What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Other সর্বকালের ব্যবসাসফল ছবির নায়িকা অঞ্জু ঘোষ (1 Viewer)

এলেন দেখলেন জয় করলেন— কথাগুলোর সার্থকতা একেবারে পরিপূর্ণ হয়ে ধরা দেয় অঞ্জু ঘোষের জীবনে। প্রথম ছবি 'সওদাগর' (২৮/০২/১৯৮২) দিয়ে যেন সারা দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মধ্যে হইচই ফেলে দিলেন। ওয়াসিমের মতো সুপারস্টার থাকলেও ছবির সফলতার প্রধান ভূমিকা হয়ে দাঁড়ালেন তিনি। কেন?

ewAgpWW.jpg


'আয়না বিবির পালা' ছবিতে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে অঞ্জু

বিশেষ করে তরুণ-যুবাদের মূল আগ্রহের কারণ হয়ে উঠেছিল রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া অঞ্জু। দর্শকদের চর্চার কারণ হয়ে উঠলেন তিনি। ছবির সেই বিখ্যাত গান আর নাচে যেন সমস্ত দর্শকদের এক হ্যাঁচকা টানে অঞ্জু নিয়ে আসলেন সিনেমার হলের বারান্দায়। এমনও হয়েছে ছবিটি দেখতে আসা দর্শকদের চাপে গেটের তালাও ভেঙে গেছে।

'মনেরই ছোট্ট ঘরে আগুন লেগেছে হায়রে' শিরোনামের গানে সদ্য যুবতী অঞ্জুর রূপ ও নাচে যেন দেশের সমস্ত সিনেমা হলে উৎসবের বন্যা বয়ে গেল। প্রতিটি হলের সামনে ঝুলতে থাকলো 'হাউসফুল' বোর্ড। প্রযোজক পাড়া থেকে সিনেমা হল মালিকদের মুখে অঞ্জু বন্দনায় মুখরিত হয়ে উঠলো। কিন্তু তারপরও গানটি অশ্লীলতার অভিযোগে সমালোচিত হলো। একদিকে সমালোচনা আর অন্যদিকে অঞ্জু নিত্য নতুন ছবির গান আর নাচ দিয়ে হ্যামিনিয়নের বাঁশিওয়ালার মতো ঝাঁকে ঝাঁকে দর্শকদের হলমুখী করতে থাকলেন। এভাবে তিনি হয়ে উঠলেন পয়সা ফেরত নায়িকা, এমনও সংবাদ হয়েছে 'প্রযোজকদের সোনার হাঁস অঞ্জু ঘোষ'।

Q6xedQW.jpg


'পদ্মাবতী' ছবির দৃশ্যে অঞ্জু

অঞ্জু ঘোষের জন্ম ১৯৫৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর জেলার ভাঙায়, তার ভালো নাম অঞ্জলী ঘোষ, বাবা সুধন্য ঘোষ ও মা বীনাপানি ঘোষ, তারা দুজনই ছিলেন স্থানীর যাত্রা দলের কণ্ঠ শিল্পী, সে হিসেবে ছোট্ট অঞ্জলী ঘোষও সেই যাত্রাদলে অভিনয় করতেন এবং গানও গাইতেন, তবে অভিনয়ের থেকে গানেই বেশি মনোনিবেশ ছিলেন তিনি। এক সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিখ্যাত যাত্রা দল ভোলানাথ অপেরাতেও কিশোরী অঞ্জলী ঘোষ অভিনয় করতেন ও গান গাইতেন। এটা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগের কথা, যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা সপরিবারে চট্টগ্রামে চলে আসেন এবং সেখানেও বিভিন্ন যাত্রা পালাতে নাচ-গান এবং অভিনয়ে নিয়মিত হয়ে গেলেন। বিখ্যাত 'রূপবান', 'সাত ভাই চম্পা'সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় পালা করে অঞ্জলী তখন এক শ্রেণির দর্শকদের কাছে পরিচিত এক নাম। সে সময় যাত্রাপালার জনপ্রিয় অভিনেতা পঙ্কজ বৈদ্য'র সঙ্গে জুটি হয়ে অভিনয় করেন তিনি, আর এই পঙ্কজ বৈদ্যই পরবর্তীতে 'মীমাংসা', 'উজান ভাটি'সহ বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন।

