What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other মৌসুমী : একজন সম্পূর্ণার গল্প (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
6edRjyp.jpg


বাংলাদেশের সিনেজগতে তারকার অভাব নেই। তারকাসমৃদ্ধ আমাদের সিনেজগতের শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম সেরা একজন মৌসুমী। দীর্ঘসময় ধরে যারা ঢালিউডে নিজেদের ক্যারিয়ার সাফল্যের সাথে এগিয়ে নিয়েছে তাদের মধ্যে মৌসুমী একজন। শাবানা, ববিতা দীর্ঘসময় কাজ করেছেন তাঁদের বিরল অভিনয়গুণের মাধ্যমে। নায়িকা, অভিনেত্রী, মা, বোন অনেক ক্যাটাগরির চরিত্রে নিজেদের অনবদ্য উপস্থাপনা দেখিয়েছেন। তাঁদের সমতুল্য কেউ নয়।এর মধ্য থেকে একজন মৌসুমী তার নিজ গুণে মাল্টিডাইমেনশনাল ইমেজের আর্টিস্ট হয়ে গেছে।

তার কাজের ধারাবাহিকতাকে বিভিন্ন বৈচিত্র্যে তুলে ধরার সুযোগ মৌসুমী নিজেই করে দিয়েছে। চলচ্চিত্র, নাটক, টেলিফিল্ম, বিজ্ঞাপন, দেশী-বিদেশী ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, সামাজিক কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতা সব মিলিয়ে একজন মৌসুমীকে বিশ্লেষণ করতে হয়। সবগুলো প্ল্যাটফর্মেই নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করে কাজ করেছে।

একজন তারকার কাজের মাধ্যম যখন অনেক হয় তখনই 'ভার্সেটাইল' কথাটা তার সাথে মিশে যায়। মৌসুমী এভাবে নানা মাধ্যমে সাফল্য দেখিয়ে ভার্সেটাইল হয়েছে। যারা আজও বলে মৌসুমী ভার্সেটাইল নয় মূলত স্রোতের বাইরে কথা বলে নিজেদের আলোচনায় রাখতে বলে কিন্তু সেসব ধোপে টেকে না কারণ মৌসুমী প্রমাণ করে দিয়েছে তার বহুমুখী প্রতিভা এবং সেখানেই ভার্সেটাইল ইমেজ আছে। আবার যারা অতিসমালোচনার ধাঁচে 'শো-পিচ' জাতীয় শব্দে মৌসুমীর মতো বিগেস্ট সুপারস্টারকে ব্লেইম করে তখন স্টার চেনার ক্ষেত্রে তাদের চিরন্তন বোকামিগুলো পরিষ্কার হয়।

আরিফা পারভীন জামান মৌসুমী জন্মগ্রহণ করেছিল খুলনায় ১৯৭৩ সালের ৩ নভেম্বর। বাবা নাজমুজ্জামান মনি ও মা শামীম আক্তার জাহানের গর্বিত সন্তান মৌসুমী। ১৯৯০ সালে 'আনন্দ বিচিত্রা'র দর্শকভোটে সেরা ফটো সুন্দরী নির্বাচিত হয়েছিল মৌসুমী। দেশের দর্শক তাদের ভবিষ্যৎ স্টারকে চিনে নিতে ভুল করেনি।

M7MtSsJ.jpg


মৌসুমী কীভাবে ভার্সেটাইল সেটা তার কাজের বিভিন্ন মাধ্যমের গল্প বলতে বলতে পরিষ্কার হয়ে যাবে..

চলচ্চিত্র
পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান-এর কাছে আমরা ঋণী সালমান শাহ-মৌসুমী জুটিকে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' ছবিতে এনে দেশের দর্শককে পরিচয় করিয়েছে একটা রেকর্ডে। অমর নায়ক সালমান শাহ-র সাথে মৌসুমীর জুটি দর্শক গ্রহণ করেছিল যার বদৌলতে সুপারহিট হয় ছবিটি। ব্যক্তিগত বিবাদে সালমান-মৌসুমী ৪টি ছবির পরে আর ছবি করেনি। মৃত্যুর আগে সালমান আবারও সিনেমা করতে চেয়েছিল মৌসুমীর সাথে। সোহানুর রহমান সোহানের সাথে কথাও হয়েছিল।কিন্তু তার আগেই স্বপ্নের নায়ক আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। নয়তো এ জুটির আরো ছবি পেতাম। মৌসুমীর ছবির নায়ক এরপর আরো অনেকে এসেছে। সার্থক জুটি উপহার দিয়েছে সালমান ছাড়াও ওমর সানী, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না, রুবেল, ফেরদৌসদের সাথে। জুটির দিক থেকে তার বৈচিত্র্য আছে সেটা প্রমাণিত।

