What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ইসলামের আলোকে বিজয় (1 Viewer)

iLlSXLU.jpg


বিজয় আল্লাহর দান। কোরআন কারিমে 'ফাত্‌হ' বা বিজয় নামে আল্লাহ তাআলা একটি সুরাও অবতীর্ণ করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, 'নিশ্চয়ই আমি আপনাকে সুস্পষ্ট বিজয় দান করেছি।' (সুরা-৪৮ ফাত্‌হ, আয়াত: ১)। এই সুরার শেষাংশে বিজয়ের জন্য স্বপ্ন ও পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ রয়েছে। বর্ণিত হয়েছে: 'অবশ্যই আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল (সা.)–এর স্বপ্ন সত্যই বাস্তবায়ন করে দিয়েছেন। অবশ্যই তোমরা মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে নিরাপদে, "ইনশা আল্লাহ" আল্লাহর ইচ্ছায়।' (সুরা-৪৮ ফাত্‌হ, আয়াত: ২৭)।

শক্তি, সামর্থ্য, সফলতা ও বিজয়ের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রয়োজন; আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির জন্য প্রয়োজন আল্লাহর ওপর ভরসা ও নির্ভরতা।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলার নির্দেশনা হলো, 'আর তুমি কখনো "ইনশা আল্লাহ" (আল্লাহ চাইলে) বলা ব্যতিরেকে কোনো বিষয়ে এমন বলবে না যে আমি ভবিষ্যতে এই কাজ করব।' (সুরা-১৮ কাহাফ, আয়াত: ২৩)।

নবী–রাসুল পাঠানোর উদ্দেশ্য হলো শান্তি, সাম্য ও ন্যায়ের বিধান প্রতিষ্ঠা করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'তিনি মহান আল্লাহ! যিনি তাঁর রাসুল (সা.)-কে পাঠিয়েছেন হিদায়াত সঠিক পথনির্দেশ ও সত্য দ্বীন পরিপূর্ণ জীবন বিধানসহকারে, যাতে তিনি তা সকল বিধানের ওপর বিজয়ীরূপে প্রতিষ্ঠা করেন, সাহায্যকারী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।' (সুরা-৪৮ ফাত্‌হ, আয়াত: ২৮)। সফলতা ও বিজয়ের জন্য চাই সৎকর্ম ও সামর্থ্য। এ বিষয়টিও কোরআনে আল্লাহ তাআলা জানিয়ে দিয়েছেন। আর আমি জাবুর কিতাবে লিপিবদ্ধ করেছি, 'নিশ্চয়ই আমার ভূমির অধিকারী হবে সৎকর্মশীল ও যোগ্য বান্দারা।' (সুরা-২১ আল আম্বিয়া, আয়াত: ১০৫)।

আল্লাহর সাহায্যেই বিজয় আসে। পবিত্র কোরআন মাজিদে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন, তখন আপনি আপনার প্রতিপালকের প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন এবং তাঁর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন; তিনি তো তওবা কবুলকারী।' (সুরা-১১০ নাসর, আয়াত: ১-৩)।

বিজয়ী সফল বিশ্বাসী মুমিনদের পরিচয় বর্ণনা করতে গিয়ে এবং বিজয়–পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, '(তারা) যাদের আমি পৃথিবীতে বিজয়, সফলতা ও প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা নামাজ কায়েম (সুশৃঙ্খল জীবনযাপন) করে, জাকাত আদায় (আর্থিক সততা ও উন্নতি) করে এবং সৎকাজে আদেশ দান করে ও মন্দকাজে বাধা প্রদান (ন্যায় বিধান কয়েম) করে। সকল কর্মের পরিণতি আল্লাহরই নিকটে (তাই কেউ কাউকে অহেতুক দোষারোপ করবে না)।' (সুরা-২২ হজ, আয়াত: ৪১)। 'তোমরা তোমাদের কর্মফল ভোগ করবে, আমি আমার কর্মফল লাভ করব।' (সুরা-১০৯ কাফিরুন, আয়াত: ৬)।

কল্যাণ রাষ্ট্র ও মানবিক সমাজ তথা সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যই বিজয়। সব মানুষ একই পিতা–মাতার সন্তান। সবারই পিতা বাবা আদম (আ.), সবারই মাতা মা হাওয়া (আ.)। সব মানুষ ভাই ভাই, তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ নেই। সাদা–কালো সে তো আল্লাহর সৃষ্ট প্রকৃতির অবদান। বর্ণবৈষম্য, ভাষাবৈচিত্র্য এবং ভৌগোলিক ও নৃতাত্ত্বিক পার্থক্য মানুষে মানুষে কোনো প্রভেদ তৈরি করে না। কোরআন কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, 'হে মানুষ! আমি তোমাদের সৃষ্টি করেছি একজন পুরুষ ও একজন নারী হতে, পরে তোমাদের বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা একে অন্যের সঙ্গে পরিচিত হতে পারো। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সেই ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি পরহেজগার। নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছুই জানেন, সব খবর রাখেন।' (সুরা-৪৯ হুজুরাত, আয়াত: ১৩)।

বিদায় হজের ভাষণে প্রিয় নবীজি (সা.) বলেছেন: 'কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, অনারবের ওপর আরবের শ্রেষ্ঠত্ব নেই।' (বুখারি)। অর্থাৎ কেউ কারও ওপর প্রভুত্ব কায়েম করতে পারবে না। সবার একমাত্র প্রভু মহান আল্লাহ। ইসলামের মূল বাণী পবিত্র কালেমায় এই ঘোষণাই দেওয়া হয়েছে, 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ' অর্থাৎ 'এক আল্লাহ ব্যতীত আর কোনো প্রভু নাই, হজরত মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত রাসুল'। এ ঘোষণার পর মানুষ মানব–দানব সব ধরনের প্রভুর গোলামি থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহর গোলাম হয়ে যায় এবং আদর্শ হিসেবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) কে গ্রহণ করে।

বিজয়ের সুফল পেতে প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সামাজিক স্থিতিশীলতা। এ জন্য দরকার ধৈর্য-সহিষ্ণুতা, দয়া-মায়া ও স্নেহ-মমতা। আল্লাহ তাআলা বলেন, 'হে বিশ্বাসী মুমিনগণ! তোমরা যদি (ত্যাগ-তিতিক্ষা, সৎকর্ম ও আনুগত্যের মাধ্যমে) আল্লাহকে সাহায্য করো, তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদেরকে (কল্যাণ ও সফলতার পথে) দৃঢ়পদ রাখবেন।' (সুরা-৪৭ মুহাম্মাদ, আয়াত: ৭)।

মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম
 

Users who are viewing this thread

Back
Top