What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

২ মে কিংবদন্তি চলচ্চিত্রকার, লেখক ও শিল্পী সত্যজিৎ রায়ের জন্মশতবর্ষ। তাঁকে আমরা স্মরণ করছি শ্রদ্ধার সঙ্গে...

sMGCsEU.jpg


দুই বছরে বয়সে সত্যজিৎ রায় | 'যখন ছোট ছিলাম' বই থেকে

কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজের এক জাঁদরেল অধ্যাপক ক্লাসে ঢুকতেই ছাত্ররা দাঁড়িয়ে তটস্থ। ছাত্রদের মধ্যে একজনকে দেখে অধ্যাপক ভীষণ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বেঞ্চের ওপর দাঁড়িয়েছ কেন? ছাত্রটি ঢোঁক গিলে উত্তর দিল, না, স্যার, আমি মেঝেতেই দাঁড়িয়ে আছি।

প্রায় সাড়ে ছয় ফুট উচ্চতার ছাত্রটিকে খেয়াল করে অধ্যাপক সেদিন ভীষণ বিস্মিত হয়েছিলেন। পরে ওই ছাত্র কেবল ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা ছেলে হয়ে থাকেনি; শারীরিক উচ্চতা ছাপিয়ে কর্মগুণে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল গোটা বিশ্বের সামনে। নিজের সঙ্গে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল আমাদের, মানে বাংলা ভাষাভাষীদের। সেই ছাত্রের নাম সত্যজিৎ রায়। যাঁর ডাকনাম ছিল মানিক।

জন্মের পরপর অবশ্য ডাকা হয়েছিল তাঁকে প্রসাদ নামে। মা ডাকতেন মানিক। আর ছোট কাকা সুবিমল রায় আরও অনেকের অদ্ভুত নাম দেওয়ার পাশাপাশি সত্যজিতেরও একটা নাম দিয়েছিলেন—নুলমুলি! যে নামেই ডাকা হোক না কেন, মানিক নামটাই সবচেয়ে জুতসই সত্যজিতের সঙ্গে। সিনেমা, সাহিত্য, চিত্রকলা, সংগীত—শিল্পকলার সব শাখাতেই তাঁর হাতের ছোঁয়া লেগেছে। আর যেটাতেই হাত দিয়েছেন, সেটাই হয়ে উঠেছে মহামূল্যবান মাণিক্য। একেই না বলে নামের সার্থকতা!

কলকাতার বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুলে আশুবাবু ছিলেন সত্যজিতের ড্রইং মাস্টার। ছেলেবেলা থেকে ছবি আঁকাআঁকি খুব ভালো পারতেন বলে আশুবাবুর প্রিয়পাত্র ছিলেন তিনি। কিছু একটা আঁকলেই আশুবাবু বলতেন, 'সইত্যজিৎ নামেও সইত্যজিৎ, কাজেও সইত্যজিৎ।' সত্যজিৎ তখন 'কাজেও সইত্যজিৎ' কথাটির অর্থ বোঝেননি। আমরা অবশ্য ঠিকই বুঝে নিই, আশুবাবু কী বোঝাতে চেয়েছিলেন।

2XqmIsb.jpg


বাবা সুকুমার রায় ও মা সুপ্রভা রায়, উইকিপিডিয়া

একেবারে ছেলেবেলায় বাবা বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়কে হারানোর পরপরই জন্মস্থান ছাড়েন সত্যজিৎ। গিয়ে ওঠেন ভবানীপুরের মামাবাড়িতে। ছোট্ট মানিক তখনো কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। মানে কেন বাড়ি ছাড়ছে, আগের বাড়িটা ভালো ছিল নাকি এখনকারটা ভালো—এসব আরকি। তাঁর ভাষায়, 'গড়পার রোডের মতো এমন একটা অদ্ভুত বাড়ি' ছাড়ার পরও দাদাবাড়ির সবার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অটুট। বাবা সুকুমার রায়কে তিনি চিনেছেন তাঁর লেখা–আঁকার মধ্য দিয়ে। দাদা আরেক বিখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও মুদ্রণবিশেষজ্ঞ উপেন্দ্রকিশোরকেও আবিষ্কার করেছেন তাঁর সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে। বাবা ও দাদার অভাবটা পুষিয়ে দিয়েছিলেন গড়পার রোড ও ভবানীপুরের বাসিন্দারা।

