কো-দা-গামার আসা–যাওয়া (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
ইউরোপের সঙ্গে এশিয়ার যোগসূত্র তৈরির কাজটি শুরু হয়েছিল পর্তুগিজ নাবিক ভাস্কো-দা-গামার ভারত যাত্রার মধ্যে দিয়ে। এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০ মে। দিনটি একদিকে মিলনের হলেও অন্যদিকে উপনিবেশের বিষবৃক্ষ স্থাপনেরও।

iF8U4CA.jpg


পেদ্রো-দোস-দেসকমব্রিমেনতোস ভাস্কর্য

সময়টা ছিল শরৎকাল; ইউরোপের শরৎ। এ শরৎ ঠিক আমাদের বাংলার শরতের মতো নয়। বাংলার শরৎ মানেই কাশফুলের শুভ্রতা, শিউলি ফুলের সৌরভ, নীল আকাশে পেঁজা তুলোর মতো মেঘের ভেলা। ইউরোপের শরতে বাংলার এসব উপসর্গ দুর্লভ। ইউরোপে আমার স্বল্পতম প্রবাস জীবনে শরৎ বলতে বুঝেছি প্রকৃতির পাতা ঝরার প্রস্তুতির খানিক পূর্বের সময়কাল। শীতটা আমায় কাবু করতে পারবে না, হালকা সোয়েটার জড়াব শরীরে, হাত মোজা পরার সময় এটা নয়; গাছের পাতার সবুজ তখনো সতেজ কিন্তু সেটি লালচে হওয়ার চেষ্টায় থাকবে, এই তো…।

AGsy3SM.jpg


লিসবন বিমানবন্দর, ছবি: উইকিপিডিয়া

সেই শরতে পর্তুগাল যাত্রার বন্দোবস্ত পাকা। ভাস্কো-দা-গামার দেশ বলে কথা! খুব ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম, কারণ এই ভ্রমণে কেবল লিসবন পর্যন্ত পৌঁছালেই হবে। আমার থাকা–খাওয়ার কোনো চিন্তা নেই। সেখানে আমার যত্নআত্তির জন্য আছে আমার ছোট ভাই শোয়েব; আছে ভার্সিটির বন্ধু মুকুল। ভ্রমণসঙ্গী আমার বন্ধু নিসাদ আপা। আমাদের ফ্লাইট ছিল সুইজারল্যান্ডের বাসেল থেকে লিসবন। একরকম হেসেখেলে, হেলেদুলে আমরা লিসবন এয়ারপোর্ট পৌঁছালাম। রাত তখন এগারোটার মতো হবে। যা ভেবেছিলাম তা–ই, শোয়েব আর মুকুল দাঁড়িয়ে আছে আমাদের অপেক্ষায়।

সাধারণত যেকোনো দেশেই এয়ারপোর্টগুলো মূল শহর থেকে বেশ দূরে হয়। একটি ব্যতিক্রম দেখলাম পর্তুগালে, সেটি হলো এয়ারপোর্ট থেকে লিসবনের মূল শহরের দূরত্ব মাত্র ৭-৮ কিলোমিটার। তখনো শহরের কফিঘরগুলো পূর্ণ লোকে আর আলোতে। নিয়নবাতিগুলো করছে রাতের নগরকীর্তন। এ আঁধারেও বুঝতে পারি রাস্তার দুধারে হাঁটার জন্য আছে চওড়া মোজাইকপথ। পানশালাগুলো থেকে ভেসে আসছে পর্তুগিজদের ফাদো সংগীতের সুর। কিংবদন্তি আছে প্রাচীন গ্রিক নায়ক ইউলিসিস লিসবন নগরীটির গোড়াপত্তন করেন।

LmSHx0U.jpg


তাগুস নদীতীরের শহর লিসবন, ছবি: উইকিপিডিয়া

পর্তুগালের পশ্চিম ভাগে আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলে তাগুস নামে একটি নদী আছে, এ নদীর প্রশস্ত মোহনার কাছে লিসবন দাঁড়িয়ে। মুকুলের বাসায় করলা ভাজি, বড় রুই মাছ, পর্তুগিজদের জনপ্রিয় বোরালো মাছ আর গরুর মাংস দিয়ে নৈশভোজ সারলাম। রাতে আমার আর নিসাদ আপার থাকার ব্যবস্থা হলো একটি স্বল্প মূল্যের হোস্টেলে। নাম তার ভিস্তালিসবুয়া। এই হোস্টেলগুলোকে বলা হয় পেনসাউ হাউস।

