What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review যে সকল বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দেখা মিস করবেন না (দ্বিতীয় পর্ব) – শাকিব আর পূর্ণিমার “সুভা” (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
W2h0j7c.jpg


সুভা – রবীন্দ্রনাথের এক চিরঞ্জীব গল্প "সুভাষিনী"র কেন্দ্রীয় চরিত্র। এর আগেও বাংলাদেশে এই গল্প নিয়ে নাটক হয়েছিলো ২ বার – প্রথমবার সুবর্ণা মুস্তাফা আর পরেরবার ঐন্দ্রিলা আহমেদ ছিলেন সুভা চরিত্রে। আর ২০০৬ সালে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী চাষী নজরুল ইসলাম এই গল্পটিকে তাঁর সিনেমার ফ্রেমে তুলে ধরেন।

অশ্লীলতার যে যুগটা – মোটামুটি ১৯৯৯ থেকে ২০০৬, এই সময়কালটাতে হলবিমুখতার কারণে অনেক চলচ্চিত্রই দর্শকের অবহেলার শিকার হয়েছিলো – অথচ সে চলচ্চিত্রগুলো সর্বকালের সেরা বাংলা চলচ্চিত্রগুলোর শর্টলিস্টে জায়গা পাওয়ার মত যোগ্যতা রাখে। অশ্লীলতা, বৈচিত্র্যহীন কাহিনী, পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীদের অপেশাদারিতা – এসব অভিযোগ দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রকে অবমূল্যায়ণ করেন অনেক আধুনিক ও নতুনপ্রজন্মের দর্শকেরাও। বাংলা চলচ্চিত্রকে মূল্যায়ন করতে গেলে যে কয়টি মুভি দেখা অত্যাবশ্যক তার মধ্যে "সুভা" প্রথমদিকেই থাকবে। এই পর্বে আমি কয়েকটি মাত্রা দিয়ে আলোচনা করবো কেন এই মুভিটি বাংলা চলচ্চিত্রশিল্পের জন্যে একটা মাইলফলক এবং দর্শকের জন্যে অবশ্যদ্রষ্টব্য।

চিত্রনাট্য – উপন্যাস থেকে সিনেমা

উপন্যাস থেকে সিনেমা বানাতে গেলে অলিখিতভাবেই কিছু সমালোচনার শিকার হতে হয় পরিচালকদেরকে – তা পৃথিবীর যত বড় বড় পরিচালকই হোননা কেন। "গডফাদার" সিনেমাটি গোটাবিশ্বের সেরা ৫টি সিনেমার একটি। কিন্তু এই সিনেমা বানাতে গিয়ে মূলগল্পের অনেক অংশকেই বাদ দেয়ার জন্যে ফ্রান্সিস ফোর্ড কাপোলাকে অল্পবিস্তর সমালোচনা সহ্য করতে হয়েছে – যদিও সিনেমাটির চিত্রনাট্য লিখাতে মূলগল্পের লেখক মারিও পুজো নিজেও জড়িত ছিলেন। তারপরে ফ্রিডরিখ ফরসাইথের উপন্যস থেকে ডে অব দ্যা জ্যাকেল বা তারো অনেক পরে ড্যান ব্রাউনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ভিঞ্চি কোড, এঞ্জেলস এন্ড ডেমন্সও অল্পবিস্তর এই সমালোচনার শিকার হয়েছে।

ECrUK43.jpg


আর ঠিক এই কারণেই আমার দাবি – চলচ্চিত্র রুপ দিতে গেলে চিত্রনাট্যকার আর পরিচালকদের মূল গল্পতে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়। এই "সুভা" সিনেমার পরিচালক ও চিত্রনাট্যকার উভয়টাই চাষী নজরুল। এমনিতেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মত এত বড় মাপের একজনের উপন্যাস নিয়ে কাজ করা, তারও উপরে রবিঠাকুরের এমনই একটা উপন্যাস "সুভা", যেটা নিয়ে আগেও অনেকবারই বাংলাদেশ ও ভারত ২ দেশেই বহু নাটক-মঞ্চনাটক হয়েছে, আর পাঠকের সঙ্খ্যাও অগণিত – তাই কাহিনীর সামান্যতম পরিবর্তনও চোখে গুরুতরভাবে ধরা পড়তে বাধ্য। কিন্তু চাষী নজরুল যেনো এই দিকটাতেই দক্ষ সবচেয়ে বেশি – এর আগেও বহু উপন্যাস থেকে সিনেমা বানিয়েছিলেন তিনি যার মধ্যে দেবদাস, মেঘের পরে মেঘ, শাস্তি'র মত উপন্যাসগুলো উল্লেখযোগ্য। এই সিনেমার কাহিনী রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস থেকে যে হুবহু তুলে ধরতে পেরেছেন পরিচালক, সে বিষয়ে দর্শকের বোধ করি কোনো সন্দেহই থাকবেনা। যদি সামান্যতম কিছু চোখে পড়ার মত মনে হতে পারে – তা হলো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ডায়লগ ডেলিভারী, বা উপন্যাসে বর্ণিত লোকেশনের সাথে সিনেমার সেটের কিছু বৈসাদৃশ্য- তবে সবকিছু বিচারে পরিচালক চাষী নজরুল আমার কাছে থেকে ১০০তে ১০০ পাবেনই।

