What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মুরগি বিদায় নেবে, ডিম থাকবে (1 Viewer)

CPtz9gH.jpg


ঘোড়ার ডিম খুঁজে পেলেও পাওয়া যেতে পারে। তবে ডিম চেনে না বা খায়নি—এমন একজন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে। মানুষের প্রিয় খাদ্যের তালিকায় ডিমের স্থান ওপরের দিকে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ, ডিম হচ্ছে পুষ্টিগুণে ভরপুর উন্নত মানের আমিষজাতীয় খাদ্যের প্রধান উৎস। মানুষ এই গ্রহে পা রাখার পরপরই ডিম নামক উপাদেয় খাদ্যের সঙ্গে পরিচিত।

w5KDju4.jpg


এশিয়ার প্রথম ডিমের বিকল্প প্রস্তুত এবং বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান ইভো ফুডসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠাতা শ্রদ্ধা বানশালী ও কার্তিক দীক্ষিত, ছবি: ইভো ফুডস

বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৮ সালে পুরো পৃথিবীর ৭৬৩ কোটি মানুষে মিলে সাবাড় করেছে ৭ কোটি ৬৮ লাখ টন ডিম। সে হিসাবে আমাদের রসনা মেটাতে বছরে লেগেছে মাথাপিছু ১৬১টি ডিম। আজও ডিমের জনপ্রিয়তা মোটেই কমেনি, বরং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি ১০ বছরে বিশ্বজুড়ে ডিমের চাহিদা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে এ বিপুল পরিমাণ ডিমের প্রাকৃতিক উৎস হচ্ছে ২ হাজার ৬০০ কোটি মুরগি। এ বিস্ময়কর এক পক্ষী, জীবিত আমিষের ফ্যাক্টরি, সংখ্যায় মোটেই কম নয়।

১৯৮৭ সালে পৃথিবীর জনসংখ্যা ছিল ৫০০ কোটি। অথচ মাত্র ৩৩ বছরের মাথায় আজকের পৃথিবীতে ডিমখেকো মানুষের সংখ্যা ৭৮০ কোটি। প্রতিদিন যে হারে মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে জন্মের হার বেশি বলেই পৃথিবীতে প্রতিদিন ২ লাখ ২০ হাজার নতুন মুখ যোগ হচ্ছে। এমন চলতে থাকলে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীতে এমন দ্বিপদী মানুষের সংখ্যা এক হাজার কোটির ঘরে পৌঁছে যাবে। তখন বাড়তি মানুষের জন্য খাদ্য এবং সুপেয় পানির সংকট আরও বেশি প্রকট হবে। ডিমের চাহিদা তেমনি অনেক বেড়ে যাবে।

gGlVYvH.jpg


জিরো এগের ডিমের বার্গার, ছবি: জিরো এগ

এদিকে হাজার হাজার কোটির সুবিশাল মুরগির বহর পোষার জন্য বিপুল পরিমাণ খাদ্য, পানি এবং জমির প্রয়োজন। আর একটি মুরগি যে পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে, তার মাত্র ৩ শতাংশ শুধু ডিমের আমিষ তৈরিতে কাজে আসে। বাকিটুকু ডিমের অন্যান্য উপাদান এবং মুরগি নিজের যাবতীয় শারীরবৃত্তীয়, বিপাকীয় কাজে খরচ করে। আর নির্দিষ্ট একটা সময় (৬০/৬৫ সপ্তাহ) ডিম পাড়ার পর সেসব মুরগি মানুষের খাবার উপযোগী থাকে না এবং এই বিপুল পরিমাণ মুরগি বর্জ্যে পরিণত হয়। পরিবেশের জন্য এটি খুবই ক্ষতিকর। আর সে কারণেই খাদ্যপ্রযুক্তিবিদেরা ডিমের বিকল্প খুঁজছেন।
বিশেষ করে খাবার মেনুতে ডিম আগে, নাকি মুরগি আগে—এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে না গিয়ে সবাই এক বাক্যে ডিমের পক্ষেই যুক্তি দেখাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, মুরগি না হলেও চলবে, তবে ডিম চাই। কারণ কেক, রুটি, বিস্কুট, স্প্যাগেটি ইত্যাদি হাজার রকমের রকমারি খাবারের কোনটিতে ডিম নেই? তাই মুরগি না থাকলেও অসুবিধা নেই, কিন্তু ডিমবিহীন পৃথিবী কল্পনাই করা যায় না।

