What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ডিকনস্ট্রাকশন : একালের বেহুলা (1 Viewer)

AkUOoXC.jpg


পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি – ফিরে এসো বেহুলা
পরিচালক – তানিম নূর
অভিনয় – জয়া আহসান, ইন্তেখাব দিনার, হুমায়ুন ফরীদি, শহীদুজ্জামান সেলিম, তৌকীর আহমেদ, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, শতাব্দী ওয়াদুদ প্রমুখ
উল্লেখযোগ্য গান – ভালোবাসা তোমার ঘরে

'বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে
কৃষ্ণা দ্বাদশীর জ্যোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায়
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিলো হায়
শ্যামার নরম গান শুনেছিলো–একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিলো ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিলো পায়'
– বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, জীবনানন্দ দাশ

মিথে বেহুলা ছিল স্বামীভক্ত। লখিন্দরকে নিয়ে তার সুখের সংসার করার কথা ছিল। লখিন্দরের পিতা চাঁদ সওদাগর পুত্র ও পুত্রবধূর জন্য বানিয়ে দিয়েছিলো লোহার বাসর ঘর। কারণ ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিলো বাসর রাতে লখিন্দরকে সাপে কাটবে। লোহার বাসর ঘর করা হলেও সাপ ঠিকই ছিদ্র পেয়ে ঢুকেছিলো এবং দংশন করেছিলো লখিন্দরকে। পুনর্জন্মের আশায় বেহুলা ভেলায় করে লখিন্দরকে নিয়ে চলে স্বর্গের ইন্দ্রের সভার উদ্দেশে। ইন্দ্রের সভায় নেচে গেয়ে তাকে খুশি করে যদি বর পাওয়া যায় স্বামীর প্রাণভিক্ষা। স্বামীভক্তির এ মিথ একজন নারীর প্রেমের চিরন্তন চেতনাকে তুলে ধরে। রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতায় তাই বেহুলা এসেছে আবহমান বাংলার রূপসৌন্দর্যের অংশ হয়ে। যখন সে ইন্দ্রের সভায় নেচে যাচ্ছিলো বাংলার নদী, মাঠ, ভাঁটফুল যেন 'ঘুঙুর' হয়ে বেহুলার পায়ে কেঁদেছিলো এতটা দরদ দিয়ে বেহুলা স্বামী প্রাণ ভিক্ষার জন্য ব্যাকুল হয়েছিলো।

LRQVwtF.jpg


সেই ব্যাকুল প্রেমের বেহুলাকে মিথ ছেড়ে যদি একালের বেহুলা বানিয়ে বাস্তবে নিয়ে আসা হয় তবে কি দাঁড়াবে! সাহিত্যের মিথকে রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করালে আজকের কোনো এক নারী যে ভালোবাসার কাঙাল, স্বামীর প্রতি অন্ধ বিশ্বাসে তার জন্য সবকিছু করতে পারে সেখানে কি মিলবে তার ভাগ্যে? এই বিষয়কে ঘিরেই মিথ থেকে বাস্তবের বেহুলারূপী একজন স্বামীপ্রেমী নারীর গল্পে নির্মিত হয়েছে 'ফিরে এসো বেহুলা' ছবি। পরিচালনায় তানিম নূর। এটি ছিল দেশের চতুর্থ ডিজিটাল ছবি।

সাহিত্যের টার্মে যাকে বলে 'ডিকনস্ট্রাকশন' বা 'বিনির্মাণ' মিথ থেকে রিয়েলিটিতে নেমে এসে তানিম নূর আজকের সমাজবাস্তবতায় বেহুলাকে দেখালেন এই ছবিতে। এদিক থেকে ছবিটিকে বলা যায় চলচ্চিত্রের নতুন আন্দোলন যেখানে নিয়ম ভেঙে নিয়মকে গড়ার আহবান আছে।

গল্পে জয়া আহসান তার স্বামী ইন্তেখাব দিনারকে খুব ভালোবাসে। বিশ্বাস করে মন থেকে কিন্তু দিনারের বৈশিষ্ট্য কি? সে কি জয়ার প্রতি ডেডিকেটেড নাকি তার মুখোশ পরিহিত চেহারাকে জয়া চিনতে পারছে না!

6mMCb36.jpg


তাদের সংসার ভালোই যাচ্ছিলো কিন্তু একদিন হঠাৎ করে জয়া খবর পায় স্বামী দিনারকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। অস্থিরতায় পড়ে জয়া বিভিন্ন জনের কাছে যায় সাহায্যের জন্য। দিনারের অফিসে, পরিচিত জনদের কাছে, সাবেক প্রেমিকের কাছে কিন্তু তারা সবাই দিনারের সম্পর্কে যা বলছে জয়ার কোনোকিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না। তাহলে কি করবে সে! স্বামীকে খুঁজতে ঠিকানামতো চলতে থাকে সে। একটা জঙ্গল, রেললাইনের মধ্যে সে হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করে আর একটা ফোনকল আসে। কে ছিল ফোনকলে আর কিবা বলল! যা বলল জয়া সেটা শুনে স্তব্ধ এবং নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছিলো না। রেললাইনে তাকে ফলো করতে থাকা দুজন বলে-'আপনি কি এখনো কাউকে খুঁজছেন?' জয়ার উত্তরটাই ছিল তার বিদ্রোহ। কি ছিল উত্তর!

ছবির শুরুর অংশের সাথে শেষের অংশের সংযোগ আছে এবং মনোযোগী দর্শক হলে সেটা বুঝতে পারবে।

পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অনেক সূক্ষ্ম একটা টোপ হচ্ছে নারীকে কৌশলে ব্যবহার করা। এই ব্যবহারের মধ্যে প্রেম, সাজগোজ, ঘরোয়া করে রাখা ইত্যাদি ভূমিকা রাখে। সব পুরুষ এক তা নয় কিন্তু অধিকাংশেই এমন। পুরুষের সেই মানসিকতার বিপরীতে নারী যদি বেহুলার মতো প্রেমে শুধু বিভোরই থাকে তবে তার ঠকে যাবার সম্ভাবনা অনেক। 'ফিরে এসো বেহুলা' সেই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বিরুদ্ধে একটা প্রতিবাদ। যে প্রতিবাদ ছবির শেষ দৃশ্যটি ধারণ করেছে এবং জয়া আহসান সে দৃশ্যের সেরা পারফর্মার।

MdIq9k7.jpg


মুভি থিয়েটারে জয়া ও অন্যান্য সব চরিত্রকে একসাথে করে যে দৃশ্যটি দেখানো হয়েছে ওটা ছিল ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশ। জয়া ছবির প্রধান চরিত্র, দিনার তার স্বাভাবিক অভিনয় করেছে। বাকি সবগুলো চরিত্র প্রয়োজনমাফিক এসেছে এবং সবাই পেশাদার শিল্পীর অভিনয় করেছে।

আদিবার কণ্ঠে ছবির জনপ্রিয় গান 'ভালোবাসা তোমার ঘরে বৃষ্টি হয়ে নেমে আসুক।' গানটি এফএম রেডিওতে সেসময় টপ লিস্টেড ছিল। গানের দৃশ্যায়নও মনকাড়া ছিল ছবিতে।

'ফিরে এসো বেহুলা'-র মতো মিথ ও ফিল্মের এক্সপেরিমেন্ট ডিজিটাল চলচ্চিত্রে কম হয়েছে। এ ধরনের কাজ মূলত তরুণ প্রজন্মের ফিল্ম মেকারদের নতুনত্বকে তুলে ধরে। আরো হওয়া উচিত এসব কাজ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top