চরিত্র রূপায়ণ

আমি জীবনে যত বাংলা চলচ্চিত্র দেখেছি – সেইসব বিচারে ববিতাকে আমি সবার উপরে রাখি। হোক কোনো ধনীর আল্লাদি কন্যা, বদরাগী মেমসাহেব বা গ্রামের এক্কেবারে সহজসরল বধূ, মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে বা স্ত্রী – সব চরিত্রে ববিতাকে একেবারে শতভাগ মানিয়ে যায়। আর একটা কারণ আমার কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ – চোখের ভাষায় কথা প্রকাশ করা। যারা নির্বাক চলচ্চিত্র দেখেছেন তারা বোধকরি এই ব্যাপারটাতে একমত হবেন যে চোখের নাড়াচাড়া দিয়েই সিনেমার অনেককিছুই দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। আর ববিতার মুভি যারা অনেকই দেখেছেন তারা এই ব্যাপারটাতেও একমত হবেন আশা করি।

অনেকদিন পরে বাংলা চলচ্চিত্র পূর্ণিমাকে পেয়েছে – যে কোনো চরিত্রের সাথে শতভাগ মানিয়ে যাওয়ার মত চেহারা, প্রকাশভঙ্গি, চোখ – এর সবকটাই আছে তাঁর। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ঠিক আগের বছরই রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস শাস্তি অবলম্বনে চাষী নজরুলেরই সিনেমায় একটু বিপরীতমুখী এক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন – তার পরপরপই সুভা চরিত্রে অভিনয় করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তাও আবার বোবা-কালা চরিত্রে। তো এখানেই অঙ্গভঙ্গি আর চোখের ইশারায় কথা বলার যে দক্ষতা তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে পেরেছেন তিনি। মার্লোন ব্রান্ডো, রবার্ট ডি নিরোর মত বিখ্যাতদের অভিনয়ের যে ধারা মেথড একটিং – কোনো চরিত্রকে পর্দায় তুলতে গেলে বাস্তব জীবনেও সেই চরিত্রটার মত চলনবলন – এই ধারাটাও পূর্ণিমা রপ্ত করেছেন।

sFxDCT8.jpg


শাকিব খান – কিছু কিছু দৃশ্যে তাঁকে পূর্নিমার চেয়েও বেশি সাজগোজ করানো হয়েছে বলে মনে হয় – একটা গ্রাম্য তরুণ সারাদিন পাড়া দাপিয়ে বেড়িয়েও কিভাবে এতটা ফ্রেশ থাকে তা নিয়ে একচোট তর্ক-বিতর্ক জুড়ে দিতে পারে দর্শক, কিন্তু অভিনয় দিয়ে সেই খুঁতটুকুকে ক্ষমাসুন্দরদৃষ্টিতে দেখার অধিকার আদায় করেছেন তিনি। অশ্লীল যুগ থেকে বাংলা চলচ্চিত্রকে টেনে তুলে শক্ত করে দাঁড়ানোর জন্যে যে অল্প কজন চলচ্চিত্র কুশলী জড়িত – নিঃসন্দেহে শাকিবের অবদান সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত হওয়া উচিত তাদের মধ্যে। আর ভালো চলচ্চিত্রে চ্যালেঞ্জিং কোনো চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পেলে যে তিনি নিজের অভিনয়দক্ষতা কত ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন – সেই বিশ্বাস মনে গাঁথতে হলে এই মুভিটি দেখা আবশ্যক শাকিবভক্ত বা সমালোচকদের।

সিনেমার বক্তব্য

যেহেতু রবীঠাকুরের উপন্যাস, তাই কিছু মেসেজ এই সিনেমা থেকে দর্শক আশা করতেই পারে। পরিচালক আর অভিনয়শিল্পীদের জন্যে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সেই মেসেজটাকে কতটা গভীরভাবে দর্শকের মনে গেঁথে দেয়া যায়।

সুদখোর মহাজনের লোভ কতটা মারাত্মক হতে পারে আর সেই লোভের কাছে অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো এমনকি মহাজনের আপনজনেরাও কিভাবে পর্যুদস্ত হতে পারে সেই মেসেজটা এই চলচ্চিত্রে পরিষ্কার। প্রতিবন্ধী একটা মানুষকে সমাজ এমনকি তার পরিবার কতটা অবহেলা আর বোঝা হিসেবে দেখে, কনে দেখার নাম করে সামাজিকভাবে নারীকে বাজারের আলু-পটলের মত পণ্যরুপ বিবেচনা করা, ধনী চৌধুরীর বাড়ির আমগাছে সামান্য আম পাড়তে গেলেও যে পুরা সমাজে গুজব রটিয়ে কলঙ্কিত করে ছাড়েন চৌধুরী সাহেবরা- এরকম আরো অনেকগুলো সামাজিক অনাচারই যেমনটা উপন্যাসে ঠিক তেমন করেই চলচ্চিত্রে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন কলাকুশলীরা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top