What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other সুজনকে রেখে সখি গেল চলে (1 Viewer)

tXXoTy8.jpg


'সব সখিরে পার করিতে নেবো আনা আনা
তোমার বেলায় নেবো সখি তোমার কানের সোনা
সখি গো ও আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি
তোমার কাছে পয়সা নেবো না'

সুজন মাঝি খুব সাধারণভাবে নিজের ভালোবাসার কথা জানিয়েছিল সখিকে। সবাইকে পার করতে পয়সা নেবে কিন্তু সখির বেলায় নেবে না শুধু তার মনটা নেবে। সখি তাকে সোজা জানিয়ে দেয় 'তুমি বামুন হইয়া চান্দের পানে হাত বাড়াইও না' তাও সুজন বলে 'আমি প্রেমের ঘাটের মাঝি।' সেই সখি চলে গেল তাঁর সুজনকে ছেড়ে।

zmVGDVo.jpg


'সুতরাং' ছবির সেট। পরিচালক সুভাষ দত্ত নতুন মুখ কবরীকে অভিনয় শেখাচ্ছেন। মুখ যেন বেশি হা না করে, চোখের পাতা যেন ঠিকভাবে নড়ে ইত্যাদি। ছবির ক্যামরাম্যানের কাছেও অভিনয় শেখেন। ক্যামরাম্যান বলেন-'মনে করো ক্যামেরাই তোমার হিরো, ক্যামরার দিকে তাকিয়ে কথা বলো। যখন কাঁদতে বলা হবে পেছনের কোনো একটা স্মৃতি মনে করবে দেখবে কান্না পাচ্ছে। মনে করো তোমার হিরো তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে তোমার কি কান্না পাবে না! ওটা ভেবে কাঁদো।' এভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাঁদেন প্রথম ছবিতেই। ক্যামেরাম্যান ছবির কাজ শেষে প্রশংসা করেন প্রথম ছবিতে এত ন্যাচারাল অভিনয় দেখে।

মূলনাম মিনা পাল। মিনা পাল থেকে চলচ্চিত্রে কবরী নামকরণ করেন সৈয়দ শামসুল হক। হিন্দু থেকে মুসলমানে ধর্মান্তরিত হবার পর দ্বিতীয় স্বামী সফিউদ্দিন সারোয়ারের নাম থেকে কবরী সারোয়ার নাম ধারণ করেন।

7Kr7HZD.jpg


জন্ম ১৯ জুলাই ১৯৫০, চট্টগ্রাম, মৃত্যু ১৭ এপ্রিল ২০২১, ঢাকা। শিশুশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে। শৈশবে খুব চঞ্চল মেয়ে ছিলেন। ছেলেদের সাথে ফুটবল খেলতেন, ঘাস কাটতে যেতেন এসব দেখে মা তাকে 'পাড়া চরানি' বলতেন।
স্বামী চিত্ত চৌধুরী ও সফিউদ্দিন সারোয়ার
সন্তান – ৫।

'সুতরাং' ছবিতে ১২/১৩ বছর বয়সে প্রথম নায়িকার অভিনয় ছবির পরিচালক ও অভিনেতা সুভাষ দত্তের বিপরীতে। ছবিটি আন্তর্জাতিকভাবে প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত কোনো বাংলাদেশী ছবি। জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট ফিল্ম ফেস্টিভালে ছবিটি দেখানো হয় এবং পুরস্কৃত হয়। বিশ্বখ্যাত পরিচালক সত্যজিৎ রায় সুভাষ দত্তকে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন চিঠিতে এ ছবির পুরস্কারপ্রাপ্তিতে।
জহির রায়হানের 'বাহানা', খান আতাউর রহমানের 'সোয়ে নদীয়া জাগে পানি', কাজী জহিরের 'ময়না' নামের উর্দু ছবিতে অভিনয় করেন যেটি 'ময়নামতি' ছবির উর্দু ছিল।