nekUSPB.jpg


১০০ গড়পাড় রোডের এই বাড়িতেই জন্মেছিলেন মানিক, সংগৃহীত

দুই পরিবারের প্রায় সবাই ছিলেন দারুণ সৃজনশীল। বাপ–দাদার সূত্রে লেখালেখি–আঁকাআঁকির হাতটা তো ছিলই, পরিবারের বাকিদের কাছ থেকে পেয়েছেন সুর–সংগীতের বিচিত্র জগতের খোঁজ। মামাবাড়িতে গিয়ে নকশা আঁকা মেঝে কিংবা বারান্দায় দাঁড়িয়ে মানুষ দেখেও তাঁর অলস দুপুরগুলো কেটে যেত দারুণ আনন্দে। ম্যাজিক ল্যান্টার্ন নামের এক খেলনা দিয়ে খেলতে খেলতে সিনেমার পোকাও ঢুকে যায় মাথায়।

পৃথিবীতে বাস করে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা না দেখার মানে পৃথিবীতে বাস করে চন্দ্র–সূর্য না দেখা। - আকিরা কুরোসাওয়া, বিশ্বখ্যাত জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা

পরে বড় হয়ে সত্যজিৎ এমন সিনেমাই বানালেন যে মানুষ তাঁকে জাদুকর মানল। বিশ্বখ্যাত জাপানি চলচ্চিত্র নির্মাতা আকিরা কুরোসাওয়া বলেছিলেন, 'পৃথিবীতে বাস করে সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা না দেখার মানে পৃথিবীতে বাস করে চন্দ্র–সূর্য না দেখা।'

একইভাবে আমরা বলতে পারি, বাংলা ভাষায় কথা বলেও যারা ফেলুদা, প্রোফেসর শঙ্কু কিংবা তারিণী খুড়োকে চেনে না, তারা নির্ভেজাল আনন্দে ডুব দেওয়া থেকে বঞ্চিত। সত্যজিৎ আসলে সবকিছুতেই এক নম্বর।

পড়াশোনায় এক নম্বর হওয়া নিয়ে অবশ্য মাথাব্যথা ছিল না। তাঁর এক পিসি, আরেক বিখ্যাত লেখক লীলা মজুমদার লিখেছিলেন, 'মানিক বলত, সবাইকেই যে ফার্স্ট–সেকেন্ড হতে হবে, তার কোনো মানে নেই।' সত্যজিৎ চেয়েছিলেন, মনের আনন্দে নিজের পছন্দের কাজই করবেন। সেটাই তিনি করেছেন অসম্ভব পরিশ্রম ও শৃঙ্খলার সঙ্গে।

jFIzM2H.jpg


সত্যজিৎ মানে অনুপ্রেরণার অফুরন্ত উৎস, সংগৃহীত

ছেলেবেলায় একবার মা–মাসির সঙ্গে লক্ষ্ণৌ যাওয়ার সময় সত্যজিৎকে বাধ্য হয়ে একা একটা কামরায় উঠতে হয়েছিল। কামরাটা ভর্তি ছিল ইংরেজ যাত্রীতে। সেদিন সারাটা রাত কেউ তাঁকে বসার জায়গা দেয়নি। বসে থাকতে হয়েছিল মেঝের এক কোণে। ওই ইংরেজ যাত্রীরা যদি জানত যে এই ছেলেকে একদিন সবাই মাথায় তুলে রাখবে...! সত্যজিৎ আমাদের মাথার মানিক, আমাদের তালগাছ। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, 'তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে...'। সত্যজিৎ দাঁড়িয়ে আছেন আমাদের অনুপ্রেরণার অফুরন্ত উৎস হয়ে। তাই এমন ছেলেকেই তো আদর করে বলা যায়—ও রে আমার মানিক!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top