What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other দুর্ভাগা’ নায়ক ওমর সানীর গল্প (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
MOlX13f.jpg


বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির ৯০ দশকের সেরা সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক ওমর সানী। শিরোনাম দেখে হয়তো ভাবছেন কেন সানিকে 'দুর্ভাগা' বলছি? এর কারণ জানার আগে সানী সম্পর্কে আগে কিছু জেনে নিন, এরপর বলছি কেন 'দুর্ভাগা' বললাম তা।

সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা দেখার দিনগুলো আমাকে খুব তাড়িয়ে বেড়ায়। কারণ জীবনের অনেক লম্বা একটা সময় এবং সবচেয়ে উচ্ছল আনন্দের সময়টা কেটেছে সিনেমা হলে বাংলা ছবি দেখে। বাংলা চলচ্চিত্রের সেই সময়টাও ছিল সবচেয়ে সোনালি ও দুর্দান্ত সময় যা উপভোগ করতে পেরেছি বলে নিজেকে দারুণ সৌভাগ্যবান মনে হয়।

রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, ওয়াসিম, ফারুক, কাঞ্চন, জাফর ইকবাল, জসিম থেকে রুবেল, মান্না, সালমান, সানী সবার শ্রেষ্ঠ ছবিগুলো পর্দায় দেখেছি। এতো এতো সেরাদের কাজ দেখেছি যে আজ খুব সহজে খুব সস্তায় কেউ মনটা জয় করতে পারে না। সানী সেই সেরা সময়ের এক নায়ক যিনি সময়ের অনেক আগেই হারিয়ে গেছেন।

৯০ দশকের শুরুতে এহতেশামের হাত ধরে বাংলা বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রে নতুনদের যে জোয়ার শুরু হয়েছিল সেই জোয়ারে পাওয়া এক শামুকের ভিতরে থাকা একটি মুক্তোর নাম হলো ওমর সানী। তিনি হয়ে গেলেন আরেক 'মুক্তো' সালমান শাহ'র সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী যার ফলে সেই সময়টা আমরা দারুণ উপভোগ করেছিলাম । আমাদের পরিচালকরা সিনিয়র তারকাদের পাশাপাশি তাদের দুজনকে নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করতে লাগলেন। যাই হোক ফিরে যাই সানীর কথায়।

সানীর অভিনয় শুরু ৯২ তে নুর হোসেন বলাইয়ের 'এই নিয়ে সংসার' ছবি দিয়ে যেখানে মুল নায়ক ছিলেন তখনকার সময়ের সবচেয়ে ব্যস্ত তারকা ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে সানীর প্রথম চুক্তি করা চলচিত্রের নাম শেখ নজরুল ইসলামের 'চাঁদের আলো', যা 'এই নিয়ে সংসার'-এর পর মুক্তি পায়।

কাঞ্চন মানেই তখন হিট। সাথে দিতি। কাঞ্চন-দিতি জুটি ৯০র প্রথম অংশ জুড়ে এক আলোচিত নাম এবং দুজনেরই ক্যারিয়ার তখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। প্রথম ছবিতে কাঞ্চনের ছোট ভাই পুলিশ ইন্সপেক্টর সানী তার সুঠাম দেহ ও লম্বা চুলের কারণে সবার নজর কাড়েন।

প্রথম ছবিতে পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম অভিনেত্রী আনোয়ারার মেয়ে মুক্তিকে নিয়ে জুটি বেঁধে রোমান্টিক ছবি 'চাঁদের আলো' ছবি তৈরি করেন যা ছিল নায়িকা মুক্তির প্রথম ও সানীর প্রথম একক নায়ক হিসেবে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। ছবির গানের জনপ্রিয়তায় ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করে নেয়। ফলে একক নায়ক হিসেবে নবাগত সানীকে সবাই সফল বলেই মেনে নেয়।

We9y8rn.jpg


কিন্তু পরবর্তীতে নুর মোহাম্মদ মনির 'প্রেম প্রতিশোধ' (অরুনার বিপরীতে) বক্স অফিস মুখ থুবড়ে পড়ে। এরপর পরেই আবারো নুর হোসেন বলাই এর 'মহৎ' (ইলিয়াস কাঞ্চন, নবাগতা শাহনাজ, ওমর সানী ও রাজীব) এর ব্যবসাসফলতা সানীকে এই যাত্রায় বাঁচিয়ে দেয় যার ফলশ্রুতিতে নাদিম মাহমুদ এর 'আখেরি হামলা' নামক সম্পূর্ণ অ্যাকশন ছবিতে নবাগতা নিশিকে নিয়ে আরও একটি ব্যবসাসফল ছবি উপহার দেন যেখানে সানীই ছিলেন প্রধান নায়ক।

