What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

নিগাতার খড়ের ঘর, প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটর আর খাবার (1 Viewer)

Bergamo

Forum God
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
9,649
Messages
117,051
Credits
1,241,096
Glasses sunglasses
Berry Tart
Statue Of Liberty
Profile Music
Sandwich
0H9F51u.jpg


নিগাতা।

এই নামটি লেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনে পড়ল ছোটবেলায় বাড়ির দেয়ালে ঝোলানো বর্ষপঞ্জিকায় ছাপানো বিদেশি ছবির কথা। যেসব ছবির বাড়ি, ঘর, পথ—সব পরিপাটি, গোছানো। দেখে মনে হতো, এ যেন স্বপ্নের শহর! জাপানের পশ্চিম উপকূলের হোনশু দ্বীপের বৃহত্তম শহর নিগাতাও ঠিক তেমন।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আমন্ত্রণে এক আলোচনাসভায় বক্তা হিসেবে অংশ নিতে নিগাতায় যাওয়া। সেটা ২০১৫ সালের কথা। ১২ দিনের সফর ছিল। সেই ভ্রমণে পদে পদে শিখেছি, অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি, মুগ্ধ হয়েছি। জাপানিদের নিয়মানুবর্তিতা, মানবিকতা, সদয় ব্যবহার, বিনয় ও সৌজন্যের পরিচয়ও পেয়েছি। তবে প্রথম দু-তিন দিন যোগাযোগের অসুবিধা বোধ করেছি। কতটা অসুবিধা হয়েছে, তার একটি উদাহরণ দিই।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির কাছাকাছি একটি হোটেলে আমার থাকার ব্যবস্থা ছিল। হোটেলের অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা মাঝবয়সী এক ব্যক্তি এসে ঝুঁকে ইংরেজিতে অভিবাদন জানিয়ে বললেন, 'আমি ইংরেজি জানি না।'

অসহায় বোধ করছিলাম এই ভেবে যে প্রত্যুত্তরে আমার কী বলা উচিত। নিগাতা শহরে অবস্থানকালে সেই অভ্যর্থনাকক্ষে সবার সঙ্গে আমার হাসি বিনিময় ছাড়া দু-চারটা যা কথা হয়েছে, তার সবই ইশারায়। ইশারা, ইঙ্গিতে যা বোঝানো যেত না, আমি সেটি একটি কাগজে লিখে দিতাম, কিছুক্ষণ পর সেই কাগজে ইংরেজিতে উত্তর লিখে পাঠানো হতো। কে উত্তর লিখতেন বা কী উপায়ে লেখা হতো জানি না!

0N1Ej8R.jpg


নিগাতা পথ, প্রকৃতি যেন ছবির মতো

কনফারেন্সের ব্যস্ততায় দুদিন কেটে যায়। এরপর ঘুরে বেড়ানোর পালা। প্রথম দিন নিগাতা বিমানবন্দর থেকে হোটেল অবধি আসার পথটা ছিল দারুণ উপভোগ্য। দুধারে গাছগাছালি আর মসৃণ পথ। আমাকে বিমানবন্দরে নিতে এসেছিলেন জাপান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. খুরশীদ আহমেদ। সঙ্গে ছিলেন সহকর্মী আশরাফুল হক, আমরা দুজনই কনফারেন্সে যোগ দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। তিন বাংলাদেশি পথের গল্প করতে করতেই এঁটেছিলাম ভ্রমণ পরিকল্পনা।

নিগাতায় কাটানোর পাঁচ দিনের অভিজ্ঞতার কিছুটা এখানে বলছি।

মিনামিয়ুনুমা

ভ্রমণের প্রথম দিন অধ্যাপক খুরশীদ আহমেদ, তাঁর স্ত্রী শায়লা মিয়া এবং আমার সহকর্মী আশরাফুল হকের সঙ্গে মিনামিয়ুনুমা পরিদর্শন করেছি। মিনামিয়ুনুমা নিগাতার অন্যতম পার্বত্য অঞ্চল। পাহাড়ি অঞ্চলে আমি খুব স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেছি—নির্মল বাতাস, গ্রামাঞ্চল, ধানখেত মুগ্ধ করেছে আমাকে।

মিনামিয়ুনুমা অঞ্চলের পরবর্তী গন্তব্যটি ছিল আনতোয়ান মন্দির। দূর থেকে দেখতে পাচ্ছিলাম মন্দিরে প্রবেশের বিশাল কাঠের দরজা। যখন আরও কাছাকাছি এলাম, দেখতে পেলাম অগণিত লম্বা গাছ এবং নরম সবুজ শেওলা এক দারুণ প্রাকৃতিক মুগ্ধতা তৈরি করে রেখেছে। পাহাড়ের পাদদেশে একটি রহস্যময় পুরোনো মন্দির, যা আমার কল্পনার চিত্রটির সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। এই বিশুদ্ধ সৌন্দর্যের ছবি তোলা আমি কিছুতেই থামাতে পারছি না। আমাকে বাকিরা তাড়া দিচ্ছিল পুরো মন্দির ঘুরে দেখার জন্য।

