What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review আনন্দ অশ্রু : ভালো লাগার অন্য নাম কষ্ট (1 Viewer)

Nagar Baul

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 2, 2018
Threads
1,152
Messages
13,339
Credits
547,766
Pen edit
Sailboat
Profile Music
8B5QDpD.jpg


ভালোলাগা কি? আমার কাছে ভালোলাগা মানে বারবার সেদিকে ফিরে তাকানো, বারবার দেখা। কিন্তু ভালো লাগার অন্য নাম কষ্ট, তা আমি উপলব্ধি করেছি ❝আনন্দ অশ্রু❞ সিনেমাটি দেখার পর। এতো ভালো লেগেছে যে এই সিনেমা আমি একবারের বেশি আর দেখতে পারি নি। সিনেমার আবেগ এতো প্রবল ভাবে নাড়া দিয়েছিল যে দ্বিতীয় বার সিনেমাটি দেখি নি। ভালোলাগা যে শুধুমাত্র ভালোবাসা থেকে জন্ম নেয় তা নয় ভয় এবং কষ্ট থেকেও ভালোলাগা জন্ম নেয়। ❝আনন্দ অশ্রু❞ সেই কষ্টের নাম। সালমান শাহ এর পাগল হয়ে থাকা, শাবনূরের ভালোবাসার কাছে যেতে চাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা, কাঞ্চির মনের মানুষকে ভালো করে তোলার প্রয়াস সব কিছু দিয়ে সিনেমাটি এতো হৃদয়স্পর্শী ছিল যা মানুষের মনে কষ্টের দাগ রেখেছিল।

➔সিনেমাঃ আনন্দ অশ্রু

➔মুক্তিঃ ১ আগস্ট, ১৯৯৭

➔কাহিনীঃ জামান আক্তার

➔পরিচালকঃ শিবলী সাদিক

➔সংগীত পরিচালকঃ আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল

➔অভিনয়ঃ সালমান শাহ্‌, শাবনূর, কাঞ্চি, হুমায়ূন ফরীদি, সাদেক বাচ্চু, দিলদার।

সিনেমার নাম ❝আনন্দ অশ্রু❞ হলেও পুরো সিনেমাতে কষ্ট ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাইনি। সালমান শাহ যে কত বড় মানের অভিনেতা তা আনন্দ অশ্রু যে দেখেছে সে বুঝতে পারেছে। ঐ পাগলামি, তার কষ্টে বেঁচে থাকার দৃশ্যগুলো আমার যখনি মনে পড়ে চোখের কিনারাতে যেন অশ্রু জমে যায়। সিনেমা নিয়ে কি বলব, এই সিনেমার সাথে কত কিছু জড়িয়ে আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। বাংলাদেশের ইতিহাসের সব থেকে ক্রেজ সৃষ্টিকারী নায়ক মনে হয় সালমান শাহ। তার অধিকাংশ সিনেমা আমি দেখেছি তার মৃত্যুর পর। একজন মানুষের অভিনয়, স্ট্রাইল কতটা ব্যতিক্রমী হলে মৃত্যুর পর ও এতো বেশি জনপ্রিয় হয়ে বেঁচে থাকতে পারে তার অন্যতম উদাহরণ সালমান শাহ্‌। সালমান শাহ্‌ ' র সেরা সিনেমার নাম যদি আমাকে বলতে বলা হয়ে থাকে তাহলে বলব ❝আনন্দ অশ্রু❞", এই সিনেমা এর থেকে বেশি ভালো করা সম্ভব নয়, আর হবেও না।

eijJB84.jpg


সিনেমাতে কি নেই? পবিত্র ভালোবাসা, বাবার স্নেহ, পারিবারিক কলহ, লোভ-লালসা, নতুন স্বপ্নে বেঁচে থাকার আশা -সব কিছু মিলিয়ে আনন্দ অশ্রু যেন পরিপূর্ণ সিনেমা। সিনেমাতে নেই কোন দূর্দান্ত অ্যাকশন, রগরগে দৃশ্য। তবুও অনন্য মহিমায় বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলোকিত হয়ে রয়েছে ❝আনন্দ অশ্রু❞। সিনেমার কাহিনী শুরু হয় বড়লোক বাবার গান পাগল এক ছেলেকে দিয়ে। যার জীবনে গানই সব, গানের টানে ছুটে চলে আসে দেওয়ান পরিবারের ছেলে গ্রামে। পরিচয় হয় গ্রামের দূরন্ত ষোড়শী এক মেয়ের সাথে। তার দুরন্তপনাতে মুগ্ধ হয়ে, প্রমে জড়িয়ে পড়ে দুজন দুজনের। ধনী গরীবের ভালোবাসার যে লড়াই দেখানো হয়ে থাকে অন্যসব ভালোবাসার সিনেমাতে সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে পুরোপুরি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয় সিনেমাটিকে। এখানেই ❝আনন্দ অশ্রু❞ সবার থেকে আলাদা। সম্পত্তির লোভে নিজের চাচার কাছে ষড়যন্ত্রে শিকার হয় খসরু। জোর করে ড্রাগ দিয়ে অসুস্থ করে রেখে ধীরে ধীরে পাগলে পরিণত করে তোলে খসরুকে। মৃত্যু হয় একটি সুন্দর ভালোবাসার। সিনেমার শেষদিকে কাঞ্চির ভালোবাসা ও শাবনূরের মনের যন্ত্রণার সমাপ্তি ঘটে মর্মান্তিকভাবে।

