বাংলা ও হিন্দি চলচ্চিত্রে যেমন ছিলেন অপরিহার্য, তেমনি তিনি ছিলেন মঞ্চের শক্তিমান অভিনেতা, নির্দেশক ও নাট্যকার। একটা সময় গেছে, যখন শক্তিশালী এ অভিনেতা শাসন করতেন ওপার বাংলা চলচ্চিত্রকে। যে মানুষটি হয়েছিলেন 'হীরক রাজার দেশে'র রাজা, তিনিই আবার হলেন 'পদ্মা নদীর মাঝি'র হোসেন মিয়া। এমন কত বিখ্যাত চরিত্র তাঁর জীবনে—'জয় বাবা ফেলুনাথ'-এর মেঘরাজ, 'আগন্তুক'-এর মনোমোহন মিত্র, 'অমানুষ'-এর মহিম ঘোষাল, 'জন অরণ্য'-এর বিশুদা—এমন কত চরিত্রেই না অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি—উৎপল দত্ত।
'টিনের তলোয়ার' হাতে তুলে নিয়ে 'অঙ্গার' উত্তাপ ছড়ানো মানুষটা নিজের সম্পর্কে বলেছিলেন, 'আমি শিল্পী নই। নাট্যকার বা অন্য যেকোনো আখ্যা লোকে আমাকে দিতে পারে। তবে আমি মনে করি আমি প্রোপাগান্ডিস্ট। এটাই আমার মূল পরিচয়।' সেই বিচিত্র বহুমুখী প্রতিভা উৎপল দত্তের জন্মদিন আজ ২৯ মার্চ।
উৎপল দত্তকে আলাদা কোনো বিশেষণে ফেলা কঠিন। সত্যজিৎ রায়কে তিনি ডাকতেন 'স্যার' বলে। সত্যজিৎও মুগ্ধ ছিলেন উৎপলের প্রতিভায়। বলেছিলেন, 'উৎপল যদি রাজি না হতো, তবে হয়তো আমি "আগন্তুক" বানাতামই না।' অবশ্য বলা হয়ে থাকে মৃণাল সেনের 'ভুবন সোম' তাঁকে চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। অবশ্য 'অভিনেতা' সে শুধু একটি পরিচয় মাত্র। গত শতকের চল্লিশের উত্তাল সময়ে যাঁরা শিল্প দিয়ে সমাজবদলের কথা ভেবেছিলেন, স্বপ্ন দেখেছিলেন, উৎপল দত্ত তাঁদের একজন।
যেমনটা বলছিলেন তাঁর সহপাঠী কলকাতার খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও অধ্যাপক পুরুষোত্তম লাল, 'উৎপল ছিলেন জন্মগত প্রতিভাধর মানুষ।' আর সহপাঠী অধ্যাপক দেবব্রত মুখোপাধ্যায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, 'উৎপলকে প্রথম দিন স্কুলে দেখে মনে হয়েছিল "গ্যালিভার"-এর পাতা থেকে যেন এক অতিমানব এসেছে স্কুলে!'
উৎপল দত্ত
কী বিশেষণ উৎপল দত্তের নামের আগে ব্যবহার করা হবে, সেটা নিয়ে রীতিমতো গবেষণায় বসতে হয়। উৎপল দত্তের বিচিত্র প্রতিভার বর্ণনা তো শেষ হওয়ার না। তিনি নাট্যকার, পরিচালক, অভিনেতা। প্রথাগত খলনায়ক থেকে কৌতুক, সব ধরনের চরিত্র চিত্রণের ক্ষেত্রে ছিল তাঁর অবাধ বিচরণ। চলচ্চিত্রে যেমন ছিলেন খলনায়ক, তিনি অগ্নিগর্ভ রাজনীতির নায়ক। এসবের মধ্যে একটি পরিচয় বেছে নেওয়া শুধু কঠিন বটে। সাহিত্যেও তাঁর ছিল অবাধ যাওয়া-আসা। উৎপল দত্তের লেখা মৌলিক পূর্ণাঙ্গ ও একাঙ্ক নাটক, অনুবাদ নাট্য, যাত্রাপালা ও পথনাটকের সংখ্যা শতাধিক। লিখতেন কবিতা, ছোটগল্পও।
পুরো নাম উৎপলরঞ্জন দত্ত। এই বাংলায় যিনি এসেছিলেন ১৯২৯ সালের ২৯ মার্চ, বাংলাদেশের বরিশাল জেলার কীর্তনখোলার পাড়ে। যদিও তাঁর পরিবারের আদি বাসস্থান ছিল কুমিল্লা জেলায়। কিন্তু তিনি নিজে তাঁর জন্মস্থান শিলংয়ে তাঁর মামার বাড়িতে বলে উল্লেখ করে গিয়েছেন। তাঁর জন্মস্থানটি নিয়ে একাধিক তথ্য মেলে।
উৎপলের বাবা গিরিজারঞ্জন দত্ত ও মা শৈলবালা রায়ের (দত্ত) পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যার মধ্যে উৎপল ছিলেন চতুর্থ সন্তান। পারিবারিক ধর্মগুরু তাঁর ডাকনাম রেখেছিলেন শঙ্কর। বাবা গিরিজারঞ্জন ছিলেন পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত পরাধীন ভারতে ব্রিটিশ প্রভাবিত সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষ।