মৌসুমীর ছবির ক্যাটাগরিতে বৈচিত্র্য আছে। ক্যারেক্টারাইজেশনেও বৈচিত্র্য আছে। স্তরে স্তরে বলতে হবে সেসব-

রোমান্টিক ড্রামা – কেয়ামত থেকে কেয়ামত, অন্তরে অন্তরে, স্বজন, মৌসুমী, দোলা, আত্ম-অহংকার, প্রথম প্রেম, হারানো প্রেম, প্রিয় তুমি, মিথ্যা অহংকার, লজ্জা, তুমি সুন্দর, আজ গায়ে হলুদ, দুই বধূ এক স্বামী, শত্রু শত্রু খেলা, হৃদয়ের কথা, কুসুম কুসুম প্রেম, গোলাপি এখন বিলাতে। ছবিগুলোর ক্যারেক্টারাইজেশনে ত্রিভুজ প্রেমের কমার্শিয়াল ইলিমেন্ট যেমন আছে পাশাপাশি নিজের অভিনয় দেখানোর সুযোগও ছিল। 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' তো ইতিহাস। মৌসুমীর গ্ল্যামার, অভিনয় লাজবাব ছিল। 'আজ গায়ে হলুদ' ছবির কথা বলা যায়। এ ছবিতে মৌসুমী প্রেম ও ধর্মের সামাজিক বাধা নিয়ে বাবা প্রবীরমিত্রকে যে কথাগুলো বলে এখানে অভিনয় দেখানোর সুযোগ ছিল এবং মৌসুমী সেটা অসাধারণভাবে করেছে। 'কুসুম কুসুম প্রেম' ছবিতে মৌসুমী ও ফেরদৌস যখন সামাজিক সংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে দুজনই বিষ খায় ঐ অভিনয়ের কোনো তুলনা হয় না। 'স্বজন' ছবির কাঞ্চন-রুবেলের প্রেমিকা মৌসুমীর অভিনয় দেখে প্রেমিক মন প্রেমে পড়বেই। 'তুমি কবি আমি তোমার কবিতা' গানে স্টেজ পারফর্মার মৌসুমী অনবদ্য।

KXx2D5b.jpg


ফ্যামিলি ড্রামা – স্নেহ, দেনমোহর, আত্মত্যাগ, রাক্ষস, সুখের স্বর্গ, আদরের সন্তান, সুখের ঘরে দুঃখের আগুন, বাপের টাকা, পাপের শাস্তি, সংসারের সুখ-দুঃখ, শয়তান মানুষ, স্নেহের বাঁধন, বিশ বছর পর, লাট সাহেবের মেয়ে, অন্ধ ভালোবাসা, কষ্ট, আম্মাজান, মায়ের মর্যাদা, সুখের আশায়, কথা দাও, বাংলার বউ, সাহেব নামে গোলাম। 'দেনমোহর' ছবিতে সালমান শাহর পারফেক্ট কো-আর্টিস্টের ভূমিকায় মৌসুমীর অভিনয় তখনকার দর্শককে মুগ্ধ করেছিল। 'সুখের ঘরে দুঃখের আগুন' ছবিতে মৌসুমীর চরিত্রটি স্যাক্রিফাইসিং ছিল এবং প্রশংসিত। ঘরের বৌয়ের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে 'রাক্ষস' ছবিতে সুবর্ণা মুস্তাফাকে সমর্থন করার মুহূর্তে মৌসুমী তারই পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকায় দাঁড়িয়ে যায়। 'লাট সাহেবের মেয়ে, আত্ম অহংকার' এগুলোতে নিজের অহংকারের বিপরীতে বাস্তব মেনে নেয়ার অভিনয়ে অসাধারণ পারফর্ম করেছে। 'বাংলার বউ' ছবিতে গ্রামীণ সংস্কৃতিতে পুত্রবধূর উপর নির্যাতনের যোগ্য জবাব দেয়াতে একটা মেসেজ আছে। শাবানার সাথে 'বিশ বছর পর, বিদ্রোহী বধূ, ঘাত-প্রতিঘাত, সুখের স্বর্গ' ছবিগুলোতে মৌসুমীর পারফরম্যান্স অসাধারণ। শাবানার পছন্দের আর্টিস্ট ছিল মৌসুমী। এটা বিশেষ অর্জন ছিল মৌসুমীর এবং তখন যারা নতুন প্রজন্ম তাদের মধ্যে মৌসুমীকে শাবানার মতো গ্রেটেস্ট আর্টিস্টের সাথে দেখা গেছে বেশি। 'আদরের সন্তান' ছবি মোটাদাগে শিক্ষণীয় সিনেমা এবং মৌসুমীর ভূমিকা সেটাই তুলে ধরে।