যাই হোক…তেমনি একটি মঞ্চে পরিচালক এফ কবির চৌধুরীর নজরে পড়েন অঞ্জলী। কবীর সাহেব আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন, মঞ্চে প্রথম দেখাতেই অঞ্জলী ঘোষকে সিনেমার নায়িকা বানানোর চিন্তা ভাবনা করে ফেলেন তিনি। সরাসরি নায়িকা হওয়ার প্রস্তাবও দেন। 'রাজমহল', 'শীষনাগ', 'রাজ নন্দিনী', 'রাজকন্যা', 'সুলতানা ডাকু'র মতো বিগ বিগ হিট ছবির পরিচালক এফ কবীর চৌধুরীর নাম ডাক তখন বিনোদন জগতে দারুণভাবে সুপরিচিত। এমন একজনের কাছ থেকে সরাসরি নায়িকা হয়ে অভিনয়ের প্রস্তাবে না করার সাহস কখনই ছিল না অঞ্জলীর। কারণ তখন যে তাকে চলচ্চিত্র ডাকছে অঞ্জু ঘোষ হয়ে পর্দা কাঁপাতে। ঠিকই 'সওদাগর' (২৮/০২/১৯৮২) ছবিতে নাচ-গান-অভিনয়ে দর্শকদের মাতওয়ারা করতে। প্রথম ছবিটিই হয়ে যায় বাম্পার হিট, সেই সঙ্গে অঞ্জু জানান দেন বেড়াতে নয় বরং সিনেমার পর্দা কাঁপাতে এসেছেন তিনি।

NyS8PnZ.jpg


'সোনার সংসার' ছবির কলা-কুশলীদের সঙ্গে

প্রথম ছবির অভাবনীয় সাফল্যের পর তার মুক্তি পায় মহিউদ্দিনের সেই বিখ্যাত ছবি 'বড় ভালো লোক ছিলো' (৩০/০৭/১৯৮২)। ঝলমলে চরিত্র থেকে একেবারে সাধারণ গ্রাম্য চরিত্রে অঞ্জুকে দেখে যারপরনাই অবাক হয়েছিল তখনকার দর্শক। কিছুতেই মিলাতে পারছিলেন না কদিন আগে দেখা সমুদ্রপারের সেই আবেদনময়ী অঞ্জুকে, যারা তার প্রথম ছবির পোশাক-পরিচ্ছেদ নিয়ে সমালোচনা করেছেন সেই তাদের অঞ্জু তার সুনিপুণ অভিনয় দক্ষতা দিয়ে কড়া জবাব দিলেন। এই ছবিটিও হয়ে যায় সুপারহিট, সেই সঙ্গে সমালোচকদের দৃষ্টিতে অঞ্জু হন প্রশংসিত।

পরের ছবি 'রাজ সিংহাসন'ও (০৭/১০/১৯৮২) হলো সুপারহিট, পরপর তিন ছবির সফলতায় হ্যাটট্রিকের খেতাব পেলেন তিনি। এরপর 'আবেহায়াত', 'প্রাণ সজনী', 'তিন বাহাদুর', 'ধন দৌলত', 'আশীর্বাদ', 'পদ্মাবতী', 'জালিম', 'চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা', 'রাজদণ্ড' 'নরম-গরম', 'রাই বিনোদিনী', 'রাজকুমারী'সহ টানা পনেরোটি ছবি সুপারহিট ব্যবসা করে যা একটি রেকর্ডও বটে। তবে এই ধারাবাহিকতা তিনি টানা ধরে রাখতে পারেননি। ১৯৮৭ সালের শেষের দিকে ক্যারিয়ারে বেশ ছন্দ পতন ঘটে। দু-একটি ছাড়া একটানা বেশ কিছু ছবি ফ্লপের খাতায় উঠে।

n8ekPbE.jpg


বিখ্যাত 'বেদের মেয়ে জোছনা' ছবির দৃশ্য

চিন্তিত অঞ্জু ঠিকই নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখেন এবং ফিরে আসেন ১৯৮৯ সালের বিখ্যাত 'বেদের মেয়ে জোছনা'র জোছনা হয়ে দর্শকদের ভালোবাসায় পূর্ণ হতে, হলেনও তাই। ছবিটি শুধু বিগ হিটই নয় বরং দেশের সর্বকালের সেরা ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে এখনো বীরদর্পে টিকে আছে, কথার চল আছে ছবিটির এমন রেকর্ড নাকি কখনই ভাঙার নয়। ভাগ্যবান হয়তো একেই বলে, দেশ সেরা ব্যবসাসফল ছবির নায়িকা হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে স্বর্ণাক্ষরে।