পুরো নাম উৎপলরঞ্জন দত্ত
মঞ্চের মানুষ উৎপল দত্ত
একটি পরিচয়ে যদি নিজেকে সীমিত রেখে শেষ করতেন জীবনকাল, তাহলেও উৎপল দত্ত অমর থাকতেন দুই বাংলায়। তা হলো মঞ্চনাটক। তাঁর প্রথম ও শেষ ভালোবাসা ছিল কিন্তু মঞ্চই। একাধিক সাক্ষাৎকারে উৎপল দত্ত বলেছেন, 'সিনেমা করি পেটের জন্য আর থিয়েটার করি নিজের জন্য।' বিশ্বখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব রিচার্ড শেখনার সম্পাদিত পত্রিকা দ্য ড্রামা রিভিউ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ তিনজন নাট্যপরিচালকের মধ্যে উৎপল দত্তকে অন্যতম বলে আখ্যা দিয়েছে।
একাধিক সাক্ষাৎকারে উৎপল দত্ত বলেছেন, 'সিনেমা করি পেটের জন্য আর থিয়েটার করি নিজের জন্য।'
১৯৪৭ সালের কথা। ১৮ বছরের তরুণ উৎপল দত্ত ছিলেন কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের ছাত্র। সহপাঠীদের নিয়ে দ্য অ্যামেচার শেক্সপিয়ারিয়ানস নাট্যদল গঠন করেন। এমনিতে ইতিহাস, রাজনীতি, দর্শন, সমাজবিজ্ঞান, থিয়েটার, চলচ্চিত্র এবং ধ্রুপদি সংগীত তাঁর মাথায় ঢুকেছিল ওই সময়ে। হেগেল, মার্ক্স, অ্যাঙ্গেলস, লেনিনে ঋদ্ধ হয়েছেন উৎপল। কলেজের গ্রন্থাগারটি তাঁর প্রিয় জায়গা ছিল।
ওই সময় উৎপল নামের পিদিমের সলতেটায় আগুন ধরিয়েছিলেন বিখ্যাত ইংরেজ পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী জেফ্রি কেন্ডাল। ১৯৪৭ সালে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে একটি শেক্সপিয়ার প্রযোজনা দেখে জেফ্রি কেন্ডাল তাঁকে আমন্ত্রণ জানান। কেন্ডালের শিক্ষা আর প্রশিক্ষণে উৎপল হন বরেণ্য শিল্পী।
শেক্সপিয়ারের নাটক এবং তা ইংরেজিতেই মঞ্চস্থ করে উৎপল দত্তের নাট্যজীবন শুরু। ১৯৪৯ সালে এই দলের নাম বদলে হয় কিউব। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আবার দলের নাম বদলে করেন লিটল থিয়েটার গ্রুপ। ১৯৫২ সালে এই দলে যোগ দেন রবি ঘোষ, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতারা। ১৯৫১ সালে উৎপল ভারতীয় গণনাট্য সংঘে যোগ দেন।
উৎপল দত্তের স্মৃতিচারণা করে বাংলাদেশের নাট্যকর মামুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, 'তিনি ছিলেন আমার সিনিয়র ফ্রেন্ড। যতবার তাঁকে দেখেছি, যতটা জেনেছি মুগ্ধই হয়েছি।' তিনি আরও বলেন, 'আমার মতে, পাণ্ডিত্যের দিকে ভারতের ১০ জন পণ্ডিতের মধ্যে একজন, এমন কোনো বিষয় নেই যে সম্পর্কে তিনি জ্ঞান রাখেননি। অভিনয়শিল্পে এবং অভিনয়ের জ্ঞানে তাঁর সমকক্ষে হয়তো চার-পাঁচজন পাওয়া যাবে গোটা ভারতে। অসাধারণ বাগ্মিতা ছিল। মঞ্চ নির্মাণ থেকে আলো, সবকিছুতেই তাঁর প্রযোজনায় অভিনবত্ব থাকত, চমক থাকত।'
মামুনুর রশীদ, ছবি: সংগৃহীত
অভিনয় করতে করতে মঞ্চ থেকে নেমে দর্শকের মধ্যে চলে যাওয়া, মঞ্চকে আয়ত আকারে বেঁধে না রেখে দর্শকদের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং এভাবে দর্শক আর নাটকের কলাকুশলীকে একাত্ম করে তোলার প্রয়াস উৎপল দত্তের নাটকে বারবার দেখা যেত।
