What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other মানিকদা একটা আলাদা এনার্জি নিয়ে সেটে আসতেন (1 Viewer)

T6MZl4Q.png


দাদার শূন্য কাজের ঘর থেকে একটি কাঠের বাক্স পেয়েছিল ছেলেটি। সেখানে থাকত দাদার রং, তুলি আর তেল রঙের কাজে ব্যবহারের জন্য লিনসিড অয়েলের শিশি। উত্তরাধিকারের সেই ধারা পরবর্তীকালে প্রজন্ম জয়ী হয়েছিল ছেলেটির হাত ধরেই। তিনি প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও সুপ্রভা রায়ের সন্তান। ২ মে ১৯২১ সালে জন্ম নেওয়া এ মানুষটির জাগতিক ভ্রমণ শেষ হয় ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল। তাঁর জন্মশতবর্ষে নানাজন নানাভাবে স্মরণ করছেন তাঁকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর

scg3doe.jpg


'ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেমিনারে অনলাইনে যোগ দেন শর্মিলা ঠাকুর, সংগৃহীত

১৯৫৯ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে, সত্যজিতের পাঁচটি ছবিতে শর্মিলা মুখ্য নারী চরিত্রে অভিনয় করেছেন। চলচ্চিত্রগুলো হচ্ছে 'অপুর সংসার', 'দেবী', 'নায়ক', 'অরণ্যের দিনরাত্রি' এবং 'সীমাবদ্ধ'। এক সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎকে পথপ্রদর্শক হিসেবে মেনে নিয়ে শর্মিলা বলেন, 'মানিকদার ছবিতে নারীর ক্ষমতায়নের বহু উদহারণ পাওয়া যায়।'

SVYgEfk.png


মা সুপ্রভা রায়ের কোলে ছোট্ট সত্যজিৎ, ছবি: সংগৃহীত

তিনি বলেন, '"মহানগর"-এর আরতি যদি আর্থিক স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত হয়, তা হলে "চারুলতা"য় দেখি আবেগ প্রকাশের স্বাধীনতা। আবার "অরণ্যের দিনরাত্রি"তে দুই নারী চরিত্র সরাসরি তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।'

xeiUUvV.jpg


অপুর সংসার ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুর

গত জানুয়ারিতে 'ঊনবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব'-এর এক সেমিনারে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে কথা বলতে ভার্চ্যুয়াল অংশ নেন শর্মিলা ঠাকুর। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ২০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় 'সত্যজিৎ রায়: জাতীয় নাকি বৈশ্বিক' শীর্ষক এই সেমিনার। সেখানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শর্মিলা ঠাকুর বলেন, 'সত্যজিৎ রায় চাইলে বিদেশি ভাষায় সিনেমা নির্মাণ করতে পারতেন। কিন্তু তা তিনি করেননি। বাংলা ভাষাকেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে গেছেন।'

iNwrkRK.jpg


অরণ্যের দিনরাত্রির একটি দৃশ্য, ইউটিউব থেকে

শর্মিলা ঠাকুর আরও বলেন, 'রায় সাহেব অতটা অবস্থাসম্পন্ন ছিলেন না তখন। তেমন অর্থকড়ি ছিল না, দুই থেকে তিনবারের বেশি একটা শট নেওয়ার সুযোগ ছিল না। সেই অবস্থা থেকে বিশ্ব-দরবারে জননন্দিত হয়ে ওঠার পেছনে শ্রম ও মেধার অবদানই বেশি। তরুণ নির্মাতাদের অনেক বড় অনুপ্রেরণা সত্যজিৎ রায়।'

j178eVZ.png


'দেবী' চলচ্চিত্রে দয়াময়ীর চরিত্রে শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায়, ছবি: সংগৃহীত

