What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review আমি সেই মেয়ে’র গল্প (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
kq4Zu2P.jpg


২১ বছর আগে মুক্তিপ্রাপ্ত ঈদের একটি সিনেমা নিয়ে এই স্মৃতিচারণ। ঈদের সিনেমা সেদিনও মুক্তি পেতো আজও মুক্তি পায়। কিন্তু ২১ বছর আগের এনালগ যুগের সিনেমা ও আজকের তথাকথিত ডিজিটাল যুগের সিনেমার মাঝে আকাশ পাতাল ব্যবধান।

১৯৯৮ সালের ঈদুল আযহায় মুক্তি পেয়েছিলো বিগ বাজেটের যৌথ প্রযোজনায় (বাংলাদেশ–ভারত) মাল্টিস্টার সিনেমা 'আমি সেই মেয়ে'। বাংলাদেশের প্রযোজক (মূল প্রযোজক বলা যায়) ছিলেন ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই। বাংলাদেশের আলমগীর, আহমেদ শরীফ, কবিতার সাথে বোম্বের জয়াপ্রদা, কলকাতার প্রসেনজিত, রঞ্জিত মল্লিক, বিপ্লব চ্যাটার্জী, ঋতুপর্ণার মতো তারকারা থাকায় সিনেমাটি মুক্তির আগেই ছিলো আমাদের কাছে আলোচনায় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।

রেডিও টেলিভিশনের বিজ্ঞাপনের প্রচারের ফলে সিনেমাটি মুক্তির আগেই সুপারহিট হয়ে যায় বলা চলে। ঈদের আগে নন্দিতা সিনেমা হলে কোন একটি সিনেমার মাঝখানে 'আমি সেই মেয়ে' এর ট্রেলার দেখে আরও বেশি আগ্রহ বেড়ে যায়। ঈদের দিন থেকেই সিলেটের নন্দিতা সিনেমা হলে 'আমি সেই মেয়ে' প্রদর্শিত হতে থাকে।

যদিও শুরু থেকেই 'আমি সেই মেয়ে' সিনেমা নিয়ে আমাদের মাঝে আগ্রহ ছিলো তবুও বাংলাদেশের জনপ্রিয় তরুণ কোন জুটি না থাকায় সিনেমাটি আমরা ঈদের ১ সপ্তাহ পর দেখি আর রুবেল, মান্না, সানী, আমিন খান, জসিমদের সিনেমাগুলো দেখি আগে। যাই হোক, ঈদের ১ সপ্তাহ পর গেলেও তখনও সিনেমা হলের প্রতিটি শোতে সপরিবারের আসা নারী দর্শকদের ভিড় থাকায় শো হাউসফুল ছিলো।

আমার স্মৃতি যদি প্রতারণা না করে থাকে তাহলে সিনেমার গল্পটি ছিলো এমন – শিল্পপতি চৌধুরী সাহেব মৃত্যুর আগে তার শত কোটি টাকার সম্পত্তি একমাত্র সন্তান আলমগীরের নামে লিখে দেন যা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আহমেদ শরীফ মেনে নিতে পারেনি। আহমেদ শরীফ চায় আলমগীরকে খুন করে সম্পত্তি আত্নসাৎ করতে। অবিবাহিত আলমগীরকে খুন করতে পাঠায় আহমেদ শরীফ। আলমগীরের বন্ধু রঞ্জিত মল্লিক ও জয়াপ্রদা গুলিবিদ্ধ আলমগীরকে সুস্থ করে তোলে।