খুব আঁটসাঁট ছোট একটি রুম। ছোট্ট রুমে একটি বড় খাট। খাট বড় হওয়ায় আরামের ঘুম হলো। পরদিন সকালে আমরা রিগান মামার গাড়িতে; আমি, নিসাদ আপা, সোয়েব, মুকুল আমরা পাঁচজন বেরিয়ে পড়লাম শহরে। যতটুকু বইয়ে পড়েছি যে এই শহর সাতটি পাহাড়সমেত গঠিত, তার প্রমাণ পেলাম। শহরের চলার পথ বেশ উঁচু–নিচু। শহরের উঁচু স্থানে চলাচলের জন্য আছে এলেভাদর নামের একধরনের ট্রাম গাড়ির ব্যবস্থা। আমি তো শহরের রূপ-যৌবনে আত্মহারা! অসাধারণ!

YHfrybs.jpg


বেলেম টাওয়ার, ছবি: উইকিপিডিয়া

আমরা নগরীর যে এলাকাটির দিকে এগোচ্ছি তার নাম বেলেম। ষোড়শ শতকের স্থাপত্যকলার নিদর্শন জেরোনিমোস মঠ বা আশ্রম দেখতে যাচ্ছি। জেরোনিমোস আশ্রম নির্মিত হয় ১৫০২ সালে। এই মঠটিতেই আছে পর্তুগিজদের জাতীয় পুরাতত্ত্ব ও জাতিবিদ্যা জাদুঘর, যেগুলোকে এককথায় বলা যেতে পারে প্রাগৈতিহাসিক ও রোমান সংগ্রহশালা। আশ্রমের সম্মুখে অভিজাত বাগান। পর্তুগিজদের সঙ্গে সমুদ্র অভিযান প্রায় সমার্থক। এ আশ্রম পর্তুগালের অভিযান যুগের সাক্ষী। এই স্থানটি ইতিহাসে আরও বৃহৎ তাৎপর্য বহন করে, কারণ এখানে সমাহিত আছেন ভাস্কো-দা-গামা অর্থাৎ এখানেই গামার সমাধিস্থল।

DYSelEY.jpg


জরোনিমস মঠে ভাস্কো-দা-গামার সমাধি, ছবি: উইকিপিডিয়া

জেরোনিমোস আশ্রমের ঠিক বিপরীতে আরও অপার বিস্ময়, গামার সম্মানে নির্মিত হয়েছে পেদ্রো-দোস-দেসকমব্রিমেনতোস (Padrão dos Descobrimentos)। গামার সমুদ্র অভিযানকে চিত্রায়িত করা হয়েছে এখানে। ভাস্কর্যটি দেখতে একটা প্রস্তরের বৃহৎ সুউচ্চ স্তম্ভ, যা তাগুস নদীর তীরের দিকে ঝুঁকে রয়েছে।

বুঝতে বাকি রইল না ভাস্কর্যের আদলটি হলো একটি বৃহৎ জাহাজের। ব্যাপারটি অনেকটা এ রকম—এই ভাস্কো-দা-গামার জাহাজ ছাড়ল বলে। গামা এখান থেকেই দেশ ছেড়েছিলেন ভারতবর্ষের উদ্দেশে। ১৫ ও ১৬ শতাব্দীকে বলা হয় পর্তুগিজদের অভিযান যুগ বা আবিষ্কার যুগ, একে স্মরণীয় করতেই এটি নির্মিত। ভাস্কর্যটির সামনে সুবিশাল খোলা চত্বর আর তার তিন দিকে কেবল দিগন্ত বিস্তৃত তাগুস নদীর নীল জলরাশি। তাগুস নদীর নীল, ভাস্কর্য আর পর্যটকের সমারোহে যে নৈসর্গিক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়, তা বর্ণনা করার ভাষা নেই আমার। কখনো গাঢ় নীল, কখনো আকাশি! এ নীলের বিশালতা খুব কাছে টানে, উদারতা শেখায়। না, ঢেউ নেই, গর্জন নেই, প্রশান্ত চারদিক।

ungGll7.jpg


ভাস্কর্য পেদ্রো-দোস-দেসকমব্রিমেনতোসের সামনে বন্ধুদের সঙ্গে লেখক (বাঁ থেকে দ্বিতীয়), ছবি: উইকিপিডিয়া

