What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

শোক আর ট্রমা কাটিয়ে উঠতে দরকার সহযোগিতা (1 Viewer)

5FlZOpt.jpg


করোনাভাইরাসের এই পরিস্থিতিতে আমরা সবাই একধরনের অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। মনকে শান্ত রাখা যেন আরও কঠিন হয়ে পড়ছে, বিশেষ করে পরিবারের কাছের মানুষের অকালপ্রয়াণে। আমার পরিচিত এক বাড়িতে হঠাৎ বাবা অসুস্থ, পরিস্থিতি বুঝে ওঠার আগেই অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। পরিবারের লোকজন ছুটছেন হাসপাতালের জোগাড়ে। কিন্তু বেশি সময় দিতে পারেননি সেই বাবা। মারা গেছেন অল্প সময়ের মধ্যেই। পরিবারের বাকিরা আলাদা আলাদা ঘরে আছেন কোয়ারেন্টিনে। শোকের সময়েও তারা যেন আরও একা হয়ে পড়েছেন।

আমাদের চারপাশে অনেকের এমন মানসিক অবস্থার ভেতর দিয়ে যেতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশী কিংবা সহকর্মীদের মৃত্যুর সংবাদে একধরনের অপ্রত্যাশিত আতঙ্কও পেয়ে বসেছে অনেককে। নিজের পরিবার ও কাছের মানুষদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংবাদ এলেই না চাইলেও মনের মধ্যে প্রবেশ করছে ভয়। এ যে আচমকা অপ্রত্যাশিত কিছুর সম্মুখীন হওয়া, যা বিপদ কিংবা জীবননাশের কারণ এবং এর ফলে সৃষ্ট মানসিক শঙ্কা সেটাকেই মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ট্রমা বলা হয়। ফলে একজন ব্যক্তি শক অথবা ঘটনাটিকে অস্বীকারের পর্যায়ে চলে যায়। বর্তমান বাস্তবতায় প্রায় এক বছর ধরে অর্থনৈতিক, সামাজিক, স্বাস্থ্যগত নানা ইস্যুতে মানুষ একরকম চাপের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফলে সবার মধ্যেই কাজ করছে অনিশ্চয়তা। সঙ্গে রয়েছে প্রিয়জনকে হারানোর শঙ্কা। এতে কমবেশি সবার মধ্যেই ট্রমা তৈরি হচ্ছে।

তবে ট্রমায় থাকা সবার আচরণগত লক্ষণ একই রকম নয়। ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি ও পারিপার্শ্বিকতায় মানুষের প্রতিক্রিয়াও একেক রকম হয়। কে কীভাবে ঘটনাকে ব্যাখ্যা করছে, তা মূলত একজন ব্যক্তির বিশ্বাস, মূল্যবোধ, জীবনাচরণ, ধারণাসহ আরও বেশ কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে পারবেন, আপনি কোন ধরনের ট্রমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। যেমন দৈনন্দিন কাজ ঠিকভাবে করতে না পারা, হারিয়ে ফেলার ভয়, প্রিয়জনের মৃত্যুশোক ভুলতে না পারা এবং যা করলে তাকে মনে পড়বে, তা এড়িয়ে যাওয়া। এ ছাড়া নতুন কোনো সম্পর্ক স্থাপনে অনীহা এবং যারা আছে, তাদের সঙ্গেও দূরত্ব বাড়ানো আর দুঃস্বপ্ন দেখা। এসব ধরনই ট্রমার লক্ষণ, যা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হতে পারে।

যাঁরা এ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁদের অনেকে ভেবে থাকেন, এই কষ্টকর মুহূর্তগুলোর কথা মনে না করে নিজের মধ্যে রেখে দেওয়াই ভালো। কিন্তু তখন এই ট্রমাটিক মুহূর্তগুলো ভেতরে ভেতরে আরও বড় হতে থাকে, যা কিন্তু পরবর্তী সময়ে আরও বেশি হতাশা, দুশ্চিন্তা ও ক্ষোভের জন্ম দেয়। এ থেকে একসময় দেখা দিতে পারে শারীরিক অসুস্থতা। তাই নিজের প্রতি যত্নশীল হয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে হবে এমন কারও সঙ্গে, যে এই কথাগুলো মন দিয়ে গুরুত্বসহকারে শুনবে। এ অবস্থায় একা থাকতে ইচ্ছা করলেও সেটা ঠিক নয়। তার চেয়ে প্রিয় কিছু মানুষের সান্নিধ্য এ পরিস্থতি থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করবে। জীবনের বিভিন্ন তাগিদে আমরা নিজেকে সময় দিতে চাই না। কিন্তু সময় বের করে নিজের যা কিছু ভালো লাগে, তা নিয়ে থাকা এ পরিস্থিতিতে কার্যকর। এ ছাড়া যদি খুব বেশি চাপের কারণ হয়, তাহলে করোনাসংক্রান্ত খবর দেখা কমিয়ে দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার কিংবা বিশ্রাম নিলে ভালো ফলাফল মিলবে।

ট্রমায় থাকা মানুষের আশপাশে যাঁরা আছেন, তাঁরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন। অনেক সময় আমরা ভাবি, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যাবে কিংবা যে মানুষ প্রিয়জনের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে আছেন, তাঁকে বলি শক্ত হতে। কারও কারও ধারণা এ বিষয়ে কথা না বললেই হয়তো ওই মানুষ ভালো থাকবে। অথবা অন্য আরও অনেকের ক্ষতির সঙ্গে তুলনা করাও কিন্তু কার্যকর পদ্ধতি নয়। আমরা যদি সত্যি সাহায্য করতে চাই, তাহলে তাঁর কথা শুনতে হবে। তাঁর পাশে থাকতে হবে, অনুভূতিগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে। যদি কিছু বলার না–ও থাকে, তবে চুপ করে পাশে থেকেও সাহায্য করা যায়।

শরীরে কোনো ক্ষত হলে যেমন আমরা যত্ন নিয়ে থাকি, তেমন এ পরিস্থিতিতে আমাদের মনের ভেতর হয়ে যাওয়া ক্ষতগুলোর যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। তাই মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন প্রয়োজন। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলার ব্যাপারে সংকোচকে দূর করতে হবে।

* এ্যানি বাড়ৈ | কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
 

Users who are viewing this thread

Back
Top