What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review যে সকল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখা মিস করবেন না (চতুর্থ পর্ব) – “কিত্তনখোলা” ও “অপেক্ষা” (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
কিত্তনখোলা(২০০০)

cohHzNO.gif


আগের পর্বেই বলেছিলাম আবু সাইয়ীদ হচ্ছেন বাংলাদেশের এমন একজন পরিচালক – যিনি গতানুগতিক কাহিনীর বাইরে ভিন্নধারার কাহিনী নিয়ে সিনেমা বানিয়েই গেছেন – আলোকপাত হয়েছে তাঁর উপরে অনেক কমই। তাঁর বানানো চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিরীক্ষামূলক চলচ্চিত্রটি হচ্ছে "কিত্তনখোলা"। নাট্যকার সেলিম আল দীনের মঞ্চনাটক অবলম্বনে বানানো এই চলচ্চিত্রটির জন্যে জাতীয় ভাবে তিনি যথাযথ সমাদৃত হয়েছিলেন – শ্রেষ্ট চলচ্চিত্র, চলচ্চিত্রকার, চিত্রনাট্যকারসহ মোট ৯টি বিভাগে পুরষ্কৃত হয়েছে এটি।

এই চলচ্চিত্রটি কেন দেখা উচিত – এ প্রশ্ন যদি আমাকে করা হয় তাহলে আমি প্রথমত বলবো গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনের স্পন্দনটা বুঝার জন্যে হলেও এটা দেখা জরুরি। ফসলতোলা মৌসুমে গ্রামের মানুষগুলোর বিনোদনের যে মাধ্যম – মেলা, যাত্রাপালা, হাউজি ইত্যাদি, সেগুলো শহুরে চোখে আমরা যখন একটু আধটু দেখি – তখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একে নিম্নরুচির, মূল্যবোধহীন, সস্তা বিনোদন মাধ্যম হিসেবেই দেখে থাকি। অথচ যাত্রাপালার মাধ্যমে মানুষকে ভালো কিছু মেসেজ দেয়ার যে চেষ্টা থাকে – সেটা ফুটে উঠে যাত্রার অভিনেতা-নেত্রী রবি দাস (জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়), বনশ্রীবালা (নায়লা আজাদ নূপুর)–এর কথাতেই। গ্রামের সহজসরল মানুষগুলোকে ঠকিয়ে চলে যে জোতদার-মহাজনেরা সেটার একটা করুণ দৃশ্য চিত্রায়িত হয়েছে মহাজন ইদু কন্ট্রাক্টর (পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়) ও গরীব চাষা সোনাই (রাইসুল ইসলাম আসাদ) চরিত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে – আর ইদু কন্ট্রাক্টর নিজেও একসময় কোনো এক মহাজনের অন্যায়ের শিকার হয়েই আজকে এ অবস্থানে। অসম দুই জাত – শুকনো অঞ্চলের মানুষ ও বেদের দল – এদের মধ্যেকার সামাজিকতার যে দ্বন্দ্ব – তা ফুটে উঠেছে সোনাই ও ডালিমনের (তমালিকা কর্মকার) মধ্যকার প্রেমের পরিণতির মধ্যে দিয়ে।

f96FBe9.jpg


এই চলচ্চিত্রটি কেন দেখা উচিত? আমি বলবো গ্রামাঞ্চলের মানুষের জীবনের স্পন্দনটা বুঝার জন্যে হলেও এটা দেখা জরুরি।

সুস্থভাবে বাঁচার তাগিদে পতিতালয়ের শিকল ভেঙ্গে বেরিয়ে এসে যাত্রাপালার দলে যোগদান করে নায়িকা বনশ্রীবালা – মেলার আয়োজক ইদু কন্ট্রাক্টরের বিকৃত লালসা আর যাত্রা দলের মালিক সুবল দাস (মামুনুর রশীদ)-এর অর্থলিপ্সা অথবা যাত্রাদল বাঁচানোর তাগিদে বনশ্রিবালাকে বিকিয়ে দিতে হয় নিজের আত্মসম্মানবোধ ও সুন্দর জীবনের স্বপ্নটুকু। রবি দাস, বনশ্রী আর ছায়ারঞ্জন (আজাদ আবুল কালাম)-এর মধ্যেকার ত্রিভূজ প্রেমও এই চলচ্চিত্রের আরেকটা ডাইমেনশন। যাত্রাপালার বিভিন্ন নাটকের চরিত্রের আদলে নায়িকা বনশ্রী বা যাত্রার বিবেক ছায়ারঞ্জনের সংলাপগুলোর মধ্যে গভীরতা আছে যথেষ্ট। মোদ্দা কথা – দেড় ঘন্টার একটি চলচ্চিত্রের মধ্যে দিয়ে টুকরো টুকরো সমান্তরাল কিছু কাহিনীকে জোড়া লাগিয়ে একটি বৃহত্তর পরিসরে ফুটিয়ে তোলাটা পরিচালক আবু সাইয়ীদের জন্যে যেমন একদিকে অনেক চ্যালেঞ্জের ছিলো, ঠিক তেমনি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের দর্শকের জন্যেও একটা ভিন্নতার আমেজ আছে এখানে।

