ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় তুলনামূলকভাবে তারা একটু বাড়তি ঝুঁকিতে থাকে।
মেনিনজাইটিস একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ। যেকোনো বয়সের মানুষের এ রোগ হতে পারে। তবে ছোট শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নাজুক থাকায় তুলনামূলকভাবে তারা একটু বাড়তি ঝুঁকিতে থাকে। সঠিক সময়ে রোগ শনাক্ত না হলে, সঠিক ও সময়মতো চিকিৎসা না পেলে কিংবা চিকিৎসা অসম্পূর্ণ থাকলে এ রোগে আক্রান্ত শিশুদের নানা রকম স্নায়বিক জটিলতা, খিঁচুনি এবং মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতার পাশাপাশি জীবন সংশয়ও হতে পারে। অভিভাবক হিসেবে সবারই জানা দরকার রোগটা কী, কীভাবে সন্দেহ করবেন এবং তার চিকিৎসা ও প্রতিরোধই-বা কী।
মেনিনজিস ও মেনিনজাইটিস
মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের ভেতর স্নায়ুরজ্জুর চারপাশ যে পর্দা দিয়ে আবৃত থাকে, তার নাম মেনিনজিস। এর মূল কাজ মস্তিষ্ককে সব ধরনের আঘাত, সংক্রমণ ইত্যাদি থেকে নিরাপদ রাখা, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল এবং গ্লুকোজসহ অন্যান্য পুষ্টি উপাদান নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করা। এই পর্দায় জীবাণুর সংক্রমণ হলে তাকে মেনিনজাইটিস বলে। সংক্রমণ পর্দায় হলেও তা আশপাশের মস্তিষ্ক কোষ কলায়ও ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মস্তিষ্কের ভেতরে চাপ বাড়ে এবং কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
শিশুরা আক্রান্ত হয় যেভাবে
■ যেসব জীবাণু মেনিনজাইটিসের জন্য দায়ী, সেগুলোর মধ্যে হিমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা, স্ট্রেপটকক্কাস নিউমোনি আর নিসেরিয়া মেনিনজাইটিডিস ব্যাকটেরিয়া অন্যতম। এই ব্যাকটেরিয়াগুলো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, শ্বাসতন্ত্র দিয়ে শরীরে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে বংশবিস্তার করে। তারপর সুযোগ বুঝে রক্তে ঢুকে যায় এবং রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে মস্তিষ্কের পর্দায় সংক্রমণ ও প্রদাহ সৃষ্টি করে।
■ শিশুদের দীর্ঘমেয়াদি কানপাকা এবং তার জটিলতা থেকেও মেনিনজাইটিস হতে পারে।
প্রধান প্রধান উপসর্গ
■ তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা, ক্রমাগত বমি।
■ শিশু খুব অস্থির থাকে, সারাক্ষণই কাঁদে, কিছুতেই থামানো যায় না। খিটখিটে মেজাজের হয়ে যায়।
■ ঘরে আলো জ্বাললে শিশু চিৎকার শুরু করে, আলোর দিকে তাকাতে পারে না।
■ অনেক সময় শিশুরা ঝিম মেরে যায়, সাড়া দেয় কম।
■ হঠাৎ খিঁচুনি, অচেতন হয়ে পড়া।
■ হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসা, শ্বাসকষ্ট।
■ অনেক সময় শরীরে লাল র্যাশ হতে পারে।
■ অনেক সময় শিশুর ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।
■ ছোট শিশুদের মাথার তালু অনেক সময় ফুলে যায়
করণীয়
■ মেনিনজাইটিসের লক্ষণগুলোর কোনো একটা দেখা দিলেই শিশুকে দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে নিতে হবে।
■ কর্তব্যরত চিকিৎসকও দেরি না করে, প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগ শনাক্ত করার চেষ্টা করবেন এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শুরু করে দেবেন। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করবেন।
■ প্রাথমিক অবস্থায় হাসপাতালে এনে চিকিৎসা শুরু করতে পারলে শিশু সম্পূর্ণ ভালো হয়ে যায়। তবে দেরি হলে রোগের ব্যাপ্তি বেড়ে যায়। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরুর পরও মৃত্যুঝুঁকি থেকে যায়। বেঁচে গেলেও অনেকের কানে না শোনা, পক্ষাঘাত, খিঁচুনি ইত্যাদিসহ নানা রকম মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিতা হতে পারে।