What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ঘরের কাজেও ব্যায়াম হয় (1 Viewer)

oKWTEk9.jpg


বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য ব্যায়াম যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তা আর বুঝতে কারও বাকি নেই এই দুনিয়ায়। শরীরে শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য পর্যাপ্ত ব্যায়ামের কোনো বিকল্প নেই আমাদের জীবনে। জীবনযাপনের বদলে যাওয়া ধরন আর ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাসের জন্য এখন সারা পৃথিবীতেই হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগের প্রকোপ ভয়ংকর রকমের বেড়ে গেছে। আবার গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বিশ্বব্যাপী মারাত্মক রকমের বেড়ে চলা গুরুতর বিষণ্নতা, মানসিক অবসাদ, অতি দুশ্চিন্তা ইত্যাদি মোকাবিলা করতেও আমাদের ব্যায়াম খুবই সাহায্য করে থাকে। তাই যেভাবেই হোক, প্রতিদিনের জীবনযাপনে যতটুকু পারা যায় কায়িক পরিশ্রম আর ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করার সময় এসে গেছে। অনেক সময়ে একেবারে ঘণ্টা ধরে জিম বা ব্যায়ামাগারে যাওয়া এবং খুব ব্যস্ততার মধ্যে আলাদা করে হাঁটার সময় বের কঠিন হয়ে পড়ে। কিন্তু একটু খেয়াল করলেই সারা দিনের স্বাভাবিক কাজকর্মের মধ্যেই অনায়াসে ব্যায়াম করে নেওয়া যায়।

ঘরের কাজ নিজে করা

LONQIcy.jpg


পুরো বাড়ি মোছা বা কাপড় কাচতে গেলেও ব্যায়াম করার কাজ হয়ে যায়

গৃহকর্ম শুধু গৃহিণীর কাজ নয়। রান্না, ঘর ঝাড়া–মোছা, গোছগাছ করা, কাপড় ধোয়া—এ কাজগুলোতে স্ট্রেচিং, স্কোয়াটিং, ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজের মতো উপকার পাওয়া যায়। বাড়ির সবাই মিলে এই কাজগুলোতে অংশগ্রহণ করলে সবারই কম বেশি ব্যায়াম হবে। জিমে গিয়ে যতটুকু ওয়ার্কআউট করা হয়, পুরো বাড়ির মেঝে মুছতে গেলে বা কাপড় কাচতে গেলে তার চেয়ে কম পরিশ্রম হয় না। আর এই নানাবিধ কাজে শরীরের বেশির ভাগ হাড়ের জোড় ও পেশির নড়াচড়া নিশ্চিত হবে। বাজারসদাই করতে গেলেও ওয়েটবেজড ব্যায়ামগুলো অনেকাংশেই করা হয়ে যায়। তবে ভারী বোঝা তুলতে কোমর না ভেঙে সঠিক নিয়মে তা বহন করতে হবে। এভাবে গৃহকর্মীর ওপরে সম্পূর্ণ নির্ভর না করে ঘরের কাজগুলো নিজেরা করার অভ্যাস করলে প্রাত্যহিক কাজের মধ্যেই ব্যায়াম করা হয়ে যায়।

যন্ত্রের ওপরে নির্ভরতা কমানো

n5dFRyO.jpg


যন্ত্রের ওপরে নির্ভরতা কমান

ব্লেন্ডারের বদলে সনাতন পদ্ধতিতে শিলপাটায় মসলা বাটা, ওয়াশিং মেশিনের বদলে হাতেই কিছু কাপড় কেচে নেওয়ার মতো অভ্যাস আমাদের দিন যাপনের মধ্যেই ব্যায়াম করিয়ে নিতে পারে। বিশ্বব্যাপী এখন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, ডিশ ওয়াসার, ঘাস কাটার লন মোয়ারের ব্যবহার পারলে কমিয়ে আনার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ কমিয়ে, পরিবেশ বাঁচাতে কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর সঙ্গে সঙ্গে এই যন্ত্রনির্ভরতা কমাতে পারলে ব্যায়ামও হয়ে যাবে বিনা আয়াসে।

