What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

পারমিতার পান্থশালা ২ (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
পারমিতার পান্থশালাটা যেন একটা প্রবহমান গ্রাম। নতুন নতুন পড়শি দুদণ্ড পাশাপাশি থাকছে। তারপর তারা চলে গেলে জোয়ারের সময় নতুন ঢেউয়ের সঙ্গে নতুন একদল বাসিন্দা এসে ক্ষণিকের জন্য বাসা বাঁধছে। তাতে পান্থশালার প্রাণময়তা থেকে যায় অবিকল। সেই উষ্ণতা, প্রকৃতির সান্নিধ্য আর নৈশব্দের মূর্ছনা উপভোগের লোভ তাই সামলানো মুশকিল।

0V5SyNg.jpg


পারমেটে আমার আসার আর একটা কারণ ছিল, এখানে পাহাড়ের ওপর লেউসা নামের একটা গ্রামে অরণ্যের ভেতর লুকিয়ে থাকা একটা গির্জা দেখা। ষাট থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এনভার হোক্সার প্রতাপশালী কমিউনিস্ট সরকারের আমলে পৃথিবীর প্রথম ঘোষিত 'নাস্তিক রাষ্ট্র' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আলবেনিয়া। সে সময় এ দেশের সব উপাসনালয় বন্ধ এবং ধ্বংস করে দেয়। অরণ্যের ভেতর লুকানো থাকায় কীভাবে কীভাবে যেন নজর এড়িয়ে যায় গির্জাটা। ভাগ্যিস বেঁচে গিয়েছিল! নয়তো এর দেয়ালে বাইজেন্টাইন স্টাইলে আঁকা ফ্রেস্কোগুলো দেখাই হয়তো না।

6MdFSPX.jpg


বনের মধ্যে লুকানো গির্জা

6oscUZq.jpg


দেয়ালজুড়ে বাইজেন্টাইন স্টাইলের ফ্রেস্কো

চার্চের মতো পবিত্র একটা জায়গায় যাব বলে আমি একদম ফুল প্যান্ট–ফুল শার্ট পরে বেরিয়েছি। গুগল ম্যাপ বলছে, পাঁচ কিলোমিটারের মতো পথ। এ আর এমনকি, এই ভেবে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ম্যাপ ধরে এক কিলোমিটার যাওয়ার পর দেখি পথটা এঁকেবেঁকে পাহাড়ের ওপর উঠে গেল! সেই পথে সাইকেল বয়ে নিয়ে যাওয়া দুঃসাধ্য। সেটা একটা গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে হাঁটা শুরু করলাম। ট্রেকিং করার খুব একটা অভ্যাস নেই, তাই কিছুক্ষণ পরপরই দম ফুরিয়ে আসতে থাকল। সঙ্গের ছোট বোতলটায় যেটুকু জল ছিল, তা নিমেষেই শেষ হয়ে গেল। ভাবলাম বুঝি কিছুটা হাঁটলেই তো গ্রাম, কারও বাসায় চেয়ে নেওয়া যাবে।

পাহাড় বেয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার ওঠার পরও যখন কোনো জনপদের দেখা নেই, তখন একটু ঘাবড়েই গেলাম। দরদর করে ঘামছি, পিঠের ব্যাগ পর্যন্ত ভিজে একাকার। ডি–হাইড্রেটেড হয়ে যদি অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকি, কেউ জানবেও না। জিনস ভাঁজ করে ব্যাগে রেখে দিলাম। কিছুটা ঠান্ডা হয়া গেল বটে। কিন্তু জল ছাড়া আর চলতে পারব বলে মনে হয় না। নিজের ওপর একটু রাগই হলো। আরেকটু খোঁজখবর নিয়ে বের হওয়া উচিত ছিল। পথের প্রস্তুতি না থাকলে পথ চলাটা উপভোগ করা যায় না। কোথাও পৌঁছনোর পথটাই তো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

LciL97E.jpg


গির্জার বন্ধ দরজার সামনে লেখক

এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে হাঁটছি, হঠাৎ মোড় ঘুরতেই দেখি পাহাড়ের এই বাঁকটা থেকে পুরো উপত্যকার একটা প্যানারমিক ভিউ। উপত্যকার মাঝ দিয়ে এঁকে বেঁকে বয়ে গিয়েছে স্রোতস্বিনী ভিওসা, একটা নীল রঙের শিফনের ওড়না যেন। উপত্যকাজুড়ে সবুজের বিভিন্ন শেডের শস্যক্ষেত্র। একটু জিরিয়ে নিলাম বসে। ততক্ষণে গায়ের জামাও খুলে ফেলেছি। হালকা বাতাসে ক্লান্তিটা কোথায় যেন ভেসে গেল মুহূর্তে। পুরো একটা পাহাড় যেন আমার একার।

কতক্ষণ কেটেছে খেয়াল করিনি, একটা নুড়ি গড়িয়ে যাওয়ার শব্দ শুনে পেছনে ফিরে দেখি, আমি যে পথ দিয়ে হেঁটে এসেছি, সেই পথে দিয়ে এগিয়ে আসছে একটা কুকুর। ওকেও বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। আমার উপস্থিতি সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে পাহাড় বেয়ে ওপরে উঠতে থাকল। খানিকটা দূরে গিয়ে একবার আমার দিকে তাকাল। যেন বলতে চায়, 'এসো আমার সঙ্গে'। আমারও মনে হলো, ও তো নিশ্চয়ই জানে এই পাহাড়ে কোথায় জল পাওয়া যাবে। পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করলাম। পাহাড়ের এই পাশের দৃশ্য এত সুন্দর যে শারীরিক অবসাদটা ততক্ষণে দূর হয়ে গেছে। তবে অতিরিক্ত ঘামের জন্য শরীরে জলশূন্যতা তৈরি হয়েছে বৈকি।