এদিকে আহমেদ শরীফ মনে করে আলমগীর মারা গেছে তাই আলমগীরের অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসা না করিয়ে হত্যা করে। সুস্থ হয়ে আলমগীর ঘরে ফিরে আসে জয়াপ্রদাকে বিয়ে করে। আহমেদ শরিফ এবার অন্য কুটচাল চালে। ব্যবসার কাজে আলমগীর দেশের বাহিরে গেলে জয়াপ্রদা অসুস্থ হলে ডাক্তার জানায় জয়াপ্রদা গর্ভবতী। তখনই জয়াপ্রদাকে হত্যার হুমকি দিয়ে ও আলমগীরের সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জয়াপ্রদাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয়। পথিমধ্য নারীপাচারকারী অমল বোস জয়াপ্রদাকে পাচার করার জন্য রাস্তা থেকে তুলে এনে আটকে রাখে। অমল বোস জয়াপ্রদাকে ঘরে আটকে রেখে চলে গেলে জানার শিক ভেঙে জয়াপ্রদার রুমে ঢুকে অমল বোসের কিশোর ছেলে জয়াপ্রদাকে অমল বোসের সব কুকীর্তির কথা জানিয়ে দেয়। জয়াপ্রদার মাঝে নিজের মৃত মায়ের ছায়া দেখতে পায়। অমল বোস ফিরে এসে জয়াপ্রদাকে ধর্ষণ করতে গেলে অমল বোস তার ছেলের হাতে খুন হয়।

জয়াপ্রদাকে কিশোর বাদশাকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে নিজের কাঁধে খুনের দায় নিয়ে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে কারাগারে যায়। কারাগারের হাসপাতালে জন্ম নেয়া আলমগীর ও জয়াপ্রদার একমাত্র কন্যা সন্তানটিকে রঞ্জিত মল্লিকের হাতে জয়াপ্রদা তুলে দিয়ে লালন পালনের দায়িত্ব দেয়। রঞ্জিত মল্লিক নিজের সন্তানের পরিচয়ে শিশুটিকে বড় করে যে হয় ঋতুপর্ণা। অন্যদিকে আহমেদ শরীফের ভাড়া করা নারীকে কৌশলে আলমগীরের সাথে বিয়ে দিয়ে আহমেদ শরীফ ব্যবসায়িক সবকিছু নিজের হাতে রাখে। অনেক বছর পর রঞ্জিত মল্লিকের কথায় জানতে পারে আলমগীর ও জয়াপ্রদার সন্তান বেঁচে আছে এবং জয়াপ্রদা কিছুদিনের মধ্যই জেল থেকে মুক্তি পাবে।

আহমেদ শরীফ প্রসেনজিতকে ভাড়া করে ঋতুপর্ণাকে খুন করার জন্য। ঋতুপর্ণা জয়াপ্রদাকে জেল গেইট থেকে নিতে এলে দূর থেকে গুলি করে ঋতুপর্নাকে খুন করতে গিয়ে প্রসেঞ্জিত জয়াপ্রদাকে দেখে চিনে ফেলে এবং খুন না করে চলে আসে। আহমেদ শরীফ বুঝতে পারেনা টাকা নিয়েও কেন প্রসেঞ্জিত ঋতুপর্ণাকে খুন করেনি তা। প্রসেঞ্জিত উল্টো আহমেদ শরীফকে চ্যালেঞ্জ করে ঋতুপর্ণা ও জয়াপ্রদাকে কেউ খুন করতে চাইলে সে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। ……শুরু হয় অন্য আরেক গল্প। এভাবে আড়াই ঘন্টা ব্যাপি একটি টানটান উত্তেজনা ও নাটকীয়তায় ভরা গল্পের একটি দুর্দান্ত বাণিজ্যিক সিনেমা আমরা মন ভরে উপভোগ করেছিলাম।