'চাঁদের আলো' পর একটি ফ্লপ ও দুটি সুপারহিট ছবি দিয়ে যখন সানী নিজেকে প্রমান করতে মরিয়া ঠিক তখনই সেই শেখ নজরুল ইসলাম এবার নির্মাণ করেন 'চাঁদের হাসি' যা ব্যবসায়িক ভাবে এভারেজ মানের ছবি যা 'চাঁদের আলো' ছবির ব্যবসার ধারে কাছেও নেই। তবে এরই মাঝে এ জে মিন্টুর 'বাংলার বধু' ছবিতে সানী জিনাতের সাথেও সুপারহিট হোন যদিও এরপর জিনাতকে আমরা চলচ্চিত্রে আর তেমন পাইনি ।

ইতিমধ্যে ইন্ডাস্ট্রিতে 'কেয়ামত থেকে কেয়ামত' নিয়ে সালমান-মৌসুমী ঝড় চলছিল যার কারনে সানী তখনও উত্থান – পতনে ব্যস্ত। সানীর চেয়ে বরং প্রবীণ নায়ক জসীম, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্না ও রুবেল এবং ৯০ এর শুরুতে আসা নাঈম পরিচালকদের কাছে বেশী আস্থাশীল। এমনই এক টিকে থাকার লড়াইয়ের সময় পরিচালক দীলিপ সোম ৯৪ সালে দুটি সুপারহিট ছবির নায়িকা মৌসুমীর সাথে ওমর সানীকে নিয়ে 'দোলা' ছবি তৈরি করে এক অর্থে 'জুয়া' খেললেন। যেখানে মৌসুমীর চরিত্রের নামটিই ছিল 'দোলা'। নিটোল প্রেমের সুপারহিট রোমান্টিক ছবি 'দোলা' দিয়ে গেলো অনেক প্রশ্নের জবাব অর্থাৎ সালমান ছাড়া মৌসুমীর জুটি হতে পারে তরুণ এই সানীর সাথেই।

এরপর সানীকে পাই রায়হান মুজিব পরিচালিত 'আত্ম অহংকার ' ছবিতে যে ছবিটিও সুপারহিট ব্যবসা করে । এই ছবিটা যেন সানী মৌসুমী জুটিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে দিলো । এরপর এলো গাজী মাজহারুল আনোয়ারের 'ক্ষুধা' যেখানেও সানী মৌসুমী হিট।

আমাদের একটি পক্ষ হয়ে গেলো সালমান শাহ'র আরেকটি পক্ষ হয়ে গেলো ওমর সানী'র । সানী সেইসময় শুধু মৌসুমীর সাথে রোমান্টিক ছবিতে সফল ছিল না সফল ছিল অন্য নায়িকাদের সাথেও সামাজিক অ্যাকশন, পারিবারিক গল্পের ছবিতেও । তাই তো সানীকে পেয়েছিলাম সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত 'আখেরি রাস্তা', এ জে মিন্টুর 'বাংলার বধু', জীবন রহমানের 'হুলিয়া', 'জানের দুশমন', দেলোয়ার জাহান ঝন্টু'র 'প্রেমগীত', মমতাজুর রহমান আকবরের 'কুলি' , ওয়াকিল আহমেদে ' প্রেমের অহংকার', 'অধিকার চাই' সৈয়দ হারুনের 'চরম আঘাত' এর মতো ব্যবসা সফল ছবিগুলো।

