চিড়িয়াখানা শব্দটি শুনলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে খাঁচায় বন্দি নানা প্রাণী আর মানুষ বাইরে থেকে ভিড় করে তাদের দেখছে। কিন্তু সব চিরিয়াখানাই কিন্তু এক নয়, বিশ্বের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন অসংখ্য চিড়িয়াখানা যা বদলে দিয়েছে প্রচলিত চিড়িয়াখানার ধারণা। তবে আজ আমরা সবচেয়ে ব্যাতিক্রম এক চিড়িয়াখানার কথা শুনবো যার অস্তিস্ব বর্তমানে নেই, আছে ইতিহাসের পাতায়। মানুষের চিড়িয়াখানা এর নাম।
মানুষের চিড়িয়াখানা
এটা সত্যি যে চিড়িয়াখানায় আমরা সাধারনত পশু পাখি ইত্যাদি দেখে থাকি। কিন্তু পৃথিবীর ইতিহাস ঘাঁটলে এমন অনেক ঘটনার সম্মুখিন হবেন আপনি, যে সময় চিড়িয়াখানায় পশু নয়, রাখা হতো মানুষদের। আর অন্যান্য মানুষেরা ভির করে আসতো তাদেরকে দেখতে। এই ঘটনা খুব বেশি বছর আগের নয়।
বর্ণবাদ কথাটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। এক সময় পুরো পৃথিবীতে আতঙ্কের অন্য নাম ছিল বর্ণবাদ। বর্ণবাদের শিকার হয়ে অনেকেই অসহনীয় অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে। বর্ণবাদের চরম পরিণতির ফলস্বরূপ ইউরোপে সৃষ্টি হয়েছিল শত শত মনুষ্য চিড়িয়াখানা।
মানুষের চিড়িয়াখানা যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল
১৮০০ সালের শেষ দিক থেকে ১৯০০ সালের প্রথম ভাগ পর্যন্ত সমগ্র ইউরোপজুড়ে মনুষ্য চিড়িয়াখানার অস্তিত্ব ছিল। তখন আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের ধরে আনা হত এই চিড়িয়াখানা গুলোতে। তাদের কখনো কখনো অর্ধনগ্ন অবস্থায় রাখা হতো। বিভিন্ন জন্তু যেমন বানর, ওড়াংওটাং, হনুমানদের সাথে একই খাঁচায় ঠেলে দেওয়া হতো তাদের আর তাদেরকে এসব জন্তু জানোয়ারদের মত অনুকরন করতে বাধ্য করা হত । আর এটা ছিল তখনকার মানুষদের কাছে অন্যতম বিনোদন। খাচায় বন্দি মানুষগুলোর সাথে তখন পশুর মত আচরন করা হত।
কীভাবে বন্ধ হল মানুষের চিড়িয়াখানা?
মানুষের চিড়িয়াখানা যে কতটা অমানবিক ব্যাপার তা একসময় বিশ্ববাসী উপলব্ধি করতে পারা। তারা এই নিয়চে সচেতন হয় এবং ১৯০০ সালের পর থেকেই এই ধরনের চিড়িয়াখানার বিরোধিতা শুরু হয় বিশ্ব জুড়ে। কিন্তু এক শ্রেণীর বিকৃত রুচির মানুষের পৃষ্ঠপোষকতায় টিকে ছিল চিড়িয়াখানা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একজনের হাতে তা দমন হয়। কার হাতে তা শুনতে চান? শুনলে অবাক হবেন! প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানির অ্যাডলফ হিটলার এটিকে কঠোর হস্তে দমন করেন। ভাবতে পারেন? যে লোকটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকিত মানুষ বলে ভাবা হয়, সে দমন করেছে সবচেয়ে কলংকজনক প্রথাটি! এভাবেই শেষ হয়ে যায় মনুষ্য চিড়িয়াখানার ইতিহাস।
এই সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে পারবেন উইকিপিডিয়া তেঃ Human Zoo