What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

মনের রোগের চিকিৎসা নিয়ে প্রয়োজনীয় কিছু কথা (1 Viewer)

শরীরের রোগের মতো মনেরও রোগ আছে আর রোগ হলে তার চিকিৎসারও প্রয়োজন হয়। মন দেখা যায় না বলে হয়তো মনের রোগের প্রতি অবহেলা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু মন হলো বাতাসের মতো, না দেখা গেলেও তার উপস্থিতি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। মন ছাড়া দেহ ঠিক জড় পদার্থের মতো। তাই মনের প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং মনের রোগকে গুরুত্ব দিয়ে যথোপযুক্ত চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করতে হবে।

kE396xh.jpg


যেকোনো রোগের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা অলসতা কাজ করে। আর মনের কোনো বিষয় হলে তো কথাই নেই; মনের আবার রোগ কী! কিন্তু যেকারও মনের মধ্যেই কিছু সাধারণ নেতিবাচক চিন্তা ও অনুভূতি হতে পারে; যেমন: মন খারাপ হওয়া, টেনশন করা, ভয় পাওয়া, অস্থির লাগা, রাগ ও জেদ করা, একাকিত্ব অনুভব করা, মরে যেতে ইচ্ছে হওয়া, কারও সঙ্গে কথা না বলা, একা থাকতে চাওয়া ইত্যাদি। বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের ধারণা, 'ওসব কিছু না, ঠিক হয়ে যাবে'—এসব বলে আর গুরুত্ব দেয় না মনের বিষয়টাকে।

TlG4wyD.jpg


মনের রোগ আমাদের কাছে এখনও উপেক্ষার

কথাটা ভুল কিছু না, আসলেই ঠিক হয়ে যাবে; এগুলো নিয়ে সঠিকভাবে সমাধানের জন্য কাজ করলে কিন্তু 'ওসব কিছু না'—এই কথাটা ঠিক না। অনেক ক্ষেত্রে মনের এই ভাবনা ও অনুভূতিগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে এবং প্রকট হতে থাকে, যা ব্যক্তির দৈনন্দিন কার্যাবলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। ব্যক্তির আশপাশের লোকজন হয়তো বিষয়গুলো সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারে না, কিন্তু একটু মনোযোগের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করলেই ব্যক্তির আচরণের পরিবর্তন দেখা যায় এবং জীবনযাত্রার স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন বোঝা যায়। কোনো না কোনো কারণে মানুষের মধ্যে এই লক্ষণগুলো দেখা দেয়, সেই কারণগুলো সঠিকভাবে নির্ণয় করে তা বিশ্লেষণ করলে জানা যাবে বিষয়টি কতটা গুরুতর এবং সে অনুযায়ী তাকে সহযোগিতা করলে হয়তো অল্পতেই ব্যক্তির সমস্যার সমাধান হয়ে যেতে পারে।

মনের সমস্যার কারণ হিসেবে মানুষের কিছু প্রচলিত বক্তব্য হলো: অভিশাপ লেগেছে, অযথা ভান করছে, বাতাস লেগেছে, তাবিজ করেছে, বদ নজর পড়েছে, আসর পড়েছে, মাথা গরম হয়েছে, জিন-ভূত ধরেছে, পাগলামিতে ধরেছে ইত্যাদি। আর এসব সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে তাদের মনগড়া মতামত হলো দুদিন পরেই ঠিক হয়ে যাবে, বড় হলেই ঠিক হয়ে যাবে, শাসন করলেই ঠিক হয়ে যাবে, কিছুদিন দেখা যাক, বিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে, চিকিৎসার নামে শুধু শুধু পয়সা নষ্ট, পাগলের চিকিৎসা নেই ইত্যাদি।

অবহেলা ও অপেক্ষা না করে সমস্যা বা রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি।

এসব কথা বলে মনের সমস্যাকে অবহেলা করা হয় এবং রোগ নির্ণয় করা থেকে বিরত থাকা হয়। সমস্যা যখন প্রকট আকার ধারণ করে, তখন ঝাড়ফুঁক, তাবিজ, পানিপড়া, মন্ত্র ইত্যাদি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রোগমুক্তি বা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে থাকেন অনেকে। আবার কেউ কেউ সর্বশেষ প্রচেষ্টা হিসেবে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবার শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। তত দিনে হয়তো রোগের মাত্রা এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে চিকিৎসা করাও জটিল হয়ে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। সুতরাং, অবহেলা ও অপেক্ষা না করে সমস্যা বা রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি। এতে দ্রুত রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদান করা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়।

