What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

দেবদাস [শরৎ এর নয় কলির কেষ্টোর] (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
দেবদাস - by Kolir kesto

আমার আর এক ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। উৎসর্গ ঃ-ইরোটিক সাহিত্য সম্রাট পিনুরাম কে ।

এক পর্ব

পাখির কিচির মিচির শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো দেবুর।উঠে বসে আবার শুয়ে পড়লো ঘুমটা যেন চোখে এখনো জড়িয়ে আছে। কাল একটু বেশিই রাত হয়ে গেছিলো। পাড়ার বিকাশদার বিয়ে ছিলো কাল। নেমতন্ন ছিলো বাড়ির সবার কিন্তু তাই বলে সবাই কি আর যাওয়া যায়।যদিও দেবুর যাবার ইচ্ছা ছিলো না কারণ খালি হাতে তো আর বিয়ের নেমতন্ন খেতে যাওয়া যায়না।অভাবের সংসার রাস্তার মোড়ে বাবার ছোট্ট চায়ের দোকান। সেটা থেকে উপার্জিত আয়েই টিম টিম করে চলছে সংসারটা।শেষমেশ বিকাশদার জোড়াজুড়িতে কিছু টাকা এদিক ওদিক থেকে জোগাড় করে একটা শাড়ি নিয়ে গেছিলো দেবু। বিকাশদার বউয়ের নাম পার্বতী। বিরাট অবস্থাশালী বাপের একমাএ মেয়ে। বিকাশদারাও কম যায়না বাজারে তিন তিন খান চালের আড়ৎ। বিয়ে বাড়িতে গেলেও দেবু মাএ কয়েক পলক দেখেছে পার্বতী বৌদিকে।দেখতে একদম দুর্গাঠাকুরের মত। আর চেহারাটা এতো নিস্পাপ যে দেবুর মনে হচ্ছে তাকিয়েই থাকি।তার বয়সের সবাই নতুন বৌদির সাথে কতো ইয়ার্কি ঠাট্টা করছে কিন্তু দেবু নিস্পলক।সবাই হয়তো ভাববে অহংকারী কিন্তু তাকে যারা চেনে সবাই জানে ও এমনি একটু চুপচাপ স্বভাবের।আর মেয়েদের দিকে চোখ তুলে তাকাতেও দেবু লজ্জা পায়। বউদির বয়স বেশি না তার থেকে তিন চার বছরের বড় হবে হয়তো। কিন্তু বিয়ে করলো প্রায় এিশ বছরের বিকাশকে। বিকাশদা মানুষটা ভালো। তাকেও খুব ভালোবাসে,গরীব বলে কখনো অবহেলা বা অবজ্ঞার চোখে দেখেনা।

কিরে দেবু আর কতো ঘুমাবি? বেলা যে সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে গেল। উফ যেই একটু দেরি হয়েছে ওমনি শুরু হয়ে গেছে। না আর শুয়ে থাকা যাবেনা। আরে বাবা উঠছি তো রোজ রোজ কি এমন করি? কাল একটু রাত হয়ে গেছিলো তাই। উঠে কল পার থেকে হাত মুখ ধুয়ে এসে মেঝেতে পাতা মাদুরে বসলো দেবু।

মা সরলা দেবী খাবার নিয়ে এলো খাবার বলতে একটা রুটি আর রাতের বাসী তরকারী। এসব আর ভালো লাগেনা দেবুর। তবুও মা বাবার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তি করে খেয়ে নেয়। দেবুর খাওয়া শেষ হলে মা সরলা দেবী বললেন দেখতো কতো বেলা হলো তোর বাবা না খেয়ে দোকানে গেছে। তুই একটু দোকানে গিয়ে বসে বাবাকে পাঠিয়ে দে না বাবা। দেবু বললো তুমি খেয়েছো? মা মুখ ঝামটা দিয়ে বললো তোর আর তোর বাবার আগে আমি কি কখনো খেয়েছি। কথাটা শুনে দেবুর প্রাণ জুড়িয়ে যায় এতো বয়স হলো,কোনমতে অভাবের সংসার তবুও বাবার প্রতি মায়ের ভালোবাসা সেই প্রথম দিনের মত।

খাওয়া শেষে মায়ের আঁচলে হাত মুছে হাটা দিলো মোড়ের দিকে। প্রথম প্রথম দোকানে বসতে লজ্জা করতো হাজার হোক কলেজে পড়ছে তার উপর চায়ের দোকান। কিন্তু দেবু ভেবে দেখেছে বিপদে আপদে তো কেউ এগিয়ে এসে বলেনা নে দু মুটো ভাত খা। বরং এই চায়ের দোকানই দু বেলা দু মুঠো অন্ন জোগাচ্ছে তাদের তাহলে লজ্জা সে করবে কেন? বরং লজ্জা করবে সেই সব মানুষ গুলোর যারা সামান্য চায়ের দোকানের থেকেও অধম।