এই নিস্তব্ধতা আত্মার সঙ্গে কথা বলতে শেখায়। আমি বাকরুদ্ধ! সত্যি, ইতিহাসকে এমন স্পষ্ট করে তুলে ধরা যায়? এ ভাস্কর্য তো সে গামার কথাই জানান দিচ্ছে, যে গামা একজন পর্তুগিজ অনুসন্ধানকারী, সেই সঙ্গে পর্যটক; ইউরোপ থেকে যে ব্যক্তি প্রথম পানি পথে এশিয়া এসেছিলেন। ঘটনাটি ঘটেছিল ১৪৯৭ সালে। তিনি কেবল এশিয়া আর ইউরোপকে সংযুক্ত করেননি, ভ্রমণ শুরু করেছিলেন আটলান্টিক মহাসাগর থেকে থেমেছেন ভারত মহাসাগরে গিয়ে। এশিয়ায় পর্তুগিজদের সুদীর্ঘ উপনিবেশ স্থাপনের পথ সৃষ্টি হয়েছিল এ অভিযানের মধ্য দিয়ে। বিজ্ঞরা মনে করেন এই অভিযান বিশ্বায়নের বহু সাংস্কৃতিক ধারণার প্রচলন করেছে। পৃথিবীর স্কুলগামী একটি শিশুও হয়তো পাওয়া যাবে না, যাকে স্কুল পাঠ্যবইয়ে তাঁর সম্পর্কে জানতে হয়নি।

বিভিন্ন নথি পড়ে জেনেছি, কৈশোরে তিনি গণিত আর জাহাজ চালনা রপ্ত করেছেন। তিনি প্রথম যৌবনে সেনা ছিলেন, অর্ডার অফ সান্তিয়াগোতে। পর্তুগালের রাজা তাঁকে পাঠালেন ফ্রেঞ্চ জাহাজ দখলের একটা মিশনে ১৪৯২ সালে; কাজটা তিনি এত সফলভাবে করেছিলেন যে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে যায় রাষ্ট্রে। এ বীরত্বের পাঁচ বছর পর ১৪৯৭ সালে এ শহর থেকেই নতুন অভিযাত্রা, ১৭০ জনকে নিয়ে ৮ জুলাই ভারতের দিকে, শুরুতে ছিল চারটা জাহাজ। সে সময় আফ্রিকা হয়ে ভারত পৌঁছাতে হয়। প্রায় বছরখানেক পর জাহাজ ভিড়ল কালিকটের কাছে কাপ্পাড়ুতে। গামা যে ভারতবর্ষে পৌঁছান, তার চিহ্নস্বরূপ একটা পেদ্রো স্থাপন করেন। পেদ্রো হলো একধরনের নিশানা বা চিহ্ন, যেটা আবিষ্কৃত জায়গায় স্থাপন করা হয়, দেখতে সেটি পাথরের পিলারের মতো।

Hj8ej0x.jpg


কাপ্পাড়ুতে স্থাপন করা পেদ্রো, ছবি: উইকিপিডিয়া

কালিকটের রাজা সামুদিরি বিদেশিদের ৩ হাজার নায়েরের উপস্থিতিতে শোভাযাত্রার মাধ্যমে রাজকীয় সম্মাননা প্রদান করেন। ভাস্কো-দা-গামার উদ্দেশ্য প্রথমে রাজার সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি করা। তিনি উপঢৌকন নিয়ে এসেছিলেন। কেমন উপহার পেতেন সে সময়ের রাজারা? বণিকেরাই বা কেমন উপহার দিতে পছন্দ করতেন ভিনদেশের রাজ দরবারে? রাজাকে গামা উপহার দিলেন চারটি জোব্বা, যা ছিল বেশ উজ্জ্বল লাল কাপড়ের, টুপি ছয়টি, প্রবাল চার প্রকারের, বারোটি আলমাসার, পিতলের পাত্রসহ বাক্স, এক সিন্দুক চিনি, এক পিপা তেল ও মধু। কিন্তু এ উপঢৌকন রাজাকে আকৃষ্ট করতে পারেনি। রাজা আশা করেছেন উপহার হবে সোনা-রুপা। সামুদিরির কাছে গামা ভারতবর্ষে ব্যবসা করার অনুমতি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হলেন। রাজার শর্ত ব্যবসা করতে হলে স্বর্ণ দিয়ে খাজনা দিতে হবে।