ফ্যান্টাসি, ফোক–ফ্যান্টাসি – কাল নাগিনীর প্রেম, রূপসী রাজকন্যা। 'কাল নাগিনীর প্রেম' ছবিটি ফোক-ফ্যান্টাসিতে মৌসুমী-ওমর সানী জুটির অসাধারণ ছবি। এটি কমার্শিয়াল হয়েও মেসেজ দেয়। মানুষের জীবনযাত্রার সাথে ভিন্ন গ্রহের প্রাণীদের তফাতটা বোঝায়। মানুষের বিভিন্ন খারাপ গুণের সমালোচনা করা হয়েছে ছবিটিতে। 'রূপসী রাজকন্যা'-ও ফোক আবহের দারুণ ছবি।

R6D8pFr.jpg


অ্যাকশন, লেডি অ্যাকশন – মুক্তির সংগ্রাম, ক্ষুধা, নরপিশাচ, লুটতরাজ, ঢাকাইয়া মাস্তান, শান্তি চাই, মগের মুল্লুক, বীর সৈনিক, আমি জেল থেকে বলছি, বাঘিনী কন্যা, বিদ্রোহী বধূ, আমার প্রতিজ্ঞা, মিস ডায়না। 'মুক্তির সংগ্রাম, ক্ষুধা, শান্তি চাই' এগুলো লোকাল পলিটিক্সের ছবি। এগুলোর সাথে বড় পার্থক্য ও বৈচিত্র্য আনে লেডি অ্যাকশন ছবিগুলো। 'বাঘিনী কন্যা' আর 'বিদ্রোহী বধূ' এ দুটি ছবির মতো জবরদস্ত লেডি অ্যাকশন ছবি কমই আছে। 'মিস ডায়না' ফ্যামিলি ড্রামার সাথে মিশে লেডি অ্যাকশনের দিকে গেছে।

সাইকোপ্যাথ থ্রিলার – 'বিশ্বপ্রেমিক' ছবিটি মৌসুমীর সব কমার্শিয়াল ছবির থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। হুমায়ূন ফরীদির সাইকোপ্যাথ কিলিং এর উপাদান ছিল 'তিল'। সেটা মৌসুমীরও ছিল।

