করোনা দুঃস্বপ্নের এক বছর হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অথবা অনলাইনে সীমিত আকারে শিক্ষা চালু থাকায় আমাদের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় একটা বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে এই এক বছরে। সুখের কথা, ভ্যাকসিনের কল্যাণে এই দুঃস্বপ্ন হয়তো ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। সরকারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা ভাবছে। কিন্তু এই দীর্ঘ বন্ধে যে একটা ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সেটি কাটিয়ে ওঠার জন্য সুচিন্তিত পদক্ষেপ খুব জরুরি।
শিক্ষার্থীদের সমস্যা
শিক্ষার্থীরা গত বছর যেভাবে পড়াশোনা করেছে, সেটা একেবারেই তাদের অভিজ্ঞতার বাইরে ছিল। সবাই একসঙ্গে ক্লাস করার মাধ্যমে যেভাবে শেখা যায়, একাকী অনলাইনে কম্পিউটার অথবা মুঠোফোনের পর্দার সামনে বসে ঠিক সেভাবে শেখা যায় না। আর আমাদের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী শিক্ষকের তদারকি ছাড়া নিজে নিজে কীভাবে পড়াশোনা করতে হয়, সে বিষয়েও একেবারে অভ্যস্ত ছিল না। এর ফলে গত এক বছরে অনেকেই পড়াশোনা থেকে দূরে সরে গেছে অথবা পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে। আর যারা পড়াশোনা চালু রাখার চেষ্টা করছিল, তারাও যেভাবে শিখতে চেয়েছিল, সেভাবে পারেনি।
এর ফল হলো—
১. অনেকেরই পড়ার অভ্যাস চলে গেছে।
২. অনেকেই পুরোনো পড়া ভুলে গেছে।
৩. গত বছর যা পড়ার কথা ছিল, সেই একটি শিক্ষাবর্ষের পুরোটাই গায়েব হয়ে গেছে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে।
উত্তরণের উপায় কী?
১. পুরোনো ক্লাসের পড়া ঝালাই করে নেওয়া: অনেকেই যেহেতু আগের পড়া ভুলে গেছে, তাই ক্লাসে হঠাৎ করে নতুন পড়া শুরু করলে এসব শিক্ষার্থী সমস্যায় পড়বে। সে জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর করোনাকাল শুরুর আগের পড়াগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে কয়েক সপ্তাহ ধরে পড়াতে হবে। যেমন, যারা এখন চতুর্থ শ্রেণিতে উঠেছে, তাদের জন্য তৃতীয় শ্রেণির পড়াগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে এক দুই সপ্তাহ ধরে পড়াতে হবে।
২. গত বছর যা বাদ গেছে তা পড়ানো: গত এক বছরে অনেক জায়গায় ক্লাস হয়নি বা সীমিত আকারে অনলাইনে কিছু ক্লাস হয়েছে। ধরে নিতে হবে, এ সময় শিক্ষার্থীরা ভালোমতো কিছুই শেখেনি। আবার শিক্ষার্থীদের আগের ক্লাসে রেখে দেওয়ার মানে তাদের জীবনের একটা শিক্ষাবর্ষ হারিয়ে যাওয়া, যা মোটেও কাম্য নয়। সে জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত গত বছরের সিলেবাসকে সংক্ষিপ্ত আকারে আগামী দুই মাসে পড়ানো। একেবারে আবশ্যকীয় অংশগুলো চিহ্নিত করে সেগুলোকে দ্রুত দুই মাসে পড়ালে গত এক বছরের ক্ষতিটুকু পূরণ করা সম্ভব বলে আমার বিশ্বাস।
৩. নতুন ক্লাসের পড়া: ১ ও ২ নম্বর পরামর্শ অনুসরণ করতে গেলে এই বছরের প্রথম ৪ মাস চলে যাবে। তাই এই বছরের সিলেবাসকেও একটু সংক্ষিপ্ত করে অনাবশ্যক বা কম গুরুত্বপূর্ণ কিছু কমানো যেতে পারে।
এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বড় একটা ভূমিকা থাকবে। শিক্ষার্থীরা কেবল পড়াশোনায়ই পিছিয়ে যায়নি, সেই সঙ্গে তাদের এক বছরের বিচ্ছিন্ন গৃহবন্দী জীবনে অনেক মানসিক ও সামাজিক মিথস্ক্রিয়ার (ইন্টারঅ্যাকশন) সমস্যা দেখা দিয়েছে। কাজেই শিক্ষকদের অতিরিক্ত যত্নবান ও ধৈর্যশীল হতে হবে, যেন শিক্ষার্থীরা আবার স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফিরতে পারে। আশা করছি, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা দ্রুতই করোনাপূর্ব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারবে।
* লেখক: রাগিব হাসান | সহযোগী অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান, ইউনিভার্সিটি অব আলাবামা অ্যাট বার্মিংহাম, যুক্তরাষ্ট্র।