What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Review ঘুরে দাঁড়ানোর উড়ান ধরলেন দেব (1 Viewer)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,016
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
lEnlRgv.jpg


সিনেমা: ককপিট

পরিচালক: কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়

অভিনয়: দেব, রুক্মিণী মৈত্র, কোয়েল মল্লিক

পটনায় প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝা। তুমুল বৃষ্টি ধুয়ে দিচ্ছে গুয়াহাটি বিমানবন্দরকে। ভুবনেশ্বরের আকাশে বিমানের গিজগিজে ভিড়। তাই, ওখানেও নামা সম্ভবপর নয়। কিন্তু মুম্বই থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা হওয়া বিমানকে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণে নিকটবর্তী কোনও বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ না করালেই নয়। তা হলে?

৩৬ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে ওড়ার সময়ে যে রকম কৃত্রিম বায়ুচাপ বিমানের কেবিনে থাকে, সেটা হঠাৎ বেরিয়ে যাচ্ছে। সঙ্কট সামাল দিতে এক ধাক্কায় ২৬ হাজার ফুট নামিয়ে বিমানকে নিয়ে যাওয়ার ফলে দ্রুত ফুরোচ্ছে বিমানের জ্বালানি। কলকাতার এটিসি, মানে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল জানিয়েছে, সেখানেও ঝড়বৃষ্টি। ল্যান্ডিংয়ের সময়ে দৃষ্টিপথ ঢাকা থাকবে মেঘের পুরু আবরণে। কী হবে?

ককপিটে নিয়ন্ত্রণ হাতে বসা ক্যাপ্টেন দিব্যেন্দু রক্ষিতের চোয়াল শক্ত, চোখেমুখে উৎকণ্ঠার চেয়েও বেশি অদম্য জেদ। ১৪৬ জন যাত্রীকে নিরাপদে নামাতে তিনি বদ্ধপরিকর। কী করবেন তিনি?

lGICcbx.jpg


একটা সময়ে স্কুলকলেজের ছাত্রীদের একটা বড় অংশের ইচ্ছে ছিল, স্বামী যেন পাইলট হয়। পাইলটের মধ্যে একই সঙ্গে সুদর্শন, অর্থবান ও বীরপুরুষের ঠিকঠাক পরিমাপের ব্লেন্ড, এমনটাই ছিল ধারণা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নের স্বামীর শীর্ষস্থান থেকে পাইলটকে কিছুটা যেন পিছু হটতে হয় সফ্‌টঅয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কর্পোরেট-কর্তা, উদ্যোগপতিদের দাপটে। 'ককপিট' ছবিটা, মনে হচ্ছে, পাইলটদের প্রতি অল্পবয়সী, অবিবাহিত মেয়েদের সেই দুর্নিবার আকর্ষণ ও মোহ হইহই করে ফিরিয়ে আনল। আর একই সঙ্গে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করল প্রসেনজিৎ-উত্তর টলিউডে নায়কের সিংহাসনে দেবের আধিপত্য।

অভিনেতা অনেকেই হন। হিরো বা নায়ক হন কেবল দু'-এক জন। বাংলা ছবির হিরো-র এক নম্বর জায়গাটা দেব আদৌ ধরে রাখতে পারছেন কি না, তাঁর রাজত্ব কি সঙ্কটে পড়েছে যশ, অঙ্কুশদের মতো নবাগতের কাছে, এই ধরনের প্রশ্ন বছরখানেক যাবৎ কেউ কেউ তোলার চেষ্টা করেছিলেন। তিন বছর আগে ঘাটালের সাংসদ হিসেবে দীপক অধিকারীর নির্বাচিত হওয়াটা অভিনেতা দেবের কাল হল কি না, সেই সংশয়ও দেখা দিয়েছিল।