অফট্র্যাক/ সাহিত্যনির্ভর – মাতৃত্ব, মেহেরনেগার, সাজঘর, বিন্দুর ছেলে, মেঘলা আকাশ, একজন সঙ্গে ছিল, মোল্লাবাড়ির বউ, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি। 'মেহেরনেগার' মৌসুমীর অনবদ্য অভিনয়সমৃদ্ধ ছবি। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য থেকে নির্মিত ছবি। 'বিন্দুর ছেলে' আরেকটি অসাধারণ কাজ। হুমায়ূন আহমেদের 'সাজঘর' উপন্যাস থেকে মান্না-মৌসুমীর অভিনয়সমৃদ্ধ আরেকটি কাজ। 'একজন সঙ্গে ছিল' বিভিন্ন দিক থেকে অসাধারণ ছবি। মেয়েদের জীবনের বাস্তবতা ছবিটির প্রাণ। মৌসুমীর ক্যারেক্টারটি পিনপয়েন্ট ছিল। 'মোল্লাবাড়ির বউ' অসাধারণ সংযোজন মৌসুমীর ক্যারিয়ারে। শাবনূরের প্রতিবাদী চরিত্রের বিপরীতে বাঙালি পুত্রবধূর উপর পরিবারে কাঠমোল্লা এটিএম শামসুজ্জামানের অত্যাচারের উপাদান ছিল মৌসুমী। মৌসুমীর চরিত্রের মাধ্যমে যে সামাজিক সমস্যা উঠে এসেছে তার প্রতিবাদ ছিল শাবনূরের চরিত্রটি। অনেকেই হাস্যকরভাবে কে প্রধান, কে অপ্রধান এ তুলনা করে। দুটি চরিত্রই প্রধান এবং পরস্পরের পরিপূরক আর এটা বোঝার জন্য এটুকু মনে রাখলেই চলে সমস্যা না দেখালে সমাধানের পথ দেখানো যায় না। মৌসুমী যে সামাজিক সমস্যাটা তুলে ধরে শাবনূর সেটার সমাধান করে। দুটোই স্ট্রং।

'মাতৃত্ব' ছবির মৌসুমী ডামি ব্যবহার না করে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর দৃশ্যে অভিনয় করে যে দৃষ্টান্ত রেখেছে সেটা আর কারো নেই। নিজেকে উজাড় করে অভিনয় করেছে। নিঃসন্দেহে মাস্টারপিস ছবি।

47D9TrL.jpg


নারীকেন্দ্রিক – খায়রুন সুন্দরী, মাতৃত্ব, মোল্লাবাড়ির বউ, দজ্জাল শ্বাশুড়ি, স্বপ্নপূরণ, গোলাপি এখন বিলাতে। 'খায়রুন সুন্দরী' একটা ইতিহাস সৃষ্টি করা নারীপ্রধান ছবি। ব্লকবাস্টার হিট এ ছবির দর্শক ইতিহাসও আছে। ছবিটি দেখার জন্য নারী দর্শকদের অংশগ্রহণ ছিল মারাত্মক। বিভিন্ন স্মরণীয় ঘটনা আছে। 'স্বপ্নপূরণ' মাস্টওয়াচ ছবি। নারীর স্বপ্ন এবং স্বপ্নপূরণের বাস্তব সংগ্রাম দেখানো হয়েছে। বাকিগুলোতেও মৌসুমীর চরিত্রের প্রাধান্য ছিল।

ছবিগুলোর ক্যারেক্টারাইজেশন বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রেমিকা, বোন, পুত্রবধূ, ব্যক্তিত্ববান নারী, প্রতিবাদী মেয়ে এরকম বহু ভেরিয়েশনে তার চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলো বৈচিত্র্য রেখেছে। ভার্সেটাইল বৈশিষ্ট্য আছে সবগুলোর। চলচ্চিত্রের এসব ভেরিয়েশন ছাড়াও মৌসুমী ছিল সফল পরিচালকও। মুশফিকুর রহমান গুলজার-এর সাথে যৌথভাবে 'মেহেরনেগার, কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি' দুটি ছবি নির্মাণ করেছে। তার জেনারেশনের পরিচালক হবার মতো সাফল্য তারই আছে।

বিজ্ঞাপন
'প্রিয় প্রিয় প্রিয়
সুন্দরী প্রিন্ট শাড়ি সুন্দরী
প্রিয় প্রিয় সুন্দরী
সুন্দরী প্রিন্ট শাড়ি সুন্দরী
রূপে রূপে অপরূপ করে দিও
রঙে রঙে এ ভুবন ভরে দিও'

'সুন্দরী প্রিন্ট শাড়ি'-র এই জিঙ্গেলটিতে মৌসুমীকে নব্বই দশকে ছোটবেলায় কেউ দেখেনি এটা অসম্ভব। মৌসুমী ঐ বিজ্ঞাপনে অনন্য সুন্দরী হিশাবে হাজির হত। লাক্স-এর ইভ্যুলুশন অ্যান্ড বিউটি বিজ্ঞাপনেও তার উপস্থিতি স্মরণীয়। 'গোয়ালিনী'-র বিজ্ঞাপনও স্মরণীয়। 'তিব্বত'-এর বিজ্ঞাপনে 'আমার হাতে জাদু আছে' এ সংলাপটি জনপ্রিয়। 'মেরিল স্প্রিং রেইন শ্যাম্পু'র বিজ্ঞাপনটিও জনপ্রিয় ছিল। নিকট অতীতে আরএফএল, সিমসিম বিস্কুট এ বিজ্ঞাপনগুলোও সাস্প্রতিক ব্যস্ততা তুলে ধরে।