কখন মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর সহযোগিতা নেওয়া প্রয়োজন

CAjgJ2O.jpg


ব্যক্তিজীবনের সংকটে মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেয়া প্রয়োজন

বিভিন্ন কারণে ব্যক্তিগত (মানসিক ও শারীরিক), পারিবারিক, সামাজিক ও পেশাগত পর্যায়ে নানা রকম মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা, মন খারাপ ইত্যাদি হয়ে থাকে। ব্যক্তিজীবনে নানা রকম সমস্যা আসা এবং মানসিক চাপ তৈরি হওয়া স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু যদি মনের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে এসব কারণে মানসিক কষ্ট, যন্ত্রণা, উৎকণ্ঠা বা উদ্বেগ চলতে থাকে, যা নানাভাবে চেষ্টা করেও সমাধান করা যায় না, যখন তা স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করে, অর্থাৎ দৈনন্দিন, সামাজিক ও পেশাগত কার্যাবলিকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাধাগ্রস্ত করে এবং যখন তা ব্যক্তির নিজের ও অন্য মানুষের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়, সে ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীর সহযোগিতা নেওয়া অতি জরুরি।

মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী কারা

আমাদের দেশে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের মধ্যে রয়েছেন সাইকিয়াট্রিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ও কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট; যাঁরা মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন গুরুতর থেকে কম গুরুতর রোগ বা সমস্যার ক্ষেত্রে। আর প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য আছেন কাউন্সেলর ও অন্যান্য মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কর্মী। তাঁদের প্রত্যেকের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ধরনের ভিন্নতার কারণে চিকিৎসা ও সেবার ধরন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন:

J7yCkkI.jpg


আমাদের দেশে বিভিন ধরনের মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী আছেন

সাইকিয়াট্রিস্ট: সাইকিয়াট্রিস্ট হলেন মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ (ডাক্তার), যাঁরা মানসিক রোগের চিকিৎসার ওপর উচ্চতর শিক্ষা ও ডিগ্রি অর্জন করেন, দীর্ঘকাল এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে মানসিক রোগের চিকিৎসা প্রদান করে থাকেন।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট: ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট সাইকোলজি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিষয়ে মানসিক রোগের মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসার ওপর বিশেষ শিক্ষা ও ডিগ্রি অর্জন করেন এবং দীর্ঘকালীন উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে থাকেন। ওষুধ ছাড়া সাইকোথেরাপির মাধ্যমে মানসিক রোগ ও অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রে চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট মানসিক রোগের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে কাজ করার বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেন অন্যান্য সেক্টরে কাজ করার পাশাপাশি।

কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট: কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট সাইকোলজি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিষয়ে বিশেষ শিক্ষা ও ডিগ্রি অর্জনসহ উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়ে থাকেন, যাঁরা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর মানসিক রোগ ও অন্যান্য সমস্যার ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকেন।

সাইকোলজিস্ট: সাইকোলজি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করে সাইকোলজিস্টরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা–বিষয়ক স্বল্পকালীন কিছু প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কাজ করেন।

কাউন্সেলর: কাউন্সেলরদের পেশা বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা যেকোনো বিষয়ের ওপর হতে পারে। তাঁরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবা–বিষয়ক কিছু বিষয়ে প্রাথমিক ও স্বল্পকালীন প্রশিক্ষণ নিয়ে অথবা ব্যক্তিগত ও পেশাগত অভিজ্ঞতার আলোকে প্রাথমিকভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাজে সহযোগিতা করেন।

অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি বুঝে উঠতে পারেন না বা দ্বিধান্বিত থাকেন যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে কোথায় যাবেন বা কার কাছে যাবেন। সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে নির্ভরযোগ্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী বা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। ব্যক্তিকে প্রয়োজনানুসারে সঠিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাঁর চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে হবে। সব ধরনের মানসিক রোগ বা সমস্যার জন্য একই রকম চিকিৎসাব্যবস্থা না। সমস্যা বা রোগের ধরন ও তীব্রতার ওপর নির্ভর করে চিকিৎসার প্রক্রিয়া ভিন্ন হয়ে থাকে।

অনেক ক্ষেত্রেই ব্যক্তি বুঝে উঠতে পারেন না বা দ্বিধান্বিত থাকেন যে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা নিতে কোথায় যাবেন বা কার কাছে যাবেন। সে ক্ষেত্রে সঠিকভাবে খোঁজখবর নিয়ে নির্ভরযোগ্য মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবী বা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে।

গুরুতর ও সাইকোটিক (যেমন: সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার মুড ডিসঅর্ডার ইত্যাদি) রোগের ক্ষেত্রে ওষুধ অনিবার্য। এ ক্ষেত্রে প্রাথমিক অবস্থায় একমাত্র অবলম্বন ওষুধ। পরবর্তী সময়ে ব্যক্তি যখন স্থির অবস্থায় আসে এবং নিজের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারে, তখন ওষুধের পাশাপাশি সাইকোথেরাপি প্রয়োজন হয়।

নিউরোটিক রোগ (যেমন: অ্যাংজাইটি, ডিপ্রেশন, ওসিডি, কনভার্সন ডিসঅর্ডার, প্যানিক ডিসঅর্ডার ইত্যাদি) ও অন্যান্য মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে ওষুধের পাশাপাশি সাইকোথেরাপি প্রয়োজন হয়। অপেক্ষাকৃত কম গুরুতর রোগ (যেমন-ফোবিয়া, সোশ্যাল অ্যাংজাইটি, সেপারেশন অ্যাংজাইটি ইত্যাদি), আচরণগত বিভিন্ন সমস্যা ও সম্পর্কজনিত জটিলতার ক্ষেত্রে সাইকোথেরাপি ও কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা দিয়ে ব্যক্তিকে সুস্থ–স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে সহযোগিতা করা হয়। এসব ক্ষেত্রে কখনো কখনো স্বল্পকালীন ওষুধের প্রয়োজন হয়।

তবে মনে রাখতে হবে, সাইকিয়াট্রিস্টের লিখিত অনুমতি ছাড়া কখনোই ওষুধ গ্রহণ করা যাবে না এবং ওষুধ সেবন বন্ধ করাও যাবে না। ওষুধসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পরামর্শ নিতে হবে। যার জন্য যে ধরনের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রয়োজন, সে অনুযায়ী তাকে রেফার করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের বিশেষ দায়িত্ব। কারণ, মনের রোগের চিকিৎসায় মাল্টিডিসিপ্লিনারি পদ্ধতিতে দলগতভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা করতে হয়, যেখানে সাইকিয়াট্রিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, কাউন্সেলিং সাইকোলজিস্ট একত্রে কাজ করেন।

5LQPasa.jpg


কোনো কাছের মানুষের সঙ্গে কথা বলেও মন হালকা করা যেতে পারে

যেকোনো ব্যক্তি তাঁর মনের কষ্ট বা সমস্যার কথা খুলে বলে সহযোগিতা পেতে পারেন ওপরে উল্লেখিত পেশাজীবীদের যেকারও কাছে। এমনকি বিশ্বাসযোগ্য বা ভরসা করা যায়, এমন কোনো কাছের মানুষের সঙ্গে কথা বলেও মন হালকা করতে পারেন, সাহায্য পেতে পারেন এবং মনের রোগের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে উপকৃত হতে পারেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে কোনো সমস্যায় ভুগছেন বা তীব্র ধরনের কোনো মানসিক রোগে ভুগছেন—এমন ক্ষেত্রে শুধু সমস্যা শেয়ার করলেই হবে না, মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের পরামর্শ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরাসরি সাইকিয়াট্রিস্ট অথবা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি, যাঁদের কাছে রোগ বা সমস্যার ধরন অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার গাইড লাইন পেতে পারেন।

লেখক: কানিজ ফাতেমা | ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট, নাসিরুল্লাহ সাইকোথেরাপি ইউনিট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top