কলেজ এখন বন্ধ উচ্চ মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ তাই। এখন কলেজে নতুন ভর্তির তোড়জোড় চলছে। দেবু দোকানে বসে বাবাকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো তোমার আর এবেলা এসে কাজ নেই। আমিই দোকান বন্ধ করে আসবো। দোকানে এখন তেমন খরিদ্দার নেই। কিছুক্ষণ পর সামনের কারখানার শ্রমিকদের টিফিন হবে তখন একটা ভীড় হবে। দোকানে বসে ভাবনায় ডুবে গেল দেবু। কলেজ পড়ার তার সখ ছিলো খুব কিন্তু পড়তে পারবে কোনদিন ভাবেনি যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের আবার কলেজে পড়া। তাই ম্যাধমিক পাশের পর দেবু বলেছিলো আর পড়বেনা যদিও কথাটা বলতে তার বুক ফেঁটে যাচ্ছিলো। দেবুর কথা শুনে মা বলেছিলো তো কি করবি তুই? কেন সামনের কারখানাতে না হয় কাজ করবো তবুও তো সংসারটা ভালো চলবে। দেবুর কথা শুনে বাবা চিৎকার করে বলেছিলো। এমন কথা আর মুখে আনবি না যতোদিন আমি বেঁচে আছি আমার রক্ত বিক্রি করে হলেও তোকে পড়াব। নিজের বড় হবার সাধ যে আমি তোকে দিয়ে পূরণ করতে চাই।আমারও কতো সখ ছিলো লেখাপড়া করে বড় মানুষ হবো।আর শেষে হলাম কিনা চা ওয়ালা।

কথা গুলা মনে হতেই বাবার জন্য গর্বে বুকটা ফুলে ওঠে দেবুর।একি দেবু যে..তুই দোকানে তাহলে একটা কড়া করে চা দে তো।কাষ্টমারের কথায় কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলো দেবু।সামনে তাকিয়ে দেখে বিকাশ।আরে বিকাশদা তুমি বসো আমি এখনি দিচ্ছি।তো সকাল সকাল কোথায় বেড়িয়েছো।জানিসই তো বিয়ের এই তোড়ে আড়ত গুলার হিসাব টা দেখার সময় হয়নি একা মানুষ সব দিক সামলাতে হয়।নেও চা নেও। চায়ের কাপ বাড়িয়ে দিলো দেবু।বিকাশদা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মিটিমিটি হাসছে দেবু লক্ষ্য করে বললো,কি গো বিকাশদা কি হলো হাসছো কেন?একটা কথা মনে পরলো তাই।দেবু আর কিছু জানতে চাইলো না এটা তার স্বভাবনা।নিজের ইচ্ছা হলে এমনি বলবে।বিকাশদা বললো জানিস দেবু এতো দিন একা ছিলাম কোন বাঁধা ছিলো না।একটা রাত না কাটতেই সকালে আসার সময় বলে কি জানিস?দেবু জিঙ্গাসু দৃষ্টিতে তাকালো বিশাকদার দিকে।সাবধানে থেকো,বেশি রৌদে থেকো না।আর তাড়াতাড়ি ফিরো।বলে হাসলো বিকাশদা।সে তো ভালোই বলেছে বৌদি তোমাকে ভালবাসে বলেই বলেছে দেবু সাফাই গাইলো।হা রে অনেক কপাল করে পেয়েছি পার্বতীকে।এখন চলি রে ওদিকে আবার দেরি হয়ে যাবে,বলে হাটা দিলো বিকাশদা।

পার্বতী বৌদির কথা মনে হতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো মা দুর্গার মত মুখটা,সারাদিন তাকিয়ে থাকলেও যেন ক্ষুধা লাগেনা। দুপুরে দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফিরছে দেবু। আসার পথে চৈতালীর সাথে দেখা। দেখেও যেন দেখলোনা পাশ কাটিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুড়িয়ে চলে গেল। দেবু আপন মনে হেসে সামনে পা বাঁড়ালো। এই চৈতালী ক্লাস নাইনে দেবুর সাথে পড়তো। দেবুর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে নিজেই প্রেম নিবেদন করেছিলো। লাজুক দেবু হা না কিছুই বলতে পারেনি সে দিন। কিন্তু চৈতালী ধরেই নিয়েছিলো দেবুও তাকে পছন্দ করে।তারপর দিন থেকে স্কুলে এসে দেবুর পাশে বসা সময় পেলেই হাত ধরে কথা বলা। দেবুরও খারাপ লাগতোনা এই নতুনত্ব কিন্তু দু দিন পর হঠাৎ চৈতালী পাল্টে গেল সেভাবে আর কথা বলেনা।একদিন সাহস করে দেবু জানতে চাইলে তার প্রশ্নে চৈতালী বলেছিলো একজন চায়ের দোকানদারের ছেলের সাথে নাকি তার প্রেম করা সম্ভব না। দেবু শুনে কিচ্ছুটি বলেনি,শুধু ভেবে ছিলো প্রেমটা কি ব্যক্তি বিশেষ না বস্তু???!!!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top