6RPMz0x.jpg


সেই ষাট/সত্তরের দশকে ২৫ হাজার টাকায় টয়োটা করোলার গাড়ি কিনেছিলেন। নতুন নতুন জিনিস শিখতে ভালোবাসতেন। চলচ্চিত্রে নায়িকার ব্যাপক পরিচিতি শুরুর পর নিজেকে নতুন করে সাজাতে চেষ্টা করেন। নতুন কাপড়, জুতা কেনা, কাঁটা চামচে খাওয়া শেখা এসব তাঁকে আনন্দ দিত। ভারতে আকাশবানীতে মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর ভাষণ জনপ্রিয়তা পায়। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর ভূমিকা নিয়ে অনেকে কথা বলে এর জবাবে তিনি বলেন কণ্ঠযোদ্ধা হিসেবে জনমত গড়ে তোলার কাজ করেছেন। এটিও বড় বিষয় ছিল তখন। ভারতে হিন্দি 'জয় বাংলাদেশ' সহ আরো একটি হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন। টলিউড থেকে নির্মিত 'দ্য নেম অফ রিভার' ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন যে ছবিতে তাঁর সহশিল্পী ছিলেন শমী কায়সার, রোজী আফসারী।

2huWWxR.jpg


উল্লেখযোগ্য ছবি : সুতরাং, দেবদাস, বিনিময়, সারেং বৌ, ময়নামতি, নীল আকাশের নিচে, রংবাজ, তিতাস একটি নদীর নাম, আবির্ভাব, যে আগুনে পুড়ি, কখগঘঙ, আবির্ভাব, সোনালি আকাশ, দর্পচূর্ণ, সুজন সখি, মাসুদ রানা, গুন্ডা, আগন্তুক, কত যে মিনতি, স্মৃতিটুকু থাক, বেঈমান, রং বদলায়, ঢেউয়ের পরে ঢেউ, জলছবি, লালন ফকির, খেলাঘর, বলাকা মন, আমার জন্মভূমি, অঙ্গীকার, অবাক পৃথিবী, মতিমহল, লাভ ইন সিমলা, অনুরোধ, তৃষ্ণা, সাগর ভাসা, ঈমান, আরাধনা, নওজোয়ান, বধূ বিদায়, সোনার তরী, কলমিলতা, দুই জীবন, অপরাজিত নায়ক, দেমাগ, লাল সবুজের পালা, জীবনের গল্প, আমাদের সন্তান।

orDA3hS.jpg


নায়করাজ রাজ্জাকের সাথে তাঁর জুটি দেশের চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা জুটি বলে অনেকে। এ জুটির ছবিগুলো ব্যাপকভাবে দর্শকনন্দিত হয়। রাজ্জাকের পর ফারুক, বুলবুল আহমেদ, আলমগীরের সাথে তাঁর জুটি ছিল। তবে রাজ্জাকের পর ফারুকের সাথেই জনপ্রিয়তা পান বেশি। উজ্জ্বল, আলমগীর, ফারুক, সোহেল রানা, জাফর ইকবাল তাঁদের সবার প্রথম ছবির নায়িকা ছিলেন কবরী।

JbCmSJ9.jpg


কবরীর ক্যারেক্টারাইজেশনের কথা বললে অনেকগুলোই চলে আসে। তিনি যে অনবদ্য এক অভিনেত্রী ছিলেন তার উদাহরণ আছে বেশকিছু ছবিতে। প্রথমেই বলতে হবে 'সারেং বৌ' ছবির নবীতুনের কথা। শহীদুল্লাহ কায়সারের কালজয়ী উপন্যাস থেকে নেয়া এ ছবিটি পরিচালনা করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। সারেং স্বামী বাণিজ্যে গিয়ে বহুদিন যখন আসে না জীবন সংগ্রামে পড়তে হয় নবীতুনকে। উপকূলীয় পরিবেশে একমাত্র মেয়েকে নিয়ে প্রচলিত সমাজের বিভিন্ন সমস্যাকে পার করে নবীতুন এগিয়ে যায়। কবরী চরিত্রটির সাথে এত মিশে গিয়েছিলেন যে জীবন্ত মনে হয়েছে। সারেং ফারুক একদিন ফিরে আসে। ছবির সাড়া জাগানো গান 'ওরে নীল দরিয়া'-তে কবরী স্বপ্ন দেখছিলেন সারেং ফিরে আসছে। গান শেষে সত্যি সত্যি সারেং তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। তখন কবরী বলেন-'এইটাও কি স্বপন?' অসাধারণ অভিনয়। ঘূর্ণিঝড়ে আহত সারেং-এর পানির পিপাসা মেটাতে পারে না নবীতুন। তখনই উপন্যাস ও ছবির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মানবতাবাদী ঘটনাটি ঘটে। এখানেও কবরী অসাধারণ অভিনয় করেন। বাংলাদেশে নির্মিত প্রথম 'দেবদাস'-এর পারু হয়েছিলেন কবরী। দেশে নির্মিত দেবদাসে তিনি পারুল চরিত্রে সুযোগ্যাই ছিলেন ছবির অভিনয় তাই বলে। 'ময়নামতি'-র ময়না চরিত্রেও অদ্বিতীয়। 'সুতরাং' তাঁর প্রথম ছবি এবং প্রথম ছবিতে একটি সাধারণ মেয়ের চরিত্রে বাংলার আবহমান একটি চরিত্র হয়ে উঠেছে যার জীবনে প্রেম, সংসার এসবের স্বপ্ন আছে।