axQn5tL.jpg


একই বৃন্তে গোলাপি আর নীল রঙের ফুলে স্পষ্ট লিঙ্গসমতা

ধীরে ধীরে পথ চললে পথের পাশে কত রকমের যে বুনো ফুল দেখা যায়! একটা ছোট্ট গাছে দেখলাম একই বৃন্তে গোলাপি আর নীল রঙের দুটি আলাদা আলাদা ফুল। লিঙ্গসমতার প্রাকৃতিক উদাহরণ যেন! আরেকটা ফুল দেখলাম সারা শরীর নরম কাঁটায় ভরা। কাঁটা অভিযোজনগত উদ্দেশ্য যদি শত্রু নিবারণ হয়, তাহলে কে সেই কোমলতর শত্রু! এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে অনেকটা পথ চলে এলাম। জলকষ্টের কথা মনেও আসেনি! কষ্ট নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে ফুল-পাখি-প্রজাপতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলে পথটা সত্যিই সহজ হয়ে যায়।

আমার ধারণা ঠিকই ছিল, কুকুরটা মূল পথের পাশে একটা ছোট পায়ে হাঁটাপথে চলা শুরু করল। আমি অনুসরণ করলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে একটা কুল কুল শব্দ। আরেকটু এগোতেই দেখি, একটা পাহাড়ের গায়ে শেওলা বেয়ে ছোট্ট একটা ঝিরি। স্বচ্ছ-শীতল জল!

BhIbIKk.jpg


আরেকটু এগোনোর পর পাহাড়ের আরেক বাঁকে গাছপালায় ঢাকা গির্জাটা দেখতে পেলাম! জিনিসটা আছে তাহলে! দেখে কাছে মনে হলেও পাহাড়ের খাঁজ পেরিয়ে বেশ অনেকটা পথই মনে হলো। তবে পথের শেষে গন্তব্য নিশ্চিত জেনে বাকিটা পথ হাঁটতে আর বেশি কষ্ট হয়নি।

গির্জার পুরোনো মূল গেটটায় তালা। তবে পাশের নিচু পাঁচিলটা টপকাতে বেশি বেগ পেতে হয়নি। ফটক পেরিয়ে প্রথম আঙিনাটা মনে হলো গ্রেভইয়ার্ড। এরপর বড় বড় পাথুরে ইটের একটা সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমেই গির্জার বারান্দাটা। বেশ ছিমছাম। মনে হলো কেউ হয়তো এসে ঝাড়ু দিয়ে যায় নিয়মিত। বারান্দার এক পাশ থেকে পুরো উপত্যকাটা দেখা যাচ্ছে, আরেক পাশের দেয়ালজুড়ে সেই বাইজেন্টাইন ফ্রেস্কোগুলো।

8wqmX0B.jpg


রং অনেকটা মলিন হয়ে গেলেও ছবির চরিত্রদের অভিব্যক্তিগুলো স্পষ্ট

রং অনেকটাই মলিন হয়ে গেছে কিন্তু ছবির চরিত্রদের অভিব্যক্তিগুলো স্পষ্ট। সব কটি ছবিই খ্রিষ্টধর্মের বিভিন্ন সন্ত এবং যাজকদের উপাখ্যান। রংগুলো সবই যেন প্রাকৃতিকভাবে সংগৃহীত। অজন্তার গুহার ছবিগুলোর বর্ণবিন্যাসের সঙ্গে মিল রয়েছে। জায়গাটা এত শান্তি শান্তি! ঘণ্টার পর ঘণ্টা চুপ করে বসে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকা যায়। তাই ছিলাম। সন্ধ্যার আগে আগে হুঁশ হলো। আকাশ কালো করে মেঘ এসে জড়ো হচ্ছে। বৃষ্টি হবে হয়তো। হোক।

ফেরার সময় ঢালু পথ বেয়ে নামতে আর তেমন কষ্ট হয়নি।
ডেরায় ফিরে দেখি, আগের ক্যারাভ্যানগুলো নেই। সেই জায়গায় অন্য গাড়ি-বাড়ি চলে এসেছে। তাতে অন্য সব মানুষ। হঠাৎ মনে হলো, এই পারমিতার পান্থশালাটা একটা প্রবহমান গ্রাম যেন। নতুন নতুন পড়শি এক–দুই দিন পাশাপাশি থাকছে, তারপর জোয়ারের সময় নতুন ঢেউয়ের সঙ্গে একদল বাসিন্দা চলে গিয়ে আরেক দল নতুন বাসিন্দা চলে আসছে।

0PiPtIS.jpg


ফেরার পথে মেঘের পরে মেঘ জমতে শুরু করেছে

ক্লান্ত শরীরে কোনোমতে আমার ক্যারাভ্যানে গিয়ে ঢুকলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি নামল। ভেজামাটির সোঁদা গন্ধটা ভিক্টোরিয়াস সিক্রেটের প্যাশন পারফিউমটার মতো কি? আরামে চোখ বুজে আসছে। আবছা আলোয় আধবোজা। দেখলাম, চ্যাং একটা ফ্রাই প্যান মাথায় ছাতার মতো ধরে রান্নাঘরের দিকে জোরে জোরে হেঁটে যাচ্ছে। পেছন পেছন নতুন একজন পড়শি। (শেষ)

* লেখক: সৌভিক দাস, মানবতাবাদীকর্মী
 
Last edited:

Users who are viewing this thread

Back
Top