ডিমের বাড়তি চাহিদা ও জনপ্রিয়তার কথা ভেবেই খাদ্যপ্রযুক্তিবিদেরা ইতিমধ্যে ডিমের বিকল্প উদ্ভাবনে মনোযোগী হয়েছেন। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের ডিম নিয়ে বাজারে হাজির হয়েছে। তাদের ডিম ১. শতভাগ উদ্ভিজ্জ, ২. স্বাদে–গন্ধে আপসহীন আর ৩.খারাপ কোলেস্টেরল এবং অ্যালার্জেনমুক্ত।

u2FNlTR.jpg


জাস্ট এগ ডিমের উদ্ভিজ্জ বিকল্প, ছবি: জাস্ট এগ

পুরোপুরি উদ্ভিজ্জ ডিম প্রস্তুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্ট এগ বেছে নিয়েছে মুগ ডাল এবং জিরো এগ ব্যবহার করছে সয়া, আলু, ছোলা এবং হলুদ মটর প্রোটিন। এদিকে ভারতের ইভো ফুডস মসুর ডালে প্রস্তুত ডিমে ঝুড়ি সাজাচ্ছে। পুরো এশিয়ায় এই প্রথম। যুক্তরাজ্যের ওগের পছন্দ চানা ডাল। ফ্রান্সের ইউমগো আলুর সঙ্গে বাবলা নির্যাস মিশিয়ে স্বাদে, গন্ধে, গুণে ডিমের বিকল্প বাজারজাত করছে। ফ্রান্সের একটি স্টার্টআপ মেরভ্যাইওফ তাদের ডিম অ্যালার্জেনমুক্ত পুরোপুরি উদ্ভিজ্জ বলে দাবি করছে। ভোক্তা ও ক্রেতার সুবিধার কথা চিন্তা করে, আস্ত ডিম, সুদৃশ্য মোড়ক বা বোতলে ডিমের গুঁড়া কিংবা তরল—সব রকমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আস্ত ডিমের খোসা পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি।

এদিকে জৈবপ্রযুক্তিবিদেরা ইতিমধ্যে যেমন আণুবীক্ষণিক অণুজীব এককোষী ইস্ট থেকে চকলেট, সুগন্ধি, দুধ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন, তেমনি জিনতত্ত্ব প্রকৌশল প্রয়োগ করে ডিমের সাদা অংশ উৎপাদনে অনেকখানি এগিয়ে আছেন।

zT4Kgsx.jpg


ফ্রান্সের ইউমগো বিকল্প ডিম প্রস্তুত এবং বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান, ছবি: ইউমগো ফেসবুক

মুরগি ছাড়া এসব ডিম সময়সাশ্রয়ী ও সস্তা। তা ছাড়া বিপুলসংখ্যক মুরগির জন্য পানি, খাদ্য, জমি জোগান, মাত্রাতিরিক্ত বর্জ্য উৎপাদন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ অন্যান্য রাসায়নিক ব্যবহার পরিবেশদূষণ এবং স্বাস্থ্য–বিপত্তির কারণ। সে কারণেই প্রায় ১০ হাজার বছর পর এই প্রথমবারের মতো অচিরেই মানুষের হাত থেকে মুরগিরা মুক্তি পেতে যাচ্ছে এবং সেদিন আর বেশি দূরে নয় যে তারা মনের আনন্দে বনে-জঙ্গলে ফিরে যাবে। আর স্বাদে, গন্ধে, পুষ্টিতে অতুলনীয় ডিম চমৎকার বিকল্প আমিষ এবং নিরামিষভোজী উভয়ের জন্য হবে এক উপাদেয় খাদ্য। বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে মুরগি বিদায় নেবে, ডিম থাকবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top