এদিকে আরব বণিকেরা রাজাকে বোঝাতে সমর্থ হন যে গামা আসলে কোনো বণিক নন। গামার উদ্দেশ্য বাণিজ্য চুক্তি বা একটি সমঝোতা চুক্তির মধ্য দিয়ে বাণিজ্য কুঠি নির্মাণ এবং তাঁর অবিকৃত পণ্যসামগ্রী সেখানে রেখে যাওয়ার বন্দোবস্ত করা। রাজার সঙ্গে সমঝোতায় ব্যর্থ হয়ে গামা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নেন। তাঁর জাহাজ ভর্তি করেন নানা মসলা, অলংকার, গজদন্ত ইত্যাদি সামগ্রীতে।এর পরের ইতিহাস ভিন্ন সাক্ষ্য দেয়। সে ইতিহাস বর্বরতার। সে ইতিহাস ভারতবর্ষের সার্বভৌমত্বের প্রতি হানিকর। গামা সেদিন ক্ষুব্ধ হয়ে কয়েকজন নায়ের এবং কিছু জেলেকে জোরপূর্বক ধরে নিয়ে যান। বর্বরতার শুরু এভাবেই। যদিও সে যাত্রায় গামা লিসবন ফিরে গেছেন কিন্তু পাঁচ বছর পর ১৫০২ সালে আবার ভারতে আসেন বহুগুণ শক্তি সঙ্গে নিয়ে

yO0Oh5w.jpg


পর্তুগালের আলমদা শহরে যীশুর ভাস্কর্যের সামনে লেখক, ছবি: উইকিপিডিয়া

দ্বিতীয় আগমনের উদ্দেশ্য ছিল রাজাকে বধ করা। এ অভিযানে পনেরোটি জাহাজ আর আট শ সশস্ত্র জনবল। ১৫০২ সালের অক্টোবরে বিশাল নৌবহর দ্বিতীয়বার ভারতবর্ষে আসে। সে সময় সেখানে চার শ হজ যাত্রীদের নিয়ে মিরি নামের একটি জাহাজ মক্কা থেকে আসছিল। কথিত আছে সে জাহাজে পঞ্চাশ জন নারী ছিলেন, ছিলেন মিসরের রাষ্ট্রদূত। গামা সে জাহাজ আক্রমণ করে সব যাত্রীকে পানিতে ডুবিয়ে মেরে ফেলেন, এমনকি শিশুদেরও।

এ যাত্রায় কালিকটের রাজা গামার কিছু শর্ত মেনে না নিলে গামা সশস্ত্র আক্রমণ করে। পর্তুগিজ জাহাজগুলো থেকে দুদিন গোলাবর্ষণ করে নানা ক্ষতি ও আতঙ্কিত করে রাজাকে। গামা বেশ কিছু ভারতীয় জাহাজ আটকে ক্রুদের হাত-নাক-কান কেটে রাজার কাছে পাঠাতেন তাঁর দুঃসাহস দেখানোর নমুনা হিসেবে। গামাকে পরাজিত করতে কালিকটের রাজা একটি অস্ত্রবাহী নৌবিহার ভাড়া করেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি গামার সঙ্গে পেরে ওঠেননি।যদিও ভাস্কো–দা–গামাকে ইতিহাস স্বীকৃতি দিয়েছে ইউরোপীয়দের ভারতবর্ষ আবিষ্কারক হিসেবে, কিন্তু ভারতবর্ষের জন্য এটা একটি কালো অধ্যায়ের শুরুও বটে। আজ ২০ মে।

ZcVenQO.jpg


লিসবন থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে ইউরোপের সর্বশেষ ভূমি 'কোবো দো রোকা'য় লেখক

আজ থেকে ৫২৪ বছর আগে ভাস্কো-দা-গামার জাহাজ ভিড়েছিল ভারতের কালিকট বন্দরে। ইতিহাসের এত কাছাকাছি গিয়ে আর ফেরত আসতে মন মানছিল না। সম্মুখে তাগুস নদীর নীল জলরাশি, এ নদী খানিক পরে মিলেছে আটলান্টিকের সঙ্গে। এ নীল কি জানে, সে আমার ভারতবর্ষের কাছে কতটা ঋণী?

লেখক: মহুয়া রউফ | গবেষক ও পরিব্রাজক এবং সদস্য, বাংলাদেশ ট্রাভেল রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনতথ্য | সূত্র: উইকিপিডিয়া, বাংলাপিডিয়া, রোর মিডিয়া
 

Users who are viewing this thread

Back
Top