What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other অনালোচিত সুপারস্টার উজ্জ্বল (1 Viewer)

pBUESka.jpg


'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি' রক্ত গরম করা এ গান শোনার সময় আমাদের মনের মধ্যে যে অনুভূতি হয়, মুক্তিযুদ্ধের সেরা সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসী মুখ চোখে ভাসে চলচ্চিত্রে তিনি সেই সাহসী সন্তানের একজন। তাঁর নাম উজ্জ্বল। 'অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী' ছবির এ গানে উজ্জ্বলের চোখ থেকে যেন আগুন ঝরে। পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে স্বাধীন দেশ গড়ার যে লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছে ক্যাম্পে বসে এই গান যেন সেটাই বলছে তাঁর চোখেমুখে। তিনি বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে একজন মেগাস্টার হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে নিয়ে আলোচনা শূন্যের কোঠায়। অনালোচিত হয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ।

উজ্জ্বল একাধারে অভিনেতা, প্রযোজক, পরিচালক। মূলনাম আশরাফ উদ্দিন আহমেদ। জন্ম ২৮ এপ্রিল ১৯৪৬, পাবনা। স্নাতকোত্তর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে।

গণঅভ্যুত্থানের সময়কালে ঢাবির মাস্টারদা সূর্যসেন হলে থাকার সময় টিএসসিতে নাটকে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সেই নাটকে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন চলচ্চিত্রের আরেক নামকরা অভিনেত্রী সুজাতা। এভাবেই অভিনয়ের দিকে তাঁর যাত্রা শুরু। ঢাকা টেলিভিশনে নিয়মিত নাটক করার সুবাদে প্রযোজকের নজরে আসেন এবং চলচ্চিত্রে সুযোগ পান।
১৯৭০ সালে পরিচালক সুভাষ দত্ত পরিচালিত 'বিনিময়' ছবিতে অভিষেক ঘটে ঢাকার বাংলা চলচ্চিত্রে। প্রথম নায়িকা ছিল কবরী। সুভাষ দত্তের মুক্তিযুদ্ধের ছবি 'অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী' ছবিতে উজ্জ্বল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন।

QRo3sGd.jpg


মূলত সত্তরের দশকে তাঁর রোমান্টিক নায়কের ভূমিকার পর সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে গেলে পার্শ্ব অভিনেতার অভিনয় করতে হয় বাধ্য হয়ে। তখন তিনি প্রযোজনায় নাম লেখান। পরিচালক মমতাজ আলীকে দিয়ে যখন 'নালিশ' ছবির নির্মাণ করান ঠিক তখনই পরিচালক তাঁকে ইমেজ বদলাতে বলেন। তাঁর পরামর্শে অ্যাকশন নায়ক হিসেবে পর্দায় আসেন এবং গ্রহণ করে নেয় দর্শক। এরপরেই মমতাজ আলী-র সাথে তাঁর দ্বিতীয় ছবি 'নসীব' ব্লকবাস্টার হয় এবং পুরোপুরি অ্যাকশন নায়কে পরিণত হন। তাঁকে 'মেগাস্টার' উপাধি দেয়া হয়। পত্র-পত্রিকায় ব্যবহৃত হতে থাকে এ উপাধি। 'নসীব'-এর খল চরিত্রই মূলত তাঁকে এ খ্যাতি এনে দেয়। নিজের পরিচালিত 'কারণ' ছবিটিও ভূমিকা রেখেছিল।

উল্লেখযোগ্য ছবি – বিনিময়, সমাধান, ইয়ে করে বিয়ে, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, আবার তোরা মানুষ হ, লালন ফকির, ফকির মজনু শাহ, অপবাদ, পায়ে চলার পথ, অপরাধ, সমাধি, অগ্নিশিখা, রূপালি সৈকতে, অনুরাগ, অনুভব, মহেশখালীর বাঁকে, আমির ফকির, নসীব, কারণ, নিয়ত, নালিশ, আমিই ওস্তাদ, উসিলা, উৎসর্গ, ধন্যি মেয়ে, ছুটির ফাঁদে, বীরাঙ্গনা সখিনা, লাল কাজল, বলাকা মন, জনতা এক্সপ্রেস, দাবি, ভাড়াটে বাড়ি, সতর্ক শয়তান, জান আমার জান, তুমি আমার মনের মানুষ, সবার উপরে তুমি, কিং খান, রাজা সূর্য খাঁ, আমার ভাই আমার বোন, হিরো দ্য সুপারস্টার।

'প্রেম যেন মোর
গোধূলিবেলার পান্থ পাখির কাকলি
কি যেন বলিতে চায় কিছু তার বলে যায়
কিছু কথা যায় তবু না বলি'