h8Dsk5z.jpg


নাটক/টেলিফিল্ম
মৌসুমী তার প্রজন্মের পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্মের সাথেও নাটক/টেলিফিল্মে কাজ করেছে। সেকালের তারিক আনাম খান, আফজাল হোসেন, জাহিদ হাসান, তৌকির আহমেদ, মাহফুজ, সুইটি, রিয়াজ থেকে একালের চঞ্চল চৌধুরী, মোশাররফ করিম, তিশা, সজল হয়ে মিশু সাব্বির, রওনক হাসান পর্যন্ত বিস্তৃত। সংক্ষিপ্ত তালিকায় –

আড়াল (আফজাল হোসেন, তৌকির আহমেদ)
ভেলা (জাহিদ হাসান)
এক জনমে (মাহফুজ)
এত কষ্ট কেন ভালোবাসায় (মাহফুজ, সুইটি)
মেঘের আড়ালে (রিয়াজ)
কলকাঠি (চঞ্চল চৌধুরী)
দ্বিধা ( মোশাররফ করিম, তিশা)
টু বি অর নট টু বি (সজল)

এছাড়া মিশু সাব্বির ও রওনক হাসানের সাথে অসম প্রেমের নাটকে অভিনয় করেছে মৌসুমী। মৌসুমী সেকাল-একাল আর্টিস্টের সাথে মেলবন্ধন করেছে নাটকেও এটা বিরাট অর্জন।

গান
মৌসুমীর নিজ কণ্ঠের একক অ্যালবাম বেরিয়েছিল নব্বই দশকে। আদনান বাবুর সাথে 'দূর থেকে দূরে চলো' গানটি ইউটিউবে এখনো পপুলার। 'মৌসুমী' চলচ্চিত্রে নিজ কণ্ঠে গেয়েছে 'ভালোবাসা বলে নেই তো কিছু' গানটি। রেডিওতে 'অনুরোধের আসর গানের ডালি'তে গানটি শ্রোতাদের পছন্দের তালিকায় থাকত। চলচ্চিত্রে মৌসুমীর কালজয়ী গানের অভাব নেই। তার সব প্রতিষ্ঠিত জুটির বিপরীতে কালজয়ী গান আছে। সালমান শাহ, ইলিয়াস কাঞ্চন, রুবেল, মান্না, ফেরদৌস সবার সাথেই আছে স্মরণীয় সব গান। সালমানের সাথে চারটি ছবিতেই কালজয়ী আছে। ওমর সানীর সাথে সবচেয়ে বেশি কালজয়ী গান আছে।কাঞ্চনের সাথে 'আত্মত্যাগ' ছবির 'এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু', 'শেষ রক্ষা' ছবির 'আমার হবে সেই বউ', 'অন্ধ ভালোবাসা' ছবির 'আমার জীবন তুমি', 'সুখের ঘরে দুখের আগুন' ছবির 'যে জীবনে তুমি ছিলে না' এ গানগুলো কালজয়ী। রুবেলের সাথে 'বিশ্বপ্রেমিক' ছবির 'শিখা আমার শিখা' কালজয়ী গান। কাঞ্চন-রুবেলের সাথে 'স্বজন' ছবির সব গানই স্মরণীয়। মান্নার বিপরীতে 'লুটতরাজ' ছবির 'অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে' কালজয়ী। ফেরদৌসের সাথে 'খায়রুন সুন্দরী'র টাইটেল ট্র্যাক ক্লাসিক গান এমনকি 'ওরে সাম্পানওয়ালা'র টাইটেল ট্র্যাকও। আর অনেক গানের কথা বলার পাশাপাশি একটা গানের কথা বলা কর্তব্য যেটি পুরো ঢালিউডে আর কারো নেই। 'বিশ্বপ্রেমিক' ছবির 'তোমরা কাউকে বোলো না'। মাস্টার অ্যাক্টর হুমায়ুন ফরীদি সাথে মৌসুমীর রোমান্স ভিলেন-হিরোইন কম্বিনেশনে এককভাবে ইতাহাস গড়েছে ঢালিউডে। এমন ক্লাসিক গান আর আসেনি।