অপেক্ষা (২০১০)

QvVCZFW.jpg


২০০৫-০৬ সালের দিকে যখন একটানা অনেকগুলো জায়গায় বোমা হামলা, সিনেমা হলে বোমা হামলা হয় তখনই আবু সাইয়ীদের মাথায় আসে এই নিয়ে মুভি বানানোর। শুধু যে জঙ্গিবাদ-বোমাবর্ষণ নিয়েই এই চলচ্চিত্রের ব্যাপ্তি – তা ভাবাটা ভুল হবে। এই জঙ্গিবাদের পিছনে কাজ করা কিছু ধ্যানধারণা, স্বার্থান্বেষী মহলের কূটচাল এবং সাথে সাথে কিছু সাধারণ পরিবারের সারাজীবনের স্বপ্নভংগ – এসব মিলেই চলচ্চিত্রটির স্বার্থক নামকরণ- "অপেক্ষা"।

v21Fhqh.jpg


রবিউল- ঢাকায় রেডিওতে গান গায়। পৃথিবীতে তার আপন বলতে একজনই- গ্রামে বাস করা দাদী। বৃদ্ধা দাদী প্রতিসপ্তাহেই রবিউলকে চিঠি পাঠায়- রবিউলও চিঠির জবাব দেয় নিয়মিতই। কিন্তু একসময় চিঠি জবাব আসা বন্ধ হয়ে যায়- অধীর অপেক্ষায় দিন গুণতে থাকেন তার দাদী। গ্রামের বাজারের পাশে যেখানে শহর থেকে আসা বাস থামে সেখানে বসে থাকেন, বাসের শব্দ পেলেই নেমে যাওয়া বাসযাত্রীদের দিকে তাকিয়ে থাকেন – কিন্তু রবিউলের দেখা পাননা কিছুতেই। পাবেনও বা কি করে – এক বাউল গানের আসরে বোমা হামলায় যে রবিউলের মৃত্যু হয়। আর সে বোমা হামলার কাজটা করে যারা – তাদেরই একজন রঞ্জু। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। তার বাবা তাকে পড়ালেখার জন্যে কলেজে পাঠান। কিন্তু যে সহজসরল রঞ্জুকে কলেজে পড়ার জন্যে পাঠান তার বাবা – সে যে অনেক আগেই জিহাদের নাম দিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যার মিশনে নেমেছে। সেই মিশনের অর্থসাহায্য, অস্ত্র যোগান যারা দেয় – তাদের পিছনের রুপটাও উন্মোচিত হয় একে একে। মাঝখান দিয়ে মাদ্রাসার এক ছাত্র – যে কিনা এই জিহাদের নাম দিয়ে মানুষহত্যাকে ইসলামসম্মত নয় বলে – তাকেও কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হয় এক্সট্রিম ঘরানার ভন্ড ধার্মিকগুলোর দ্বারা।

nOv3ITg.jpg


সিনেমার পিকপয়েন্ট কোনগুলো যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় – আমি বলবো শুধু ২টা দৃশ্যের কথা। একটি রবিউলের অপেক্ষায় প্রহর গোনা অন্ধপ্রায় দাদীর রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো, বিমর্ষবদনে রাস্তায় তাকিয়ে থাকা। আরেকটি রঞ্জুর বাবার কিছু স্মৃতি হাতড়ে বেড়ানো – পুরনো বাড়ির ভিতরে শিশু রঞ্জুর ছুটে বেড়ানো আর তাকে খুঁজতে থাকে বাবা, পাশেই আবার বর্তমান রঞ্জু দাঁড়িয়ে দাঁরিয়ে বলা – "বাবা, আমি এখানে"। কিন্তু রঞ্জুর বাবা কিছুতেই তাকে খুঁজে পায়না। একটা অদ্ভূত রকমের হাহাকার আছে এই দৃশ্যগুলোতে- আবু সাইয়ীদ স্যারকে আমার পক্ষে থেকে অসংখ্য ধন্যবাদ এই অনুভূতিগুলো দিয়ে মনে দাগ কাটার জন্যে।

প্রথম পর্ব: যে সকল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখা মিস করবেন না (প্রথম পর্ব) : রিয়াজ অভিনীত ৩ টি চলচ্চিত্র
দ্বিতীয় পর্ব: যে সকল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখা মিস করবেন না (দ্বিতীয় পর্ব) – শাকিব আর পূর্ণিমার "সুভা"

তৃতীয় পর্ব: যে সকল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখা মিস করবেন না (৩য় পর্ব) – "নিরন্তর"
 

Users who are viewing this thread

Back
Top