What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review চাষী নজরুলের ভিন্ন রুচির সিনেমা - আজকের প্রতিবাদ (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
gE5RpSt.jpg


চাষী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শ ধারণ করা একজন বুদ্ধিজীবী ছিলেন যা সবাই জানেন। কিন্তু বিএনপির অনেক নেতাকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মী ও অনেক বড় বড় অনলাইন এক্টিভিস্টরা জানেই না যে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলের ছাত্ররাজনীতি ও স্বৈরাচার শাসকের অপকর্মের উপর তার একটি বাণিজ্যিক সিনেমা আছে। যে সিনেমায় চাষী নজরুল ইসলাম শুরুতেই বলে রাখঢাক না রেখেই স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন 'সিনেমার গল্পটির প্রেক্ষাপট ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ সালের ঘটনা প্রবাহ থেকে নেয়া'।

সিনেমার গল্পে চাষী দেখিয়েছিলেন স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের আমলের ছাত্ররাজনীতির উপর ক্ষমতাসীন দলের কালো থাবার বিরুদ্ধে কীভাবে ধীরে ধীরে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা প্রতিবাদী হয়ে উঠে যার ফলে তিনি সিনেমাটির নাম দিয়েছিলেন 'আজকের প্রতিবাদ'।

১৯৯৪ সাল বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের জন্য উল্লেখযোগ্য একটি বছর। এ বছর বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের দর্শক ও সমালোচকরা বেশকিছু দারুণ সিনেমা পায়। নবীন-প্রবীণ তারকাদের নিয়ে সারাবছরই প্রযোজক পরিচালকরা সফল ছিলেন। সে বছর এক শুক্রবারে মুক্তি পায় 'আজকের প্রতিবাদ'।

সিনেমাটি নিয়ে আমাদের তত আগ্রহ ছিলো না দুটি কারণে- ১. চাষী নজরুল ইসলাম দর্শকদের কাছে 'ওরা ১১ জন', 'দেবদাস', 'শুভদা', 'কুসুমপুরের কদম আলী', 'বিরাজ বৌ'-এর মতো সিনেমাগুলোর কিছুটা ভিন্নধর্মী পরিচালক হিসেবে পরিচিত, ২. সিনেমার নায়ক আরেক প্রখ্যাত পরিচালক আমজাদ হোসেনের বড় ছেলে সাজ্জাদ হোসেন দোদুল আর নতুন নায়িকা লাজুক। দুজনেরই চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় বা অভিষেক। মুক্তির প্রথম দিনেই সিলেটের দিলশাদ সিনেমা হলে 'আজকের প্রতিবাদ' প্রদর্শিত হতে থাকে। প্রথম সপ্তাহে আমরা সিনেমাটি দেখিনি কিন্তু অন্য যারা দেখেছিলো তাদের কাছ থেকে জেনেছিলাম সিনেমাটি ভালোই হয়েছে। আমরা দেখতে যাই দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার।

সিনেমার গল্পে দোদুল ও লাজুক একই কলেজের সহপাঠী। দোদুলের বড় বোন পুলিশ অফিসার সাবিহা। সাবিহার স্বামী চাষী নজরুল ইসলাম অপরাজনীতির শিকার হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সন্ত্রাসী হামলায় খুন হয়। সেই থেকে সাবিহা খুনি গামাকে খুঁজতে থাকে যে হলো সন্ত্রাসীদের গডফাদার বাদশা খানের লোক।

লাজুকের বাবা সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য রাজীব। লাজুক দোদুলের পিছনে লেগে থাকে সবসময় উত্যক্ত করে কিন্তু দোদুল লাজুককে পাত্তা দেয় না। একই কলেজের ছাত্র সালাহউদ্দীন লাভলু বখাটে ও সন্ত্রাসী। সে সরকারি দলের নেতা রাজীবের ক্যাডার। একদিন লাজুক তার বাবা রাজীবকে এক নারী সাংবাদিককে খুন করতে দেখে ফেলে তারপর থেকে বাবার উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। লাজুক চলে যায় তার মামা মামুনুর রশীদের কাছে। মামুনুর রশীদের মুখ থেকে রাজীবের বহু অপকর্মের ঘটনা জেনে যায় ফলে লাজুক বুঝতে পারে তার বাবা একজন ভন্ড রাজনীতিবিদ।

লাজুক ও দোদুলের বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা হয়। কলেজের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্যানেল থেকে নির্বাচন করতে প্রার্থী দেয় দোদুল ও লাজুক। লাজুকের মামাতো ভাই হয় ভিপি প্রার্থী। কিন্তু বাদশা খানের লোকেরা নির্বাচনের আগেই তাকে খুন করে যার ফলে ভিপি প্রার্থী হয় দোদুল। শুরু হয় অন্য এক গল্পের যেখানে প্রকাশিত হয় ভন্ড রাজনীতিবিদ রাজীবের ছদ্মনামই হলো বাদশা খান। বাদশ খানেই নামেই যিনি আড়ালে সন্ত্রাসীদের গডফাদার।

পুরো সিনেমাটি চাষী নজরুল ইসলাম সচরাচর যে ধরনের গল্পের সিনেমা নির্মাণ করেন তার ঠিক বিপরীত। মারমার কাটকাট বাণিজ্যিক সিনেমার মৌলিক গল্প হিসেবে চাষীর গল্প বাছাইটি যথার্থ ছিলো। কারণ এই ধরনের সমসাময়িক গল্প তখন দর্শক খুব পছন্দ করতো যা পূর্বে কাজী হায়াতের 'ত্রাস', 'চাঁদাবাজ' ব্যবসা সফলতা প্রমাণ করে। কিন্তু কাজী হায়াৎ সফল হলেও চাষী সফল হলেন না 'আজকের প্রতিবাদ' সিনেমাটি দিয়ে। এর কারণগুলো হলো—

১. সিনেমার পর্দায় প্রথম এক ঘন্টা চাষী গল্পটির ডালপালা বিস্তার করাতে পারেননি যা দর্শকদের বিরক্তির কারণ হয়। বিরতির পর থেকেই মুলত সিনেমাটি এগিয়েছে দারুণ। এর আগে দোদুল ও লাজুকের খুনসুটি দেখাতে গিয়েই সময় নষ্ট করে ফেলেছেন ফলে দর্শক বুঝতে পারছিলো না গল্পটি কী নিয়ে এগোচ্ছে তা। অন্যদিকে কাজী হায়াতের মূল গল্পটা প্রথম দৃশ্য থেকেই এগোতে থাকে এবং প্রথম ঘন্টাতেই কাহিনীটাকে জমিয়ে ফেলেন যার ফলে দর্শকরা পুরো সিনেমা শেষ না করা পর্যন্ত উঠতে পারে না। রাজনৈতিক পটভূমির গল্পে কাজী শুরু থেকেই রাজনীতিটাকেই ফোকাস করে বিভিন্ন চরিত্রের আগমন ঘটান যাদের কেন্দ্র করেই গল্পটা এগিয়ে যায় কিন্তু চাষী ছিলেন পুরো ব্যতিক্রম যার ফলে বিরতির আগেই অনেক দর্শক হল থেকে বের হয়ে যায়।

২. ছবিতে রাজীব, অমল বোস, সালাহউদ্দীন লাভলু, জহির উদ্দিন পিয়ার, মামুনুর রশীদ, এটিএম শামসুজ্জামানের মতো অভিনেতারা থাকলেও খুব কেন্দ্রীয় চরিত্রে স্টার কাস্টিং ছিলো না। এই ধরনের গল্পে দর্শকদের প্রথম পছন্দ মান্না হলেও চাষী নজরুল সালমান শাহ, সানি, আমিন খান কিংবা অমিত হাসানকে অন্তত নিতে পারতেন। অথবা পুরনোদের মধ্য ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিলেও হয়তো সিনেমাটি সফল হতে পারতো। যদিও একেবারে নতুন মুখ দোদুল প্রথম সিনেমা হিসেবে অভিনয় খারাপ করেনি কিন্তু দর্শক চাহিদার কাছে সবটুকু পুরণ হয়নি। স্টার কাস্টিং এই সিনেমার বড় একটা দুর্বলতা।

৩. রেডিও বা টেলিভিশনে মুক্তির আগে বা পরে সিনেমাটির কোন জনপ্রিয় গান ছিলো না যা দর্শকদের আকর্ষণ করতে পারে। অথচ সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন চাষী নজরুল ইসলামের পূর্বের সিনেমাগুলোর নিয়মিত সংগীত পরিচালক খন্দকার নুরুল আলম যিনি খ্যাতিমান একজন সংগীত পরিচালক এবং যার প্রচুর জনপ্রিয় গান আছে। কিন্তু খন্দকার নুরুল আলম এই প্রথম ব্যর্থ হলেন যা তার ক্যারিয়ারে আগে কখনও ঘটেছিলো বলে জানা নেই। দারুণ সব মেলোডিয়াস গানের সুরকার খন্দকার নুরুল আলমের মেলোডির কোন ধার পেলাম না সিনেমার গানগুলোতে অথচ বছর ৩ আগেও চাষী নজরুল ইসলামের 'পদ্মা মেঘনা যমুনা' সিনেমার জন্য সর্বশেষ জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন।

একটা ভালো গল্পের সিনেমা বেশকিছু দুর্বলতার কারণে ব্যর্থ হয়ে গেলো। চাষি নজরুল ইসলামের 'আজকের প্রতিবাদ' সিনেমাটির একমাত্র সফলতা ছিলো- আগুনের পরশমনি, দেশপ্রেমিক, ঘৃণা, ঘাতক, কমান্ডার সিনেমাগুলোর ভিড়ে একটি শাখায় ( শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব চরিত্র – অমল বোস) জাতীয় পুরস্কার পাওয়া।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top