UYxKBqF.jpg


জুটি ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত
মৌসুমী-ওমর সানী জুটি চলচ্চিত্রে সফল ছিল। বাস্তবে এ জুটি ভালোবাসার জুটির মধ্যে দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। যেমনটি আছে বিপাশা-তৌকির, নাঈম-শাবনাজরা। মৌসুমী-ওমর সানী জুটির স্বাধীন ও ফাইজা নামে দুই ছেলেমেয়ে আছে।

সামাজিক সচেতনতা
ইউনিসেফের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিশেবে কাজ করেছে মৌসুমী। 'মৌসুমী ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন' নামে একটি ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান আছে। নিজের ছেলে ফারদিন এহসান স্বাধীনকে আমেরিকায় ফিল্মের উপর পড়াশোনা করাচ্ছে। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের কাজও করেছে। তার কাছ থেকে ভবিষ্যতে ঢালিউড অনেককিছু পাবে আশা করি। টেলিভিশন মিডিয়ার অন্যান্য প্রোগ্রামেও রেগুলারিটি আছে মৌসুমীর।

শর্টফিল্ম
মৌসুমী ইউটিউবভিত্তিক শর্ট ফিল্ম করেছে। 'সুজয়ের চিঠি' নামে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শর্টফিল্মটি প্রশংসিত হয়েছে।

মৌসুমী ক্যারিয়ারের মাঝপথে কিছু অশ্লীল ছবি করেছে যা সমালোচনার যোগ্য কিন্তু সেগুলো মৌসুমীর পুরো ক্যারিয়ারের বিস্তৃত সাফল্যের সাথে সাংঘর্ষিক না। তার সমৃদ্ধ ক্যারিয়ারের কাছে সেটা সামান্য কিছু। আর যারা সেসব নিয়ে মেতে থাকে তারা ভুলে যায় অশ্লীল ছবি আরো অনেকে করেছে। তাদের সাথে মৌসুমীকে সমান্তরালে মেশানো বোকামি। মৌসুমীর লিজেন্ডারি ইমেজের কাছে ঐ অধ্যায়টা প্রব্লেমেটিক না।

মৌসুমীর আপকামিং 'লিডার, রাত্রির যাত্রী, পোস্টমাস্টার-৭১' এ ধরনের ভালো ছবি সিলেকশন অব্যাহত থাকবে তার ভক্ত-দর্শকরা সে আশা করে। ভুল ছবি সিলেকশনে সমালোচনা থাকবেই। যে কাজগুলো একজন মোস্ট সিনিয়র আর্টিস্টের সাথে মানানসই সে ধরনের ছবি সিলেকশন করতে হবে।

মৌসুমী শুধু একটা নাম নয় অনেক সাফল্যের সমষ্টি, দীর্ঘ ক্যারিয়ারের, স্টারডমের সমষ্টি। মৌসুমী প্রথমত একজন মানুষ তারপর তারকা। তাকে নিয়ে সমালোচনা থাকবেই তারপরেও মৌসুমী একজনই। সমসাময়িক আর্টিস্ট ও তার পরবর্তী জেনারেশনের সাথে সুন্দর সম্পর্কের চর্চা মৌসুমীর আছে যেটা আজকালকার তারকাদের জন্য আদর্শ। মৌসুমী-শাবনূরকেন্দ্রিক যে বিতর্কগুলো ফেসবুকে চলমান তার বিপরীতে মৌসুমী শাবনূরের সম্পর্ক ভালো এবং মৌসুমী সে বিষয়ে সচেতন।

মৌসুমীর মৌসুম আরো দীর্ঘ হোক। নব্বই দশকের একমাত্র নায়িকা যে তার বৈচিত্র্যময় কাজ দিয়ে অভিনেত্রী হয়ে উঠে আজ পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছে। তার দীর্ঘ ক্যারিয়ার অনেক তারকার জন্য আদর্শ। অনাগত তারকাদের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকুক এই জীবন্ত কিংবদন্তি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top