লিফটকে না বলুন

1dOw3m6.jpg


অল্প কয়েক তলা উঠতে–নামতে লিফট একেবারেই ব্যবহার করা ছেড়ে দিন

অল্প কয়েক তলা উঠতে–নামতে লিফট একেবারেই ব্যবহার করা উচিত নয়। সিঁড়িভাঙা একজন সুস্থ–স্বাভাবিক মানুষের জন্য খুবই ভালো ব্যায়াম। বেশি উঁচুতে ওঠা–নামার সময়ও একটু আগে লিফট ছেড়ে দিয়ে বাকি পথটা সিঁড়ি দিয়েই চলে যাওয়া যায়। ফিটনেস এক্সপার্টরা বলেন, সিঁড়ি দিয়ে ওঠার মতো ব্যায়াম, যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে কাজ করতে হয়, তা আমাদের দেহকে খাবার থেকে ক্যালরি নিয়ে চর্বি তৈরি করে জমিয়ে না রেখে মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর কাজে ব্যবহার করতে সাহায্য করে। তাই অফিসে বা ফ্ল্যাটবাড়ির গেট দিয়ে ঢুকেই মনের অজান্তে লিফটের বোতামে চাপ দেওয়ার অভ্যাস আমাদের এখনই ত্যাগ করতে হবে।

অফিসে কাজের ফাঁকে ব্যায়াম

আমরা যারা দিনের একটি লম্বা সময় ধরে অফিসে একই ডেস্কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই ভঙ্গিমায় কাজ করি, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি মারাত্মক রকমের বেশি। এ কারণে বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের পাশাপাশি হাড়ের ক্ষয়, জোড়ের সমস্যা, ব্যাকপেইন, কোমরে ব্যথা, স্পন্ডিলাইসিসসহ বহু সমস্যা দেখা দেয়। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী একটি নির্দিষ্ট সময় কম্পিউটারের সামনে বা ডেস্কে কাজ করার পরে উঠে দাঁড়িয়ে স্ট্রেচিং, ঘাড়ের ব্যায়াম ইত্যাদি করার নিয়ম। সারা বিশ্বেই এখন এই ডেস্ক–সংলগ্ন এক্সারসাইজ বা 'ডেস্কারসাইজ'–এর ধারণা সাড়া জাগিয়েছে খুবই।

dAOsV9m.jpg


অনেক বহুজাতিক সংস্থার অফিসে 'সিট টু স্ট্যান্ড' ডেস্কের প্রচলন করা হচ্ছে

অনেক বড় বহুজাতিক সংস্থার অফিসে 'সিট টু স্ট্যান্ড' ডেস্কের প্রচলন করা হচ্ছে, যেখানে ই–মেইল চেক করা, কম্পিউটারে কাজকর্ম করা, স্প্রেডশিট মেলানোর মতো কাজগুলো দাঁড়িয়েই সেরে নেওয়া যায় ইচ্ছে করলে। এই ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, গবেষণায় দেখা গেছে, বসার তুলনায় দাঁড়িয়ে কাজ করলে মিনিটে প্রায় ১ দশিমক ৩৬ ক্যালরি বেশি ক্ষয় করা যায়। পিঠ বা কোমরের ওপরেও চাপ কম পড়ে এতে। অবাক ব্যাপার হলেও দেখা যাচ্ছে, ব্যায়ামের সুফলের কথা চিন্তা করে আজকাল অনেক দেশেই অফিসে বসে বসে ঝিমিয়ে মিটিং না করে 'ওয়াক অ্যান্ড টক' পদ্ধতিতে হাঁটতে হাঁটতে বা হালকা জগিং করতে করতে মিটিংয়ের আয়োজন করা হয়।