0Z1E9m9.jpg


সালমান জীবিত থাকাবস্থায় সানী তার চেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করেন। তার কারণ ছিল সানীর সব ধারার গল্পের ছবির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারতেন। এমনকি সালমান জীবিত থাকাবস্থায় শাবনুরের সাথে ওয়াকিল আহমেদের 'প্রেমের অহংকার' ছবিটি সুপারহিট ব্যবসা করেছিল। শাবনুর, লিমা, শাহনাজ, পপি, সোনিয়াদের সাথে সফল হলেও সানী-মৌসুমী জুটি ছিল আমাদের কাছে সেরা। এই জুটির এ জে মিন্টুর 'প্রথম প্রেম', 'বাপের টাকা', মনোয়ার খোকনের 'ঘাত প্রতিঘাত', 'সংসারের সুখ দুঃখ', আজিজুর রহমানের 'লজ্জা', 'কথা দাও', হাফিজ উদ্দিনের 'প্রিয় তুমি', উত্তম আকাশের 'মুক্তির সংগ্রাম', নায়ক উজ্জ্বলের 'পাপের শাস্তি' ছবিগুলো ছিল মনে রাখার মতো ছবি।

এবার আসি কেন সানীকে দুর্ভাগা বলেছিলাম সেই প্রসঙ্গে … আমাকে যদি সানীর সেরা সিনেমা কোনটি জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে আমি বলবো নায়ক সানীর অভিনীত সেরা সিনেমা হলো 'মাস্টার মেকার' এ জে মিন্টুর 'বাপের টাকা' সিনেমাটি। সিনেমার গল্প, চিত্রনাট্য, সুনিপুণ নির্মাণের সাথে সানীর সেরা অভিনয়টা একশতে একশো আদায় করে নিয়েছিলেন এ জে মিন্টু। একেবারেই ব্যতিক্রমধর্মী গল্পের 'বাপের টাকা' সিনেমাতে সানী থাকে ধনাঢ্য আলমগীরের একমাত্র সন্তান যে টাকাকেই সবকিছু মনে করে বখে যায় এবং পরবর্তীতে নানা ঘাত প্রতিঘাতের মাধ্যমে বুঝতে পারে টাকাই সবকিছু নয়। টাকা ব্যয় করার চেয়ে অর্জন করা কঠিন। 'বাপের টাকা' সিনেমার পর আমার কাছে সানীর অন্য সেরা ছবিগুলো হলো রায়হান মুজিবের 'আত্নঅহংকার', ওয়াকিল আহমেদের 'প্রেমের অহংকার' ও 'অধিকার চাই', আজিজুর রহমানের 'লজ্জা', হাফিজউদ্দিনের 'প্রিয় তুমি', দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর 'প্রেমগীত', নাদিম মাহমুদের 'আখেরী হামলা', এ জে মিন্টুর 'প্রথম প্রেম', সোহানুর রহমান সোহানের 'আখেরী রাস্তা', মনতাজুর রহমান আকবরের 'শয়তান মানুষ', উত্তম আকাশের ' মুক্তির সংগ্রাম' ও 'কে অপরাধী' সিনেমাগুলো।

উল্লেখিত সিনেমাগুলোতে ওমর সানী ছাড়া অন্য কোন নায়ক সুযোগ পেলে আজও চলচ্চিত্রের ইন্ড্রাস্টির অন্যতম সেরা নায়ক হয়ে আধিপত্য ধরে রাখতে পারতো কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সানী তা পারেনি। শুধু তাই নয় সানী তার সমসাময়িক সালমান শাহ'র চেয়েও এগিয়ে ছিলো তৎকালীন সময়ের ইন্ড্রাস্টির সকল ধারার গল্পের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের পরিচালকদের সাথে কাজ করার ক্ষেত্রে। পরিচালকরা যেখানে সালমান শাহকে রোমান্টিক গল্পের বাহিরে অভিনয়ের জন্য কাস্ট খুব বেশি একটা করতে চাইতেন না সেখানে সব ধারার গল্পের জন্য সানী নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন। তখন অনেকেই বলাবলি করতো আলমগীর, জসিম ও ইলিয়াস কাঞ্চনের জায়গাটা পুরণ করবে সানী যা রুবেল ও মান্নাকে দিয়ে সম্ভব নয়। কিন্তু সেই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে সানী সময়ের অনেক আগেই হারিয়ে গেলেন জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও যা বাংলাদেশের সিনেমার ইতিহাসে বিরল।