এই অবস্থায় কোনও নায়কের দরকার হয় এমন একটা ছবির, যা তাঁর স্টারডম বা তারকা-রাজকে ফের একটা শক্তপোক্ত জায়গায় দাঁড় করাবে। ঘোষণা করবে, এ এখনও শের, এর সঙ্গে পাঙ্গা নেওয়া সহজ নয়। আশির দশকের শেষ দিকের 'ম্যায় আজাদ হুঁ'-র ছবির কথা মনে পড়ছে। রাজনীতিকে চিরতরে টাটা বাই বাই করে 'শাহেনশাহ', 'গঙ্গা যমুনা সরস্বতী' নিয়ে অমিতাভ বচ্চন দাপটে সেলুলয়েডের পর্দায় ফেরার চেষ্টা করছেন বটে, তবু ব্যাটে-বলে ঠিকঠাক হচ্ছে না। তখন, ১৯৮৯-এর ডিসেম্বরে আজাদ রূপে অবতীর্ণ হলেন তিনি। সুপারহিটের মশলা তেমন ছিল না, একটু অন্য ধরনের ছবি ছিল সেটা। কিন্তু সেটা বুঝিয়ে দিল, অমিতাভ কেন অমিতাভ। এ বার দেবের ক্ষেত্রে 'ককপিট' সেটাই করল।

F0uEyzb.jpg


টিজারে তাঁর ছবি ব্যবহার নিয়ে যা-ই বিতর্ক থাক, ছবির গল্পে প্রসেনজিৎ ওরফে ক্যাপ্টেন দিবাকর রক্ষিতের বংশধর ও পেশাগত উত্তরাধিকারী দেব। বাস্তবে টলিউডের মতোই। ছবির টাইটেল শুরু হওয়ার আগেই লেখা হয়েছে, 'বিগ থ্যাঙ্কস টু প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়।'

দেবের উচ্চারণ কোনও কালেই ভাল নয়। এই ছবিতেও বাংলা, ইংরেজি উচ্চারণে সেই সমস্যা প্রকট। তবে অভিব্যক্তি, শরীরী ভাষা, শারীরিক আবেদনে তিনি মাত করে দিয়েছেন। হ্যাট, সানগ্লাস-সহ পাইলটের পুরোদস্তুর পোশাকে নায়ককে দেখে মাল্টিপ্লেক্সেও সরব উল্লাস। একেই তো বলে স্টারডম! দেবের নতুন নাম এখন থেকে 'ডিবস' হতেই পারে।

এর আগে দেব তেমনই একটা চেষ্টা করেছিলেন। রাজ চক্রবর্তীর পরিচালনায় 'চ্যাম্প'-এর মাধ্যমে। 'ককপিট'-এর মতো 'চ্যাম্প'-এরও প্রযোজক ছিলেন দেব স্বয়ং। তবে সেই ছবি তেমন জমেনি। সে দিক থেকে কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের 'ককপিট' বেশি জমাটি। ২০১৩-তে 'চাঁদের পাহাড়'-এর পর কমলেশ্বর-দেব জুটি ফের এক সঙ্গে। ছবির গল্প ও চিত্রনাট্যও কমলেশ্বরের। সংলাপের মধ্যেও সিনেম্যাটিক ছোঁয়া পাওয়া যায়, যখন প্রিয়ঙ্কাকে তাঁর সহযাত্রী বাঙালি কি না জিজ্ঞেস করলে প্রিয়ঙ্কা উত্তর দেন, 'হুঁ। আমাকে দেখে কি ভোজপুরি বলে মনে হচ্ছে?'

FvtR4l8.jpg


'ককপিট'-এর অবয়ব ও বুননের সঙ্গে কেউ রবি চোপড়ার 'দ্য বার্নিং ট্রেন'-এর সাযুজ্য পেতে পারেন। ১৯৮০-র সেই ছবিতে ছিল ট্রেন, এখানে প্লেন। তবে এখানেও যাত্রীদের একাংশকে বিভিন্ন টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। পারস্পরিক ইগো-র কারণে মা মুম্বইয়ে, বাবা কলকাতায়। তাই ছোট্ট কিটিকে তার মা একা একা প্লেনে তুলে দেয়। কলকাতায় প্লেন নামার পর কিটিকে তার বাবা-র নেওয়ার কথা। কিটি-র সহযাত্রী প্যাংক্রিয়াস ক্যানসারে আক্রান্ত এক বৃদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী। মুম্বইয়ে দেখাতে এসে ডাক্তারের মুখে শুনলেন, তাঁর আয়ু আর তিন মাস। ছেলে, ছেলের বউ দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত বাবাকে বিমানবন্দরেও পৌঁছে দেয় না। বাবা-মা সম্পর্ক মেনে নিচ্ছেন না, তাই তাঁদের কাছ থেকে পালিয়ে কলকাতাগামী বিমানে উঠে পড়ে প্রেমিক-প্রেমিকা। চাকরির ইন্টারভিউ দিতে দ্রুত কলকাতায় পৌঁছনোর জন্য প্রথম বার বিমানে উঠতে হয় এক বেকার যুবককে। আবার পরিচালক-প্রেমিকের কাছে প্রতারিত হয়ে বাগদত্তা-অভিনেত্রী মুম্বইয়ের আস্তানা ছেড়ে পাড়ি দেন কলকাতায়।