❝আনন্দ অশ্রু❞র নামকরণের সার্থকতা কোথায় তাহলে? পুরো সিনেমাতে তো শুধু অশ্রু এবং অশ্রু। ভালোবাসার মানুষের পাশে থেকে নির্বিচারে তাকে ভালোবেসে যাবার নাম আনন্দ, আর সেই ভালোবাসার মানুষ যখন তার নিজের কাছের মানুষটিকে চিনতে না পারে সেই বেদনার নামই হল অশ্রু। একবার ভাবুন যে মানুষটিকে আপনি সব থেকে ভালবাসেন কিন্তু সে আপনাকে চিনতে পারছে না, যে মানুষটি আপনাকে এক মূহুর্ত না দেখলে ঘুমাতে পারত না, সে আপনাকে চিনতে পারছে না, কেমন লাগবে? অশ্রুতে ভিজে উঠবে কি আঁখি ? আবার একটু ভাবুন বিপদের সময় সেই মানুষটিকে আপনি সবথেকে কাছে রাখতে পারছেন, তার সেবা শুশ্রূষা করতে পারছেন, সেটা কি অনাবিল আনন্দ নয়? সেদিক থেকে ❝আনন্দ অশ্রু❞ নামকরণের মহত্ব অনেক। অনেক বেশি গভীর নামের বিশ্লেষণ।

Jn0vWed.jpg


আমার কাছে আনন্দ মানে সিনেমার গান আর অশ্রু মানে সালমান শাহ্‌ এর অভিনয়। কতটা ডেডিকেশন থাকলে এমন প্যাশনের সাথে অভিনয় করা যায়। জোর করে ড্রাগ দেওয়ার সময় সালমান শাহ্‌ এর চোখে মুখে ভয়ের অভিব্যক্তি দেখলে আপনার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠবে। ইঞ্জেকশনের সুই শরীরে ঢুকা মাত্র সালমানের চিৎকার আপনার কানে শূলের মত বিঁধবে। হাসপাতালের লবিতে মাথার চুল ঘসতে ঘসতে সালমানের হেঁটে বেড়ানো দেখলে আপনার নয়ন ভিজতে বাধ্য। এমন অভিনয় আপনি আর দ্বিতীয়টি দেখবেন না। পর্দায় খসরু চরিত্রে অভিনয়কারী সালমান শাহ্‌ এর অভিনয় দেখে আপনি ভাববেন খসরুর কষ্ট আপনার নিজের কষ্ট। বুকের কোণে চাপা কষ্ট অনুভব করবেন। হয়তো চোখের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে পারে দু ফোঁটা জল। সাথে রয়েছে শাবনুরের চপলা ও মায়াময় অভিনয়। একই চরিত্রে দুরন্ত এবং শান্ত, দায়িত্ববান এক মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যায় এ সিনেমাতে। আসলে সিনেমার প্রাণ ছিলো যে সালমান আর শাবনূর তা যে মুভিটি দেখেছে সেই অনুধাবন করতে পেরেছে।

সাদেক বাচ্চু বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। একজন বাবার কাছে সন্তানে সুস্থ হয়ে ওঠা যে কতটা জরুরি তিনি অভিনয় দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। পর্দায় সব সময় যাকে দেখবেন খল নায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে সেই তিনি একজন মমতাময়ী বাবার চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন সুনিপুন ভাবে।
খল নায়ক চরিত্র যেখানে রয়েছে হুমায়ূন ফরীদি সেখানে আলাদা করে কি বলা যেতে পারে। একদিকে সালমান শাহ্‌ এর হৃদয়বিদারক অভিনয় অন্যদিকে নির্মম পাষান চরিত্রে ফরিদী। কতটা নির্মম মানুষ হতে পারে সম্পত্তির জন্য হুমায়ূন ফরিদী তার অন্যতম প্রতীকী।

এছাড়াও কাঞ্চির 'ভাবনা' চরিত্রের উপস্থিতি ত্রিভুজ প্রেমের সংকট হিসেবে কাহিনীচিত্রের গভীরতা বাড়িয়েছে। চলচ্চিত্রের পর্দা এক জীবন্ত আখ্যানে রূপ নিয়েছে ।

FT1Maq4.jpg


আনন্দ অশ্রুর অন্যতম সেরা দিক হচ্ছে সিনেমার গান। 'তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ে সুখের দোলা" এবং "তুমি আমার এমনই একজন" গান দুটিকে কালজয়ী বলা হয়ে থাকলে ভুল বলব না।

সর্বোপরি বলব, আমাদের হয়তো দ্য নোটবুক নেই, আশিকির মত সিনেমা নেই কিন্তু আমাদের ❝আনন্দ অশ্রু❞ কোন দিক থেকে কম নয়। ❝আনন্দ অশ্রু❞ নিজস্ব মহিমাতে উজ্জ্বল। সালমান শাহ্‌'র অভিনয় দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যে শিল্প সৃষ্টি করেছেন পরিচালক শিবলী সাদিক তা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে ততদিন জ্বলতে থাকবে। মানুষদের দু চোখ ভরে অশ্রু প্রদানের জন্য এই একটি মুভিই যথেষ্ট।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top