চলচ্চিত্রের উৎপল দত্ত, যাত্রাও
মূল স্রোতের বাণিজ্যিক ছবির শীর্ষ অভিনেতা ছিলেন উৎপল দত্ত। তবে নায়ক নয়, চরিত্রাভিনেতা হিসেবেই তিনি স্মরণীয়। 'গুড্ডি', 'গোলমাল', 'শৌখিন' প্রভৃতি সিনেমায় তাঁর কৌতুকাভিনয় আজও মানুষকে আনন্দ দেয়। সত্যজিৎ রায়ের পরিচালনায় 'হীরক রাজার দেশে', 'জয় বাবা ফেলুনাথ' ও 'আগন্তুক' চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। গৌতম ঘোষের 'পদ্মা নদীর মাঝি', ঋত্বিক ঘটকের, 'যুক্তি তক্কো আর গপ্পো' ছবিতে তাঁর অভিনয় বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে।
সত্যজিৎ রায়ের 'জয় বাবা ফেলুনাথ' ছবির শুটিংয়ে মগনলাল মেঘরাজবেশী উৎপল দত্ত
কী দারুণ বৈচিত্র্য ছিল উৎপল দত্তের অভিনয়ে, চরিত্র রূপায়ণে। 'দেখলে কেমন তুমি খেল' গানের সঙ্গে দুর্দান্ত অভিনয় দর্শক মনে রাখবেন অনেক অনেক বছর। যে মানুষটি হয়েছিলেন 'হীরক রাজার দেশে'র রাজা, তিনিই আবার হলেন 'পদ্মা নদীর মাঝি'র হোসেন মিয়া। এমন কত বিখ্যাত চরিত্র তাঁর জীবনে, 'জয় বাবা ফেলুনাথ'-এর মেঘরাজ, 'আগন্তুক'-এর মনোমোহন মিত্র, 'অমানুষ'-এর মহিম ঘোষাল, 'জন অরণ্য'-এর বিশুদা—এমন কত চরিত্রেই না অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। 'হীরক রাজার দেশে'র তাঁর সংলাপগুলো রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে গেছে।
উৎপল দত্ত কয়েকটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছিলেন, তার মধ্যে 'ঝড়', 'বৈশাখী মেঘ', 'ইনকিলাব কি বাদ', 'ঘুম ভাঙার গান' উল্লেখযোগ্য। পর্দায় যখন তিনি পুরোদস্তুর তারকা, বামপন্থী সতীর্থরা তাঁকে সন্দেহ করতে লাগলেন। হয়তো শ্রেণিশত্রুও ভেবেছিলেন। দূরত্ব তৈরি করেন উৎপল থেকে এবং তাঁকে বয়কট করেন; সেই সময় তিনি জনগণের কাছে সরাসরি পৌঁছে যাওয়ার জন্য যাত্রাপালাকে হাতিয়ার করেন।
লিখলেন 'রাইফেল', 'সন্ন্যাসীর তরবারি'র মতো যাত্রাপালা। গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সরাসরি পৌঁছে দেন সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের বার্তা। রবি ঘোষের মতে, উৎপল দত্তর জীবনজুড়ে আছে আরও এক বিশেষ অধ্যায়, তাঁর রাজনৈতিক যাত্রাপালা। ব্রেখটভক্ত উৎপলের কাছে যাত্রা ছিল মানুষের মধ্যে পৌঁছানোর সর্বশ্রেষ্ঠ উপায়।
উৎপল দত্ত
শহুরে প্রোসেনিয়াম ছেড়ে তিনি যেমন রাস্তায় নেমে এসে নাটক করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তেমনই যাত্রার মঞ্চকে ব্যবহার করে বাংলার গ্রামেগঞ্জে মানুষের রাজনৈতিক চেতনা বাড়াতে চিৎপুরের যাত্রাপাড়ায় পা রেখেছিলেন। নিউ আর্য অপেরার হয়ে 'রাইফেল' পালার মধ্য দিয়ে তিনি পেশাদার পালাকার ও পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত সফল পালাকার ও পরিচালক উৎপল দত্ত ছিলেন চিৎপুরের যাত্রাপাড়ার একচ্ছত্র অধিপতি।