OR5rz6J.jpg


এতো এতো সফল ছবি দেয়ার পরেও দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সানি'র যে সময়টায় চলচ্চিত্রের হাল বেশি করে ধরার সুযোগ ছিল সেই সময়টাতেই হারিয়ে যান শুধুমাত্র নিজের অসচেতনতার কারণে। সানী ধীরে ধীরে এতো মুটিয়ে যান যার ফলে শাবনুরের সাথে উত্তম আকাশের 'কে অপরাধী', 'রঙ্গিন রংবাজ' , শাহ আলিম কিরণের 'রঙ্গিন নয়নমনি', বাদল খন্দকারের 'মধুর মিলন' , ওয়াকিল আহমেদের 'শান্তি চাই', এ জে মিন্টুর 'বাপের টাকা', ছবিগুলো মুখ থুবড়ে পড়ে । অথচ একাধিক সুপার গানের 'কে অপরাধী'র মতো আধুনিক প্রেম কাহিনী ছবিটি ব্যর্থ হওয়ার কথা ছিলো না যা সানীর কারণেই ব্যর্থ হয়েছে । ঠিক একইভাবে এ জে মিন্টুর সুনির্মিত 'বাপের টাকা' ছবিটিও ব্যর্থ হয়। আমরা হারিয়ে ফেলি নায়ক সানীকে।

কবছর বিরতির পর বিশাল দেহের সানী খলনায়ক রুপে ফিরে 'ওরা দালাল' ছবির মাধ্যমে। এরপর খলনায়ক সানী অনেক অশ্লীল ছবিতে অভিনয় করেন যা মেনে নিতে পারিনি। খলনায়ক সানীর মানহীন ছবিগুলো দেখে ভুলেই গিয়েছিলাম যে এই মানুষটি একদিন আমাদের চলচ্চিত্রের একজন সফল নায়ক ছিলেন। আজো মাঝে মাঝে সেই দিনগুলোর দুর্দান্ত ওমর সানীর দুর্দান্ত ছবিগুলোর কথা ভাবলে মনে পড়ে যে ওমর সানী নামে আমাদের চলচ্চিত্রে একদা এক নায়ক ছিলেন। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে কেন সানিকে 'দুর্ভাগা' নায়ক বলেছিলাম?

ওমর সানীর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি :

SlG1Swl.jpg


নুর হোসেন বলাইয়ের 'এই নিয়ে সংসার, 'মহৎ'। শেখ নজরুল ইসলামের 'চাঁদের আলো', 'চাঁদের হাসি', 'চক্রান্ত'। এ জে মিন্টুর 'বাংলার বধু', 'প্রথম প্রেম' , 'বাপের টাকা'। জীবন রহমানের 'হুলিয়া', 'জানের দুশমন'। সৈয়দ হারুনের 'চরম আঘাত'। দিলিপ সোমের 'দোলা'। নাদিম মাহমুদের 'আখেরি হামলা'। নুর মোহাম্মদ মনির 'প্রেম প্রতিশোধ'। আজিজুর রহমানের 'লজ্জা', 'কথা দাও'। ফিরোজ আল মামুনের 'কালপুরুষ' । সাইদুর রহমান সাইদের 'মোনাফেক'। রায়হান মুজিবের 'আত্ম অহংকার'। মনোয়ার খোকনের 'সংসারের সুখ দুঃখ', 'ঘাত প্রতিঘাত', 'গরিবের রানী', 'মিথ্যা অহংকার'। দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর 'প্রেমগীত', 'লাট সাহেবের মেয়ে', 'হারানো প্রেম', 'ফাঁসির আসামী'। সোহানুর রহমান সোহানের 'আখেরি রাস্তা', 'শান্তি চাই'। নায়ক উজ্জ্বলের 'পাপের শাস্তি'। মতিন রহমানের 'স্নেহের বাঁধন', 'রঙিন নয়নমণি'। হাফিজউদ্দিনের 'প্রিয় তুমি'। শওকত জামিলের 'চালবাজ'। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের 'ক্ষুধা'। ইস্পাহানি আরিফ জাহানের 'গৃহবধূ', 'সুখের স্বর্গ'। মমতাজুর রহমান আকবরের 'শয়তান মানুষ', 'কুলি'। উত্তম আকাশের 'মুক্তির সংগ্রাম', 'রঙ্গিন রংবাজ', 'কে অপরাধী', 'সাব্বাস বাঙ্গালী'। সিদ্দিক জামাল নান্টুর 'গোলাগুলি'। বাদল খন্দকারের 'মধুর মিলন'। ওয়াকিল আহমেদের 'প্রেমের অহংকার', ' অধিকার চাই'।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top