স্বাধীনতার পর দেশীয় চলচ্চিত্র আগের দশকগুলোর তুলনায় সবচেয়ে প্রতিকুল অবস্থা অতিবাহিত করেছে এই দশকে। দশকের শূরু হয় অশ্লীলতার রমরমা বানিজ্য দিয়ে। শিল্প যখন মেধাহীন মানুষের হাতে চলে যায়, তখন কী হয় তাই দেখতে পেয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র।
একের পর এক অশ্লীল ও কাটপিস চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে এবং এক শ্রেণীর দর্শক তা লুফেও নিয়েছে, অন্যদিকে ভদ্র দর্শক প্রেক্ষাগৃহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। যার ফলে গণহারে প্রেক্ষাগৃহ কমেছে। অশ্লীলতায় গা ভাসাতে না পারায় নির্ভরযোগ্য শিল্পীর সংখ্যা কমে যায়, সুস্থ ধারার প্রযোজকদের বিনিয়োগের আগ্রহ কমে, নকল ও অনুমতিহীন কপিপেস্ট সিনেমার সংখ্যা বেড়েছে।
দশকের মাঝামাঝি সময়ে নানা আন্দোলনে অশ্লীলতা বন্ধ হলেও দশকের শেষ পর্যন্ত এই পাপের মাশুল দিতে হয়েছে। স্যাটেলাইটের প্রভাবে বিদেশী চলচ্চিত্রের চাহিদা বাড়ায় গতানুগতিক দেশীয় চলচ্চিত্র উঠতি দর্শকদের হাসাহাসির বিষয় হিসেবে পরিণত হয়েছে।
দশকের শুরুর দিকে অ্যাকশন ছবির জন্য মান্না ও রোমান্টিক কিংবা আর্ট ফিল্মের জন্য রিয়াজ ছিলেন অপ্রতিদ্বন্ধী। পাশাপাশি শাকিল, ফেরদৌস, শাকিব খান, আমিন খানরাও ব্যাবসাসফল কিছু চলচ্চিত্র উপহার দেন। বছরের মাঝামাঝিতে টানা কয়েকটি হিট দেয়াতে শাকিব খান হয়ে উঠে অপ্রতিদ্বন্ধী, মান্নার মৃত্যু ও রিয়াজ সিনেমা করা কমিয়ে দেয়াতে তার অবস্থান আরো শক্ত হয়।
শাবনূর, সাহারা, অপু বিশ্বাসের সাথে একের পর হিট সিনেমা দেন যদিও তাদের শিল্পমান নিয়ে প্রশ্ন ছিল। নায়িকাদের মধ্যে সুস্থ ধারার ছবিতে ছিল শাবনূরের রাজত্ব। নারী প্রধান ও শিল্পমান সমৃদ্ধ বেশ কয়েকটি সিনেমা দিয়ে মৌসুমী তার অবস্থান শক্তিশালী করেন। পুর্ণিমা ও বেশ ভালো কিছু সিনেমা উপহার দেন। পপিও নিজেকে পরিক্ষীত করেন। শেষ ভাগে অপু, সাহারা ভালো করলেও তাদের সাফল্য ছিল অনেকখানি শাকিব নির্ভর।
এ দশকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সাহিত্য নির্ভর চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। পাশাপাশি নির্মিত হয় লালন, হাছন রাজার বায়োপিক। তারেক মাসুদের 'মাটির ময়না' প্রথম দিকে মৌলবাদীদের রোষানলে পড়লেও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমাদৃত হয়। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আর্ট ফিল্ম নির্মাণ করে। ছবিগুলোর শিল্পমান নিয়ে সন্দেহ না থাকলেও স্বল্প বাজেট ও টেলিভিশনে প্রিমিয়ার করায় অনেকেই সমালোচনা করেন।
এই দশকে দেশের প্রথম মাল্টিপ্লেক্সের সূচনা হয়। দশকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল চলচ্চিত্রের গানের অডিও অ্যালবামের জনপ্রিয়তা। হৃদয়ের কথা, আকাশ ছোঁয়া ভালবাসা, মনপুরা কিংবা থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার চলচ্চিত্রগুলো মুক্তির আগেই অডিও অ্যালবামের রেকর্ড সংখ্যক বিক্রি যেমন হিসাব নিকাশ বদলে দিয়েছে তেমনি গানের জনপ্রিয়তা চলচ্চিত্রের প্রচারে ভূমিকা রাখায় প্রযোজকদের নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছে।
আগের দশকগুলোর মত শুক্রবারে বিটিভিতে চলচ্চিত্রের দর্শক সংখ্যা কমেছে, জনপ্রিয়তা বেড়েছে ভিসিডি ভাড়া এনে সিনেমা দেখার। সব মিলিয়ে ২০০০-২০০৯ সালের মধ্যে মুক্তি পাওয়া উল্লেখযোগ্য ভালো মানের চলচ্চিত্র গুলোর তালিকা তৈরি করেছি—