'সমাধান ছবির অসাধারণ রোমান্টিক এ গানে শাবানার বিপরীতো উজ্জ্বলের লুক আর অভিনয় অনবদ্য। শাবানার বিপরীতে 'অনুভব' ছবির 'যদি সুন্দর একখান মুখ পাইতাম/সদরঘাটের পানের খিলি তারে বানায় খাওয়াইতাম' এ গানটিও সুপারহিট। এমনকি শাবানার বিপরীতে 'ফকির মজনু শাহ' ছবিতে 'চোখের নজর এমনি কইরা' এ গানটিতেও অসাধারণ। সত্তর/আশির দশকের রোমান্টিক ছবিতে উজ্জ্বল অন্যতম সেরা ছিলেন। 'অনুরাগ' ছবিতে 'আমার মন তো বসে না গৃহকাজে' গানটিতে উজ্জ্বলের অসাধারণ সব এক্সপ্রেশন দেখলে তাঁকে বড়মাপের অভিনেতা মনে হবে। 'অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী' ছবির মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রটি তো তাঁকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। 'মোরা একটি ফুলবে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি' আপেল মাহমুদের কালজয়ী এ গানটিতে উজ্জ্বলের অভিনয় অসাধারণ। চলচ্চিত্র শিল্পে বেঁচে থাকার জন্য এরকম দু'একটি কাজই যথেষ্ট। 'নসীব' ছবির ইমেজ পরিবর্তনকারী সাহসই উজ্জ্বলকে আরো সাফল্য দেয়। নেগেটিভ রোলে কাজ করে দর্শকের আরো কাছাকাছি চলে যান। এ ছবিতে তাঁর অভিনয় সমাদৃত হয় এবং 'মেগাস্টার' বলা শুরু করে তাঁকে। রোমান্টিক থেকে অ্যাকশনে পদার্পণ করে সফল হন।

Ix8HX8v.jpg


উজ্জ্বলের জুটি অনেকের সাথেই ছিল এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য জুটিগুলো হচ্ছে :
উজ্জ্বল-কবরী : বিনিময়, লালন ফকির, বলাকা মন, অনুরোধ।
উজ্জ্বল-শাবানা:- সমাধান, অনুভব, অনুরাগ, স্বীকৃতি, আমির-ফকির, নসীব, নালিশ, উসিলা, লাল কাজল।
উজ্জ্বল-ববিতা: অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, ইয়ে করে বিয়ে, পায়ে চলার পথ, ফকির মজনু শাহ, অপরাধ, কারণ, বীরাঙ্গনা সখিনা।
উজ্জ্বল-রোজিনা: চোর ডাকাত পুলিশ, ঘরবাড়ি, বিশাল।

উজ্জ্বলের প্রথমদিকের লুক দেখলে তাঁকে হ্যান্ডসাম লাগে। শেষের দিকের লুকে অ্যাকশন নায়কের ইমেজ আছে। তাঁর এই ট্রান্সফরমেশন প্রশংসনীয়। তবে দর্শকভেদে সাদাকালো সময়ের উজ্জ্বলের জনপ্রিয়তা বেশি। একটা সময় উজ্জ্বল সময়ের চাহিদায় বাবার চরিত্রও করেছেন এবং সফল হয়েছেন। বর্তমান শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের বাবার চরিত্রে 'আমার ভাই আমার বোন, হিরো দ্য সুপারস্টার'সহ আরো কিছু ছবিতে ছিলেন। তাঁর বলিষ্ঠ ভয়েস অভিনয়ের দিক থেকে তাঁর জন্য প্লাসপয়েন্ট ছিল।

উজ্জ্বল প্রযোজক-পরিবেশক সমিতির সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন। তাঁর 'উজ্জ্বল ফিল্মস' প্রোডাকশন থেকে ছবিও হয়েছে। তাঁর প্রযোজিত ছবির মধ্যে আছে 'নসীব, নালিশ, নিয়ত।'
রাজনৈতিক জীবনে তিনি বিএনপিপন্থী।

In3gEU3.jpg


উজ্জ্বল আমাদের দেশের চলচ্চিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁকে বাদ দিয়ে স্বর্ণালী সময়ের চলচ্চিত্রের সম্পূর্ণ আলোচনা সম্ভব না। তাঁকে নিয়ে আলোচনা একদমই দেখা যায় না হোক সেটা ভার্চুয়াল বা সংবাদপত্রে। অনালোচিত একজন সুপারস্টার হয়েও তিনি যেন জায়গা দখল করেছেন দেশের চলচ্চিত্রে এবং এভাবেই এই সুপারস্টার উজ্জ্বল হয়ে থাকবেন তাঁর নামের মতোই।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top