অঞ্জু যে ধরনের চলচ্চিত্র দিয়ে অভিনয়ে আসেন তখন তার সমসাময়িক রোজিনা-অলিভিয়ারা সে অঙ্গন দাপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। এখানে বোঝানো হয়েছে ফোক ফ্যান্টাসি ছবিগুলোকে, সে ক্ষেত্রে অঞ্জুর প্রথম ছবির (সওদাগর) সাফল্যে যেন তাদের ভিত কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দেয়। রোজিনা-সুচরিতারা সংকট কাটিয়ে উঠলেও অলিভিয়া চলে যান অন্তরালে। অঞ্জু-ওয়াসিম জুটির একচেটিয়া সফলতার কাছে অলিভিয়া-ওয়াসিম জুটি অনেকটা ম্লান হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জুটি নির্ভর অলিভিয়াও চলচ্চিত্রে অনিয়মিত হয়ে যান।

HWV9z80.jpg


অঞ্জু বাংলাদেশ ষোলো বছর ক্যারিয়ারে ১২৭/২৮টি ছবিতে অভিনয় করেন। সুপারস্টার ওয়াসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন ও জাভেদের সঙ্গে তার জুটি গড়ে উঠেছিল। যার মধ্যে ওয়াসিমের সঙ্গেই তার সফলতার হার ছিল বেশি। এ জুটির বেশির ভাগ ছবিই ছিল সফল, বিশেষ করে 'সওদাগর', 'আবে হায়াত', 'প্রাণ রজনী', 'তিন বাহাদুর', 'পদ্মাবতী', 'চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা', 'নরম-গরম', 'কোরবানি', 'সোনাই বন্ধু', 'সতী নাগকন্যা' অন্যতম।

অঞ্জু অভিনয়ের পাশাপাশি কিছু চলচ্চিত্রে গানও গেয়েছেন। এমনও শোনা যায়, কিছু ছবিতে সহযোগী সুরকার হিসেবে কাজও করেছিলেনভ তবে এর সঠিক কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তার সকণ্ঠের গানের মধ্যে 'নরম-গরম' ছবিতে কুমার বিশ্বজিতের সঙ্গে 'ওরে ও বাঁশিওয়ালা' এখনো শ্রোতাপ্রিয় হয়ে আছে। অঞ্জু দুটি ছবি প্রযোজনাও করেছিলেন, যার মধ্যে জাভেদকে সঙ্গে নিয়ে 'বসন্ত মালতী' অন্যতম।

নব্বই পরবর্তীতে একঝাঁক নতুন মুখের আগমনে সিনিয়র কিছু অভিনেত্রী অনেকটা নিশ্চুপ হয়ে পড়ছিলেন অঞ্জুও ছিলেন তাদের দলে। ঢাকায় বাজার মন্দা থাকলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তার জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। ১৯৯৬ সালে কলকাতাতে চলে যান এবং পরবর্তীতে সেখানকার চলচ্চিত্রে জনপ্রিয় অভিনেত্রী হিসেবে থিতু হন। বর্তমানেও তিনি সেখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

pOsNqMd.jpg


কলকাতার চিরঞ্জীতের সঙ্গে

অঞ্জু ঘোষ সম্পর্কে একটি চমকপ্রদ তথ্য না দিলেই নয়, তা হলো, তিনিই দেশীয় একমাত্র অভিনেত্রী যিনি নিজের অভিনীত চলচ্চিত্রের রিমেকেও নায়িকা হয়েছিলেন। ছবিটির নাম কী?