go44GMG.jpg


'রংবাজ' ছবির চিনি তো কাল্ট হয়ে আছে। রংবাজ রাজ্জাক তাঁর প্রতি দুর্বল। 'সে যে কেন এলো না' গানে কবরীর কিউটনেস অভাবনীয়। বৃষ্টিতে ভেজার আগে দুজনের কথোপকথন দেশের চলচ্চিত্রে যে কোনো ক্লাসিক রোমান্টিক ছবির থেকে কোনো অংশে কম না। 'সুজন সখি'-র সখি চরিত্রটিও তাঁকে একনামে পরিচিতি দিয়েছে। শহুরে চরিত্রগুলোর পাশাপাশি গ্রামীণ চরিত্রেও যে তিনি অনন্য এটা তার একটা প্রমাণ। 'মাসুদ রানা' ছবিতে কবরী ছিলেন স্পেশাল। 'মনেরও রঙে রাঙাবো' গানের সাথে তাঁর অভিনয় নায়ক সোহেল রানা-র চিন্তায় ছাপ ফেলে এবং এ গানটিই তাঁকে অতীত থেকে বর্তমানে নিয়ে আসে ছবির শেষে। 'তিতাস একটি নদীর নাম' কবরীর কাল্ট ক্লাসিক কাজ। এ ছবিতে তিনি ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ করেছেন। বাসর রাতে স্বামীর কাছে যাবার যে ভয়টা অদ্বৈত মল্ল বর্মণ তাঁর উপন্যাসে তুলে ধরেছেন একজন নববধূর জন্য সেই অনুভূতিকে বাস্তবে ধারণ করেই কবরী চরিত্রটি করেছেন। অতুলনীয় একটি চরিত্র ছিল তাঁর। তারিক আনামের বিপরীতে 'লাল সবুজের পালা' ছবিতেও তিনি অসাধারণ অভিনয় করেছিলেন গ্রামীণ চরিত্রে। রাজ্জাকের বিপরীতে 'নীল আকাশের নিচে, সোনালি আকাশ, বেঈমান, আবির্ভাব, খেলাঘর' ছবিগুলোতেও তাঁর অভিনয় উল্লেখযোগ্য ছিল। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে আলমগীরের বিপরীতে 'জীবনের গল্প' ছবিটি আলোচিত হয়েছিল।

BnQvbcc.jpg


কবরী পরিচালনায় অভিষেক করেন 'আয়না' ছবির মাধ্যমে। ২০০৬ সালে তিনি এ ছবিতে ব্রেক দেন নতুন অভিনেত্রী সোহানা সাবা-কে। এসিড সন্ত্রাস নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে ছবিটি নির্মাণ করেন। 'এই তুমি সেই তুমি' নামে আরেকটি ছবি নির্মাণে হাত দেন তবে পুরোপুরি শেষ হয়নি।

