গ্লুকোমার অন্ধত্বকে প্রতিরোধ করতে বিশ্বব্যাপী মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে 'বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ' পালিত হয়। এ বছর সপ্তাহটি পালিত হচ্ছে ৭ থেকে ১৩ মার্চ।
গ্লুকোমা বিশ্বব্যাপী স্থায়ী অন্ধত্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কারণ। সারা বিশ্বে ৪৫ লাখ মানুষ গ্লুকোমার স্থায়ী অন্ধত্বের শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮ কোটি, যাঁদের অধিকাংশই এশিয়ার স্বল্পোন্নত দেশের বাসিন্দা। ধারণা করা হয়, ২০৪০ সাল নাগাদ গ্লুকোমায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। তবে সবচেয়ে ভয়ের কথা, ৯০ শতাংশ আক্রান্ত মানুষ রোগটি সম্পর্কে জানেন না।
গ্লুকোমা কী
গ্লুকোমা চোখের প্রধান স্নায়ু রজ্জুর (অপটিক নার্ভ) একটি রোগ। এতে স্নায়ু রজ্জু ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে থাকে, দৃষ্টির পরিসীমা ক্রমাগত সংকুচিত হতে থাকে, আক্রান্ত ব্যক্তি সঠিকভাবে এবং সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে স্থায়ী অন্ধত্ব বরণ করেন।
গ্লুকোমার ঝুঁকিতে যাঁরা
গ্লুকোমা বয়সজনিত রোগ। তাই ৪০ বছর বয়সের পরই মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এ রোগের পেছনে অন্য যেসব ঝুঁকি আছে, তা হলো বংশগত ইতিহাস (মা, বাবা, ভাই, বোন এ রোগে আক্রান্ত হলে তাঁদের ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আশঙ্কা), ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাইনাস বা প্লাস পাওয়ার, মাইগ্রেন, চোখের আঘাত, চোখের অন্যান্য রোগ এবং চিকিৎসকের উপদেশ ব্যতীত অনিয়ন্ত্রিতভাবে স্টেরয়েড–জাতীয় চোখের ড্রপ ব্যবহার।
রোগের সঠিক কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জানা যায়নি, তবে চোখের অন্তর্গত উচ্চচাপ প্রধানতম ঝুঁকি।
গ্লুকোমা নির্ণয়
গ্লুকোমাকে বলা হয় চোখের নীরব ঘাতক। বেশির ভাগ গ্লুকোমাই উপসর্গবিহীন। চোখের চাপ, স্নায়ু রজ্জুর (অপটিক নার্ভ) অবস্থা এবং দৃষ্টির পরিসীমা পরীক্ষা করে সহজেই গ্লুকোমা নির্ণয় করা যায়। কিন্তু সে জন্য আপনাকে নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষা করতে হবে।
কখনো কখনো জন্মগতভাবে বা বাড়ন্ত বয়সেও এ রোগ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে জন্মের পর শিশুর চোখ থেকে পানি পড়া, আলোর প্রতি সংবেদনশীলতা, অস্বচ্ছ মণি এবং অক্ষিগোলক বড় হতে থাকা—এসব লক্ষণ দেখা দিলে অতিসত্বর শিশুর চোখ গ্লুকোমায় আক্রান্ত কি না, পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে।
নিয়মিত চক্ষু পরীক্ষাই গ্লুকোমা প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকরী উপায়।
গ্লুকোমার চিকিৎসা
তিন ধরনের উপায়ে সাধারণত গ্লুকোমা চিকিৎসা করা হয়—চোখের বিভিন্ন ড্রপ, লেজার ও গ্লুকোমা সার্জারি। প্রাথমিক পর্যায়ে গ্লুকোমা রোগ নির্ণয় করা গেলে খুব সহজেই গ্লুকোমাজনিত অন্ধত্ব রোধ করা সম্ভব। তাই গ্লুকোমা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। গ্লুকোমা রোগের সব ধরনের প্রচলিত চিকিৎসা দেশেই সম্ভব। চিকিৎসাও সুলভ।
* ডা. সালমা পারভীন, মহাসচিব, বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটি