'আমাদের শহরটা উল্টো দিক থেকে (বায়ুদূষণে) প্রথম হচ্ছে। এই শহরে গাছের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এই যে রমনার বৃক্ষ কেটে রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। আমাদের এখন রেস্টুরেন্টের দরকার নেই। পার্ক দরকার। সবুজ দরকার।'
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দুঘণ্টা মাটি না ঘাঁটলে ভালো লাগে না জয়ার। মনে হয়, দিনটা যেন ঠিকভাবে শুরু হলো না। পরিবেশবাদী হিসেবে নামডাক আছে ঢালিউডের সীমানা পেরিয়ে টালিউডেও সমান জনপ্রিয়তা পাওয়া অভিনেত্রী জয়া আহসানের। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কথা হয় এই গুণী অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে।
প্রকৃতি ও প্রাণী দুটোই তার প্রিয়
জয়া জানান, সকাল-বিকেল দুবেলা তিনি গাছের পরিচর্যা করেন। সঙ্গী হিসেবে ঘুরঘুর করে পোষা কুকুর ক্লিও। অবশ্য ক্লিওকে কেবল জয়ার পোষা প্রাণী বললে ভুল হবে, সে জয়ার ছোট বোন, বড় আদরের ছোট বোন। জয়ার মায়ের মতে, চার ভাইবোনের ভেতর (ক্লিওকে ছোট বোন ধরে) ক্লিওই নাকি সবচেয়ে লক্ষ্মী। জয়া জানান, তিনি যতটা পারেন, প্রকৃতির সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেন। তাঁর ঘরে নেই কোনো প্লাস্টিক। জয়া বলেন, 'আমার বাড়িতে কোনো প্লাস্টিক নেই। আমি প্লাস্টিক ঘরে ঢুকতে দিই না। যথাসম্ভব অর্গানিক জীবন যাপন করি। সকাল-বিকাল সময় কাটাই সবুজের সঙ্গে, বাগান করে।'
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জয়াকে ফোন করতেই বললেন, 'আমি নিজেকে বলি প্রকৃতির সন্তান। আমাদের সবার মা প্রকৃতি। মায়ের কাছ থেকে, বাবার কাছ থেকে শেখা যে আমরা প্রকৃতির অংশ। একজন কাঠুরিয়া যখন শুকনো কাঠ কেটে বন থেকে হেঁটে বাড়ি ফেরেন, সেটাকে একটা প্রাকৃতিক দৃশ্য বলে মনে হয়।
নিজের ছাদবাগানে
ওই কাঠুরিয়াকে তখন প্রকৃতির অংশ বলে মনে হয়। কিন্তু আমাদের 'সিনথেটিক জীবন' প্রকৃতি থেকে যথেষ্টই দূরে। আমরা মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এক সপ্তাহে বড় করছি। সেটা খাচ্ছি। ধানে বিষ মেশাচ্ছি। ব্যাঙ মরে যাচ্ছে। খাবারে বিষ তো অহরহই দিচ্ছি। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, গড় আয়ু তো কমবেই।'
জয়া মনে করেন, আরও আগে থেকেই আমাদের প্রাণ, পানি, প্রকৃতি, পরিবেশ, জলবায়ু, মাটি, নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত ছিল। তবে এখনো সবকিছু ঢেলে সাজানো সম্ভব। জয়া এই ব্যাপারে আশাবাদীও। কেননা, এখন মানুষ প্রকৃতি নিয়ে আরও বেশি সচেতন।
বাসযোগ্য পৃথিবী পক্ষে সরব জয়া
জয়া বলেন, 'ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবতে হবে। তাদের জন্য বাসযোগ্য সবুজ পৃথিবী রেখে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। আমি আশাবাদী যে এখন মানুষ পরিবেশ নিয়ে আগের চেয়ে বেশি সচেতন। এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে।'
ঢাকা শহরের বাসিন্দা জয়া বললেন, 'আমাদের শহরটা উল্টো দিক থেকে (বায়ুদূষণে) প্রথম হচ্ছে। এই শহরে গাছের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এই যে রমনার বৃক্ষ কেটে রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। আমাদের এখন রেস্টুরেন্টের দরকার নেই। পার্ক দরকার। সবুজ দরকার। নেপালে, ভুটানে প্রকৃতির ক্ষতি না করে, পাহাড় না কেটে, অন্য প্রাণীদের জীবন বিপন্ন না করেই রাস্তাঘাট হয়েছে, হচ্ছে। ওরা দেখিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতি, প্রাণী আর মানুষ সহাবস্থানে থাকতে পারে। কারও ক্ষতি না করেই মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
পরিবেশবাদী জয়া
কুকুর-বিড়াল যে আমাদের মতোই এই প্রকৃতি, বিশ্ব আর এই সমাজের অংশ, তা তো আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। ওদেরও আপন করে নিতে হবে। মা-বাবা, মুরব্বিরা আমাদের মানবিক হতে শেখান। এই মানবিকতা যেমন মানুষের জন্য, তেমনি অন্য পশুপাখির জন্যও।' কুকুরেরা যে জয়ার আপনজন, তা আর বলতে! লকডাউনে জয়া বাক্সভর্তি খাবার নিয়ে রিকশায় করে বের হয়েছেন। নিজ হাতে খাইয়েছেন পথের কুকুরদের।
জয়া বলেন, কেবল সরকারের দিকে আঙুল তাক করলে হবে না। ব্যর্থতার দায় কেবল পরিবেশবাদীদের ঘাড়ে চাপালে হবে না। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জায়গা থেকে করণীয় আছে। আর আমরা সবাই যদি পরিবেশ আর এর অন্যান্য উপাদান নিয়ে সচেতন হই, পরিবেশ রক্ষা করতে সচেষ্ট হই, তাহলেই এবারের প্রতিপাদ্য 'ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন' সম্ভব।
জয়ার ছাদবাগানের লালশাক
জয়ার ছাদবাগানে আছে চালকুমড়া, থাই বেগুন, বরবটি, শিম, লেবু, মাল্টা, ডুমুর, বেদানা, বরই, পেয়ারা, সফেদা, বেরি, কামরাঙা ও ভেষজ নানা রকম গাছ। এমনকি বেশ কিছু বিদেশি সবজি, ফল ও ফুলগাছও আছে। এই শহরে উঁচু উঁচু দালানের ভেতর এই এক টুকরা ছাদবাগান যেন তাঁর স্বস্তির আশ্রয়।
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দুঘণ্টা মাটি না ঘাঁটলে ভালো লাগে না জয়ার। মনে হয়, দিনটা যেন ঠিকভাবে শুরু হলো না। পরিবেশবাদী হিসেবে নামডাক আছে ঢালিউডের সীমানা পেরিয়ে টালিউডেও সমান জনপ্রিয়তা পাওয়া অভিনেত্রী জয়া আহসানের। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে কথা হয় এই গুণী অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে।
প্রকৃতি ও প্রাণী দুটোই তার প্রিয়
জয়া জানান, সকাল-বিকেল দুবেলা তিনি গাছের পরিচর্যা করেন। সঙ্গী হিসেবে ঘুরঘুর করে পোষা কুকুর ক্লিও। অবশ্য ক্লিওকে কেবল জয়ার পোষা প্রাণী বললে ভুল হবে, সে জয়ার ছোট বোন, বড় আদরের ছোট বোন। জয়ার মায়ের মতে, চার ভাইবোনের ভেতর (ক্লিওকে ছোট বোন ধরে) ক্লিওই নাকি সবচেয়ে লক্ষ্মী। জয়া জানান, তিনি যতটা পারেন, প্রকৃতির সঙ্গে থাকার চেষ্টা করেন। তাঁর ঘরে নেই কোনো প্লাস্টিক। জয়া বলেন, 'আমার বাড়িতে কোনো প্লাস্টিক নেই। আমি প্লাস্টিক ঘরে ঢুকতে দিই না। যথাসম্ভব অর্গানিক জীবন যাপন করি। সকাল-বিকাল সময় কাটাই সবুজের সঙ্গে, বাগান করে।'
বিশ্ব পরিবেশ দিবসে জয়াকে ফোন করতেই বললেন, 'আমি নিজেকে বলি প্রকৃতির সন্তান। আমাদের সবার মা প্রকৃতি। মায়ের কাছ থেকে, বাবার কাছ থেকে শেখা যে আমরা প্রকৃতির অংশ। একজন কাঠুরিয়া যখন শুকনো কাঠ কেটে বন থেকে হেঁটে বাড়ি ফেরেন, সেটাকে একটা প্রাকৃতিক দৃশ্য বলে মনে হয়।
নিজের ছাদবাগানে
ওই কাঠুরিয়াকে তখন প্রকৃতির অংশ বলে মনে হয়। কিন্তু আমাদের 'সিনথেটিক জীবন' প্রকৃতি থেকে যথেষ্টই দূরে। আমরা মুরগিকে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে এক সপ্তাহে বড় করছি। সেটা খাচ্ছি। ধানে বিষ মেশাচ্ছি। ব্যাঙ মরে যাচ্ছে। খাবারে বিষ তো অহরহই দিচ্ছি। স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, গড় আয়ু তো কমবেই।'
জয়া মনে করেন, আরও আগে থেকেই আমাদের প্রাণ, পানি, প্রকৃতি, পরিবেশ, জলবায়ু, মাটি, নিয়ে নতুন করে ভাবা উচিত ছিল। তবে এখনো সবকিছু ঢেলে সাজানো সম্ভব। জয়া এই ব্যাপারে আশাবাদীও। কেননা, এখন মানুষ প্রকৃতি নিয়ে আরও বেশি সচেতন।
বাসযোগ্য পৃথিবী পক্ষে সরব জয়া
জয়া বলেন, 'ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবতে হবে। তাদের জন্য বাসযোগ্য সবুজ পৃথিবী রেখে যাওয়া আমাদের কর্তব্য। আমি আশাবাদী যে এখন মানুষ পরিবেশ নিয়ে আগের চেয়ে বেশি সচেতন। এই সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে হবে।'
ঢাকা শহরের বাসিন্দা জয়া বললেন, 'আমাদের শহরটা উল্টো দিক থেকে (বায়ুদূষণে) প্রথম হচ্ছে। এই শহরে গাছের পরিমাণ বাড়াতে হবে। এই যে রমনার বৃক্ষ কেটে রেস্টুরেন্ট হচ্ছে। আমাদের এখন রেস্টুরেন্টের দরকার নেই। পার্ক দরকার। সবুজ দরকার। নেপালে, ভুটানে প্রকৃতির ক্ষতি না করে, পাহাড় না কেটে, অন্য প্রাণীদের জীবন বিপন্ন না করেই রাস্তাঘাট হয়েছে, হচ্ছে। ওরা দেখিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতি, প্রাণী আর মানুষ সহাবস্থানে থাকতে পারে। কারও ক্ষতি না করেই মানবসভ্যতার বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
পরিবেশবাদী জয়া
কুকুর-বিড়াল যে আমাদের মতোই এই প্রকৃতি, বিশ্ব আর এই সমাজের অংশ, তা তো আমরা বেমালুম ভুলে গেছি। ওদেরও আপন করে নিতে হবে। মা-বাবা, মুরব্বিরা আমাদের মানবিক হতে শেখান। এই মানবিকতা যেমন মানুষের জন্য, তেমনি অন্য পশুপাখির জন্যও।' কুকুরেরা যে জয়ার আপনজন, তা আর বলতে! লকডাউনে জয়া বাক্সভর্তি খাবার নিয়ে রিকশায় করে বের হয়েছেন। নিজ হাতে খাইয়েছেন পথের কুকুরদের।
জয়া বলেন, কেবল সরকারের দিকে আঙুল তাক করলে হবে না। ব্যর্থতার দায় কেবল পরিবেশবাদীদের ঘাড়ে চাপালে হবে না। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জায়গা থেকে করণীয় আছে। আর আমরা সবাই যদি পরিবেশ আর এর অন্যান্য উপাদান নিয়ে সচেতন হই, পরিবেশ রক্ষা করতে সচেষ্ট হই, তাহলেই এবারের প্রতিপাদ্য 'ইকোসিস্টেম রেস্টোরেশন' সম্ভব।
জয়ার ছাদবাগানের লালশাক
জয়ার ছাদবাগানে আছে চালকুমড়া, থাই বেগুন, বরবটি, শিম, লেবু, মাল্টা, ডুমুর, বেদানা, বরই, পেয়ারা, সফেদা, বেরি, কামরাঙা ও ভেষজ নানা রকম গাছ। এমনকি বেশ কিছু বিদেশি সবজি, ফল ও ফুলগাছও আছে। এই শহরে উঁচু উঁচু দালানের ভেতর এই এক টুকরা ছাদবাগান যেন তাঁর স্বস্তির আশ্রয়।