তাঁর জনপ্রিয় কিছু গান :
অনেক সাধের ময়না আমার – ময়নামতি
ফুলের মালা পরিয়ে দিলে – ময়নামতি
হৈ হৈ রঙ্গিলা – রংবাজ
সে যে কেন এলো না – রংবাজ
প্রেমের নাম বাসনা – নীল আকাশের নিচে
গান হয়ে এলে – নীল আকাশের নিচে
মনেরও রঙে রাঙাবো – মাসুদ রানা
ওরে নীল দরিয়া – সারেং বৌ
হীরামতি হীরামতি – সারেং বৌ
সব সখিরে পার করিতে – সুজন সখি
গুন না গুন গান গাহিয়া – সুজন সখি
মোরা আর জনমে হংস মিথুন ছিলাম – সোনালি আকাশ
বকুল ফুলের মালা গেঁথেছি – সোনালি আকাশ
তুমি যে আমার কবিতা – দর্পচূর্ণ
আমি তোমার বধূ – আরাধনা
তুমি বলে ডাকলে বড় মধুর লাগে – আরাধনা
চিঠি আসবে জানি আসবে – আরাধনা
কাছে এসো যদি বলো – আবির্ভাব
আমি নিজের মনে নিজেই যেন – আবির্ভাব
পিঞ্জর খুলে দিয়েছি – আপন পর
মনে বড় আশা ছিল – ছোট মা
এট্টুসখানি দেখো – বধূ বিদায়
পরানে দোলা দিলো এ কোন ভোমরা – সুতরাং
তুমি আসবে বলে ভালোবাসবে বলে – সুতরাং
মন তো ছোঁয়া যাবে না – স্মৃতিটুকু থাক
তোমারই রূপের এত যে আলো – সন্তান
বকশিশ চাই না আমি – মতিমহল
তুমি প্রথম আমায় ওগো ভালোবাসতে শেখালে – চোখের জলে
শোনেন শোনেন জাঁহাপনা – সাত ভাই চম্পা
আমি সঙ্গী তোমার জীবনে – দয়া মায়া
আবার দুজনে দেখা হলো – দুই জীবন
অল্প অল্প করে জীবনের গল্প – জীবনের গল্প
তুমি আমার চন্দ্রমুখী – আমাদের সন্তান

UHt6pTb.jpg


২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০১৪ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে নিজের লেখা আত্মজীবনীমূলক বই 'স্মৃতিটুকু থাক' প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র ও রাজনীতির বিষয়বৈচিত্র্যে যদি বলা হয় কবরী একাধিক ক্ষেত্রে সফল নারীর উদাহরণ।

C6S7yoX.jpg


জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান 'সারেং বৌ' ছবিতে ১৯৭৮ সালে এবং আজীবন সম্মাননা ২০১৩ সালে।
বাচসাস পুরস্কার – লালন ফকির (১৯৭৩), সুজন সখি (১৯৭৫), দুই জীবন (১৯৮৮), আজীবন সম্মাননা (২০০৯)

তিনি কয়েকটি টিভি নাটকেও চমৎকার অভিনয় করেছেন যার মধ্যে 'সংশপ্তক, মাটির কোলে' অন্যতম।

304EOwG.jpg


কবরী-র সময়ের নায়িকাদের প্রায় সবারই একটা কমন দিক ছিল চোখের সৌন্দর্য। কবরীর কাজল দেয়া সুন্দর করে সাজানো চোখ দেখলে পরীর মতো লাগত। এমনিতে খুব হালকা পাতলা গড়নের দেখতে ছিলেন তাই খোলা চুলে শাড়ির সাথে তাঁকে খুবই মিষ্টি লাগত দেখতে। ভয়েস তো মিষ্টি ছিলই। এই সৌন্দর্যের সাথে তাঁর ন্যাচারাল অভিনয়দক্ষতা মিলিয়েই হয়ে উঠেছিলেন মিষ্টি মেয়ে। মিষ্টি মেয়ে হয়েই অমর থাকবেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে।

নিজের সম্পর্কে তিনি এক কথায় বলেছিলেন- 'আমি মানুষকে কতটুকু দিতে পেরেছি জানি না তবে মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা পেয়েছি তাতে আমার মনে হয় আমি পাশের বাড়ির মেয়েটি।'

K0TflUh.jpg


পাশের বাড়ির মেয়েটি যেমন আমাদের পরিচিত থাকে একজন কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরীও আমাদের চিরপরিচিত হয়ে থাকবেন চলচ্চিত্রের ইতিহাসে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top