আনতোয়ান মিনামি ইউনুমার পাহাড়ের গোড়ায় একটি বিখ্যাত জেন মন্দির।

জেন বৌদ্ধধর্মের একটি উপশাখা। চীন থেকে এই প্রথা জাপানে প্রবেশ করেছে। এটি একাদশ শতাব্দীর কোনো একসময় জাপানে চালু হয়েছিল। একটি মন্দির আপনি যেমন দেখতে চান, এই জেন মন্দিরটি ঠিক সেই রকম—প্রাচীন, সুন্দর ও শান্তিপূর্ণ। মূল মন্দিরটি কাঠের। প্রবেশদ্বারে দুই ধারে দুই দেবীর মূর্তি দেখে মনে হয়, যেন মন্দির পাহারা দিচ্ছে।

মন্দিরটিকে বিশাল মন্দির বলা যায় না, কিন্তু অনেক কিছুই দেখার ও জানার রয়েছে আর আমার জন্য খুবই নতুন; কারণ জেন সম্প্রদায়ের এই ধরনের মন্দির আমার প্রথম দেখা। কারুকাজ ও সাজসজ্জাবিশিষ্ট বেশ কটি কক্ষ রয়েছে, তবে কক্ষগুলোতে বিশালকায় কাঠের পিলার আর ছাদের সজ্জা আমার বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করছিল। মন্দিরের ভেতর আলাদা প্রার্থনাকক্ষ রয়েছে। মন্দিরের বারান্দার একধারে একটু উঁচু স্থানে বেশ কয়েকটি তাতামি বিছানো রয়েছে। তাতামি আমাদের দেশে মাদুর অথবা শীতলপাটির মতো দেখতে অনেকটা। জাপানিরা মেঝেতে ব্যবহার করে বসার জন্য। তাতামি বিছানো জায়গাটা থেকে সামনের বাগানটা পুরোপুরি দেখা যায়।

মন্দির চত্বরে একটি কক্ষকে ট্রেজার রুম বলা হয়। সেখানে ইচিগো প্রদেশের ইতিহাসের নানা জিনিস আর ইতিহাস লেখা আছে। ইচিগো নিগাতার প্রাচীন নাম।

zeuNVvv.jpg


হাক্কাইসান ব্রুয়ারি কোম্পানি, সংগৃহীত

প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটর

জাপানিরা তুষার সংরক্ষণ করে। কী রকম সেটা! দেখার আগে পর্যন্ত আমার ভেতরে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল!

হাক্কাইসান—নিগাতার একটি ব্রুয়ারি বা বিয়ার ও মদ তৈরির কারখানা। নিগাতা শহরে প্রায় ১০০টির মতো এমন কারখানা রয়েছে। তবে হাক্কাইসান জাপানের অন্যতম একটি কারখানা। সেই কারখানা ঘোরার সময় তুষার সংরক্ষণের প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটর দেখেছি।

তুষার সংরক্ষণ করে খাবার বা পানীয় রাখার পদ্ধতিকে বলা হয় 'ইউকিমুরো'। ২০০ বছর ধরে জাপানিরা এই পদ্ধতিতে খাবার ও পানীয় সংরক্ষণ করে আসছেন। ইউকোমুরোর এই ধারণাটি এসেছে মূলত রেফ্রিজারেটর উদ্ভাবনের আগে কীভাবে খাদ্য সংরক্ষণ করা হতো, সেই পদ্ধতি বিবেচনায় রেখে। এখনো বিশ্বের অনেক শীতল জায়গায় এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

Zxbw4yG.jpg


এভাবে তুষার জমিয়ে খাবার বা পানীয় সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে বলা হয় ইউকিমুরো, সংগৃহীত

জাপানের ঐতিহ্যগত পানীয় ধেনো উৎপাদনকারী যেসব কারিগর ইউকোমুরো তৈরি করেন, তাঁদের জাপান সরকার বিশেষ সরকারি সহায়তা প্রদান করে। এটি একটি নতুন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, যা বৈদ্যুতিক রেফ্রিজারেশনকে প্রতিস্থাপন করে।

ইউকোমুরো একটি 'প্রাকৃতিক রেফ্রিজারেটর', যার আকৃতি বিশালকায় এবং সেখানে ঢিবি করে তুষার রাখা হয়। কারখানার ভেতরে আমাদের একটি স্ক্র্যাপ ধাতবের তৈরি বিশাল গুদামে নিয়ে যাওয়া হলো। সেই গুদামের এক পাশে বিশাল ট্যাংক, আর অন্যদিকে গত শীতের তুষার স্তূপ করে রাখা। ধীরে ধীরে বরফ গলে যায় এবং তুষারের গায়ে লেগে থাকা ময়লাগুলোকে আলাদা করা হয় তখন। প্রায় ২০ জনের একটি দল প্রতি কয়েক মাসে বরফ স্তূপ পরিষ্কার করে। বরফ গাদার পাশেই রাখা ট্যাংকগুলোতে রাখা হয় পানীয়। বরফ স্তূপের কাজ শুধু বছরের পর বছর এই ট্যাংকগুলোকে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা।

cMHOQ1A.jpg


মেগুরো রেসিডেন্সের সামনে লেখক

খড়ের ঘর

ছাদ খড়ের, দেয়াল আর মেঝে কাঠের। তাই আমাদের দেশে গ্রাম অঞ্চলে খড়ের ঘর যে রকম হয়, এটি দেখতে সে রকম নয়। নিগাতাবাসির কাছে বাড়িটি 'মেগুরো রেসিডেন্স' নামে পরিচিত। ঘরটি নির্মাণ করা হয় ১৭৯৭ সালে। মেগুরো নিবাস ইউনুনুমায় জাপানি সরকার কর্তৃক মনোনীত গুরুত্বপূর্ণ একটি সাংস্কৃতিক স্থাপনা।