অবসর সময়ে ব্যায়াম করা

J7ZisIw.jpg


বাজারসদাই করতে গেলেও ওয়েটবেজড ব্যায়ামগুলো অনেকাংশেই করা হয়ে যায়

দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে, যেমন ভোরবেলা বা রাতের বেলা ঘুমানোর আগের সময়টি ব্যায়ামের জন্য বেছে নেওয়া যায়। কিন্তু অবসর সময়েও যতটা পারা যায় শরীরকে চলাফেরা ও নড়াচড়ার মধ্যে রাখা উচিত। বাগান করা, অ্যারোবিকস, ইয়োগা বা নাচ করা যদি কারও শখের কাজ হয়, তবে তো কথাই নেই। কিন্তু গান শোনার সময়েও সন্ধ্যাকালীন হাঁটাহাঁটিটা সেরে ফেলা সম্ভব। টিভি দেখার সময় নরম সোফায় ডুবে না গিয়ে পারলে ট্রেডমিলে হাঁটা বা ওয়েটবেজড এক্সারসাইজ করা যায়। এমনকি সোফা বা বিছানায় টিভি না দেখে মেঝেতে বসার ব্যবস্থা করলে বারবার বসার ভঙ্গিমা বদল হয়। এতে নিজের অজান্তেই কিছু স্ট্রেচিং হয়ে যায়। প্রিয় বন্ধু বা মায়ের সঙ্গে লম্বা ফোনালাপটি হাঁটতে হাঁটতে সেরে নিলেও অনায়াসে কিছু চলাফেরা হয়ে যায়।

সমবেত প্রচেষ্টায় ব্যায়ামের অভ্যাস

1JbBEz6.jpg


পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাসাতেই কাজ করা শুরু করুন সম্ভব হলে। তাতেও ব্যায়ামের কাজ কিছুটা হয়ে যাবে

একা একা করলে আসলে কোনো কিছুই সুদূরপ্রসারী ভালো প্রভাব ফেলে না। পারিবারিকভাবে সবাইকে নিয়ে যদি যথাসম্ভব হাঁটাচলা ও সময়–সুযোগমতো ব্যায়াম করে নেওয়ার ভালো অভ্যাস গড়ে তোলা যায়, তবেই সামাজিক একটি রূপ পাবে এই পুরো ব্যাপারটি। হাঁটতে গেলে একজন প্রতিবেশী বা বন্ধুস্থানীয় কাউকে পেলে সময়টা খুব আনন্দেই কেটে যায়। অনলাইনেও অনেক গ্রুপ গড়ে উঠছে সমবেতভাবে ভিডিও কনফারেন্সে জুম্বা, অ্যারোবিকস, ইয়োগা, মার্শাল আর্ট অনুশীলন করার জন্য।

পরিবারের সবাই মিলে প্রাতর্ভ্রমণ বা সাইক্লিং করার মজাই আলাদা। এ ছাড়া সুযোগ থাকলে পাড়ার সব শিশুর একত্রে ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলার ব্যবস্থা করে দিলে বা পাড়ার পরিচ্ছন্নতা রক্ষার কাজে উৎসাহিত করলে এরা দিনের বিরাট একটি সময় মোবাইল ফোন নিয়ে পড়ে থাকার হাত থেকে রক্ষা পাবে।

হংকং, চীন, জাপানের মতো দেশে বাসের জন্য লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পাশের রেলিংয়ের সাহায্য নিয়ে একটু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ করে নিলে, অফিসে কাজের বিরতিতে বা লাঞ্চ টাইমে নিজের ডেস্কের পাশেই একটু সিট আপ বা পুশ আপ করে নিলে কেউ অদ্ভুতভাবে তাকায় না। তাই তো সঠিক খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে তাদের এই দৈনন্দিন জীবনের ফাঁকফোকরে ব্যায়াম করার প্রবণতা সেসব দেশের বাসিন্দাদের দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের চাবিকাঠি বলে অনেক গবেষক মনে করেন।

প্রাত্যহিক জীবনযাপনের মধ্যেই ব্যায়াম করার মানসিকতা আসলে একটি অত্যন্ত ভালো সংস্কৃতি। পথ চলতে কারও হাতের বোঝাটা ভাগ করে নিয়ে তাকে কিছু দূর এগিয়ে দেওয়া, যানবাহন না ব্যবহার করে হাঁটা বা সাইকেল চালানোর মতো সু-অভ্যাস গড়ে তুললে তা সমাজ বা পরিবেশকে যেমন সমৃদ্ধ করবে, আমাদের দেহ–মন দু–ই ভালো থাকবে পর্যাপ্ত ব্যায়ামের সুফল হিসেবে।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top