হররপ্রেমি মানুষেরা অনেকেই কথুলহু শব্দটার সাথে পরিচিত। অনেকেই ভাবেন কথুলহু হচ্ছে সমুদ্রের বুকে ঘুমিয়ে থাকা এক দানব। ধারণাটি পুরোপুরি সঠিক নয়। কথুলহু সমুদ্রের গভীরে লুকিয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু এটি সাধারণ কোন দানব নয়। একে বলা হয় অশুভ শক্তিসম্পন্ন এক অপদেবতা। আমাদের আজকের আয়োজন এই কথুলহু নিয়েই।
কথুলহু – মহাজাগতিক অপদেবতার স্রষ্টা কে?
কথুলহু সম্পর্কে জানার পূর্বে এর স্রষ্টা লাভক্রফট সম্পর্কে জেনে নেওয়া দরকার। আমেরিকান হরর লেখক HP Lovecraft ১৯২৮ সালে "দ্যা কল অফ কথুলহু" নামে একটি গল্প লেখেন। এই গল্পে তিনি এক অন্ধকার পৃথিবীর কথা বলেছেন, যেখানে আছে কথুলহু নামে এক দানব। কিছু মানুষ দুঃস্বপ্নে এই দানবকে দেখতে পায়। অক্টোপাসের মতো দেখতে এই দানব ঘুমিয়ে আছে সমুদ্রের গভীরে। এক সময় তা জেগে উঠবে পৃথিবীকে ধংস করে দেওয়ার জন্য। পরবর্তিতে এই টপিক নিয়ে লাভক্রফট আরও লিখেছেন। পাঠকেরা এই ধরণের লেখাগুলোকে একসাথে লাভক্রাফটিয়ান হরর নাম দেয়।
সাধারণ হরর গল্পের সাথে লাভক্রফটিয়ান হরর এর পার্থক্য কি?
সাধারণ হরর গল্প থেকে লাভক্রফটিয়ান এর পার্থক্য হলো- এটা একধরনের নৈরাশ্যবাদি জনরা। নরমাল হরর গল্পে মুল নায়ক নায়িকা হয়তো শেষ পর্যন্ত বেচে যায়, ভুতের পরাজয় হয়। কিন্তু লভক্রফটের মহাজাগতিক অপদেবতারা এতই শক্তিশালি যে তাদের কে পরাভূত করা তো দুরের কথা, তাদের কাছ থেকে পালিয়ে বাচাটাও অসম্ভব। বলা হয়ে থাকে সাধারণ মানুষ যদি এক পলকের জন্যেও এই ভয়ংকরতম দানবিক শক্তির দেখে ফেলে তবে সে পুরোপুরি উন্মাদ হয়ে যাবে।
লাভক্রফট এর জীবন কেমন ছিল?
মজার ব্যাপার হচ্ছে জীবদ্দশায় লাভক্রফট লেখক হিসেবে খুব একটা জনপ্রিয়তা পান নি। তার সারা জীবন কেটেছে দারিদ্র্যের সাথে সংগ্রাম করে। এভাবে অভাবে রোগে শোকে ভুগেই তার মৃত্যু হয়। কিন্তু তার মৃত্যুর পর লাভক্রফটিয়ান হরর পাঠকের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করতে সমর্থ হয়। লাভক্রফটের মৃত্যুর পর তার ভক্তরা কথুলহু নিয়ে লেখালেখি শুরু করেন। এ সমস্ত লেখা নিয়ে তৈরি হয়েছে কথুলহু মিথ।
কথুলহু মিথ আসলে কি?
এই মিথে বলা হয়েছে কথুলহু এর অস্তিত্ব সম্পর্কে আধুনিক মানুষ কখনোই পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারে না। সে আমাদের ঘুমের মাঝে দেখা দেয়, অজান্তে হাতছানি দিয়ে যায়, আমাদের সকল কল্পনা, এমনকি আমাদের মনের সবচেয়ে গহিনে লুকিয়ে থাকা অজানা ভিতি সব কথুলহর নিয়ন্ত্রণে। তার কাছে মানুষ যে কত তুচ্ছ, নগণ্য ও অকিঞ্চিৎকর- এই ব্যাপারটাই লভক্রফট গল্পে ফুটিয়ে ধরেছেন। এখানে ভুতের ভয় নয়, ভয়টা আসে নিজের ক্ষুদ্রতা ও অসহায়ত্ব থেকে!
কথুলহু এর জনপ্রিয়তা
বর্তমান সময়ের অনেক বিখ্যাত লেখকেরা লাভক্রফটিয়ান হরর জনরায় লিখেছেন। স্টিফেন কিং এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি "দ্যা মিস্ট" মুভিটি হয়ত অনেকেই দেখেছেন। এটি লাফক্রফটিয়ান হরর জনরায় লেখা অন্যতম সেরা মুভি। এছাড়াও In the Mouth of Madness, Evil Dead, Annihilation, Uzumaki, Event Horizon, 10 Cloverfield Lane ইত্যাদি মুভিগুলো ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। সাম্প্রতিককালে জনপ্রিয় হওয়া নেটফ্লিক্সের হরর সিরিজ স্ট্রেঞ্জার থিংকসও কথুলহু মিথের উপর বেইজ করে তৈরি হয়েছে।
বাংলা সাহিত্যে লাভক্রফটিয়ান হরর
বাংলা সাহিত্যেও অনেকেই এখন লাভক্রফটিয়ান হরর লিখছেন। কলকাতায় সায়ক আমান এর লেখা স্বপ্নের আগন্তুক, পাহাড়চুড়োয় গাছ, সন্দীপন চট্টপ্যাধ্যায় এর মূষিক আতংক গল্পগুলো মূলত HP lovecraft এর লেখা গল্পগুলো অবলম্বনে লেখা। এছাড়াও কল্পবিশ্ব ম্যাগাজিনের অদ্রীশ বর্ধন বিশেষ সংখ্যাটি সাজানো হয়েছিলো বিভিন্ন লাভক্রফটিয়ান হরর গল্প দিয়ে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে ২০১৯ একুশে বইমেলায় লেখক আসিফ রুডলফাজ "কথুলহু" নামে একটা উপন্যাস লিখেছেন যা হররপ্রেমি পাঠকেরা সাদরে গ্রহন করেছেন। আগামীতে এই জনরায় আরও বাঙ্গালী লেখকরা লিখবেন বলে আমরা আশাবাদী।
এই ছিল আজকে। আগামীতে হাজির হয়ে যাবো নতুন কোন অজানা বিষয় নিয়ে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন সবাই। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট করতে ভুলবেন নয়া। ভালো থাকুন।