২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে কলকাতার আইসিসিআর-এ 'সোসাইটি ফর দ্য প্রিজারভেশন অব সত্যজিৎ রায় আর্কাইভস' (রে সোসাইটি) আয়োজিত এক আলাপচারিতায়, নিজের প্রথম ছবি 'অপুর সংসার'-এর টুকরো স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে এসব কথা জানালেন শর্মিলা ঠাকুর। সে অনুষ্ঠানে তিনি জানান, পরীক্ষা থাকার জন্য 'কাঞ্চনজঙ্ঘা' এবং বলিউডে ব্যস্ততার জন্য 'অশনিসংকেত'-এ তাঁর অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি।

nXaYhB4.jpg


সত্যজিৎ রায়। ছবি: সংগৃহীত

শর্মিলা বলেন, '"ঘরে-বাইরে" ছবিতে নায়িকার চরিত্র পাওয়ার জন্য আমি আর রিনা (অপর্ণা সেন) প্রচুর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু মানিকদা নিলেনই না!'
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শর্মিলা ঠাকুর স্মৃতিচারণা করে বলেন, 'যখন সত্যজিৎ রায় "অপুর সংসার"-এর কাস্টিং করছিল তখন আমি মাত্র ১৩ বছরের। আমার মনে আছে, তিনি আমার বাড়ি এসেছিলেন আমার সঙ্গে কথা বলতে। আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে। তাঁর স্ত্রী বিজয়া আমাকে একটি শাড়ি পরিয়ে, চুলে খোঁপা বেঁধে, কপালে টিপ পরিয়ে দিয়েছিল। সেদিনের ছবিটা এখনো আমার কাছে আছে।'

ZiBNSv7.png


'অরণ্যের দিনরাত্রি' ছবিতে দুলি চরিত্রে সিমি গারোয়ালছবি: সংগৃহীত

সত্যজিতের শুটিংয়ের ছিল নিজস্ব ধরন। সেটে কখনো সব শিল্পীদের একসঙ্গে শট বোঝাতেন না। সব শিল্পীর কাছে আলাদা আলাদা যেতেন। একটু ঝুঁকে পড়ে মুখোমুখি কথা বলতেন।

একটা একটা করে শট বুঝিয়ে দিতেন। তবে সব শট বা সংলাপ বুঝিয়ে দিতেন তা না। কাউকে কাউকে নিজের মতো করে শট দেওয়ার অনুমতি দিতেন, কাউকে দিতেন না। যেমন রবি ঘোষের অনুমতি ছিল যখন যেটা মাথায় আসছে বলে দেওয়ার।

hG8yQUq.jpg


আজ সত্যজিৎ রায়ের শততম জন্মদিন।

এ প্রসঙ্গে শর্মিলা ঠাকুর স্মৃতিচারণা করেন, '"অরণ্যের দিনরাত্রির' একটা শটে আমি আর কাবেরী যখন একদল অপ্রস্তুত তরুণের মুখোমুখি হই, যারা কুয়োর জলে স্নান করছে, তখন সাবান মাখা রবিদা বলেছিলেন, "আমি ফ্রেঞ্চ রিভেরাতে আছি"। কিন্তু ওই লাইনটা স্ক্রিপ্টে ছিল না।'

fMes022.png


'চারুলতা' চলচ্চিত্রে চারুলতার চরিত্রে মাধবী মুখোপাধ্যায়, ছবি: সংগৃহীত

প্রতিটা শট শেষ হলে 'এক্সিলেন্ট' বলতে কখনোই ভুলতেন না! শর্মিলার ভাষায়, 'মানিকদা একটা আলাদা এনার্জি নিয়ে সেটে আসতেন।' শর্মিলা তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'মনে আছে "দেবী"র সেটে মানিকদা কাউকে অনুমতি দিতেন না আমার সঙ্গে কথা বলতে। ওরকম ভারী মালা পরে, ধূপের সামনে দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে থাকতে হতো সুব্রত দার সামনে, যা গোটা জিনিসটাকে অপার্থিব করে তুলেছিল। মনে আছে, সেটে একবার এক বয়স্ক ভদ্রলোক, আমার সামনে শুয়ে পড়ে আমায় প্রণাম করতে শুরু করে। যেন আমি সত্যিকারের দেবী।'

8g3Opdy.png


মাকে লেখা সত্যজিতের সেই চিঠিপত্র। চিঠিগুলো তিনি লিখেছিলেন গত শতকের চল্লিশ দশকের শুরুতে, ছবি: টাইমস অব ইন্ডিয়া
 

Users who are viewing this thread

Back
Top