What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review অগ্নি ২: বিগ বাজেটের ফ্লপ ছবি (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
EgD225e.jpg


চলতি বছরের ঈদে তিনটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। তার মধ্যে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবি 'অগ্নি-২'র প্রতি আছে অধিকাংশ মানুষের আগ্রহ। তার কারণও আছে- গত বছর 'অগ্নি (২০১৪)' সিনেমার জনপ্রিয়তা। 'অগ্নি' ছবির গল্পের বুনন খুব একটা শক্ত না হলেও সেখানে দেখার মতো অনেক কিছুই ছিল। পর্দায় উপস্থাপনা, লোকেশন, ক্যামেরার কারুকাজ- সব কিছুই ছিল অসাধারণ। বাংলা সিনেমায় প্রোটোগনিস্ট (মূল চরিত্র) চরিত্রে নারীদের খুব কমই দেখা যায়। মূল চরিত্রে নারীর ভূমিকা, তাও আবার অ্যাকশননির্ভর! এজন্যই 'অগ্নি' দর্শকদের নজর কেড়েছিল। তখন ছবি দেখে চোখ বন্ধ করে অনেকেই বলেছে বাংলা সিনেমায় মাহিয়া মাহির অ্যাকশন নায়িকা হিসেবে ভবিষ্যত উজ্জ্বল।

কিন্তু 'অগ্নি-২' যেন তালগোল পাকিয়ে ফেলল। ছবির শুরুতে একটি গির্জার কবরস্থানে মাহি (তানিশা) যায়। যেখানে 'অগ্নি'র নায়ক আরিফিন শুভর (শিশির) কবর। তাকে মেরে ফেলা হয়েছে। তানিশা তার প্রতিশোধ নেবে সে বিষয়ে কিছু সংলাপ আর শিশিরকে কীভাবে মারা হয়েছে সেই দৃশ্য দেখানো হয়। প্রশ্নটা জাগে মনে। প্রশ্নটা হলো- আগের পর্বে কি শিশির খৃষ্টান ধর্মের ছিল? যতদূর মনে- পড়ে একদমই না। পরিচালক হুট করে একটি চরিত্রকে ধর্মান্তরিত করে নেবেন সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত। 'অগ্নি'তে শিশির কোন ধর্মের তা দেখানো হয়নি। মনে হয়েছে, গির্জার নান্দনিক দৃশ্যটি যোগ করার জন্যই এভাবে দেখানো হয়েছে।

যাই হোক, 'অগ্নি-২'তেও তানিশা প্রতিশোধ নেয়। তার ভালোবাসার মানুষ শিশিরের হত্যাকারীদের তানিশা খুঁজে বের করতে থাকে। আর হত্যা করতে থাকে। এর সঙ্গে আগের ছবির থিমের পরিবর্তন এক জায়গায়। 'অগ্নি'তে তানিশা নেয় বাবা-মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ, আর 'অগ্নি-২' ছবিতে সে নেয় প্রমিক হত্যার প্রতিশোধ। অর্থাৎ ছবি আটকে গেছে প্রতিশোধের বেড়াজালে। তার মানে 'অ্যাকশন মুভি' বলতে আমাদের 'প্রতিশোধ' বিষয়টিকেই উপজীব্য করে নিতে হবে।

শুধু তাই নয়, 'অগ্নি-২' ছবিতে অনেক অসঙ্গতি লক্ষ করা গেছে। কখন তানিশা যাচ্ছে বাংলাদেশ, কখন বাংলাদেশের বান্দরবান, কখন ব্যাংকক তা বোঝা বড় মুশকিল হয়ে পড়েছিল। দর্শক একদমই বুঝতে পারবে না- বিষয়টা এমনও নয়। দর্শক বুঝবে, মানে তাকে বুঝে নিতে হবে।

২.
'অগ্নি-২' ছবিতে ইন্টারপোলকে দেখানো হয়। সেই ইন্টারপোলের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হলেন অভিনেতা অমিত হাসান। তাকে আমরা একটা কনফারেন্স হলে দেখি। যেখানে সে বাংলায় কথা বলে। তার সামনে সব বিদেশি আর অমিত হাসান কথা বলছেন বাংলা ভাষায়! কেন? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? হতে পারে বহু ভাষায় 'অগ্নি ২' মুক্তি পেয়েছে। এটাকে বাংলা ভাষায় আমলে নিয়ে সবকিছু বাংলাতেই করাতে চেয়েছেন। কিন্তু সত্যি বলতে কী, এ বিষয়গুলো দেখতে দৃষ্টিকটু লেগেছে। এমনও তো হতে পারত, আমিত হাসান ইংরেজিতে কথা বলতেন আর সাবটাইটেল হিসেবে বাংলা ভাষা। ছবিতে বিভিন্ন সময়ে অমিত হাসান ইন্টারপোল কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বাংলায় কথা বলেছেন! যা পুরোই বেমানান লেগেছে।

Od813G1.jpg


সিনেমায় বিভিন্ন ব্যাখ্যাহীন দৃশ্য আছে। যেমন, এক জায়গায় তানিশার কোমরে উপরে গুলি লাগে। তারপর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। নায়ক তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। সমুদ্রের একটি বিচে গিয়ে গাড়ি থামায়। সে সময় একটি গান শুরু হয়। গানটা সত্যিই হৃদয়কাড়া। সেখানে তানিশার জ্ঞান ফেরে। এবং নায়ক কোথা থেকে একটা ব্যান্ডেজ এনে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেয়। এখন দর্শককে বুঝে নিতে হবে- ওই গুলি কি তানিশার কোমরের উপরের জায়গায় ঢুকেছিল, নাকি জায়গাটা স্পর্শ করে চলে গেছে? কারণ যদি গুলি শরীরে প্রবেশ করতো তবে তো সেটা বেরও করতে হতো।

তারপর দেখা যায় নায়ককে বাঁচাতে তানিশা ইন্টারপোল অফিসে হামলা চালায়। একাই মারামারি করতে করতে ঢুকে পড়ে ইন্টারপোল অফিসে। অবাক হওয়ার বিষয় হলো- বিশ্বের ক্ষমতাধর এই বাহিনীর অফিসে প্রবেশ করা কি এতটাই সহজ?

এমনই সব দৃশ্যে দর্শক বিভ্রান্ত হবে। অ্যাকশনধর্মী বলে সে সিনেমায় গল্প থাকবে না তাতো হতে পারে না। আবার অ্যাকশনধর্মী বলে এক দৃশ্যের সঙ্গে পরবর্তী দৃশ্যের সংযোগ দুর্বল কেন হবে? যেমনটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, তানিশা কখন বান্দরবান আসে আবার হুট করে ব্যাংকক চলে যায় তা দর্শককে দেখে বুঝে নিতে হবে। দুই দৃশ্যের মাঝখানে রাস্তাটা তৈরি করতে হবে, সেই কাজটি পরিচালক করতে ব্যর্থ হয়েছেন।

৩.
RSH6wtd.jpg


এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে। ভারতীয় ছবির 'হিট-ফ্লপ' বিষয়টি আসে তার আয়ের উপর। তবে যখন দর্শকের গ্রহণযোগ্যতার প্রসঙ্গ আসে তখন কিন্তু ছবির কাহিনী, তার কুশলীদের দক্ষতাই আসল হয়ে ওঠে। কুশলী বলতে পরিচালক থেকে শুরু করে অভিনয়শিল্পী, এডিটিং, ক্যামেরাম্যান, কস্টিউম ডিজাইনার ইত্যাদির বোঝানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যম থেকে জানা যায়, ১০৪টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তিপ্রাপ্ত 'অগ্নি ২' মুক্তির প্রথম দিনেই নাকি দুই কোটি আট লাখ টাকার ব্যবসা করেছে বলে দাবি করছে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান 'জাজ মাল্টিমিডিয়া'। এখন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান অর্থলগ্নি করেছে তার কাছে ব্যবসাটাই বড়। এটা স্বাভাবিক! কিন্তু এত টাকা অর্থলগ্নি করেও কেন এমন দুর্বল গল্পের ছবি নির্মাণ করতে যাবে? এই প্রশ্নের উত্তর অজানা।

একটি ছবির জন্য যা প্রয়োজন তার সবই তো আছে এ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের। ভালো প্রডাকশন হাউজ হিসেবে তারা দুই বাংলার শিল্পীদের নিয়ে কাজ করেছেন। ছবিতে ভারতীয় অভিনেতা ওম নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তার অভিনয় প্রশংসাযোগ্য। মাহিও বেশ ভালো করেছেন। বিশেষ করে গানগুলোতে মাহির উপস্থিতি সবাইকে মুগ্ধ করবে। অভিনয়, নাচে, গানের দৃশ্যে মাহি অসাধারণ। ছবির গানগুলোও সুন্দর, গানের দৃশ্যগুলোও সুন্দর ছিল। পোশাক ডিজাইনে মুম্বাইকে মাথায় রাখলেও এটা বেশ মানিয়েছে মাহিকে। 'অগ্নি-২' ছবিতে মোট পাঁচটি গান আছে। যার মধ্যে সবচেয়ে আলাদাভাবে ভালো লেগেছে 'তোরে খুঁজি' গানটি। এটি লিখেছেন আকাশ, তুহিন ও রন্দিপ। গেয়েছেনও আকাশ। কিন্তু শেষপর্যন্ত দর্শক তো পুরো একটি সিনেমা দেখতে যায়। যেখানে গল্প থাকবে, যে গল্পের সঙ্গে দর্শকও জড়িয়ে যাবে। এখানেই পরিচালককে আরেকটু আন্তরিক পেলে মন্দ লাগতো না। ছবির কয়েকটি অপরিকল্পিত দৃশ্য সে কথা বারবার মনে করে দিয়েছে। পরিচালক যেন বলে দিতে চাইছেন, 'তুমি বুঝে নাও…!'

zaeYBpc.jpg


এত অর্থলগ্নি করে কেন এমন সিনেমা তৈরি করা হয়? বাংলাদেশের মতো দেশে এত অর্থ খরচ করে সিনেমা বানিয়ে তার সফলতা যদি নির্ধারণ করা ছবিটি কত টাকা কত দিনে আয় করলো তার উপর- তবে তা ভুল। বলে নেওয়া জরুরি, 'অগ্নি-২' দর্শক হলে দেখতে গিয়েছে গত বছরের 'অগ্নি'র সফলতার কারণে। কিন্তু এবার গল্পহীন, সামঞ্জস্যহীন সিনেমা দর্শকরা মনে রাখবে। আর সামনের 'অগ্নি-৩'র ওপর প্রভাব পড়াটাও অস্বাভাবিক নয়।

অনেকেই বলে থাকেন- বাংলা চলচ্চিত্রের ভগ্নদশা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তরুণ চলচ্চিত্র পরিচালকরা। এ অবস্থায় সিনেমার ভালো দিক তুলে ধরা উচিত। সমালোচনাকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। কিন্তু তবুও যে দর্শক নিজের অর্থ খরচ করে ৩ ঘণ্টা আলাদা করে সময় বের করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে সিনেমা হলে ঢোকার পর ছবি পছন্দ না করে বের হয়ে আসে। সেই দর্শক যদি পুনরায় সিনেমা হলে ফিরে না যান তবে এর দায়ভার কাদের ওপর বর্তায়?
 

Users who are viewing this thread

Back
Top