এবং ক্যাপ্টেন দিব্যেন্দু রক্ষিত নিজে! তাঁর জীবনেও তো ঝড় কম নয়। কিংবা এয়ার হস্টেস কীর্তি সচদেব! আকাশে ওড়া ইস্তক বিমানকে টালমাটাল অবস্থায় পড়তে হয়। সেই বিমানের পাইলট, এয়ার হস্টেস এবং বহু যাত্রীর জীবনও দুর্যোগের ঘনঘটায় টালমাটাল।

ছবিতে নায়িকা দু'জন। নায়কের সঙ্গে দু'জনেরই নাচা-গানা আছে তাইল্যান্ডের পাটায়ার কোরাল আইল্যান্ডে। তাঁদের এক জন, রুক্মিনী মৈত্র বাস্তবেও দেবের নায়িকা। 'চ্যাম্প'-এর পর এটা রুক্মিনীর দ্বিতীয় ছবি। আবার দেব-কোয়েল জুটি দু'-দু'টো পাগলু, রংবাজের মতো হিট ছবি উপহার দিয়েছে। সে দিক দিয়ে এটা কোয়েল-রুক্মিনীর ডুয়েল-ও ছিল। আর সেই দ্বন্দ্বযুদ্ধে এই ছবিতে সর্বস্ব উজা়ড় করে দেওয়া রুক্মিনীর কাছে গোলের পর গোল খেয়েছেন কোয়েল। অনেকটা, যশ চোপড়ার 'দিল তো পাগল হ্যায়'-তে মাধুরীকে যেমন করিশমার পাশে জোলো লেগেছিল, রুক্মিনীর পাশে কোয়েলকে তেমনই লাগল। মডেলিংয়ের পাশাপাশি অভিনয় জগতেও রুক্মিনী ভবিষ্যতে দর্শকদের সম্ভবত আশাহত করবেন না। সেটা কেবল তিনি দেবের বান্ধবী বলে নয় কিন্তু।

sQ0HHS8.jpg


এই ছবিতে অরিন্দম চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গীত মনে ধরল না। রুদ্ধশ্বাস দৃশ্যে সাসপেন্স আনার জন্য ব্যবহৃত আবহ-সুর মানানসই। তবে আকাশপথে মেঘের মধ্যে দিয়ে বিমান ওড়ার দৃশ্য দেখাতে কম্পিউটার গ্রাফিক্সের প্রতি আর একটু মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন ছিল। হলিউডের 'এয়ার ফোর্স ওয়ান'-এর মডেল অনুসরণ করলে ভাল হতো হয়তো। ডিটেলিংয়ের ক্ষেত্রেও দু'-একটা ছোটখাটো ত্রুটি চোখ এড়াচ্ছে না। ফিশ ফ্রাই আর ফিশ ফিঙ্গার কি এক? সব চেয়ে দামি গোলাপের তোড়া নিয়ে যাওয়া বান্ধবীর জন্মদিনে ক্যাপ্টেন রক্ষিত এ কোন ব্র্যান্ডের ব্ল্যাক ফরেস্ট কেক নিলেন! আদৌ খাপ খায়? তা ছাড়া, জর্জ ক্লুনি অভিনীত 'আপ ইন দি এয়ার'-এর পোস্টার অনেকটা টুকে 'ককপিট'-এর পোস্টার তৈরি হয়েছে বলে আগেই সমালোচনা হয়েছিল। সেখানে ওই মার্কিন ছবিতে কর্পোরেট-ছাঁটাইয়ের বিষয়টা এই বাংলা ছবিতে বাংলা ছবিতে বাদ রাখলেই ভাল হতো।

ছবির শুরুতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। টাইটেলে সূক্ষ্ণ কৌশলে শাসক দলের প্রতীক ঘাসফুলও দৃশ্যমান। নায়ক নিজে সেই দলের সাংসদ বলে কথা!
 

Users who are viewing this thread

Back
Top