এত তুষারপাতের পরও কি করে এত সুন্দর রয়ে গেছে মেগুরো, না দেখলে বিশ্বাস হওয়ার নয়। জেনেছি, নিগাতার প্রথম সংসদ সদস্য এই বাড়িতে থাকতেন।

জাপানের খানাখাদ্য

জাপানের বৈচিত্র্যপূর্ণ খাবার নিয়ে যদি দু–চার লাইন না লিখলে হয়তো অন্যায় করা হবে। টোকিও যাওয়ার আগপর্যন্ত জাপানি খাবারের স্বাদ গ্রহণ করেছি নিগাতাতেই।

বলার অপেক্ষা রাখে না, জাপান একটি দুর্দান্ত গন্তব্য এর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির কারণে। তবে অনেক ভ্রমণকারী শুধু জাপান ভ্রমণ করেন এর খাবারের স্বাদ গ্রহণের জন্য।

সুসি: জাপানি খাবারের কথা বললে প্রথমেই আসে সুসি। জাপানি এই খাবার ছোট এক লোকমা ভাতের মতো, যা ঠান্ডা সেদ্ধ চাল দিয়ে বানানো হয়, চালটি স্বাদ হালকা টক এবং গন্ধ ভিনেগারের মতো। সেদ্ধ চালের সঙ্গে কাঁচা মাছ, চিংড়ি, সবজি অথবা ডিম দিয়ে গোল করে তৈরি করা হয়।

সুসির রাজধানী মনে করা হয় জাপানকে। কিন্তু সুসি একদমই জাপানি খাবার ছিল না, সুসি জাপানে প্রবেশ করেছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে।

QrBd2RJ.jpg


এক সময় মাছ সংরক্ষণের জন্য ভাতের সঙ্গে ভিনেগার মিশিয়ে তার মধ্যে কাঁচা মাছ রেখে দিতেন। এতে মাছে পচন ধরত না। প্রথম দিকে ভাত খাওয়া হতো না। এই পদ্ধতি শুধু মাছ সংরক্ষণের কাজেই ব্যবহৃত হতো। ধীরে ধীরে ভাতের সঙ্গে মাছ খাওয়ার প্রচলন শুরু হলো। সুসি খাবার হিসেবে চীনে ছড়িয়ে পড়ল, এরপর জাপান প্রধান খাবার হিসেবে সুসি গ্রহণ করল।

সাশিমি: কাঁচা মাছ ও কাঁচা মাংস খাবার হিসেবে গ্রহণ করা যায়, এটি জাপান না গেলে জানতামই না। প্রাচীন ইতিহাসে পড়েছি কাঁচা খাবার খাওয়ার গল্প। কিন্তু একবিংশ শতাব্দীতে এসে অনুধাবন করেছি।

সাশিমি কাঁচা মাছ ও মাংসের একটি পাতলা ফালি, যা সয়া সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। জাপানিরা প্রায় সব খাবারের সঙ্গে সয়া সস আর প্রচুর সবুজ লতাপাতা খান। জাপানিরা কেন দীর্ঘজীবী হন, তা তাঁদের খাদ্যাভ্যাস দেখেই অনুমেয়। সাশিমি টুনা, স্যামন মাছের হয়, গরুর মাংস এমনকি ঘোড়ার মাংসেরও সাশিমি হয়।

P59cmZG.jpg


নানা পদের জাপানি খাবার

নুডলস: নুডলস রান্নার কয়েক শ পদ্ধতির রয়েছে, যদিও নাম ভিন্ন। আমার কাছে সব প্রায় একই রকম লেগেছে। আমি চেষ্টা করেছি মাত্র দুই কি তিন ধরনের। মূল পদ্ধতি হলো সেদ্ধ নুডলস, সয়া সস আর সবুজ পাতা। নামের ভিন্নতার সঙ্গে এই তিন উপাদানের সঙ্গে আরও কিছু উপাদান যুক্ত হয়।

সোবা, কাইসেকি, নানা জাতীয় স্যুপ। সব কটির নামও ঠিকমতো মনে নেই। তবে জাপান ভ্রমণে আমি স্থানীয় খাবারের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারিনি, এমনকি খাবারের নামগুলো সঠিকভাবে উচ্চারণ করতেও আমার কষ্ট হতো। খেতে বসে প্রতি বেলাতেই মনে হতো দেশি খাবারের কথা!

* লেখক: এলিজা বিনতে এলাহী | পর্যটক, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top