লেখালেখিতে উৎপল দত্তকে সব্যসাচী বললে বাড়াবাড়ি হবে না মোটেও। অজানা, অপ্রচলিত মুখের ভাষা (কিংবা 'ইতর' জনের ভাষা) উৎপল দত্তের নাটকে থাকত। নাট্যকার হিসেবে ভাষায়-বৈচিত্র্যে তিনি কতটা নিয়ম ভাঙার মানুষ ছিলেন, তার বড় প্রমাণ 'টিনের তলোয়ার' নাটকটি। নাটকের কিছু সংলাপ শুনুন, 'বেটি আজ গ্রেট নেশনেলে চলে গেল ডাঙস করে', 'সে শালা যে ছ্যাং চ্যাংড়ার কেত্তন শুরু করে দেবে', 'ওই কাপ্তেনবাবু তো দেখছি ভুড়ুঙ্গে বজ্জাত', 'একের পর এক এমন পালা ধরছেন, যা দেখলে আমার থুতকুড়ি জাগে', 'আমি দল তুলে দেব তবু ভালো, অমন ঢোস্কা পালা করতে দেব না!' 'টিনের তলোয়ার' নাটকে সংলাপে সংলাপে ছড়িয়ে অদ্ভুত কিছু শব্দ। যেমন গস্তানি, নুন চুপড়ি, বেদে বুড়ি, খুর কানাই, হেড়াহেড়ি, চিতেন, তজবিজ, ফররার, আচাভুয়া, বালতি পোঁতা, গররা, পাতা চাপা কপাল, মাড়গে, বউকাঁটকি, চৈতন ফক্কা! এসব যেন শুধু উৎপল দত্তের ক্ষেত্রেই মানায়। শিলংয়ের এডমন্ড স্কুল, কলকাতার সেন্ট লরেন্স, সেন্ট জেভিয়ার্স—আগাগোড়া নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুল-কলেজে লেখাপড়া করা উৎপল দত্ত এই ভাষা কীভাবে সংগ্রহ করতেন, সেটাও ভাবনার বিষয়।
কথা বলায়ও উৎপল দত্ত ছিলেন পণ্ডিত
১৯৬৫ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর 'ভারত রক্ষা' আইনে গ্রেপ্তার হন উৎপল দত্ত। সাত মাস জেলে কাটে। কিন্তু কারাগারের দিনগুলোতেও দিনবদলের স্বপ্ন তাঁকে ছেড়ে যায়নি। বন্দিজীবনে লিখে গেছেন।
কথা বলায়ও উৎপল দত্ত ছিলেন পণ্ডিত। বাংলা, ইংরেজির পাশাপাশি জানতেন জার্মান, স্প্যানিশ। হাতে থাকত মোটা মোটা বই। শুটিংয়ের ফাঁকে পড়তেন। ডাক পড়লেই উঠে দাঁড়িয়ে বলতেন, 'ইয়েস স্যার।' নির্দিষ্ট পাতাটি ভাঁজ করে কোথাও রেখে চলে যেতেন ফ্রেমে।
সত্যজিৎ বলেছিলেন, 'উৎপল যদি রাজি না হতো, তবে হয়তো আমি "আগন্তুক" বানাতামই না।'
মেয়ে বিষ্ণুপ্রিয়াকে ঠাট্টা করে উৎপল দত্ত বলেছিলেন, 'ষাট বছর বয়স হলে বিপ্লবী আর বিপ্লবী থাকে না। প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে যায়।' সেই মানুষটা এই ষাট বছরের এক জীবনে কত কিছু করলেন। তারপর ১৯৯০ সালে হঠাৎ করেই অসুস্থ হন। শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন। ১৯৯৩ সালের ১৯ আগস্ট ৬৪ বছর বয়সে উৎপল দত্তর জীবনাবসান হয়। থেকে গেল তাঁর কাজ। থাকবে আরও বহু বছর, এ কথা বললে মোটেও বাড়াবাড়ি হবে না। কেননা, কারও কারও দেহান্তর মানে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়া নয়, দুই বাংলার উৎপল দত্ত তাঁদের মধ্যে অন্যতম। অবশ্য জীবনকালেও তাঁর স্বীকৃতি নেহাত কম নয়। উৎপল দত্ত ১৯৯০ সালে 'সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমী' ফেলোশিপ পান থিয়েটার জগতে তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য। ১৯৭০ সালে 'ভুবন সোম' সিনেমায় ভুবন সোম চরিত্রের জন্য তিনি ন্যাশনাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট অ্যাক্টরের সম্মান পান। কৌতুক চরিত্রে সেরা অভিনেতা হিসেবে তিনি ১৯৮০, ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে ফিল্ম ফেয়ার ফর বেস্ট কমেডিয়ান বিভাগে বিজয়ী হন। ১৯৯৩ সালে 'আগন্তুক' সিনেমায় অভিনয়ের জন্য বেঙ্গলি ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাশোসিয়েশান অ্যাওয়ার্ডে তাঁকে সম্মানিত করা হয়। ১৯৭৫, ১৯৮০ ও ১৯৮৬ সালে যথাক্রমে 'অমানুষ', 'গোলমাল' ও 'সাহেব' সিনেমায় সেরা সহ–অভিনেতা হিসেবে উৎপল দত্তের নাম মনোনীত হয়।