অঞ্জু অভিনীত ছবির জনপ্রিয় গান: এই বৃষ্টি ভেজা রাতে চলে যেও না, ওরে ও বাঁশিওয়ালা, এই নিশি রাইতে, জলসা ঘরের মাতাল হাওয়ার তুফান জেগেছে (নরম-গরম), একটি রাতের গল্প তুমি (মর্জিনা), মনেরই ছোট্ট ঘরে, ওরে মন চোরা, জানি না অবুঝ মন কী যেন চায় (সওদাগর), পদ্মাবতী বেদেনী হবে নাকি ঘরনি, নয়ন জুড়ে আছে স্বপন, ঘোমটা খুলে দিলাম দেখো না (পদ্মাবতী), পায়ের মাপ দাও (রাজ সিংহাসন), মেঘ যত ছিল মনে (খেলার সাথী), কে তুমি হে জনাব (তিন বাহাদুর), এতদিন যারে আমি খুঁজেছি (মহাশত্রু)।

এ কী আগুন জ্বলে, ওগো সাথী আমার তুমি কিছু বলো না, আমি জানতাম তুমি আসবে (মর্যাদা), পরদেশি বন্ধু আমায় পাগল করিলো (সোনাই বন্ধু), বাঁশরিয়া না হইয়া যদি হইতাম (চন্দনা ডাকু), বন্ধুরে রাখো তোমার বুকে ধরিয়া (সতী নাগকন্যা), তুমি আমারই আমারই থাকবে (ন্যায় যুদ্ধ), দিন কাটে যেমন তেমন, আজকের এই চাঁদের আলো (সোনার সংসার), আমার নাম মর্জিনা (রক্তের বন্দী), কিছুটা তোমার আর কিছুটা আমার (রাজদণ্ড), এই মন চলেছে ভেসে (বিসর্জন)।

72MMD1l.jpg


চাকবুম চাকবুম, পিরিতের কলসী পেলে, আমার প্রেমের মুকুট (আবে হায়াত), ঐ চাঁদ সাক্ষী রবে (পদ্ম গোখরা), জীবনের সাধ হলো আরও একবার (সততা), এই আগুন নয় সেই আগুন (ফুলন), আমি তোমায় ভালোবাসি, এক্কা দোক্কা ছক্কা, সাক্ষী থেকো বাঁকা চাঁদ, ফুল বাগিচায় ফুটেছে (মহুয়া সুন্দরী), মুছে গেল মুছে গেল নয়নেরও জল (মালাবদল), কত রঙ্গ জানোরে (রাই বিনোদিনী), আমার মনের বেদনা, সইতে পারি না ওরে (সোনাই বন্ধু), ও সোহেলিয়া, ওরে ও প্রিয়তমা শবনম, প্রেমেরও বাগানে ফুল ফুটেছে (আসমান জমিন)।

দিনে বিরতি রাতে পিরিতি (মানিক রতন), একা ছিলে বলে দেখা দিয়েছি (জনি ওস্তাদ), ওরে ও পরদেশি বাবু (আমানত), একা একা লাগে (বাহার), আমার শরম শরম লাগে, কথা দাও ও সজনী (প্রতিবাদ), আমি তোমারই প্রেম ভিখারি, মনটা যদি খোলা যেন (চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা), আশায় আশায় দিন কেটে যায়, তুমি চিরসাথি হয়ে এলে জীবনে (মহান বন্ধু), পাখিরে তুই দুরে থাকলে (কালো গোলাপ)

j4jNMcx.jpg


ও গাঙ্গের পানি (বসন্ত মালতী), বেদের মেয়ে জোছনা আমায় (বেদের মেয়ে জোছনা), চাঁদের সাথে আমি দেব না (আশীর্বাদ), শিশুকাল ছিল ভালো, প্রেম সাগরে ঝাঁপ দিওনা, কী যাদু করিলা (প্রাণ সজনী), তুমি ছিলে মেঘে ঢাকা চাঁদ (দায়ী কে?), জনম জনমের সাথী আমরা দুজন (পুস্পমালা), ওগো মন ভোলা (আদেশ), লোকে কয় কয় ভালোবাসা ভালো নয় (কুসুম পুরের কদম আলী), বন্ধু কোন দোষেতে (অচিন দেশের রাজকুমার), পদ্মাবতী বেদেনী হবে নাকি ঘরনি (পদ্মাবতী), ভালোবাসি তোরে বন্ধু, বুকেরই ভিতরে রাখিবো তোমারে (আমানত), তুমি আমার হবে, আহা গুনি জনে দেখি কয় (বিচ্ছেদ), ও চোখে কী যে নেশা (আন্দাজ)।

* লিখেছেন: আরিফুল হাসান
 

Users who are viewing this thread

Back
Top