বাংলাদেশের গুণী কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার ও পরিচালক দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর কাহিনী ও আরেক গুনী ছটকু আহমেদের লিখা সংলাপ ও চিত্রনাট্যটি ছিল দারুণ উপভোগ্য। বাংলাদেশের পক্ষে পরিচালক ছিলেন রুহুল আমিন বাবুল ও কলকাতার হয়ে পরিচালক ছিলেন প্রসেঞ্জিত। বাবুল ও প্রসেঞ্জিতের যৌথ পরিচালনায় ছবিটির গল্প এক্টিবারের জন্য কোথাও ঝুলে যায়নি। এই সিনেমায় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিটি অভিনেতা অভিনেত্রীদের কাছ থেকে পরিচালকরা সেরা অভিনয়টা আদায় করে নিয়েছিলেন। বাংলাদেশের অভিনেতা অভিনেত্রী কম থাকলেও দুই দেশের অভিনেতা অভিনেত্রীরা সমান গুরুত্ব বহন করেছিলেন বিশেষ করে আলমগীর, আহমেদ শরীফ, জয়াপ্রদা, রিতুপর্না, প্রসেঞ্জিত ও রঞ্জিত মল্লিক সবাই ছিলেন যার যার চরিত্রে সেরা এবং কাউকে বাদ দিয়ে কাউকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়নি। সবাই মিলে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সিনেমার গল্পটিতে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন। তবে এতো সেরা সব তারকার ভিড়ে আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রসেঞ্জিতের চরিত্রটাকে বেশি পছন্দ করেছিলাম। প্রসেঞ্জিত দারুণ অভিনয় করেছিলেন বাদশা চরিত্রে যে চরিত্রটা ছিলো খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং ভিন্নধর্মী। সিনেমার নাম ও গল্প শুনে মনে হবে আলমগীর, জয়াপ্রদা, ঋতুপর্ণা , আহমেদ শরিফ ও রঞ্জিত মল্লিকই কেন্দ্রিয় চরিত্র কিন্তু তা ভুল । প্রসেঞ্জিতকে মনে হয়েছিলো পর্দায় কখনও কখনও প্রধান চরিত্র।

To view this content we will need your consent to set third party cookies.
For more detailed information, see our cookies page.

গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বারবার মোড় নেয়ার পিছনে প্রসেঞ্জিতের ভুমিকা ছিলো অসাধারণ। ৯০ দশকে বাংলাদেশের যে সকল বাণিজ্যিক সিনেমায় প্রসেঞ্জিত অভিনয় করেছিলেন তার মধ্য 'আমি সেই মেয়ে' সিনেমাটির বাদশা চরিত্রটি ছিলো সেরা। 'আমি সেই মেয়ে' সিনেমার ''ফাগুনের দিন শেষ হবে একদিন'' গানটি আজও শ্রোতাদের কাছে প্রিয় একটি গান হয়ে আছে ।

যৌথ প্রযোজনা ও ঈদের বিনোদনধর্মী সিনেমা কেমন হতে হয় তার চমৎকার একটা উদাহরণ হলো 'আমি সেই মেয়ে' সিনেমাটি। আজও এইদেশে যৌথ প্রযোজনার সিনেমা হয় কিন্তু তা দর্শকদের কাছে ''যৌথ প্রতারণা'' নামে পরিচিতি পায় । কারণ আজ এদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে এমন প্রযোজক, পরিচালক নেই যে যারা নিজের দেশের স্বার্থ ও সম্মানকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবসায়িক সফলতার সাথে সাথে অন্য দেশের উপর প্রভাবও রাখার সাহস দেখাতে পারে। আজ যৌথ প্রযোজনার নামে দর্শকদের সাথে প্রতারণা করা হয় তাদের উচিৎ আজ থেকে ২১ বছর আগের এনালগ যুগের 'আমি সেই মেয়ে' সিনেমাটি এক নজর দেখার। আজকের নতুন প্রজন্মের সিনেমা দর্শকরা 'আমি সেই মেয়ে' সিনেমার মতো সিনেমাগুলো হলে দেখার সুযোগ পায়নি ,যদি পেতো তাহলে মিডিয়ার সামনে বড় বড় কথা বলা আলু পটল ব্যবসা থেকে আসা তথাকথিত বড় বড় প্রযোজক পরিচালকদের যৌথ প্রতারণার বারোটা বাজিয়ে দিতো।

আগের প্রযোজকরা শুধু নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থটাকে গুরুত্ব দিতো না, নিজেদের প্রভাব ও ক্ষমতাকেও গুরুত্ব দিতো যার ফলে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি লাভবান হতো। আলু পটল ব্যবসা থেকে চামড়ার ব্যবসার নামে ব্যাংক লুট করে সিনেমায় বিনিয়োগকারী আজকের তথাকথিত বড় বড় প্রযোজকদের সৎ সাহস নেই দেশের বাহিরে প্রভাব খাটানোর , তারা শুধু পারে ছলে বলে কৌশলে নিজেদের চৌর্যবৃত্তি/ দস্যুপনার বিস্তার লাভ করাতে আর এটাই নির্মম সত্যি।।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top